ফারসি বিভাগের ইকবাল গবেষণা গ্রন্থ ‘ইকবাল কাব্যে মুসলিম মানস ও মানবতা’
পোস্ট হয়েছে: মে ১৬, ২০২৪

گرچه هندی در عذوبت شکر است
طرز گفتار دری شیرین تر است
پارسی از رفعت اندیشه ام
در خورد با فطرت اندیشه ام.
অর্থ : যদিও হিন্দি ভাষা চিনির মতোই সুমিষ্ট
কিন্তু ফারসি(দারী)ভাষার বাচনভঙ্গি তার চেয়েও অধিক মিষ্ট।
আমার সুউচ্চ চিন্তার বাহন হলো এ ফারসি
কারণ, এ ভাষা আমার স্বভাবজাত চিন্তার সাথে সংগতিপূর্ণ।
আল্লমা ইকবাল পাকিস্তানের জাতীয় কবি। ফারসিতে তিনি অসংখ্য কবিতা রচনা করেছে আর সেকারণেই ইরানিদের কাছে তিনি ইকবাল লাহোরি নামে পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম চিন্তাবিদ,কবি ও দার্শনিক। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হলে হলেও তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিলো প্রাচ্য। প্রাচ্যের মুসলমানদের জন্য ছিলো অগাধ প্রেম ও ভালোবাসা। তিনি যেমন তাঁর কবিতা ও লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন প্রাচ্যের মুসলমানের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শৌর্য-বীর্য তেমনি তুলে ধরেছেন মুসলমানদের দুর্দশা ও অধঃপতনের বিষয়গুলো। উর্দুভাষী হলেও তিনি তার কাব্য চর্চায় প্রাধান্য দিয়েছেন ফারসি ভাষাকে। ইউরোপ গমনের পূর্বে তিনি উর্দু ভাষায় কবিতা রচানা করলেও সেখানে গিয়ে তাঁর মনোজগতে বড় পরিবর্তন ঘটে তিনি ফারসি ভাষায় কবিতা রচনা শুরু করেন। ফারসি কবিতা রচনা মাধ্যমেই জায়গায় করে নিয়ে ফারসি সাহিত্যের বিশাল জগতে । মাতৃভাষা ফারসি না হলেও তার কাব্য প্রতিভার কারণে রচনা করেন অনেক অমর গ্রন্থ। এমনকি তিনি ‘The Development of Metaphysics in Persia'(পারস্যে অধিবিদ্যার অগ্রগতি) শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ফারসি ভাষার আধ্যাত্নিক কবি ‘মাসনাভির’ রচয়িতা জালালুদ্দিন রুমি দ্বারাও তিনি প্রভাবিত ছিলেন। তাকে বিংশ শতাব্দীর রুমিও বলা হয়ে থাকে। আর এই ফারসি ভাষার মাধ্যমেই তিনি তাঁর দর্শন ও চেতনাকে তুলে ধরেছেন। ফলে বাংলাদেশে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পাঠদান করা হয় ইকবাল ও তাঁর কবিতা। তাঁর কবিতা,দর্শন নিয়ে আলোচনা, লেখালেখি ও গবেষণা হয় বিশ্বের নানা প্রান্তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগও এর বাহিরে নয় দার্শনিক এই কবির লেখনি নিয়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড.তারিক জিয়াউর রহমান সিরাজী ‘ইকবাল কাব্যে মুসলিম মানস ও মানবতা’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তারিক জিয়াউর রহমান সিরাজী ১৯৭৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়। তিনি ১৯৯৫ সালে স্নাতক ও ১৯৯৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০০ সালের ১৯ জানুয়ারি ফার্সী ও উর্দু বিভাগে ফারসি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ‘ইকবাল কাব্যে মুসলিম মানস ও মানবতা’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। যেটি ২০১৩ সালে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বইটি আল্লামা ইকবালকে জানতে বাংলাভাষী ইকবাল প্রেমী ও পাঠকদের জন্য এক আকরগ্রন্থ। চার অধ্যায়ে বিভক্ত এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায় : জীবন,মানসিক বিবর্তন ও রচনাবলি (এ অংশে ইকবালের জন্ম, শিক্ষা কর্মজীবন,কাব্যচর্চা,রাজনীতি থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল বিষয়সহ তাঁর প্রকাশিত,অপ্রকাশিত ও পরিকল্পিত রচনাবলির নাম-পরিচিতি ছাড়াও রয়েছে পত্রাবলি ও বক্তৃতা-বিবৃতির সংকলন আর প্রবন্ধসমূহ), দ্বিতীয় অধ্যায় : মুসলিম-মানস সৃষ্টির পটভূমি, তৃতীয় অধ্যায় : ইকবাল কাব্যে মুসলিম মানসের প্রতিফলন (এর মধ্যে আরও রয়েছে ক.মুসলিম-মানসপ্রসূত সৃষ্টিদর্শন খ.খুদী-দর্শন ও তার বিকাশ গ.মুসলিম চিন্তা-দর্শন ঘ.মুসলিম রেনেসাঁ আন্দোলনে অবদান ঙ.ঐক্য ও সংহতি) চতুর্থ অধ্যায় : ইকবাল ও বিশ্বমানবতা। গ্রন্থটির মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ইকবালের মুসলিম-মানস গঠন,কাব্যে এর প্রতিফলন এবং তাঁর কাব্যে মানবতার যে বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে তার বিশদ বর্ণনা প্রদান। বিশেষ করে ইকবালের মুসলিম মানস গঠনের তাৎপর্য,মনীষীবর্গ বা ব্যক্তিবিশেষের প্রভাব ও কারণ বর্ণনার পাশাপাশি তাঁর চিন্তাদর্শনে এর যে প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে তা তুলে ধরা। এ ছাড়া তিনি বিশ্বমানবতার ব্যাপারে যে চিন্তাধারা পোষণ করতেন এবং তাঁর কাব্যের মাধ্যমে বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে বিশেষ করে মুসলিম জাতির কাছে যা উপস্থাপন করেছেন তার বিস্তারিত আলোচনা। নিঃসন্দেহে, গ্রন্থটি ইকবালের চিন্তা ও দর্শনকে জানার ও বোঝার এক অমূল্য সম্পদ।
প্রচারবিমুখ ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের এই গুণী শিক্ষক অধ্যাপক ড. তারিক জিয়াউর রহমান সিরাজীর আরও কিছু বই হলো : ফারসি সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, ফারসি সাহিত্যের ইতিহাস(অনুবাদ গ্রন্থ),চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা(অনুবাদ গ্রন্থ)।
সুজন পারভেজ
শিক্ষার্থী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়