বুধবার, ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বাংলাদেশ বেতারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে ইরানি কালচারাল কাউন্সেলরের বৈঠক

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ১০, ২০২১ 

news-image
বাংলাদেশ বেতারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আজ সকালে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দলের  বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে ফারসি অনুষ্ঠান চালুর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত বলেন, বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে অনেক ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার হলেও এখন পর্যন্ত ফারসি ভাষায় কোন অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় না। অথচ এটি এ দেশের মানুষের খুবই পরিচিত একটি ভাষা। ৬০০ বছরেরও বেশি সময় এ অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিল ফারসি। এখনও এদেশের মানুষের মুখে মুখে ফারসি কবিতা শোনা যায়। শেখ সাদীর কবিতা ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি’ ছাড়া এদেশের মিলাদ মাহফিলগুলো যেন পূর্ণতাই পায় না। কাজেই বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে ফারসি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে যে সাংস্কৃতিক চুক্তি রয়েছে সেই চুক্তিতে রেডিও, টেলিভিশনসহ দুদেশের সাংবাদ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সহযোগিতার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।বিপ্লবের পর থেকেই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং এর আওতায় বিশ্বের অনেক  ভাষায় বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। এর মধ্যে বাংলা অনুষ্ঠানও রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে যদি ফারসি অনুষ্ঠান চালু করা হয় তাহলে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে তার দেশ প্রস্তুত রয়েছে।

বৈঠকে ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও ‍সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সাথে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের সম্পর্ক নিবিড় ও ঐতিহ্যপূর্ণ। সুদূর অতীত থেকেই বাংলা ও পারস্যের মধ্যে নিবিড়তম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ইসলামের অবির্ভাব হয়েছে আরবে ও আরবি ভাষায় এবং ইসলামের প্রেমময় , উদার ও মানবিক ব্যাখ্যা হয়েছে পারস্য তথা ফারসি ভাষায়। সুফিবাদের সূতিকাগার এই পারস্যেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ওমর খৈয়াম, আত্তার, জালালুদ্দিন রুমি, সাদী, হাফিজ ও জামির মতো ফারসি সাহিত্যের দার্শনিক ও পণ্ডিতগণ। তিনি বলেন, রেডিও তেহরানের বাংলা  অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ যেমন ইরানের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতির সাথে আরো বেশি পরিচিত হতে পারছে তেমনি বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে  ফারসি অনুষ্ঠান চালু হলে ফারসি ভাষাভাষীরাও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতির সাথে আরো বেশি পরিচিত হতে পারবে। এতে দুদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

বৈঠকে বাংলাদেশ বেতারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে ফারসি ভাষায় অনুষ্ঠান চালুর বিষয়ে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিনিধি দলের প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়  এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারে তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকবে বলে জানানো হয়।

বৈঠকে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিনিধি দলের পক্ষে ইরানি কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত, ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও ‍সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও ‍সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের চলচ্চিত্র ও জনসংযোগ বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ বেতারের পক্ষে বেতারের সংবাদ বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ এস এম জাহিদ,  অনুষ্ঠান বিভাগের উপ মহাপরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী মো. আখতার হোসাইন মজুমদারসহ আরো কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।