`বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের ছবি তৈরিতে নজর দেয়া উচিত’
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯ এর আমন্ত্রণে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ইরানের ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলি রেজা তাবেশ। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনটি এখন ইরানি চলচ্চিত্র শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ইরানি চলচ্চিত্রের প্রযোজনা, আন্তর্জাতিক পরিবেশন ও প্রশমণের ক্ষেত্রেও নেতৃত্বদানকারী অবস্থানে রয়েছে।
আলি রেজা তাবেশ এক সাক্ষাৎকারে চলচ্চিত্র বিষয়ে বিদ্যমান সম্ভাবনাময়ী ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরে বলেন, উভয় দেশেই শিশু-কিশোর বিষয়ক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা গেলে তা অধিক হারে ছবি প্রযোজনার পথকে প্রশস্ত করতে পারে।
কয়েক মাস আগে তেহরান সফরে ফারাবি ফাউন্ডেশনের অফিস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল। সেখানে তিনি ফাউন্ডেশনের পরিচালক আলি রেজা তাবেশের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ফারাবি ফাউন্ডেশনের সাথে সহযোগিতার নানা উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে কেমন লাগছে আপনার?
উত্তর: ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফরে এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আপনি ভালো করেই জানেন, প্রতিবারই চলচ্চিত্র উৎসবটিতে ইরান সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। ইরান থেকে অনেক চলচ্চিত্র এতে প্রতিযোগিতা করেছে। পাশাপাশি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বহু ব্যক্তিকে উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি উৎসবের একটি অংশ হতে পেরে অনেক বেশি আনন্দিত।
প্রশ্ন: আপনি কি বাংলাদেশি কোনো ছবি দেখেছেন? দয়া করে যদি আপনার অভিজ্ঞতা বলতেন।
উত্তর: আমার বাংলাদেশি ছবি দেখার সামান্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই উৎসবে আমার কিছু ছবি দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। ছবিগুলো তৈরিতে বাণিজ্যিক প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে জেনেছি। তবে আমি জানি যে বাংলাদেশে অনেক মেধাবী নির্মাতা রয়েছেন যারা ভালো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে পারেন। আমি তারেক মাসুদ, জহির রায়হান, আলমগীর কবির সহ অনেক ভালো চলচ্চিত্রকারের নাম জানি।
প্রশ্ন: চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য কিভাবে এই চলচ্চিত্র উৎসব সহায়ক হতে পারে?
উত্তর: সব জায়গায়ই ইরানি ছবি আকর্ষণ টানতে সক্ষম হয়েছে। উঁচু মানের চলচ্চিত্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী ইরানি ছবি স্বীকৃতি পাচ্ছে। ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনালগ্ন থেকেই ইরান এতে অংশ নিয়ে আসছে। উৎসবের এবারের আসরেও এশীয় প্রতিযোগিতা বিভাগে ৪টি,আন্তর্জাতিক বিভাগে ৫টি, নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগে ৫টি, শিশু বিভাগে ৫টি ও আধ্যাত্মিক বিভাগে ৬টি সহ মোট ২৫টি চলচ্চিত্র অংশ নেয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি ছবিগুলো ইরানে অনেক উৎসবে অংশ নিচ্ছে। অভিজ্ঞতা বিনিময় ও দৃষ্টিভঙ্গি ভাগাভাগিতে উভয় দেশের জন্যই সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: যৌনতা ও সহিংসতার কোনো দৃশ্য ব্যবহার ছাড়াই ইরানি চলচ্চিত্রের কিভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন সম্ভব হয়েছে?
উত্তর: চলচ্চিত্র নির্মাণে ইরানের ১২০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইরানি চলচ্চিত্রে বিনোদনও রয়েছে। বিশ্বে ইরানি চলচ্চিত্র শিল্প অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। ইরানি ছবিতে মূলত মানবিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া হয়। হলিউড ও বলিউডে বড় বাজেটের ছবি তৈরি করা হয়। অন্যদিকে কম বাজেটে ছবি তৈরি করার পরও সারা বিশ্বেই ইরানি ছবির প্রভাব রয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো আমরা ছবির কাহিনীর ওপর জোর দিয়ে থাকি। সুতরাং গল্প আকর্ষণীয় হলে ছবিতে আমাদের যৌনতা ও সহিংসতা যুক্ত করার প্রয়োজন নেই। এছাড়া ইরানি ছবিতে সংস্কৃতির বহুমুখিতা তুলে ধরা হয় এবং এতে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবিও ভেসে ওঠে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি নির্মাতাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী ?
হলিউড, বলিউডের বিপরীতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের ছবি নির্মাণে নজর দেয়া প্রয়োজন। ভালো ভালো গল্প তুলে আনার পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণে নির্মাতাদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। ইরানের সংস্কৃতি ভিত্তিক, মানবিক ও শিক্ষামূলক সিনেমা বাংলাদেশি সিনেমা বিকাশে ভালো প্রেরণা হতে পারে।