শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

পর্যটন শিল্পে ইরানের সাফল্য

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ১৯, ২০২০ 

সাইদুল ইসলাম
ভ্রমণপিপাসু মানুষ একটু সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে নতুন দিগন্তের খোঁজে। পাহাড়, নদী, সাগর বা অরণ্যের সান্নিধ্যে যেতে ছুটে চলে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। জীবনের ব্যস্ত সময় থেকে ছুটি নিয়ে একটু প্রশান্তির খোঁজে ছুটে চলা এসব মানুষকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ ইরান। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্যের দেশ এটি। অনেকে আবার বলেন, ইরানের ইসফাহান শহর দেখলেই যেন পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্য দেখা হয়ে যায়। যেমনটি ফারসিতে বলা হয়ে থাকে, ‘শাহরে ইসফাহান, নেসফে জাহান’।
সত্যিই তাই, পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্য নিয়ে এক ঘোরলাগা প্রাকৃতিক মহুয়া বন, জনশূন্য বিরান মরুভূমি আর এবড়ো-থেবড়ো সুউচ্চ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থান করছে ইসফাহান প্রদেশ। এখানকার উঁচু পাহাড়গুলোর মধ্যে রয়েছে বিদকান এবং সিমানসাফে। সাফাভি শাসনামলের ইরানের রাজধানী ইসফাহানের সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলি আর ইমাম স্কয়ারে ইমাম মসজিদের কারুকার্যময় দেয়ালচিত্র ও চোখধাঁধানো রং-বেরঙের হাজারও বাতির আলোর নাচন কিংবা ‘নাকশে জাহান’-এর স্ফটিকশুভ্র আলোগুলো যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করবে।
ইসফাহান শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে যায়াইন্দে রুদ নদী। নদীটি শহরটিকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। নদীটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত হওয়ায় শহরটি উত্তর-দক্ষিণে বিভক্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ইরানের মধ্যে সবচেয়ে জলটৈটুম্বুর নদী হলো এই যায়াইন্দে রুদ। এ নদীর ওপর তৈরি করা হয়েছে খাজু ব্রিজ বা সেতু, আল্লাভারদিখান সেতু বা সি ও সেহ সেতু ও শাহরেস্তান সেতুÑ যা সত্যি দেখার মতো। সি ও সেহ পুল বা তেত্রিশ দ্বার বা গেটবিশিষ্ট সেতুটি দৈর্ঘ্যে তিনশ’ মিটার আর প্রস্থে চৌদ্দ মিটার। যাইয়ান্দে রুদের ওপরে যতগুলো সেতু আছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে লম্বা সেতু এটি। ইসফাহান শহরে নদীটির ওপর অসংখ্য সেতু ও নদীর দুই পাড় বাধাই করার পাশাপাশি পানির ফোয়ারা ও ফুলের বাগান দিয়ে নদীর দুই ধার এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে কোনো পর্যটক এলে নিঃসন্দেহে তার হৃদয়-মন প্রশান্তিতে ভরে যাবে। এছাড়া এই শহরে রয়েছে বিখ্যাত ফ্লাওয়ার ও বার্ড গার্ডেন। কেউ ইসফাহানের এ দুটি গার্ডেন পরিদর্শন করেছেন, অথচ তা তাঁর স্মৃতির মণিকোঠায় চিরদিনের জন্য ঠাঁই করে নেয়নি এ যেন একেবারেই অবিশ্বাস্য। কারণ, পৃথিবীর এমন কোনো প্রজাতির ফুল নেই যা ইসফাহানের ফ্লাওয়ার গার্ডেনে পাওয়া যাবে না। একইসাথে আপনি যদি ইসফাহানের বার্ড গার্ডেন পরিদর্শন করেন তাও যে আপনার হৃদয়-মন ভরিয়ে দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বার্ড গার্ডেন পরিদর্শনকারীর চারপাশে বিচিত্র রকমের পাখি উন্মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য যে কোনো পর্যটকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে বাধ্য।
একইভাবে ইরানের আরেকটি আকর্ষণীয় নগরী শিরাজের কথা না বললেই নয়। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কাব্য-সাহিত্যের ডানায় ভর করে সম্ভবত পৃথিবীর আর কোনো স্থান এত জনপ্রিয় হয়নি কখনও।
শিরাজ ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ফার্স প্রদেশে অবস্থিত। যাকে বলা হয় গোলাপ, বাগান ও বুলবুলের শহর। যদিও বিশ্ব জনমানসে শিরাজের বেশি পরিচিতি কবি ও কবিতার শহর হিসেবে। কবিরাই হচ্ছেন ইরানের বুলবুল, যাঁদের গান পৃথিবীর কবিরা আজও ফেরি করে ফেরেন। বলা হয়, ইরানেরই আরেক নগরী নিশাপুর (ওমর খৈয়ামের জন্মভূমি) ছাড়া আর কোনো শহর বিশ্বজোড়া এত খ্যাতি লাভ করেনি। শিরাজের যেসব কবি-সাহিত্যিকের কাব্যকৃতী আজো পৃথিবীতে অম্লান, তাঁদের একজন সা’দী শিরাজী এবং অপর জন ‘বুলবুল-ই-শিরাজ’ বা ‘শিরাজের বুলবুল’ বলে খ্যাত মহাকবি হাফিজ।
ইরানের দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানগুলোর অন্যতম হলো ‘তাখ্তে জামশীদ’। পাশ্চাত্যে একে ‘পার্সেপোলিশ’ নামেও অভিহিত করা হয়, যা এই ফার্স প্রদেশেই অবস্থিত। ‘তাখ্তে জামশীদ’ একটি প্রাচীন রাজপ্রাসাদ। ইরানের হাখামানশী বংশের বাদশাহদের এই নগরী প্রাচ্য সভ্যতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে আজো টিকে রয়েছে। কালের বিবর্তনে এই নগরীর জৌলুশ আর নেই। তবে এর ধ্বংসাবশেষ আজো বিশ্ববাসীকে প্রাচীন পারস্য সভ্যতার শৌর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার পর্যটক এই তাখ্তে জামশীদের নিদর্শন দেখার জন্য ইরানে এসে ভিড় করেন।
ইরানের শিরাজ নগরীর উত্তর-পূর্বে ৭৫ কিলোমিটার দূরে বিশাল এক সমভূমির মাঝে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাখ্তে জামশীদের স্তম্ভশ্রেণি।
প্রাচীন ইরানের হাখামানশী রাজবংশ ছিল খুবই বিখ্যাত। এই বংশের বিখ্যাত রাজা ছিলেন প্রথম দারিয়ুস। রাজা প্রথম দারিয়ুসের আমলে হাখামানশী সাম্রাজ্য সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে। তিনি ৫২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। দারিয়ুসই প্রথম তাখ্তে জামশীদ নির্মাণ শুরু করেন।
দেশটিতে এমন আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা একটিমাত্র লেখায় বর্ণনা করা অসম্ভব।
দেশটিতে রয়েছে অসংখ্য বাগান। যেগুলো পরিদর্শনে যেকোনো পর্যটকের মন সত্যি ছুঁয়ে যাবে। এ পর্যন্ত দেশটির ৯টি বাগান বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে ইরানের বাগিচাগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এই বাগিচাগুলোর ডিজাইন চারটি আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত। এগুলোর মাঝখানে রয়েছে পানির ব্যবস্থা যা একদিকে দৃশ্য নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে অপরদিকে বাগানের সজ্জাকৌশল ও স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকেও এই পানির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’ ওই প্রতিবেদনে আরো এসেছে, ইরানের বাগিচাগুলো কাল্পনিকভাবে বেহেশতের বাগানের অনুসরণে তৈরি করা হয়েছে। ইরানের বাগিচা নির্মাণ পদ্ধতি ও সজ্জা কৌশলের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে ভারত এবং স্পেনের মতো দেশগুলোর বাগিচা তৈরির স্টাইলের ওপর ব্যাপকভাবে পড়েছে।
ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত ইরানের নয়টি বাগিচা হলো : বাগে পাসারগাদ, বাগে এরাম, বাগে চেহেল সুতুন, বাগে ফিন, বাগে আব্বাসাবাদ, বাগে শাযদেহ মহন, বাগে দৌলাতাবাদ, বাগে পাহলাভনপুর এবং বাগে আকবারিয়া। মজার ব্যাপার হলো, এইসব বাগিচা ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচিত্র আবহাওয়াময় পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞগণ স্বীকার করেছেন, অঞ্চলগত বৈচিত্র্য, পরিকল্পনা ও ডিজাইন এবং ইরানের ঐতিহাসিক রীতি ও সাংস্কৃতিক শেকড়গুলো এই মনোনয়নের ক্ষেত্রে যে কাজ করেনি তা নয়। এই বাগিচাগুলো ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে গড়ে উঠেছে। সেই হাখামানশী যুগ অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী থেকে দুই শতাব্দী আগের কাজার শাসনামল পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে বাগিচাগুলো তৈরি করা হয়েছে। ইরানিদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের মাঝে বাগিচা সবসময়ই একটি পবিত্র স্থান হিসেবে সম্মানিত ও মর্যাদাময়।
প্রাকৃতিক পরিবেশের দিক থেকে বলতে গেলে দেশটিতে যেমন রয়েছে পাহাড় আর সাগর, তেমনি রয়েছে বিশাল মরুভূমি, কোথাও নদ-নদী, আবার কোথাও সুবিস্তৃত সমতল ভূমি। ভূমি-বৈচিত্র্যের মতো এখানকার আবহাওয়াতেও রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। সারা ইরানে বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীতÑ এই চারটি ঋতু রয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ বিশাল এলাকাজুড়ে যখন প্রচ- শীত কিংবা তুষারাবৃত তখন দক্ষিণে (পারস্য উপসাগর সংলগ্ন) দিব্যি বসন্তের হাওয়া। পাহাড়, সাগর, নদ-নদী আর জঙ্গলাকীর্ণ বৈচিত্র্যময় ভূমি এবং আবহাওয়ার কারণে ইরানে পর্যটকের ভিড়ও লেগে থাকে সারা বছর। ফারসি দৈনিক ‘দোনিয়া-ই-ইকতেসাদ’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের প্রথম তিন মাসে ইরানে মোট ২০ লাখ ৩০ হাজার ৫২৩ জন বিদেশি পর্যটক ইরান ভ্রমণ করেছেন। আগের বছরের একই সময়ে পর্যটকদের এই সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫১ জন। এশিয়ার বহু দেশ, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা থেকেই আসেন বেশি পর্যটক। ইউনেস্কোর হিসাব মতে, ইরান বিশ্বের ১০ম প্রধান পর্যটনের দেশ।

ইরানের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ১১.৮ বিলিয়ন ডলার
ইরানের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফারসি বছর ১৩৯৭ সালে পর্যটন শিল্প থেকে এই অর্থ আয় হয়েছে। ইরানের পর্যটন সংস্থার প্রধান আলি-আসকার মুনেসান এই তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইরান’-এর তথ্যমতে, গত বছর ইরানের জিডিপিতে পর্যটন শিল্প ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবদান রাখতে সক্ষম হয়। এছাড়া একই বছর জিডিপিতে হ্যান্ডিক্রাফ্ট রপ্তানি থেকে যোগ হয় আরও ৬শ মিলিয়ন ডলার।
মুনেসান বলেন, ‘পর্যটন শিল্প থেকে যেসব ক্ষেত্রে লাভবান হওয়া গেছে তার মধ্যে এই খাতে টেকসই কর্মসংস্থানের বিষয়টি অন্যতম। গত বছর ইরানের কর্মসংস্থান তৈরিতে যেসব খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তার অন্যতম ছিল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থা (সিএইচএইচটিও)। গত বছর আমরা ২ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’
বিশ্ব ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ইরানের জিডিপির পরিমাণ ছিল ৪৫৪.০১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সিএইচএইচটিও প্রধান মুনেসান জানান, ফারসি বছর ১৩৯৭ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটকরা ইরান ভ্রমণে ব্যয় করেছেন ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, ‘সময়ের ব্যবধানে বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটন খাত আয়ের তৃতীয় উৎসতে পরিণত হয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশের এই খাতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।’ সিএইচএইচটিও এর তথ্যমতে, গত বছরে আগের বছরের তুলনায় ইরান ভ্রমণ করা পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ। এই বছর সর্বমোট ৭৮ লাখ বিদেশি পর্যটক ইরান ভ্রমণ করেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন গন্তব্য ইরান
২০১৮ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে ইরানকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব পর্যটন সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (ইউএনডব্লিউটিও)। গত বছর আগের বছরের তুলনায় দেশটিতে পর্যটক আগমনের পরিমাণ বাড়ে ৪৯.৯ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে ইরান। ২০১৮ সালের ইউএনডব্লিউটিও-এর বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, মিসর, নেপাল, জর্জিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে ইরান। অন্যদিকে, দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ইকুয়েডর। প্রতিবেদনে বিশ্বের যেসব দেশের পর্যটন প্রবৃদ্ধি সর্বাপেক্ষা বেশি সেসব দেশের পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় তুলে আনা হয়।
র‌্যাঙ্কিংয়ে ইরানের পরে রয়েছে মিসর, যাদের পর্যটক আগমনের হার বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। এরপরে যথাক্রমে উগান্ডার বেড়েছে ৩১.৯ শতাংশ, নেপালের ২৪ শতাংশ, স্লোভেনিয়ার ২৩ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৯.৯ শতাংশ, জর্জিয়ার ১৬.৯ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ১৫.১ শতাংশ।
ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, পর্যটন ও হস্তশিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ইরানি বছরে প্রায় ৭৮ লাখ বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করে ইরান। এই পর্যটক সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
ইরানে বাজার, জাদুঘর, মসজিদ, সেতু, বাথহাউস, মাদ্রাসা, মাযার, গির্জা, টাওয়ার এবং ম্যানসিসের মতো শত শত ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যা বিদেশী পর্যটকদের বেশ জনপ্রিয়। এসব ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে ২২টি দর্শনীয় স্থান।
২০১৯ সালের ট্র্যাভেল রিস্ক ম্যাপে ‘ইনসিগনিফিকেন্ট’ ক্যাটাগরিতে স্থান পায় ইরান। এই বিভাগের দেশটির সাথে আরও রয়েছে যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ড। ট্র্যাভেল রিস্ক ম্যাপে পর্যটন গন্তব্যের দিক দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বিশ্লেষণ করে র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়।
ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই দেশটিকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিশ্বের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে ইরান সরকার এরই মধ্যে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ইরানের নাগরিক ছাড়াও বিদেশি পর্যটকদের নজর কাড়তে দেশটিতে একাধিক নিত্য নতুন ধরনের ওয়াটার পার্ক চালু হচ্ছে। সর্বশেষ ওয়াটার পার্ক চালু হয়েছে ধর্মীয় নগরী কোমে। আধুনিক বিনোদন ব্যবস্থা ছাড়াও সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এসব ওয়াটার পার্কে। ইরানের পৌর সরকার এধরনের বিনোদন কেন্দ্রে সবাইকে বিনোদন পেতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের কাছে ওয়াটার পার্কগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয়। গরমে প্রশান্তি এনে দেয় এসব আয়োজন।
ওয়াটার পার্কগুলোতে বিভিন্ন রংয়ের ব্যবহার নজর কাড়ে সহজেই। সাঁতার কাটা ছাড়াও বিভিন্ন ওয়াটার রাইড বেশ রোমাঞ্চকর। রয়েছে ঝরনা। সুইমিং পুলের পাশাপাশি ধীর কিংবা দ্রুত গতির রাইড রাখা হয়েছে। এধরনের ওয়াটার পার্কে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন ভিন্ন স্থানেÑ যা তাঁদের জন্য সংরক্ষিত। ইসলামি বিধি মেনে এব্যবস্থা করা হয়েছে। মাশহাদ শহরে ‘ওয়াটার ওয়েভ্স ল্যান্ড’ নামে একটি ওয়াটার পার্কে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে ১৭ মার্কিন ডলার। এটি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় ওয়াটার পার্ক।
মাশহাদ শহরেই আরেকটি ওয়াটার পার্ক হচ্ছে আফতাব কোস্ট পার্ক। এটি এ শহরের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওয়াটার পার্ক। চার হাজার বর্গফুট এলাকায় ১৫ হাজার বর্গফুটের অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। সাত তলার একটি কমপ্লেক্স রয়েছে। এ কমপ্লেক্সের একেকটি তলায় বিভিন্ন ধরনের আয়োজন রয়েছে। স্পিড স্লাইস ছাড়াও রয়েছে ১৮ মিটার উঁচু ওয়াটারফল। পাশাপাশি জোড়া স্লাইড রয়েছে। স্পেস হোল ছাড়াও রয়েছে খোলা স্লাইড, শরীরচর্চা ছাড়াও বালির স্টিমবাথসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন।
থ্রিডি মডেলে পুনর্নির্র্মিত হচ্ছে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের ফারস প্রদেশে অবস্থিত ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য পাসারগাদে। এটির অভ্যন্তরে রয়েছে ১৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বেশ কিছু সংখ্যক স্থাপত্যকর্ম।
ঐতিহাসিক কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে সাইরাস দ্যা গ্রেটের সমাধির ধ্বংসাবশেষ, মোজাফফরি সরাইখানা, স্টোন টাওয়ার, তাল থ্রোন, কিং গার্ডেন পানি-নালা, হাখামানশী বাঁধ বোস্তানখানির অংশবিশেষ ও কয়েকটি প্রাসাদ। এতিহাসিক স্থানটি গবেষণা ও শনাক্তকরণের কাজ পরিচালনায় থ্রি-ডাইমেনশনাল মডেল নকশা করা হচ্ছে। ইরানের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের পরিচালক আফশিন ইব্রাহিমি এ তথ্য জানান।
বিদেশী পর্যটকদের জন্য আতিথেয়তার কথা চিন্তা করে ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থা এরইমধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানের হোটেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। যার মাধ্যমে আতিথেয়তার দিক দিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে ইরান। এদিকে ইরানের বিভিন্ন পর্যটন প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইতালীয় পর্যটন শিল্প মালিকসহ ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা। এরইমধ্যে দেশটির ঐতিহাসিক গোরগান শহরের পুনরুজ্জীবন ও সেভেন সিটিজ মার্কেট নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
ইতালীয় পর্যটন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও এর কিছু সদস্য সম্প্রতি ঐতিহাসিক গোরগান শহরের প্রাকৃতিক পর্যটন আকর্ষণগুলো পরিদর্শন করেছেন। তাঁদের এই কর্মকা-কে এই অঞ্চলের পর্যটন সক্ষমতার সাথে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পরিচয় করানোর ভালো সুযোগ হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত। রয়েছে ৩১৯টি এয়ারপোর্ট ও ১৪টি নিজস্ব এয়ারলাইন্স। রাজধানী শহরে রয়েছে আধুনিক পাতাল রেল। রয়েছে উন্নতমানের বাস ও ট্রেন সার্ভিস। দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও আরো আকর্ষণীয় করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ইরান সরকার। সম্প্রতি ইরান রেলওয়ে কোম থেকে মাশহাদে পাঁচ তারকা ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে। এ ট্রেনের নাম দেয়া হয়েছে ‘ফাদাক’। ইরানের বিখ্যাত এ দুটি শহরের মধ্যে মাযার যিয়ারত ও ধর্মীয় তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতে এ ট্রেন সার্ভিস বিশেষ সুবিধা দেবে। ‘ফাদাক’ ট্রেন প্রথমবারের মতো কোম থেকে মাশহাদে পাঁচ তারকা মানের ট্রেনসার্ভিস। কোম থেকে মাশহাদে এবং মাশহাদ থেকে কোমে এ ট্রেন যাতায়াতে প্রতিবার সময় লাগবে ৭ ঘণ্টা।
এ ট্রেন সার্ভিসে উন্নত মানের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। পুরো ট্রেনটিই তৈরি হয়েছে ইরানে। মাশহাদের পর কোম হচ্ছে ইরানের দ্বিতীয় পবিত্র শহর। কোমে হযরত মাসুমা (আ.) এবং মাশহাদে হযরত ইমাম রেযা (আ.)-এর পবিত্র মাযার শরীফে লাখ লাখ ইরানি নাগরিক ছাড়াও বিদেশী পর্যটকরা যিয়ারত করতে আসেন। এদিকে, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ইলেক্ট্রনিক ভিসা (ই-ভিসা ) চালু করেছে ইরান। এর ফলে ভিসাপ্রথায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সবাই নিজ নিজ দেশ থেকে পর্যটক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
হালাল ট্যুরিজম
আজকাল হালাল ট্যুরিজম নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। মুসলিম বিশ্বের গ-ি পেরিয়ে বিষয়টি নিয়ে পাশ্চাত্যেও আলোচনা হচ্ছে। এই রকম একটা প্রেক্ষাপটে মুসলিম বিশ্বে হালাল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে ইরান হয়ে উঠতে পারে মূল কেন্দ্র। ইরানের কালচারাল হেরিটেজ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হ্যান্ডিক্র্যাফ্ট অর্গানাইজেশনের প্রধান বলেছেন, হালাল ট্যুরিজমে ইরান সবার আগে যে জিনিস উপহার দিতে পারে তা হচ্ছে হ্যান্ডিক্র্যাফ্ট বা হস্তশিল্প। তাঁর মতে বিশ্বের পর্যটকদের জন্য ইরানের হস্তশিল্প হতে পারে আকর্ষণের অন্যতম প্রধান বস্তু। তাদের হাতে রয়েছে বিখ্যাত আকিক পাথর, নানা রঙের ক্রিস্টাল পাথর, রয়েছে ভুবনবিখ্যাত কার্পেট, মাটির পাত্র; রয়েছে আকর্ষণীয় সব ক্যালিগ্রাফির চর্চা। এসবকে কেন্দ্র করে হালাল ট্যুরিজমের জন্য নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে চাইছে ইরান।
ইরানের দুই পাশে রয়েছে দুই সাগর অর্থাৎ পারস্য উপসাগর ও কাস্পিয়ান সাগর। রয়েছে বিশাল মরুভূমি, পাহাড়-পর্বত, জঙ্গলাকীর্ণ জনপদ; প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। রয়েছে জাতিসংঘ ঘোষিত বহু ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। এর বাইরে রয়েছে বহু অলি, আউলিয়া, ইমাম ও সাহাবির মাযার। ইরানের মাশহাদ শহরে ইমাম রেযার যে মাযার রয়েছে তাতেই তো প্রতিদিন দেশ-বিদেশের লাখো মানুষের আগমন ঘটে। এছাড়াও বহু মাযার রয়েছে। আছে কোমের মতো ধর্মীয় নগরী।
মেডিক্যাল ট্যুরিজম
মেডিক্যাল ট্যুরিজমেও ইরান ঈর্ষণীয় সাফল্য অজর্ন করেছে। এখন সারা বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মানুষ ইরানে আসছেন চিকিৎসার জন্য। বেশিরভাগ রোগী হলেন ব্রিটেন, সুইডেনসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য নীতিতে চিকিৎসা ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ কারণে ইরানে যেকোনো অপারেশনের ব্যয় তুরস্ক, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক চতুর্থাংশের মতো। তবে গুণগত দিক থেকে এখানকার চিকিৎসা বিশ্বমানের। সেজন্যই বিদেশী রোগীরা ইরানের চিকিৎসার মানের ব্যাপারে সন্তুষ্ট। এছাড়া ইরানি অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক এবং সাধারণ চিকিৎসকগণ বেশ দক্ষ। বিদেশী সহযোগীরা সবসময়ই তাঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে মেডিক্যাল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে কঠোর প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতায় ইরানের অবস্থান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিক্যাল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে এশীয় দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরও করেছে। বছরে প্রায় ২ লাখ রোগী মেডিক্যাল ট্যুরিজমের লক্ষ্যে ইরান সফরে আসেন এবং ইরানের উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছেন। যদিও বর্তমান করোনা মহামারির কারণে অনেক বিদেশী ইরানের এই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে আশা করা হচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইরানের মেডিকেল ট্যুরিজম শিল্পে আরো গতি আসবে।
ইরানের অন্তত ষাটটি হার্ট অপারেশন কেন্দ্রে ওপেন হার্ট সার্জারি হচ্ছে। ইরানের এই চিকিৎসা সেবা বিশ্বের চিকিৎসকগণকে আকৃষ্ট করছে। কেবল ওপেন হার্ট সার্জারিই নয়, আরো বহু জটিল ও মারাত্মক রোগের চিকিৎসা এখন বেশ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হচ্ছে।
চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া বিদেশী পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা আরও সম্প্রসারিত করতে ইরানের খোরাসান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাশহাদ শহরে এ পর্যন্ত ১২টি হাসপাতালকে বিদেশী রোগী ভর্তির লাইসেন্স দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সেখানকার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
মাশহাদ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সের মেডিকেল ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের প্রধান মোহাম্মাদ ইসমাইল খায়ামি বলেন, ১২টি হাসপাতাল বিদেশী রোগী ভর্তির অনুমতি পেয়েছে।
খায়ামির তথ্যমতে, গত ফারসি বছরের প্রথম ছয় মাসে মাশহাদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বিদেশী রোগীর সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
বর্তমানে মধ্য এশিয়া ও আরব দেশগুলো থেকে অনেকে পর্যটক চিকিৎসা সেবায় ইরান ভ্রমণ করেন। ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থার তথ্যমতে, স্বাস্থ্যসেবা পর্যটন থেকে দেশটির বাৎসরিক রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ৪শ’ থেকে ৫শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৫ সাল নাগাদ এই খাত থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দেশটি। ইরানের স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রায় ৪শ’ হাসপাতাল চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। দেশটির ৫ থেকে ৬ লাখ মেডিকেল পর্যটক আকৃষ্টের পরিকল্পনা রয়েছে। ‘২০২৫ ট্যুরিজম ভিশন প্ল্যান’ অনুযায়ী, ইরান ২০২৫ সাল নাগাদ ২ কোটি বিদেশী পর্যটক আকৃষ্টের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০১৪ সালে যেখানে দেশটিতে বিদেশী পর্যটক আগমনের সংখ্যা ছিল ৪৮ লাখ।
বতর্মানে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশে^র পর্যটন শিল্পে ব্যাপক মন্দাবস্থা বিরাজ করছে তখনও পর্যটন শিল্পের গতি ধরে রাখতে ইরানের পর্যটন মন্ত্রণালয় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও)। ইরানের পর্যটন মন্ত্রী আলি-আসগার মুনেসানকে লেখা এক চিঠিতে ইউএনডব্লিউটিও মহাসচিব জুরাব পোলোলিকাশভিল বলেন, পর্যটনের ওপর করোনার প্রভাব কমাতে ইরানের নেয়া পদক্ষেপসমূহ সত্যিকারেই প্রশংসা কুড়িয়েছে।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘ইউএনডব্লিউটিও এর নিকনির্দেশনা ও সুপারিশমালা মোতাবেক ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হস্তশিল্প ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছে। পর্যটনের ওপর প্রভাব কমাতে কার্যকর অনুশীলন চালিয়ে সত্যিকারেই প্রশংসা কুড়িয়েছে।’
১৬ জুন লেখা চিঠিতে পোলোলিকাশভিল ইরানের মুনেসানকে বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে আপনার অসাধারণ নেতৃত্বের প্রশংসা করছি। এই চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে যা গুরুত্বপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মহামারিতে ইরানের পর্যটন মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় দেশব্যাপী ভ্রমণ নিরাপত্তা জোরদারে ধারাবাহিক দিকনির্দেশনা জারি করে। প্রাথমিক পর্যায়েই জরুরি কাজকর্মের জন্য ভ্রমণ বিষয়ক পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয় এবং তা দেশের হোটেল, গেস্ট হাউজ, ইকো-লজ ইউনিট, পর্যটন গন্তব্য, যানবাহন, বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁগুলোতে বাস্তবায়ন করা হয়।
যে বিষয়গুলো দেশটিতে পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে তা হলো ইরানিদের আতিথেয়তা, থাকা-খাওয়ায় স্বল্প ব্যয়, সহজ ও উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, অভিজাত ও ঐতিহ্যবাহী হোটেল, এক ভ্রমণে সব মৌসুমের অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ ও লোভনীয় বিভিন্ন খাবারের স্বাদ। সব মিলিয়ে ইরান ভ্রমণপিপাসুদের জন্য হয়ে উঠেছে অন্যরকম এক আকর্ষণের স্থান।