শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

প্রেসিডেন্ট ড. রাঈসীর কর্মবহুল বর্ণাঢ্য জীবন

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২৮, ২০২১ 

 

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসী গত ১৮ই জুন (২০২১) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সর্বোচ্চ ভোট লাভ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তেরোতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এবং সংবিধান অনুযায়ী রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী কর্তৃক তাঁকে মনোনয়নপত্র প্রদানের পর তিনি মজলিসে শূরায়ে ইসলামি (পার্লামেন্ট)-এর অধিবেশনে শপথ গ্রহণের পর পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হিসেবে স্বীয় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রেসিডেন্ট জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে চার বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন এবং এক ব্যক্তি পর পর দুই বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন, অবশ্য এরপর অন্তত এক মেয়াদের বিরতির পর তিনি পুনরায় প্রার্থী হতে পারেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ইবরাহীম রাঈসী প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদের হিসেবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তেরোতম প্রেসিডেন্ট এবং এ পদে নির্বাচিত অষ্টম ব্যক্তি।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন আবুল হাসান বানী সাদ্্র; তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করায় মজলিসে শূরায়ে ইসলামি তাঁকে অনাস্থা প্রদান করলে সংবিধান প্রদত্ত এখতিয়ার বলে ইসলামি বিপ্লবের নেতা ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রথম রাহ্বার হযরত ইমাম খোমেইনী (রা.) তাঁকে অপসারণ করেন। এরপর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহাম্মাদ আলী রাজাই; তিনি ইসলামি বিপ্লবের দুশমনদের দ্বারা সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে শহীদ হন। এরপর তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী; তিনি পর পর দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ইমাম খোমেইনী (র.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি নেতা নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ পরিষদ কর্তৃক প্রার্থিতাবিহীন পদ্ধতিতে রাহ্বার হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর আয়াতুল্লাহ আলী আকবার হাশেমী রাফসানজানী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ খাতামী, ড. মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ও হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন হাসান রুহানি প্রত্যেকে পর পর দুই মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অতঃপর হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন রাঈসী এ পদে নির্বাচিত হলেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন রাঈসী নির্বাচনের প্রথম দফায়ই সর্বোচ্চ ভোট লাভ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন; তিনি মোট এক কোটি আশি লাখ ভোট লাভ করেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিগণ ছিলেন মোহসেন রেযায়ী, আবদুন নাসের হিম্মাতী ও আমীর হোসেন ক্বাযীযাদেহ। ড. রাঈসী পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং এক কোটি ষাট লাখ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। ড. রাঈসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হবার পর পরই তাঁর তিন প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁকে অভিনন্দন জানান।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন রাঈসী অত্যন্ত কর্মবহুল ও বর্ণাঢ্য অতীতের অধিকারী। তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তেরোতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত দেশের বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন।
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসী ১৯৬০ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ইরানের অন্যতম ধর্মীয় নগরী মাশহাদ শহরের নোওগ¦ন মহল্লায় এক দ্বীনদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ও মাতা উভয়ই ছিলেন হোসেইনী সাইয়্যেদ এবং উভয়ই হযরত ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর পুত্র শহীদ হযরত যায়েদ (র.)-এর বংশধর। তাঁর পিতা ছিলেন মাশহাদের সুপরিচিত আলেমগণের অন্যতম। জনাব রাঈসীর পাঁচ বছর বয়সে তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন।
সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসী মাশহাদে প্রাথমিক পর্যায়ের পড়াশুনা শেষ করার পর দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণের জন্য পর পর এ শহরেরই দু’টি দ্বীনী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি তাঁর দ্বীনী শিক্ষা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত ইরানের অন্যতম ধর্মীয় নগরী কোমে চলে যান এবং সেখানকার মাদ্রাসায়ে আয়াতুল্লাহ্ বোরুজারদী-তে ভর্তি হন। এ সময় তিনি হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর ভাই হযরত আয়াতুল্লাহ্ পাসান্দিদে-র মাদ্রাসায়ও পড়াশুনা করেন।
সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসী কোমে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি সেখানকার বিভিন্ন সুপরিচিত মুজতাহিদ আলেমের কাছ থেকে শিক্ষালাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন আয়াতুল্লাহ মিশকীনী, আয়াতুল্লাহ খায আলী, শহীদ আয়াতুল্লাহ মোরতাযা মোতাহহারী, আয়াতুল্লাহ র্মা‘আশী শূশ্তারী, আয়াতুল্লাহ হাশেমী শাহ্রূদী, আয়াতুল্লাহ্ মুজতাবা তেহরানী ও বর্তমান রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ন্যায় মশহুর মুজতাহিদ ব্যক্তিত্বগণ।
ড. রাঈসী ইজতিহাদী ধারার দ্বীনী শিক্ষা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষাও অব্যাহত রাখেন এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন; এ সময় তিনি ارث بلا وارث (ওয়ারিসবিহীন মীরাছ) শীর্ষক একটি থিসিস রচনা করেন। এরপর তিনি ২০০১ সালে তেহরানের মাদ্রাসায়ে ‘আলীয়ে শাহীদ মোতাহহারীতে ডক্টরেট করার জন্য অনুমতি লাভ করেন এবং تعارض اصل و ظاهر در فقه و حقوق (ফিকাহ্ ও আইনে মূলনীতি ও বাহ্যিক তাৎপর্যের সাংঘর্ষিকতা) শিরোনামে থিসিস-এর জন্য ডক্টরেট লাভ করেন।
সংগ্রামী জীবন
সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসী কোমের মাদ্রাসায়ে আয়াতুল্লাহ্ বোরুজারদী-তে অধ্যয়নকালে তখনকার শাহ্পন্থী পত্রিকা ‘দৈনিক এত্তেলাআত’-এ হযরত ইমাম খোমেইনীর প্রতি অবমাননাকর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে সারা ইরানে গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ গণবিক্ষোভের শুরুর দিকেই মাদ্রাসায়ে আয়াতুল্লাহ্ বোরুজারদী-তে একের পর এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হতে থাকে এবং ড. রাঈসী এসব সভায় ও গণবিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক ছোট ছোট বিপ্লবী গ্রুপ গঠিত হয় এবং রাঈসীও এ ধরনের একটি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হন; তিনি এ সময় প্রধানত কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বা নির্বাসিত আলেমগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন।
ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর নবগঠিত ইসলামি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো সংক্রান্ত প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব পালনের উপযোগী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের প্রকট অভাব লক্ষ্য করে শহীদ ড. আয়াতুল্লাহ বেহেশতী এ অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে জনশক্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি কোমের দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্র থেকে সত্তর জন বিশেষ মেধাবী শিক্ষার্থীকে বাছাই করে প্রশিক্ষণ প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন; রাঈসী এই সত্তর জন ছাত্রের একজন ছিলেন। এ সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্সের বেশির ভাগ ক্লাসই তেহরানের মাদ্রাসায়ে ‘আালীয়ে মোতাহহারী-তে অনুষ্ঠিত হতো। এ প্রশিক্ষণ কোর্সে শহীদ আয়াতুল্লাহ বেহেশতী, বর্তমান রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী, আয়াতুল্লাহ মুসাভী আরদেবিলী (যিনি পরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান মনোনীত হন) প্রমুখ শিক্ষাদান করেন।
এরপর ‘মসজিদে সোলায়মান’ শহরে মার্ক্সবাদী বিদ্রোহ সংঘটিত হলে ও এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে সেখানে দ্বীনী সাংস্কৃতিক তৎপরতা চালানোর লক্ষ্যে ড. রাঈসী একদল দ্বীনী শিক্ষার্থীর সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সেখানে গমন করেন। মসজিদে সোলায়মান শহর থেকে কোমে ফিরে আসার পর তিনি শাহ্রূদ শহরে গমন করেন এবং সেখানে একটি রাজনৈতিক ও চৈন্তিক শিক্ষামূলক ফোরাম গঠন করেন। তিনি স্বয়ং কিছুদিন সেটি পরিচালনা করেন।
বিচার বিভাগীয় কর্মজীবন
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসী শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকা অবস্থায়ই এর পাশাপাশি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন এবং এ জন্য বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনকে বেছে নেন। তিনি ১৯৮০ সালে ২০ বছর বয়সে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি তেহরানের পাশর্^বর্তী জিলা শহর কারাজ-এ সহকারি প্রসিকিউটর পদে নিয়োজিত হন। কিন্তু তাঁর এ দায়িত্ব লাভের পর কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর বিশেষ যোগ্যতার পরিচয় লাভ করে ইসলামি বিপ্লবের প্রসিকিউটর জেনারেল শহীদ আয়াতুল্লাহ্ কুদ্দুসী তাঁকে কারাজের প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন। অতঃপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি হামেদান প্রদেশের প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি তেহরানে ইসলামি বিপ্লবের প্রসিকিউটরের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।
ড. রাঈসী তেহরানে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিশেষ যোগ্যতা ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই হযরত ইমাম (র.) রাহ্বার হিসেবে সাংবিধানিক এখতিয়ার বলে ১৯৮৮ সালে ড. রাঈসীকে বিচার বিভাগের কাঠামোর বাইরে থেকে স্বাধীনভাবে লোরেস্তান, কেরমানশাহ্ ও সেমনানসহ দেশের কয়েকটি প্রদেশের বিচার বিষয়ক সমস্যাবলি তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর হযরত ইমাম (র.) কয়েকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নথির বিচারিক ফয়সালার দায়িত্বও তাঁর ওপর অর্পণ করেন।
১৯৮৯ সালে ইমাম খোমেইনীর ইন্তেকালের পর হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী রাহ্বার নির্বাচিত হন। এ সময় বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন আয়াতুল্লাহ্ মোহাম্মাদ ইয়াযদী; তিনি হুজ্জাতুল ইসলাম রাঈসীকে তেহরানের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। ড. রাঈসী ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি জাতীয় তদন্ত সংস্থার প্রধান পদে নিয়োজিত হন এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত দশ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দশ বছর তিনি বিচার বিভাগের উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি ২০১৪ সালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রসিকিউটর জেনারেল পদে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুই বছর এ দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর উপরিউক্ত দায়িত্বসমূহের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিশেষ দায়িত্ব হিসেবে রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর নির্দেশে তিনি ২০১২ সাল থেকে ওলামা সংক্রান্ত বিশেষ প্রসিকিউটর জেনারেল-এর দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এছাড়া ধর্মীয় শহর মাশ্হাদের ওয়াকফ্ সংস্থা ‘অস্তানে কুদসে রাযাভী’র মুতাওয়াল্লী আয়াতুল্লাহ্ ওয়া‘এযীর ইন্তেকালের পর ২০১৪ সালের ৮ই মার্চ রাহ্বারের নির্দেশে ড. রাঈসী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১৭ সালের ৭ই মার্চ পর্যন্ত তিন বছর এ দায়িত্ব পালন করেন।
রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ২০১৭ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসীকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান নিয়োগ করেন এবং প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
দ্বীনী জ্ঞান বিস্তারে তৎপরতা
একজন মুজতাহিদ আলেম হিসেবে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসী বিচার বিভাগীয় ও অন্যান্য দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীর্ঘদিন দ্বীনী ‘ইল্মের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞান বিস্তারের কাজ করেছেন। তিনি অস্তানে কুদসে রাযাভীর মোতাওয়াল্লী হিসেবে মাদ্রাসায়ে নাওয়াব্-এ ফিকাহ্শাস্ত্রের ওপর র্দাসে খারেজ প্রদান করতেন। এছাড়াও তিনি তেহরানের বিভিন্ন দ্বীনী মাদ্রাসায় ও বিশ^বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষত বিচার বিষয়ক ফিকাহ্র কাওয়া‘এদ ও অর্থনৈতিক ফিকাহ্র কাওয়া‘এদ্ সম্পর্কে স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান করেন। তিনি একই সময় একাধিক বিশ^বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতেন; তিনি যেসব বিশ^বিদ্যালয়ে ক্লাস নেন তার মধ্যে ইমাম সাদেক (আ.) বিশ^বিদ্যালয় ও শহীদ বেহেশতী বিশ^বিদ্যালয় অন্যতম।
এছাড়া ড. রাঈসী আইন, অর্থনীতি, ফিকাহ্, সামাজিক সুবিচার, জীবনধারা ও আরো বিভিন্ন বিষয়ে অনেকগুলো গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন।
পারিবারিক জীঁবন
হুজ্জাতুল ইসলাম ড. সাইয়্যেদ ইবরাহীম রাঈসীর সাথে ১৯৮৩ সালে-যখন তাঁর বয়স ২৩ বছর-স্বনামখ্যাত মুজ্তাহিদ হযরত আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ আহ্মাদ্ ‘আলামুল্ হুদার জ্যেষ্ঠা কন্যা ড. জামিলাতুস সাদাত-এর বিবাহ হয়। ড. জামিলাতুস সাদাত তেহরানের শহীদ বেহেশতী বিশ^বিদ্যালয়ের ‘প্রশিক্ষণ দর্শন’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এর আগে তিনি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সর্বোচ্চ পরিষদের মানবিক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা সংস্থার প্রধান ছিলেন।
ড. রাঈসী ও বেগম রাঈসী দু’জন কন্যাসন্তানের পিতা-মাতা। তাঁদের জ্যেষ্ঠা কন্যা বিবাহিতা; তিনি আয্-যাহ্রা (সালামুল্লাহি ‘আলাইহা) বিশ^বিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এবং রেই শাহ্রের হাদিসবিজ্ঞান বিশ^বিদ্যালয় থেকে কোরআন ও হাদিস বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। রাঈসী দম্পতির কনিষ্ঠা কন্যাও বিবাহিতা; তিনি শারীফ বিশ^বিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশুনা করছেন।