শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ফিলিস্তিন ও আল কুদস-এ ইসারাইলি দখলদারিত্বের ৭০ বছর : বিশ্ব মুসলিম এর করণীয়

পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮ 

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন*

অসংখ্য নবী আ.-এর পবিত্র স্মৃতি বিজরিত পবিত্র কুরআন বর্ণিত দুটি পবিত্র মসজিদের একটি এবং ইসলামের প্রথম কিবলা ও তিনটি বিশেষ গুরুত্ব সম্পন্ন মসিজদের একটি বায়তুল মাকদিস আল কুদস আল শরীফ। দীর্ঘ ৭০ বছর যাবৎ বিশ্বের নিকৃষ্টতম বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িক মতবাদ ‘যায়নবাদ’ (ইহুদিবাদ) এর বিষাক্ত ছোবলে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে। ৭০ বছর যাবৎ বহিরাগত ইহুদিবাদের সন্ত্রাসী দখলদাররা পবিত্রভূমি ফিলিস্তিনের নিরপরাধ মুসলিমদের ওপর উৎখাত, হত্যা, নির্যাতন, নৃশংসতার স্টিম-রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে নিজ বাসগৃহ থেকে উৎখাত করে সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তুলে এনে ইহুদিদের বসতি স্থাপন করছে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ আমেরিকার ষড়যন্ত্রে ফিলিস্তিনের বুকের ওপর অবৈধ কৃত্তিম রাষ্ট্র অভিশপ্ত ইসরাইল এর জন্ম দিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদীরা সব মারণাস্ত্র আর পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত করেছে তাদের সৃষ্ট বিষবৃক্ষ ইসরাইলকে। ইসরাইলের ইতিহাস হত্যা, নির্যাতন, দখলদারিত্ব আর নির্মমতা ও নৃশংসতার ইতিহাস। শুধু ফিলিস্তিন নয়, তাদের আক্রমণ আর নৃশংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে লেবানন, জর্দান, মিশর, সিরিয়ার অসংখ্য মুসলিম জনগণ। ১৯৪৮ সালের আগ থেকে যে নির্যাতন, নির্মমতা শুরু হয়েছে তা আজ মানবতার দুশমন ইসলাম ফোবিয়ায় আক্রান্ত, সাইকিক ডোনাল্ড ট্রাম্প এর প্রত্যক্ষ মদদে তা নৃশংসতার সকল সীমা অতিক্রম করেছে। আজ সময় এসেছে ৭০ বছরের নির্যাতন, নির্মমতা, হত্যাযজ্ঞ তথা মানবতার বিরুদ্ধে পাহাড় সম অপরাধের হিসাব নেয়ার। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য সংগ্রাম তথা জিহাদের মাধ্যমে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের বিলুপ্তি এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন ও মুক্ত বায়তুল মাকদিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তা সম্ভব হবে।
সাম্প্রতিক ঘটনা
১৪ মে ২০১৮। ইসরাইল এর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এবার আল কুদস তথা জেরুসালেমে তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তর উপলক্ষে আনন্দানুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর কন্যা ইভানক ও জামাতা জেরাল্ড কুশনার। ১৫ মে আল নাকবা- ‘মহা বিপর্যয়’ দিবস সামনে রেখে হামাস এর আহ্বানে চলছে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে ঠেকাতে ট্যাংক সহ মারণাস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। বিক্ষোভকারীদের একমাত্র অস্ত্র ‘পাথর’। পাথরের জবাবে ইসরাইলি হানাদার বাহিনীর ব্রাশফায়ারে শহীদ হলো ৬০ জন ফিলিস্তিনি, আহত হলো ২ হাজার ৭শ’র বেশি ফিলিস্তিনি। যার মধ্যে শিশু, নারী, বৃদ্ধও রয়েছে। গত ২০ দিনে ১শ’র বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ দিয়েছে ইসরাইলি হানাদারদের হাতে। এটা ১ দিনের ঘটনা নয়, এভাবেই চলছে প্রতিদিন, প্রতি মাস, প্রতি বছর দীর্ঘ ৭০ বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে।
ঘরহারা, বাড়িহারা, প্রিয়জনহারা উদ্বাস্তু শিবিরে জন্ম নেয়া মানুষগুলো তাদের মাতৃভূমি উদ্ধারের আকাক্সক্ষায় প্রতিনিয়ত অস্ত্র-গোলাবারুদ নয়, হাতে পাথর আর অন্তরের তীব্র ক্ষোভ নিয়ে এভাবেই মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। এর বিনিময়ে সকল রকম মারণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র সম্বলিত ইসরাইলি বাহিনীর ব্রাশফায়ারে প্রাণ দিচ্ছে অহরহ। নারী শিশু বৃদ্ধ কেউ রেহাই পাচ্ছে না এ হায়েনাদের হাত থেকে।
বায়তুল মাকদিস বা আল কুদস সম্পর্কিত তথ্য
মসজিদে আকসা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মজিদে দুবার উল্লিখিত হয়েছে। মক্কার ১৩ বছর এবং মদীনায় ১৭ মাস মুসলমানদের ক্বিবলা ছিল মসজিদে আকসা। বিভিন্ন বর্ণনায় এ মসজিদ ফেরেশতাদের তৈরি, হযরত আদম আ. কর্তৃক নির্মিত, হযরত শিশ (আ.), হযরত নূহ আ., হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে নির্মাতা হিসেবে বলা হয়েছে। বোখারী শরীফের ৩১৮৬ নং হাদিস অনুযায়ী হযরত আবুজার গিফারী (রা.) বর্ণিত হাদীসে কাবা গৃহের ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়েছে বলে বলা হয়েছে। ১ লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গমিটার এরিয়ার ওপর বায়তুল মুকাদ্দাস বা আল কুদস শহর অবস্থিত। এখানে মসজিদ আকারে ২টি স্থাপনা রয়েছে। প্রধান মসজিদ মসজিদে কিবালী ও মসজিদে কুব্বাতছু ছাখরা ও মুছাল্লা (মসজিদ) হিসেবে রয়েছে আরো ৫টি স্থাপনা। ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি গম্বুজ, ১২টি মাদরাসা, ২৫টি কূপ, ২৩টি মাসতাবা (খালি মাঠে বর্গাকৃতির উঁচু জায়গা) ৮টি বায়েকা (গেটসদৃশ একাধিক স্তম্ভের স্থাপনা) ৪টি আযানখানা সহ বিভিন্ন ধরনের ১৯০টি স্থাপনা রয়েছে। মসজিদে আকসার ১৫টি দরজার ১০টি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ওপরে রয়েছে সীসার গম্বুজ, এটি ১৫ হিজরিতে খলিফা হযরত ওমর (রা.) নির্মাণের নির্দেশ দেন। এখানে দাঁড়িয়ে খতিব ইমামতি করেন। কুব্বাতুছ ছাখরা (পাথর গম্বুজ মসজিদ) ইসলামি স্থাপত্যের প্রাচীন ও অন্যতম নির্দশন। খলিফা আবদুল মালেক বিন মারওয়ান ৬৬ থেকে ৭২ হিজরীতে এর নির্মাণ সম্পন্ন করেন। এর অভ্যন্তরে বৃত্তের মাঝখানে পাথর রয়েছে। যার ওপর দাঁড়িয়ে বোরাকে আরোহণ করে মহানবী (সা.) মেরাজে গিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক তথ্যসমূহ
আল কুদস এর মূল অধিবাসীরা কেনান থেকে এসে এখানে প্রথম বসতি স্থাপন করে। হযরত মূসা আ. বনি ইসরাইলকে এখানে নিয়ে আসলেও তারা পরবর্তীকালে বিতাড়িত হয়। ৯১৫ খ্রিস্ট পূর্বে জালেম বাদশা জালুতের বিরুদ্ধে ন্যায়পরায়ণ বাদশা তালুতের পক্ষে যুদ্ধে করে দাউদ আ. জালুতকে হত্যা করে। হিব্রু ভাষায় ‘উরে সালিম’ ইংরেজিতে জেরুসালেম বা আল কুদসের বাদশা হন। সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হাদিস (১৪০৮) অনুযায়ী দাউদ আ. এর পুত্র হযরত সুলাইমান বাদশা মসজিদে আকসা ও জেরুসালেম (আল কুদস) শহর পুনঃনির্মাণ করেন। ৫৮৭ খ্রি. পূর্বে সম্রাট বখতে নছর জেরুসালেম দখল করে মসজিদে আকসা ধ্বংস করেন এবং বনি ইসরাইলে অধিকাংশকে হত্যা করে বাকিদের ব্যাবিলনে নিয়ে যান। এর ৫০ বছর পর পারস্য সম্রাট সাইরাস বনি ইসরাইলকে জেরুসালেমে প্রবেশের অনুমতি দেন। ৩৩০ খ্রি. পূর্বে মহাবীর আলেকাজান্ডার জেরুসালেম দখল করেন। খ্রি. পূর্ব ১৫২ অব্দে ইহুদি মুকাবি বিদ্রোহীরা জেরুসালেম দখল করে রাজধানী স্থাপন করেন, এরা সম্রাট এবং পম্পেওর অনুগামী রোমানরা মিলে হযরত ঈসা আ. এর বিরোধিতা করেন। এসময় রোমানদের অত্যাচারে কিছু ইহুদি মদীনায় চলে গিয়েছিল। শেষ নবী সা.-কে এস্তেকবাল জানানোর জন্য। কিন্তু তাদের উত্তরসূরি ইহুদিরা বেশির ভাগই মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। বর্তমান যায়নযাদীরা তাদেরই উত্তরসূরি। মহানবী (সা.)-এর সময় জেরুসালেম খ্রিস্টানদের দখলে ছিল। ১৫ হিজরিতে ইয়ারমুকের যুদ্ধের পর জেরুসালেমে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়। ১১৯৯ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা জেরুসালেম দখল করে। তারা কুব্বাতুছ ছাখরাকে গির্জায় পরিণত করে। আল আকসা মসজিদকে রাজকীয় প্রাসাদ বানায়। ৮৮ বছর পর গাজী সালাহ উদ্দিন আইউবী জেরুসালেম পুনরুদ্ধার করে কুব্বাতুছ ছাখরা থেকে ক্রুসেড চিহ্ন সরিয়ে চাঁদ স্থাপন করেন। ১ম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন দখলের ম্যান্ডেট নিয়ে সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

মহাদুর্যোগ ও দখলদারিত্বের ৭০ বছর
তারও আগে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরপরই যায়নবাদী ইহুদিরা ব্রিটিশ সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে জমি ক্রয় করে অনুপ্রবেশ শুরু করে। তাদের চক্রান্তের নীল নকশা অনুযায়ী ১৯৪৮ সালকে টার্গেট করা হয়। ১৯৪৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ব্রিটিশ সেনাদের সহায়তা নিয়ে ১৯৪৭ সালে বোমা ও মাইন বিস্ফোরণ করে ফিলিস্তিনের অনেকগুলো গ্রাম সমূলে ধ্বংস করে মুসলমানদের হত্যা অথবা বহিষ্কার করে সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে এনে ইহুদিদের পুনবার্সন শুরু করা হয়। অবৈধ ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জল্লাদ বেন গুরিয়ান তার ডায়রিতে ১৯৪৮ সালের ১২ মে তারিখে লিখেছেন ‘আজ দারাস গ্রামে মর্টার হামলায় ৫০ জন আরব নিহত হয়েছে। বাকিরাও গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। একই দিনে বাসিত ও সাত্তয়াদী নামে আরো দুটি গ্রাম দখল করেছে।’ (যুদ্ধের দিনগুলো ১৯৪৭-৪৯ খ্রি.) ১৯৪৮ সালের ১৪ মে তেল আবিবকে রাজধানী করে বেন গুরিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে ফিলিস্তিনের বুকের ওপর অবৈধ রাষ্ট্র ‘ইসরাইল’ এর জন্ম দেয়া হয়। ঘোষণার মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট টারভিন ইসরাইলের স্বীকৃতি দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফ্রান্স ও রাশিয়া স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ দিয়ে ইসরাইলকে ভয়াবহ, আগ্রাসী পারমাণবিক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই আরব ও মুসলিমদেরকে আজীবনের জন্য পর্যদুস্ত করে রাখা। শুরু হয়ে যায় অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের গণহত্যা, রাহাজানি, দখল, লুটপাট, মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম সব অপরাধ, যা দীর্ঘ ৭০ বছর যাবৎ সমানে চলছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ মোড়লরা একদিকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়েছে অন্যদিকে বারবার ভেটো প্রয়োগ করে জাতিসংঘের সব প্রস্তাব ও উদ্যোগকে ভণ্ডুল করে দিয়েছে।
নির্যাতন, নির্মমতার কিছু উদাহরণ
রাষ্ট্র ঘোষণার দিনই ইয়ামিন গ্রামের ৪০০ অধিবাসীর ২৫০ জনকে হত্যা করে। অনেকের অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে নেয়। আগুনে পুড়িয়ে মারে, চোখ তুলে নেয়, নারীদের স্তন কেটে নিয়ে নির্যাতনের অশুভ সূচনা করে। ৪৮ সালে হাল্লাদ ও রামাল্লার কয়েকশ’ মানুষকে হত্যা করে। ১৯৪৮ সালে নাসিরুদ্দিন গ্রামের ৪০ জন বাদে সবাইকে, কাবু গ্রামের ২০ জন বাদে সবাইকে, দারোস গ্রামের সবাইকে ইসরাইলি জল্লাদ বাহিনী মসজিদে এনে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যা করে।
এভাবে শুরুতেই তারা পশ্চিম জেরুসালেম দখল করে নেয়। ৩ বছরে ১০ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি মুসলিম নিজেদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হয়ে জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া কিংবা অন্য কোথায়ও উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা পরবর্তীকালে ৫০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের জনগণকে নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হলেও দীর্ঘ ৭০ বছরে সে প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নি।
৭০ বছরে ইসরাইলি জল্লাদদের অপরাধের ইতিহাস এ সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে উপস্থাপন সম্ভব নয়। এরা ১৯৮২ সালে লেবানন দখল করে ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। ইন্তিফাদার ৫ বছরে ১৬ শ’র বেশি শিশু-কিশোরকে হত্যা করেছে। ৬০ থেকে ৭৫ হাজারকে আহত ও বিকলাঙ্গ করেছে। হত্যা, গ্রেফতার, কারাগারে নির্যাতন করে হত্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাঁদানে গ্যাস, বোমা ইত্যাদি নিক্ষেপ তাদের নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। তারা ১৯৮৩ সালে ‘সাবরা’ ‘শাতিলা’ রিফিউজি ক্যাম্পে আক্রমণ করে শত-সহস্ত্র নিরপরাধ উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। ১৯৬৫ সালে ৫ বার জর্ডানে বোমা হামলা করে ২ শতাধিক মানুষ হত্যা করে। ১৯৯৪ সালে আল খলিলে হযরত ইবরাহীম আ. এর মাজার সংলগ্ন মসজিদে হামলা করে শতাধিক লোককে হত্যা করে। ১৯৯৬ সালে লেবাননের কুনা শহরে হামলা করে ১৭০ জনকে হত্যা করে। ২০০০ সালে সূচিত দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৬৩৪৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ২০০৬ সালের ১২ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ১১শ’ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ১৯৬৭ সালে তারা ফিলিস্তিনের বাকি অংশসহ মিশরের সিনাই ও গাজা, সিরিয়ার বেকা, জর্ডানের অধীনস্থ পশ্চিম তীর সহ বিশাল আরব ভূমি অনেক রক্ত ও লাশের ওপরে দখল করে নেয়। ১৯৬৯ সালের ২২ আগস্ট বর্ণবাদী ইহুদি ঘাতক ‘রোহান’ মসজিদে আকসায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে মসজিদে কিবালী (মূল মসিজদ) ও সালাউদ্দিন নির্মিত মিম্বর পুড়ে যায়। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১ মাস পর ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ সালে মরোক্কোর রাবাতে মুসলিম দেশসমূহের শীর্ষ নেতারা সম্মেলন করে ফিলিস্তিন ও মুসলিম স্বার্থ রক্ষার লক্ষে ওআইসি গঠন করে। এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন মালয়েশিয়ার নেতা টেংকু আবদুর রহমান। ১৯৭২ সালে জর্ডান পুড়ে যাওয়া মসজিদের সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
ইসরাইল ১৯৮২ সালে লেবাননের বৈরুত সহ বিশাল এলাকা দখল করে নেয়। ২০০৭ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ৩৪ দিন ব্যাপী যুদ্ধ হয়। ২০১৪ সালে ৯ জুলাই থেকে শুরু হয় নতুন করে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা ও হত্যাযজ্ঞ। এতে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৬০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি শাহাদাত বরণ করে। ২০১২ সালেও একই ভাবে ৮ দিনের যুদ্ধে ১৭০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়।
১৯৮০ সালের ৩০ জুলাই ইসরাইলি পালার্মেন্ট ‘নেসেট’ জেরুসালেম তথা আল কুদসকে ইসরাইলের ‘চীরকালীন’ রাজধানী ঘোষণা করে। ১৯৯০ সালে মার্কিন সিনেট বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় (৩৭৮/৩৪ ভোটে)। তারও ২৮ বছর পর ইসলাম ও মানবতার শত্রু ডোনাল্ড ট্রাম্প এর নেৃতত্বে যুক্তরাষ্ট্র গত ১৫ মে ইসরাইলের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দূতাবাস তেল আবিব থেকে আল কুদস এ স্থানান্তর করলো যার মূল্য দিল শতাধিক শহীদ ফিলিস্তিনি জীবন দিয়ে আর প্রায় ৩ হাজার আহত হয়ে।
শুরু থেকেই চাপিয়ে দেয়া রাষ্ট্র ইসরাইলের সীমানা, লক্ষ্য, কার্যক্রম নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। ইসরাইলের জন্মদাতা ব্রিটেন ও আমেরিকার বক্তব্য ও বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল ফারাক। বেলফোর ঘোষণার অনেক পরে ১৯৩৯ সালে ১৭ মে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে একটি মুসলিম ও ইহুদিদের যৌথ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ জেরুসালেম বা আল কুদসকে আন্তর্জাতিক শহর তথা ইহুদি ও মুসলিমদের সম্মিলিত শহর হিসেবে ঘোষণা দেয়। ৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণায় কোন সীমানা উল্লেখ নেই। ব্রিটিশ, আমেরিকা, তাদের সহযোগীরা ও জাতিসংঘ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকারের কথাও বলে আসছে। অথচ আমরা বাস্তবে কী দেখি? রাষ্ট্র ঘোষণার ১ বছর আগ থেকেই ব্রিটিশ সেনাদের সহায়তায় ইহুদিরা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গ্রামে হামলা করে গ্রামবাসীদের হত্যা করে গ্রাম দখলে নিয়ে ইহুদিদের বসতি স্থাপন শুরু করে। তারা ‘তেল আবিবে’ রাজধানী স্থাপন করে। ৫৬ সালের যুদ্ধে তারা মিশরের কাছ থেকে ‘সিনাই’ দখল করে নেয়। ৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধে তারা মিশরের গাজা, সিরিয়ার বেক্কা, জর্ডানের পশ্চিম তীর, পূর্বে জেরুসালেম ও ওল্ডসিটি (প্রাচীন নগরী) দখল করে নেয়। ৭৩ সালের যুদ্ধে তারা সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। তাদের এই দখল, উৎখাত ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা কতটুকু বিস্তৃত হবে তার কোন সীমারেখা নেই।
আমরা লক্ষ করেছি শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও তাদের সহযোগীরা কখনো সরাসরি, কখনো জাতিসংঘের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘শান্তি শান্তি’ খেলা খেলছে। কখনো ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে জাতিসংঘের প্রস্তাব এনে মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ব জনমতকে ধোঁকা দিচ্ছে। ১৯৬৭ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অন্তত ১০ বার বায়তুল মোকাদ্দাস এর পবিত্রতা ও মুসলিম অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। প্রথমদিন থেকেই ২ রাষ্ট্রের ধারণা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের শান্ত করার চেষ্টা করছে। শান্তি শান্তি খেলায় ১৯৭৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্টারের মধ্যস্থতায় ইসরাইল ও মিশরের মধ্যে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি হয়। ‘শান্তির কলা’ দেখিয়ে পিএলওকে আজীবনের জন্য ‘বশ’ করে রাখা হয়েছে। এই শান্তি শান্তি খেলায় সর্বোচ্চ পাওয়া হচ্ছে একটি আলাদা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নামে একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ঘোষণা। গাজায় কঠোর নিয়ন্ত্রণে যা আজ শুধু অবরুদ্ধই নয়, প্রায় অকেজো। ইসরাইলি অবরোধ ও নির্যাতনে সেখানকার অধিবাসীরা আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে। ত্রান সংস্থাও সেখানে ঔষধ কিংবা ত্রান সামগ্রী নিয়ে যেতে পারছে না। সেই আলাদা রাষ্ট্রের রাজধানী হচ্ছে পশ্চিম জেরুসালেম তথা আল কুদস। এ কারণেই ১৯৮০ সালে রাজধানী ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস স্থানান্তর করেনি। কিন্তু ইসলাম ফোবিয়ায় আক্রান্ত ট্রাম্প গত ১৪ মের অঘটন ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে শালিসের ভূমিকা দূরে থাক, পর্যবেক্ষকের ভূমিকার জন্যও অনুপযুক্ত প্রমাণ করলেন। কথা হচ্ছে ইসরাইল তথা যায়নাবাদীরা কারো সমঝোতা কিংবা সালিশ মানে না। তারা তাদের নৃশংসতা, নির্মমতা দিয়ে হত্যা, দখল, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের মূল গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। আগে ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের কথায় তারা চলেছে, এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনই নয়, আশপাশের আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের রাজা-উজিরদের কেউ কেউ ইসরাইলের কথায় উঠ-বস করে। প্রশ্ন আসে ইসরাইলি পরিকল্পনাটি কী? বিভিন্ন দেশে ইহুদি নিধনের প্রেক্ষিতে ১৮৯৬ সালে ইহুদি পণ্ডিত থিউডর হার্জল ইহুদিদের জন্য ইহুদি ধর্মগ্রন্থের নির্দেশনা মাফিক একটি সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা বা নীল নকশা প্রণয়ন করে। তখন থেকেই বিশ্বের ইহুদি নেতৃস্থানীয়দের সমন্বয়ে তার প্রণীত ‘ইহুদি চক্রান্ত’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ড এর বার্সনে ইহুদিদের প্রথম বিশ্ব কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এখান থেকেই শুরু, ১৯৪৮ সালে ‘ইসরাইল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রথম ধাপ সফল হলে পরবর্তী ধাপগুলো একের পর এক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরাইল রাষ্ট্রের সীমানা হবে নীল নদ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত। পশ্চিমে সিরিয়া, দক্ষিণে তুরস্ক। লেবানন, জর্ডান, মিশর, সিরিয়ার বিশাল ভূমি নিয়ে তাদের পরিকল্পিত বৃহত্তর ‘ইসরাইল’ প্রতিষ্ঠা করবে। এ পরিকল্পনায় ইসরাইল হবে সারা বিশ্বের নিয়ন্ত্রক শক্তি। বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে ইহুদিবাদীরা।
সে পরিকল্পনায় তারা অনেকাংশে সফল। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ৬টি মুসলিম দেশ (ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান, ইয়ামেন) প্রায় ধ্বংস করতে সফল হয়েছে। সে পরিকল্পনায় তাদের এখন একমাত্র টার্গেট ইরান। ইরানকে হটিয়ে তাদের বৃহত্তর পরাশক্তি ইসরাইল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর তারা। ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের জন্মের আলামত পেয়েই তা প্রতিরোধের লক্ষে আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে আরব লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালে। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭, ১৯৭৩ সালে চার চারটি যুদ্ধে সব আরব রাষ্ট্র মিলেও যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরাইলের কাছে হেরে যায়। ১৯৬৯ সালে মসজিদুল আকসায় আগুন দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওআইসি (ইসলামি সম্মেলন সংস্থা) প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠনগুলো মিলে পিএলও এর নেতৃত্বে কখনো সশস্ত্র কখনো সংগ্রাম, কখনো সংলাপের মাধ্যমে অনেক চেষ্টা করেও পেয়েছে কেবল নির্যাতন, নির্মমতা, আশ্বাস, আর প্রতারণা। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পরপরই বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (র.) বিশ্ব মুসলিমকে আল কুদস এর মুক্তির লক্ষে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান। তিনি বিশ্বব্যাপী রমজানের শেষ শুক্রবারকে আল কুদস দিবস পালনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ও সংহতি প্রকাশের ডাক দেন। এরই ফলশ্রুতিতে নব্বই এর দশকে ফিলিস্তিনীদের মুক্তি সংগ্রামে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। সৃষ্টি হয় ফিলিস্তিনের আপোসহীন সংগ্রামী কাফেলা ‘হামাস’। ১৯৮৭ সালে শিশু-কিশোরদের ইট-পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিরোধ সংগ্রাম ‘ইন্তিফাদা’। পাশাপাশি লেবাননে সংগঠিত হয় ইসরাইলবিরোধী নতুন ইসলামি কাফেলা হিজবুল্লাহ। যাদের আপোসহীন বিপ্লবী প্রতিরোধে ইসরাইলের বেশ ক‘টি আক্রমণ আগ্রাসন ব্যর্থ হয়েছে। তাইতো চক্রান্তকারী ইহুদিবাদীরা নতুন নতুন নীল নকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা বিশ্বব্যাপী শিয়া-সুন্নি সংঘাত ছড়িয়ে দিয়ে ইরানকে এক ঘরে করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়াকে ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে এবার ইয়ামেন ও সিরিয়াকে টার্গেট করে নতুন যুদ্ধ ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এ ছাড়া আল কায়দা, আইএস ও কুর্দিদের সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করে গোটা মুসলিম বিশ্বকে দোযখের দারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। উদ্দেশ্যে একটাই মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক মানচিত্রের পরির্বতন করে দেওয়া। অনেকগুলো ছোট ছোট দুর্বল রাষ্ট্র তৈরি করে ইসরাইলের মানচিত্র বৃহত্তর করে ইসরাইলকে বিশ্বের নিয়ন্ত্রক শক্তি বানানোর মাধ্যমে যায়নবাদী নীল নকশার বাস্তবায়ন। এ ক্ষেত্রে তাদের বর্তমান প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে ইরান ও তুরস্ক। তাইতো পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে গিয়ে ইরানকে একঘরে করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রয়োজনে ইরানের ওপর সামরিক আগ্রাসনের পথে হাঁটবে বলে হুমকি দিচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার চিরসাথি যুক্তরাষ্ট্র। আজ সময় এসেছে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। লেবানন ও ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সকল মুসলিম ও মানবতাবাদী মানুষকে এ সংগ্রামের পক্ষে সর্বাত্মক সমর্থন জানাতে হবে। হারামাইন শারিফাইন এর নিরাপত্তার নামে মূলত রাজতন্ত্রের প্রতিরক্ষার জন্য তাদের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বের যৌথ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ হয়েছে। অথচ আজ প্রয়োজন ইহুদিবাদের দখলকৃত আমাদের প্রথম কিবলা পবিত্র মসজিদুর আকসা মুক্ত করার লক্ষে মুসলিম বিশ্বের যৌথ বাহিনী গঠন। আমরা আশা করব, মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়নবাদের বিরুদ্ধে আল কুদসকে মুক্ত করার লক্ষে যৌথ প্রতিরোধ আন্দোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বিশ্ব মুসলিমদের সর্বাত্মক সমর্থন ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বের অশুভ শক্তির সৃষ্ট অবৈধ কৃত্রিম রাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলের বিলুপ্তি ঘটানোর মাধ্যমেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, আল কুদস এর মুক্তি এবং বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
সম্পাদক, দৈনিক আজকের ভোলা।
[প্রবন্ধটি গত ৮ জুন, ২০১৮ ঢাকাস্থ বিএমএ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত
আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে পঠিত হয়।]