নবী বংশের বিদুষী নারী হযরত মাসুমা (সা.আ.)
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১৬, ২০১৮

ইতিহাসের পাতায় যেসব মহীয়সী নারীর কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে,তাদেরই একজন হলেন হযরত মাসুমা (সা.আ.)। তিনি নবী বংশের বিদুষী নারী হিসাবেও স্বনামধন্য হয়েছেন।হযরত মাসুমা (সা.আ.) ১৭৩ হিজরির পহেলা জ্বিলকদ মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইমাম মুসা ইবনে জাফর,যিনি নবী বংশের নবম পুরুষ এবং আহলে বাইতের সপ্তম ইমাম। তাঁর মায়ের নাম নাজমা খাতুন এবং তিনি তার যুগের মহিলাদের মধ্যে সম্মানিত ও পরিশীলিত নারী হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ইমাম রেজা (আ.)’র জন্মের পর তার মা নাজমা খাতুনকে তাহেরা উপাধিতে ভূষিত করা হয়। হযরত মাসুমার আসল নাম হচ্ছে ফাতেমা। কিন্তু পরবর্তীতে তার নানা গুন ও বৈশিষ্ট্যের কারণে ইমাম রেজা (আ.) তাকে ‘মাসুমা’ নামে অভিহিত করেন এবং এর মাধ্যমে হযরত মাসুমার মর্যাদা সবার কাছে প্রতিভাত হয়ে উঠে।
হযরত মাসুমা (সা:) ছিলেন অসাধারণ জ্ঞানী,কুশলী, বাগ্মী, সচেতন ও অত্যন্ত পারঙ্গম শিক্ষক। তিনি যে পরিবারে বেড়ে উঠেছেন তাঁর প্রত্যেকেই ছিলেন,অত্যন্ত জ্ঞানী, বিজ্ঞ,পরিশীলিত ও সম্মানিত। কাজেই এমন পবিত্র পরিবারে জন্ম গ্রহণের ফলে তিনি যে অনন্য সাধারণ ও ক্ষণজন্মা হয়ে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক। হযরত মাসুমা(সা:) তাঁর পিতা ইমাম কাজেম(আ.) এবং ভাই ইমাম রেজা (আ.)’র সংস্পর্শে খুব ছোটবেলা থেকেই জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অত্যন্ত পারদর্শী হয়ে উঠেন। ঐ যুগের অনেক জ্ঞান পিপাসী ব্যক্তি তাঁর সাহচর্য ও তত্ত্বাবধানে অনেক অজানা ও অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান খুঁজে পান। কথিত আছে,পিতার অনুপস্থিতিতে তিনি জনসাধারণের বহু সমস্যা ও প্রশ্নের সমাধান বাতলে দিতেন।
ইমাম রেজা (আ.)’র খোরাসান সফরের এক বছর পর ২০১ হিজরিতে হযরত মাসুমা (সা:) তাঁর বেশ কিছু সঙ্গী সাথী নিয়ে ভাইকে দেখার জন্য খোরাসানের পথে যাত্রা শুরু করেন। যখন তিনি সাভে শহরে পৌঁছেন,তখন বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী যারা কিনা নবী পরিবারের ঘোর শত্রু ছিলেন,তারা হযরত মাসুমার সহযাত্রীদের উপর হামলা চালিয়ে বেশ কিছু লোককে হতাহত করেন। এভাবে সফর সঙ্গীদের মহিলা কয়েকজন সঙ্গী ছাড়া পুরুষদের সবাই শাহাদাত বরন করেন। এ ঘটনায় হযরত মাসুমা অত্যন্ত বেদনাহত ও শোকে বিমর্ষ হয়ে পড়েন। পরে তিনি ইরানের ধর্মীয় নগরী হিসাবে খ্যাত কোমে যান এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেন।
হযরত মাসুমা (সা:) কোম নগরীর জন্য অশেষ কল্যাণ ও সৌভাগ্যের উৎস হয়ে উঠেন। নবী বংশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুরাগী হাজার হাজার নারী পুরুষ এ শহরে জিয়ারতের জন্য সমবেত হতে থাকেন। ফলে অচিরেই কোম নগরী জ্ঞান,ধর্মীয় শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠে। হযরত মাসুমা (সা:)এর মাজারকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠে বহু দ্বীনি মাদ্রাসা ও ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র,আলেম ওলামা, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভে আগ্রহী জনতার পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে এ শহর। আজ পবিত্র কোম নগরীর গুরুত্ব কারো অজানা নয়। হযরত মাসুমা (সা:)এর আধ্যাত্মিক প্রভায় ধন্য পবিত্র এই নগরীর মর্যাদা এখন বিশ্ববাসীর কাছে আগের চেয়ে আরও প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।- পার্সটুডে।