শনিবার, ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ফার্সি ভাষা শিক্ষা (১ম পর্ব)

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২২, ২০১৫ 

news-image

ফার্সি হলো ইরান ভূখন্ডের ভাষা। অতীতে ইরানের ভৌগোলিক সীমানা ছিল বর্তমানের তুলনায় অনেক বড়ো। বর্তমানেও কিন্তু ফার্সী ভাষা ইরান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের কোনো কোনো অঞ্চল এবং বাহরাইনের মতো পারস্য উপসাগরীয় অনেক দেশে প্রচলিত রয়েছে। প্রায় বিশ কোটি মানুষ ফার্সী ভাষায় কথা বলে। যাই হোক, আমরা তাহলে ভাষা শেখার মূলপাঠে যাবার আগে এ ভাষার সাথে আপনাদের খানিকটা পরিচয় করিয়ে দেই।

আপনারা জানেন যে, ফার্সী ভাষা বেশ প্রাচীন। আপনারা কি বলতে পারেন ফার্সী ভাষার প্রাচীন নিদর্শনগুলো কতো পুরোনো? কিংবা আপনারা কি প্রাচীন ফার্সী সাহিত্য সম্পর্কে জানেন? হ্যাঁ! এইসব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এই আসরে। ফার্সী ভাষা বেশ প্রাচীন হবার কারণে এর ইতিহাসকে তিনটি কালপর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বটিকে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকে তৃতীয় শতাব্দী পর্যন- ধরা হয়। এই পর্বটিকে বলা হয় ফার্সী ভাষার প্রাচীন যুগ। আড়াই হাজার বছর প্রাচীন এই ভাষার বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে। চামড়া, শিলা, মৃৎপাত্র ইত্যাদিতেই নিদর্শনগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে। ইতিহাসবিদ এবং প্রাচীনভাষাবিদগণ ইরানী প্রাচীন ভাষার বহু নিদর্শনকে খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। ফার্সী ভাষা যে বেশ প্রাচীন ও সমৃদ্ধ একটি ভাষা-এইসব মন্তব্য তারি প্রমাণ বহন করে।

ফার্সী ভাষার ইতিহাসের দ্বিতীয় পর্ব বা মধ্যযুগটি হলো খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত। তার মানে এই যুগটি ইরানে ইসলাম আগমনের কিঞ্চিৎ পরবর্তীকাল পর্যন্ত বিসতৃত। সেই সময় ইরানে ফার্সী ভাষার প্রচলন ছিল। এই যুগের ফার্সী ভাষা ও সাহিত্যের বহু নিদর্শন এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। ফার্সী ভাষার ইতিহাসের মধ্যযুগটি মূলত ভাষার পরিবর্তনের একটা সন্ধিক্ষণ। কারণ এ সময়টায় প্রাচীন ফার্সী ভাষা নতুন ফার্সী বা দারী ভাষায় রূপান্তর মেনেছিল।

ফার্সী ভাষার ইতিহাসের তৃতীয় পর্ব অর্থাৎ আধুনিক ফার্সী খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত ইরানে প্রচলিত হয়ে আসছে। সাহিত্য-বিজ্ঞান-ইতিহাস-দর্শন প্রভৃতি ক্ষেত্রে যেসব মহামূল্যবান নিদর্শন ইরানে দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগই এই যুগের।

মানবেতিহাসে দুই হাজার বছরের বেশী প্রাচীন সাহিত্য-দর্শনের ঐতিহ্য ও ইতিহাস সমৃদ্ধ জাতির সংখ্যা খুব কমই আছে। ইরান প্রাচীন সাহিত্য-দর্শনের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের দিক থেকে সমগ্র বিশ্বে একটা বিশেষ অবস্থানে রয়েছে। নিঃসন্দেহে বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমিরা ইরানী সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের কথা শুনে থাকবেন। ফেরদৌসী, খৈয়্যাম, সাদী, হাফেজের মতো বিখ্যাত কবিদের কথা কিংবা ইবনে সীনা, আল-বিরুনী, রাযী এবং ফারাবির মতো মনীষীদের কথা জ্ঞান-বিজ্ঞান যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের সবারই জানা। এঁদের সবাই ফার্সী ভাষায় তাদের লেখালেখি করেছেন। বিশ্বের বুকে এঁদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার কারণে সাহিত্যপ্রেমিরা ফার্সী ভাষার ব্যাপারেও আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

ফার্সী ভাষা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান ভাষা। ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইতিহাস, কালাম বা নীতিবিদ্যা, অধ্যাত্মবিদ্যা, ধর্ম-দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে ফার্সী ভাষায় যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে সেগুলো আজো ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে আকর গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য মুসলমান ইসলাম এবং ইসলামী জ্ঞান ফার্সী ভাষার মাধ্যমেই শিখেছেন। এখনো বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান কেন্দ্রে গবেষণার ক্ষেত্রে এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির পাঠদানের ক্ষেত্রে ফার্সী ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্সী চেয়ার থাকার ঘটনা প্রমাণ করছে যে এ ভাষার প্রতি মানুষের অনুরাগ কতোখানি। ইরানের ইসলামী দিক-নির্দেশনা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ইসলামী সংস্কৃতি ও যোগাযোগ সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফার্সি ভাষা মিষ্টি ভাষা কোর্স পরিচালিত হয়। এরফলে বিভিন্ন জনপদের মানুষ ফার্সী ভাষা ও ইরানী সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাচ্ছে। ইরানের অভ্যন-রেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র ফার্সী ভাষা শেখার বিভিন্ন কোর্স চালু করেছে। এসব ইনস্টিটিউটে বিদেশীরাই ভাষা শেখার জন্যে আসে। ভাষা শেখার পাশাপাশি তারা ইরানের সংস্কৃতি ও সাহিত্যের সাথেও পরিচিত হয়। প্রাচীনত্বের কারণে ফার্সী ভাষা সেই শুরু থেকেই বিভিন্ন পরিবর্তনের মুখে পড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পরিবর্তনটা ছিল মৌখিক অর্থাৎ কথা বলার মধ্যে। কালক্রমে এখনো এই ভাষার দুটি রূপ অর্থাৎ লিখিত এবং মৌখিক রূপে পার্থক্য লক্ষ্যনীয়। আসলেই, ফার্সী ভাষায় কথা বলা এবং পড়া ও লেখার সাথে বেশ পার্থক্য রয়েছে। এ আসরে আপনারা ধীরে ধীরে সেসবের সাথে পরিচিত হবেন ইনশাআল্লাহ। আসলে ভাষা শেখার সবচে বড়ো উদ্দেশ্যই হলো কথা বলা। তো এ আসরে আপনারা মনোযোগী হলে ইনশাআল্লাহ ফার্সী ভাষায় কথা বলতে পারবেন এবং ফার্সীভাষীদের কথাও বুঝতে পারবেন। এ আসরে দুটি প্রধান চরিত্র থাকবে। তাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা কথোপকথন আকারে উপস্থাপন করা হবে। আসরগুলো যদি আপনারা মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করেন, তাহলে নিশ্চয়ই ফার্সী ভাষা শিখতে আপনাদের কষ্ট হবে না। কারণ ফার্সী ভাষা মিষ্টি ভাষা।