বাংলা অনুবাদে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা সংকলন গ্রন্থ ‘বিশ্বজনীন ঐতিহ্য’
পোস্ট হয়েছে: মার্চ ৬, ২০২৪
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2024/03/9cd73015-dcb6-454c-b291-47123eea0d84.jpg)
ইরান নামটি শুনলেই প্রথমে আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে প্রাচীন পারস্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি, শাসক কুরেশে কাবির (সাইরাস দ্য গ্রেট), তাখতে জামসিদ(পারসেপোলিস) সহ আরও বিভিন্ন বিষয়ের সমৃদ্ধ অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা।
কিন্তু গত শতাব্দীতে বিশ্বকে নাড়া বা তাক লাগিয়ে দেওয়ার যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৭৯ সালে সংঘটিত ইরানের ইসলামি বিপ্লব। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ৪ দশক। এবছর পালিত হচ্ছে ইসলামি বিপ্লবের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দীর্ঘ ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে ইসলামি বিপ্লবের নায়ক হযরত ইমাম খোমেনির দূরদর্শী নেতৃত্বে ইসালামি বিপ্লবের বিজয় পতাকা উড়ে। তারপর থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্তের কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও গবেষকদের লেখা, আলোচনা ও গবেষণার মূখ্য বিষয় হয়ে ওঠে ইমাম খোমেনি ও তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লব। ১৯৮৯ সালে ইমাম খোমেনির ওফাতের পর ইসলামি বিপ্লবের ঝাণ্ডা যার হাতে তুলে দেওয়া হয় তিনি হলেন আয়াতুল্লাহ আল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী। তাঁর তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে ইসলামি বিপ্লবের দেশ ইরান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই ফারসি ভাষার পাঠদান চালু রয়েছে। ১৯৭৯ সালে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লব ও ১৯৮৪ সালে ঢাকায় ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি চর্চা নতুন বেগ পায়। ইরান, ইসলামি বিপ্লব, ইমাম খোমেনি ও ফারসি ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে জানতে ভীষণভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠেন বাংলাভাষী পাঠকগণ। সেই কথা মাথায় রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান ‘বিশ্বজনীন ঐতিহ্য ‘ নামে একটি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন।
ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।তার পৈতৃক নিবাস টাংগাইল জেলার বাসাইল উপজেলায়।তিনি ১৯৯১ সালে তৎকালীন ফারসি ও উর্দু বিভাগ থেকে ফারসি বিষয়ে স্নাতক এবং ১৯৯২ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অতঃপর ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ও উর্দু বিভাগে ফারসির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০০২ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘তাসহিহ ভা ভিরায়েশে দিওয়ানে আব্দুল করিম খাকী : শায়েরে বাঙ্গালা জাবান দার বাংলাদেশ ‘ শিরোনামে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খানের অনুবাদকৃত ‘বিশ্বজনীন ঐতিহ্য’ গ্রন্থটি ২০২৩ সালে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সূচীপত্র প্রকাশনী যৌথভাবে প্রকাশ করে। বইটি মূলত ফারসি ভাষা ও সাহিত্য সংরক্ষণ, শিক্ষা ও প্রসারের বিষয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল উজমা খামেনেয়ীর বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যসমূহের নির্বাচিত অংশের সংকলন। গ্রন্থটিতে রয়েছে ১৩টি ভাষণের অনুবাদ যেগুলো তিনি বিভিন্ন সময়ে ইরান ও ইরানের বাহিরে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক, গবেষক, নীতিনির্ধারক, শিক্ষার্থী, কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদক ও গণমাধ্যমের অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী ও পরিচালকবৃন্দের প্রতিনিধিগণের সভা এবং তাদের সাথে সাক্ষাতকালে প্রদান করেন। তাঁর ভাষণে ভারতীয় উপমহাদেশে ফারসি ভাষার প্রচলন, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ফারসি চর্চা ও তাদের ফারসি ভাষায় কথা বলার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। গ্রন্থটি শুধু ভাষণেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে আরো রয়েছে ফারসি ভাষার ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা বিষয়ে তথ্যবহুল আলোচনা যা ইরান, ইসলামি বিপ্লব, ফারসি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক লেখক, গবেষক ও আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য মূল্যবান তথ্যের উৎস।
এছাড়াও ড. সাইফুল ইসলাম খানের আরেকটি গ্রন্থ হলো ‘দিওয়ানে খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি’। জিহাদুল ইসলামের সাথে যৌথভাবে অনুবাদকৃত বইটি খাজা মঈন উদ্দিন চিশতির ১২০টি গজলের বাংলা অনুবাদ।
সুজন পারভেজ
শিক্ষার্থী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়