শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ১৭, ২০১৬ 

news-image

পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হোক, মুছে যাক সব গ্লানি, দূর হোক সব বিভেদ, প্রতিষ্ঠিত হোক ঐক্য এই প্রত্যয়ে পুরো জাতি স্বাগত জানাল বাংলা নববর্ষকে। কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও বিপুল উৎসাহ আর উদ্দীপনায় ‘মা ও শিশুকে’ চেতনায় ধারণ করে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ সালকে বরণ করে নেয়া হলো। এবারের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তর তর হে’। এতে আহ্বান জানান হলো পারিবারিক বন্ধন, নারী ও শিশুর প্রতি সংবেদনশীল মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনার বটমূলসহ সারা দেশে ছিল নানা আয়োজন। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সুরের মূর্চ্ছনায় রমনার বটমূলে স্বাগত জানানো হয় বাংলা নববর্ষকে। গান ও কবিতার সুরের মূর্চ্ছনায় মোহনীয় হয়ে ওঠে পুরো রমনা পার্ক এলাকা। ছায়ানটের শিল্পীরা একে একে পরিবেশন করেন লালনগীতি, রবীন্দ্র ও নজরুল সঙ্গীতসহ জনপ্রিয় সব বাংলা গান। সকালের আলো ফোটার সাথে রমনার বটমূলে নামে মানুষের ঢল। এর সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিপুল নিরাপত্তার ঘোরটোপ তো ছিলই।

4c8984b840848ede074cbbf82e41d099-ZIA-ISLAM--1-বাংলা নববর্ষের সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে  শোভাযাত্রা বের করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে  সব শ্রেণী-পেশার মানুষ বর্ণিল সাজে এতে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন।

চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে হোটেল রূপসী বাংলা থেকে টিএসসি হয়ে ফের চারুকলায় গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এতে হাতি, মাছ, টেপা পুতুল, ময়ূরপক্সী, নৌকাসহ বিভিন্ন অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রা উপলক্ষে ওই এলাকার সব রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়।

শোভাযাত্রায় প্রতিটি কাঠামো একেকটা মোটিভ ধারণ করে বাঙালি সংস্কৃতির শক্তিকে উদ্ভাসিত করেছে। ‘মা ও শিশুর’ প্রতীকী কাঠামো উপস্থাপনায়  শোভাযাত্রায় সামাজিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করে।
6230258c0d8e7710c0e4b28a790767b5-300x205উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, মা ও শিশুর মঙ্গল কামনার অর্থ হচ্ছে বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনা। পুরনো জরাজীর্ণতা দূর করে নতুনের আবাহনই হচ্ছে বর্ষবরণের শিক্ষা। শিশুদের কথা মনে রাখতে হবে। শিশুরা পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে, শিশুদের জন্য পৃথিবী নিরাপদ করতে হবে। দেশ, সমাজ ও পরিবারে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। মায়েদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সঙ্গীত বিভাগের সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনের কর্মসূচি। এ ছাড়া বাংলা বিভাগ ও বাংলা অ্যালামনাইয়ের উদ্যোগে কলাভবন প্রাঙ্গণে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দু’টি আয়োজনেরই উদ্বোধ
ন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠানে এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানসহ বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সব শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

12993505_10201297755162771_4070391289477218756_n (1) এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের নিয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান। টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজন করে পান্তা-ইলিশের। বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিশাল আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বহু সদস্য ক্যাম্পাসে মোতায়েন ছিল। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি, গার্লস গাইড ও চারুকলার স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ভূমিকা পালন করেন।

বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গত বুধবার মধ্য রাতে চলে আলপনা আঁকার কাজ। শিল্পী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল শিল্পী আলপনা আঁকায় অংশ নেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ‘বার্জার রঙে রঙিন বৈশাখ ১৪২৩’ শীর্ষক এই আলপনা আঁকার উদ্বোধন করেন। এ সময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে এদিন নানা আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়।