পর্যটনের লক্ষ্য হোক ইবাদত ও জ্ঞানার্জন
পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ২৭ সেপ্টম্বর পালিত হল বিশ্ব পর্যটন দিবস। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘সকলের জন্য পর্যটন: সার্বজনীন পর্যটনের অভিগম্যতা।’
আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভ্রমণকারীদের সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্রের সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। পারস্পরিক সহনশীলতা, সামাজিক রীতি-নীতি, সাংস্কৃতিক ভাব, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং অর্থনৈতিক চিন্তাধারার উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।
শান্তির ধর্ম ইসলামেও ভ্রমণের নির্দেশনা রয়েছে। ভ্রমণ হতে পারে ইবাদত, বিনোদন কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে। ভ্রমণকে বলা হয় জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। হাজার কর্মব্যস্ততার মাঝে শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য এবং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে, ছোট-বড়, ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে দেশভ্রমণ প্রতিটি মানুষের জন্যই প্রয়োজন।

এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ভ্রমণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার প্রত্যক্ষ নির্দেশের কারণেই ‘ভ্রমণ’ একটি ইবাদতে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় ভ্রমণকালীন ইসলামের বিশেষ কিছু বিধানের দিকে তাকালে। আল্লাহতায়ালা ভ্রমণের সময় নামাজ এবং রোজার ব্যাপারে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজে দুই রাকাত মাফ করেছেন এবং সুন্নত নামাজ ইচ্ছাধীন করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর, তখন নামাজ সংক্ষেপ করলে কোনো দোষ নেই।’ –সূরা নিসা : ১০১
ভ্রমণের কারণে রমজানের রোজা অন্য সময়ে রাখার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। কেউ যদি অসুস্থ হয় অথবা ভ্রমণে থাকে, তাহলে সে যেন অন্য সময় রোজাগুলো পূর্ণ করে নেয় এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনে। (সূরা বাকারা : ১৮৪)
ভ্রমণের সময় অবশ্যই আল্লাহ এবং বান্দার হকের ব্যাপারে সর্বাধিক সজাগ থাকতে হবে। ভ্রমণে সহযাত্রী ও পথচারীদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কোনোভাবেই যেন ভ্রমণসঙ্গী কিংবা পথচারীর সঙ্গে অযাচিত আচরণ প্রকাশ না হয়ে যায়। পথচারীদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা কোরআনের নির্দেশ।
হজ ও ওমরা পালনের জন্য সম্পাদিত ভ্রমণকে সর্বোত্তম ভ্রমণ বলে অভিহিত করা হয় ইসলামে। এরপর ইসলামের দাওয়াত, ইলমে দীন শিক্ষা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও দীনি ভাইদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ইত্যাদির উদ্দেশে সফর করাকেও সওয়াবের কাজ বলা হয়েছে।
তবে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে সফর করার অনুমতি ইসলামি শরিয়ত প্রদান করেনি। যেমন হারাম কিংবা নিষিদ্ধ ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফরসহ কোনো অসৎ কাজ, অশ্লীল বিনোদন ও ফাসাদ সৃষ্টি ইত্যাদির উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ।
ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালাকে জানতে ও বুঝতে হলে ভ্রমণ করতে হবে। ভ্রমণ জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়, মনের সঙ্কীর্ণতা দূর করে, মনে প্রশান্তি আনে। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছেন, ‘ভ্রমণ স্রষ্টার সৃষ্টিরহস্য জানায়, ভ্রমণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। প্রত্যেক মানুষেরই সাধ্যানুসারে কাছে কিংবা দূরে ভ্রমণের মাধ্যমে স্রষ্টার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিকে দেখে অন্তরকে বিকশিত করা উচিত।’
মহান আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি দর্শন, উপার্জন, জ্ঞান আহরণ, রোগ নিরাময় এবং আত্মশুদ্ধির জন্য ভ্রমণ করার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। কেউ যদি সওয়াবের নিয়তে ভ্রমণ করে পুরো ভ্রমণেই তার সওয়াব অর্জন হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য স্বামী-স্ত্রী সপরিবারে বা দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে বা পর্যটনে যাওয়ায় কল্যাণ ও পুণ্য নিহিত রয়েছে। পৃথিবীজুড়ে রয়েছে আল্লাহর কুদরতের নানা কীর্তি। এসব দেখে মানুষ চিন্তা ও গবেষণা করবে। দৃঢ় করবে ইমান ও আমল, তবেই সার্থক হবে তার পর্যটন। বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তাকে জানতে ও বুঝতে হলে ভ্রমণ করতে হবে। সে হিসেবে বলা যায়, আমাদের পর্যটনের লক্ষ্য হোক ইবাদত ও জ্ঞানার্জন।