নিরাপদ কোয়ান্টাম যোগাযোগ প্রযুক্তি অর্জন করল ইরান
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ৩০, ২০১৮

বর্তমানে বিজ্ঞানীদের কাছে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে নিরাপদ কোয়ান্টাম যোগাযোগ প্রযুক্তি। এই নতুন ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরও যে ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকল না ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানও। সম্প্রতি দেশটির বিজ্ঞানীরা এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যম।
বুধবার ইরান ন্যাশনাল লেজার সেন্টারে (আইএনএলসি) তেহরানের অর্জন করা নতুন এই প্রযুক্তির উন্মোচন করা হয়। কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্টের জন্য প্রথম পরীক্ষাগারের উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় আইএনএলসির কারাজ ঘাঁটিতে। এতে যোগ দিয়েছিলেন ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা এইওআই এর প্রধান আলি আকবার সালেহি, বিজ্ঞান মন্ত্রী মানৌর গোলামি ও দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সোরেনা সাত্তারি।
সালেহি বলেন, এইওআই এর অন্যতম দায়িত্ব পরমাণু বিজ্ঞানে বিশ্বের সর্বশেষ অগ্রগতিগুলো পর্যালোচনা করা। কোয়ান্টাম এমন একটি প্রযুক্তি সম্প্রতি বিশ্ব যার প্রতি নজর দিয়েছে। ইরানে দুই বছর আগে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হয়। বিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রে যেসব দেশ এগিয়ে গেছে ইরান এখন আর তাদের চেয়ে খুব বেশি দূরে নয় বলে জানান তিনি।
ইরানি এই কর্মকর্তা বলেন, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি কাজ করে পারমাণবিক ও অতি-পারমাণবিক পর্যায়ে। মানুষ প্রাকৃতিক বিষয়ে আজ যেভাবে উপলব্ধি করে তার সঙ্গে এই প্রযুক্তি অসঙ্গতিপূর্ণ। দৃষ্টান্তস্বরূপ তিনি বলেন, যদি একটি শিলা কুয়ার মধ্যে পড়ে তাহলে প্রকৃতিগত ভাবে আমরা প্রত্যাশা করি না যে, সেটি পানির ওপর ভেসে উঠবে। কিন্তু কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে আমরা প্রত্যাশা করি, পাথরটি ভেসে উঠবে।
সালেহি বলেন, এই প্রযুক্তিতে প্রবেশের প্রধান বিষয় হলো ইলেক্ট্রনস ও ফোটনের মতো পারমাণবিক কণাগুলো পৃথক করা। এই কণাদ্বয় এন্টেঙ্গেলমেন্ট তথা জট পাকানো অবস্থায় থাকে। যাদের একটি কণার কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটলে অপর কণাটির মধ্যেও সমভাবে পরিবর্তন ঘটে। তাদের মাধ্যে দূরত্ব যতই হোক না কেন। ফলে আমরা একটি কণায় পরিবর্তন করে দূর-দুরান্তে অবস্থিত অপর এন্টেঙ্গেলড কণাটিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ল্যাবে এই দুই এন্টেঙ্গেলড ফোটনকে পৃথক করেছি। আশা করছি বছর শেষে ৭ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ফোটনদ্বয়ের বিনিময় করতে পারব।
‘‘তথ্য আদান-প্রদানের জন্য এই প্রযুক্তির সুবিধা হলো এতে ক্রিপ্টোগ্রাফিক ডিভাইসের প্রয়োজন হয় না। ফলে কেউ ওই তথ্যে প্রবেশ করতে পারে না’’ বলেন সালেহি।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, চীনা বিজ্ঞানীরা মহাকাশে প্রথম কোয়ান্টাম যোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে এবং তারা ৬শ মাইল দূরত্বের মধ্যে ফোটন বিনিময়ে সক্ষম হয়েছেন। কম্পিউটার, সেন্সরস ও সিমিউলেশন এর মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এইওআই এর প্রধান বলেন, ইরান ন্যাশনাল লেজার সেন্টারের বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট ও ফোটন পৃথক করার জন্য প্রথম পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান প্রথম মুসলিম দেশ এবং সম্ভবত প্রথম উন্নয়নশীল দেশ, যে এই প্রযুক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোয়ান্টাম তথ্য বিজ্ঞান একটি উদীয়মান ক্ষেত্র এবং এটি অনেক সম্ভাবনাময় ব্যবহারিক প্রয়োগের কাজে লাগতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ গতির কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং অত্যন্ত নিরাপদ কোয়ান্টাম যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুটি কণার মধ্যে কোয়ান্টাম যোগাযোগ সহজাতভাবেই নিরাপদ। কেননা, তৃতীয় কোন কণা এর মধ্যে হানা দিলে ফোটনের এন্টেঙ্গেলমেন্ট অবস্থার অবসান ঘটবে এবং খুব সহজে যোগাযোগকারীরা তা বুঝে ফেলতে পারবেন। এই যথাযথ নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য যোগাযোগকারীরা সাংকেতিক বার্তায় এন্টাঙ্গেলড ফোটন ব্যবহার করবেন। সূত্র: মেহর নিউজ এজেন্সি।