শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

পর্দা নামল আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসবের

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ২০, ২০১৭ 

news-image

‘মূকাভিনয়কে ক্রিকেটের মতো আরেকটি ‘ব্র্যান্ড অব বাংলাদেশ’ করার প্রত্যয় নিয়ে বুধবার পর্দা নামল আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব ২০১৭ এর। ১৯ এপ্রিল রাতে বিভিন্ন দেশের মূকাভিনয় শিল্পীদের মূকাভিনয় প্রদর্শনী ও পুরস্কার বিতরণীর মধ্যদিয়ে শেষ হয় বর্ণাঢ্য এ উৎসবের।

১৭ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যায় ‘না বলা কথাগুলো না বলেই হোক বলা’-স্লোগান ধারণ করে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে নতুন রূপে তুলে ধরার প্রতিজ্ঞা নিয়ে শুরু হয় আন্তর্জাতিক এই উৎসব। উৎসব আয়োজন করেছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন (ডুমা)।

বাংলাদেশের জন্য তুলনামূলক একটি নতুন শিল্প মাধ্যম হলেও মূকাভিনয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন ব্যাপক হচ্ছে এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের কাছে এই শিল্প সমাদৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন। প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় বছরের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সংগঠনটি এমন একটি বর্ণাঢ্য উৎসব উপহার দিলো বাংলাদেশকে।

গত তিনদিন ছিলো উৎসবের জনপ্রিয় কিছু কর্মসূচি, ছিলো ব্যাপক দর্শক সমাগম। শুরুর দিন নেপাল, গাজীপুরের মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল ও আয়োজক দলের মুগ্ধকরা পরিবেশনার পর দ্বিতীয় দিন সকালে ছিলো বর্ণাঢ্য ৱ্যালি এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় স্ট্রিট শো। এরপর ব্রিটিশ কাউন্সিলের নির্ধারিত ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় মূকাভিনয়ের ওপর কর্মশালা। সন্ধ্যায় শুরু হয় যথারীতি আলোচনা সভা এবং শেষে মূকাভিনয় প্রদর্শনী। ভারতীয় মূকাভিনয় শিল্পীরা তাদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে দেন। এরপর মূকাভিনয় পরিবেশন করেন প্রভাতফেরী চুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার এবং সবশেষে আয়োজক দল মাইম অ্যাকশন।

১৯ এপ্রিল উৎসবের সমাপনী দিনে সকাল থেকে ছিলো ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মূকাভিনয়ের ওপর প্রতিযোগিতা ও পোস্টার প্রদর্শনী। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় মূকাভিনয় বিষয়ক সেমিনার।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী ৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ, স্যার পিজে হার্টজ হলের প্রাধ্যক্ষ মো: লুৎফর রহমান, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাজরিন হুদা, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্সের হেড অব বিজনেস এম. আব্দুল মান্নান, প্রাণ কনফেকশনারী লিমিটেডের ব্রান্ড ম্যানেজর সাজ্জাদ হোসাইন। সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকমনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মূকাভিনেতা মীর লোকমান।

আলোচনা পর্ব শেষেই ছিলো জাপান, শ্রীলংকা, ভারতীয় ও বাংলাদেশের কয়েকটি মূকাভিনয় সংগঠনের শিল্পীদের পরিবেশনা। সবশেষে আয়োজক দল ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের শিল্পীদের পরিবেশনার পর অংশগ্রহণকারী দল ও দেশগুলোর মাঝে পুরস্কার বিতরণের মধ্যদিয়ে পর্দা নামে আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসবের।

প্রসঙ্গত, বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৭ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী ‘প্রথম আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব-২০১৭। অনুষ্ঠান শুরু হয় আয়োজক দেশ বাংলাদেশ সহ অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপাল অ্যাম্বেসির কাউন্সিলর সেক্রেটারি দিল্লী প্রাসাদ আর্চারী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করেন মাইম অ্যাকশনের মডারেটর ফাদার ড. তপন ডি. রোজারিও। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মূকাভিনেতা মীর লোকমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এম এম মনিরুল আলম, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান সুদীপ চক্রবর্তী, প্রাণ কনফেকশনারী লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং সাখওয়াত আহমেদ, বাংলাদেশ মাইম ফেডারেশনের চেয়ারম্যান জাহিদ রিপন প্রমুখ।

তিন দিনের উৎসবে অংশ নিয়েছিল জাপান, ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকার শিল্পীরা। উৎসবে একই সঙ্গে বাংলাদেশের দশটি মূকাভিনয় দল অংশগ্রহণ করে। বর্ণাঢ্য এই উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করেছে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির এটম সুইংগাম, গার্ডিয়ারন লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লি:, রকমারি ডটকম, ব্রিটিশ কাউন্সিল, সেন্টার ফর ইন্টার রিলিজিয়াস এন্ড ইন্টার কালচারাল ডায়ালগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি “না বলা কথাগুলো না বলেই হোক বলা” স্লোগান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর লোকমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে মূকাভিনয় সংগঠন ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন। পথচলার মাত্র ৬ বছরে সংগঠনটি অনেকগুলো জাতীয় মূকাভিনয় উৎসব আয়োজন সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ ও জেলা শহরে ৩ শ এর অধীক মূকাভিনয় প্রদর্শনী করেছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠনটি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক এই উৎসব আয়োজন করলো।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মীর লোকমান শুনালেন স্বপ্নের কথা। বলছিলেন, মূকাভিনয় একটি বৈশ্বিক শিল্প। এটি শুধু বিনোদন মাধ্যমই নয়, প্রতিবাদের হাতিয়ারও। আমরা চাই বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই শিল্পটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠুক। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে মূকাভিনয়কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। আগামীতে ক্রিকেটের মতোই আরেকটি জনপ্রিয় ‘ব্র্যান্ড অব বাংলাদেশ’ হয়ে উঠবে মূকাভিনয়।