শুক্রবার, ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২৮, ২০২১ 

ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান

হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হলেন সর্বশেষ ও বিশ্বনবী। একজন মানুষ হিসেবেও তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব- রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন। তাঁর পবিত্র পয়গাম কোনো বিশেষ জাতি বা ভৌগোলিক পরিসীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না বা নয়। পৃথিবীতে তাঁর আগমন হয়েছিল বিশ্বব্যাপী সকল মানুষের কল্যাণের জন্য। শ্রেষ্ঠতম মানব মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর স্বীকৃতি কেবল পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআন, হাদিস বা মুসলিম মনীষীদের ভাষ্য দ্বারাই স্বীকৃত নয়; বরং বিশ^বরেণ্য অমুসলিম প-িত ও মহান ব্যক্তিরাও তাঁকে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। কেবল একজন ধর্ম প্রচারক হিসেবে নয়, একজন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, শিষ্টাচার, সত্যনিষ্ঠা, তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, রাষ্ট্র পরিচালনায় অনন্য দক্ষতা, মানবতাবাদী চিন্তা দর্শন এবং পরধর্ম সহিষ্ণুতা ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলির অনুপুঙ্খ পর্যালোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে ফরাসি লেখক আলফ্রেড দ্য ল্যামারটাইন, বীরযোদ্ধা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, পাদ্রি বচওয়ার্থ স্মিথ, স্টিফেন, আলফ্রেড টয়েনবী, ঐতিহাসিক এইচ আর গিবন, থমাস কার্লাইল, জর্জ বার্নার্ড শ, আলবার্ট জনসন প্রমুখ অমুসলিম পাশ্চাত্য মনীষিগণও মহানবী (সা.)-এর প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন। মহানবীর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে সহমত পোষণকারী ভারতীয় প-িতদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, প-িত জওহরলাল নেহেরু, স্যার পিসি রাম, স্বামী বিবেকানন্দ, সরোজনী নাইডু, এনি এ বোসান্তÍ, এম এন রায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের নামও প্রসঙ্গত স্মরণযোগ্য। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক লেখক মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ দি হান্ড্রেড-এ পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ যে ১০০ জন মনীষীর জীবনী সংযুক্ত করেছেন সেখানে তিনি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে শীর্ষতম স্থান দিয়েছেন।
মুসলিম জাতির কাছে ১২ রবিউল আউয়াল দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় দিন। কারণ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রসিদ্ধ মতে, মহিমান্বিত এই দিনেই (৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট) হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। বলা বাহুল্য যে, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্ম মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তাঁর জন্মদিনটি মুসলিম জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তাই এ মহিমান্বিত দিনে গোটা পৃথিবীর মুসলিম সমাজ যে ধর্মীয় উৎসব ও আচারের মাধ্যমে বিশেষভাবে আনন্দ প্রকাশ ও মহানবী (সা.)-এর প্রতি তাঁদের সালাম ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে থাকেন- যা ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ নামে পরিচিত। আভিধানিক অর্থে এই ঈদ অর্থ হুজুর পাক (সা.)-এর পবিত্র ‘বেলাদত শরিফ’ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশে^র প্রায় সর্বত্রই যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপিত হচ্ছে। এইদিন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মসজিদে মসজিদে, নিজ নিজ বাড়িতে কুরআন খতম ও জিকির আজগারের মাধ্যমে মহান রাব্বুল ‘আলামীনের বিশেষ রহমত কামনা করেন। এইদিনে বিশেষ আলোচনা সভা ও সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে মহানবীর জীবনচরিত আলোচনা করে ও এর আলোকে নিজেদের জীবন গঠনের অঙ্গিকার করা হয়। ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন কর্মসূচিতে জশনে জুলুস, বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল ইত্যাদির আয়োজনও থাকে। মহানবী (সা.)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে সরকারি ছুটি প্রদান করা হয়। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়ায় ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।

বর্তমান বিশে^ মুসলমান সমাজ নানামুখী বিপদ ও দুরবস্থার মধ্যে আছে। মুসলিম বিশ্ব আজ ক্ষতবিক্ষত। তাদের এ দুরবস্থার অন্যতম কারণ হলো নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ও অনৈক্য। মুসলমানদের মাঝে আজ নানা বিভক্তি বিরাজমান। অথচ সমগ্র মুসলমান এক জাতি। তাদের লক্ষ্য এক। ঈমানের পর ঐক্য ও একতাকে মুসলিম জাতির উপর আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত বলে গণ্য করা হয়। আর বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা হলো তাদের জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি। আর এ কারণেই মহাপবিত্র আল কুরআনে আল্লাহ মুসলিমদের বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হওয়ার পরিবর্তে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১০৩)। মুসলিমগণ যেন বিভেদ সৃষ্টি না করে রাসূলের আনুগত্য করেন পবিত্র কুরআনে সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুবা মুসলমানদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি হারিয়ে তারা শত্রুদের চোখে হেয় প্রতিপন্ন হবে বলেও আল্লাহ পাক সতর্ক করে দিয়েছেন। (সূরা আল আনফাল, আয়াত : ৪৬)। বিশ্বনবী (সা.) নিজেও এ বিষয়ে তাঁর উম্মতদের করণীয় নির্দেশ করে গেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এক এবং তিনি ঐক্য বা একতা পছন্দ করেন। (অষষধয রং ঁহরঃু, ধহফ ষরশবং ঁহরঃু.) এরূপ আরো অনেক হাদিস রয়েছে যেখানে মানব জাতি তথা মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্যের কথা বলা হয়েছে এবং জাতিগত বৈষম্য কঠোরভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনৈক্যের ক্ষতি এবং ঐক্যের গুরুত্ব ও কল্যাণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অনৈক্য থেকে দূরে থাকবে। একাকী থাকা অবস্থায় ভেড়া যেভাবে বাঘের শিকার হয়, তেমনি একাকী অবস্থানরত ব্যক্তিকে শয়তান ঘেরাও করে ফেলে।’
কিন্তু মুসলিম সমাজ কুরআন-হাদিসের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদের দেয়াল তৈরি করেছে। মুসলমানদেরকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য মুসলমানদের শত্রুরাও মুসলমানদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। শিয়া-সুন্নি ভেদাভেদ ও মাজহাবি বিতর্কের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের মাঝে বিদ্বেষ উস্কে দিয়ে অনৈক্যকে দৃঢ়মূল করে তুলছে। ছোট-খাট বিষয় নিয়েও মুসলিম সমাজ অহেতুক বিতর্ক ও বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে। মুসলিম সমাজের এ অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে অমুসলিম বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়া।
বিশ্বনবী (সা.)-এর পর ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে মুসলিম উম্মাহর সর্বজনমান্য অন্য মহাপুরুষ বা ধর্মীয় নেতারাও মুসলিম বিশে^ বিরাজমান এহেন মত-বিরোধ, বিভেদ-বিভক্তি, তিক্ততা-রেষারেষি, হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা-ঘৃণা প্রভৃতি দূরীভূত করে তাদেরকে সুসম্পর্ক ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করার লক্ষ্যে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছেন। তাঁরা ইসলামি ঐক্য ও সহিষ্ণুতার দিকে মানুষকে আহ্বান করেছেন। মুসলিম বিশে^র ঐক্য ও সংহতি বিনির্মাণে যেসব মহৎপ্রাণ ব্যক্তি অবদান চিরস্মরণীয় তাঁদের মধ্যে হযরত আয়াতুল্লাহ্ আল্-উয্মা রুহুল্লাহ্ আল্-মুসাভী ইমাম খোমেইনী (রহ.) ছিলেন অন্যতম। তিনি ছিলেন ইরানের সফল ইসলামি বিপ্লবের মহান নায়ক ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। একজন প্রাজ্ঞ দার্শনিক, রাষ্ট্রচিন্তক ও রাজনীতিজ্ঞ, আপোসহীন বিপ্লবী, একজন উঁচুমানের শিক্ষক, হৃদয়স্পর্শী বক্তা এবং সর্বোপরি একজন অনন্যসাধারণ আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে তিনি বিশ^ময় স্বীকৃত। জগৎ বিখ্যাত দ্যা টাইমস ম্যাগাজিন ১৯৭৯ সালে তাঁকে ‘গধহ ড়ভ ঃযব ুবধৎ’ নির্বাচন করেছিল।
মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্য, শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য ইমাম খোমেইনী (রহ.) যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এর অন্যতম ছিল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে ১২-১৭ রবিউল আউয়াল পর্যন্ত প্রতিবছর মুসলমানদের জন্য ‘ঐক্য সপ্তাহ’ পালনের ঘোষণা প্রদান। মহান ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার বিপ্লবের প্রাণপুরুষ মহান ইমামের নির্দেশে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে ‘ঐক্য সপ্তাহ’ শুরু হয়। ইমাম খোমেইনী (রহ.) ঐক্য, শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলমানদের বিভিন্ন মাজহাব ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংলাপে বিশ^াসী ছিলেন। মাজহাবী বিতর্ক তথা শিয়া-সুন্নি বিরোধ মুসলিম বিশে^র ঐক্য ও প্রগতির পথে একটি শক্ত প্রাচীর হিসেবে কাজ করছে। এ বিরোধকে জিইয়ে রেখে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা নানাভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টারত। মুসলিম উম্মাহর জন্য এ ক্ষতিকর দিক উপলব্ধি করে ইমাম খোমেইনী (রহ.) শিয়া-সুন্নি ও অন্যান্য মাজহাবগত ফেরকা বা বিভেদের ঊর্ধ্বে গোটা মুসলিম জনসমাজকে ঐক্যবদ্ধকরণে আত্মনিয়োগ করেন। মাজহাবী মতপার্থক্য সত্ত্বেও মুসলিম উম্মাহ যেন ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য পরস্পরকে সমর্থন, সাহায্য ও সহযোগিতা করে এবং পারস্পরিক মতপার্থক্যকে এতদূর নিয়ে না যায়- যা থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুরা লাভবান হবে- সে লক্ষ্যে মহান ইমাম সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করেন। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহের আয়োজনের পিছনেও এই উদ্দেশ্য ছিল।
ইসলামি বিপ্লবোত্তর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে প্রতিবছর ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ পালিত হয়। এতদউপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রতিবছর মুসলিম বিশে^র প্রায় প্রতিটি দেশ এবং এর বাইরেও ইউরোপ ও আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধিগণ অংশ নেন। ২০১৮ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত ৩২তম ঐক্য সম্মেলনে বর্তমান নিবন্ধকার নিজেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সে সম্মেলনে শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে তিন শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। এ বছর (২০২১ সালে) ১৯ থেকে ২৪ অক্টোবর তেহরানে অনুষ্ঠিত হয় ৩৫তম ইসলামি ঐক্য সম্মেলন। সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন ইরানের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি। প্রেসিডেন্ট তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় পারস্পরিক মতানৈক্য ও বিরোধ পরিহার করে মুসলিম বিশে^র ঐক্য ও সংহতি জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এবারের ইসলামি ঐক্য সম্মেলনে মুসলিম বিশে^র প্রায় চারশ’ প্রতিনিধি অংশ নেন। ইসলামি ঐক্য সম্মেলনে একত্রিত হয়ে মুসলিম বিশ্বের প্রসিদ্ধ শিয়া ও সুন্নি, আলেম, প-িত ও চিন্তাবিদরা মুসলিম বিশ্বের সর্বশেষ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং মুসলিমদের মাঝে সংহতি জোরদার করার পথ প্রশস্তকরণে দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দেন।
আমরা বর্তমানে এক অস্থির পৃথিবীতে বাস করছি। বিশ^ায়ন এবং তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে বিশ^ব্যাপী চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মুসলিম বিশ^ আজ অনৈক্যের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। নব্য সা¤্রাজ্যবাদের কবলে পড়ে আফ্রিকার তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া এবং এশিয়ার সিরিয়ার, ইরাক, ইয়ামেন ও আফগানিস্তান আজ গৃহযুদ্ধের আগুনে দগ্ধিভূত হচ্ছে। সা¤্রাজ্যবাদীদের মদদপুষ্ট হয়ে একদল বিভ্রান্ত লোক ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে বিশ^দরবারে মুসলমানদের জঙ্গি হিসেবে পরিচিত করানোর অপচেষ্টা করছে। এ থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও আজ আর মুক্ত নেই। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। এর জন্য প্রয়োজন কুরআনের নির্দেশনা এবং মহানবীর জীবনাদর্শ চর্চা এবং অনুসরণের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, বিশ^ শান্তি ও সংহতির লক্ষ্যে কাজ করা।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ করা ইমানের পূর্বশর্ত। এটি আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসাপ্রাপ্তির একমাত্র মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ ইমানদার হবে না যতক্ষণ তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি ও সব মানুষের চেয়ে আপন আর বেশি প্রিয় না হই।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ তোমাদের নিয়ামত দান করেন সেজন্য তোমরা তাঁকে ভালোবাসবে আর তাঁর মহব্বত পাওয়ার জন্য তোমরা আমাকে ভালোবাসবে।’ পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আলে ইমরানের ৩১ ও ১৩২ নং আয়াতেও এ বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে। মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা মানে হলো তাঁর জীবনাদর্শকে অনুসরণ করা। আর মহানবী (সা.) হলেন উত্তম জীবনাদর্শের অধিকারী। এই আদর্শের যথার্থ অনুসরণ, প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইহ ও পারলৌকিক মুক্তি অর্জনের চেষ্টা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসা এবং তাঁর সুপারিশ লাভের জন্য তাঁর নির্দেশিত পথে চলার পাশাপাশি অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পারস্পরিক সংঘাত, বিভেদ ও অনৈক্য পরিহার করে রাসূলের আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা হোক আমাদের প্রত্যয়। আজকের বিশ^বাস্তবতায় এটিই ঈদে মিলাদুন্নবীর বড় শিক্ষা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
লেখক : অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়।