শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

নওরোজ উপলক্ষে রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর বাণী

পোস্ট হয়েছে: মে ১১, ২০১৭ 

بسم‌الله‌الرّحمن‌الرّحیم
বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম

یا مقلّب القلوب و الابصار، یا مدبّر اللّیل و النّهار، یا محوّل الحول و الاحوال، حوّل حالنا الی احسن الحال.
হে অন্তরসমূহ ও চক্ষুসমূহের পরিবর্তনকারী! হে রাত ও দিনের আবর্তনকারী! হে পরিস্থিতি ও অবস্থাসমূহের পটপরিবর্তনকারী! আমাদের অবস্থাকে সুন্দর অবস্থায় পরিবর্তন করে দাও।

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلی فاطِمَةَ وَ اَبیها وَ بَعلِها وَ بَنیها.
‘হে আল্লাহ! হযরত ফাতেমা, তাঁর পিতা, তাঁর স্বামী ও তাঁর সন্তানদের ওপর রহমত নাযিল কর।’ (আওয়ালেমুল উলুম, ১১ খণ্ড, পৃ. ১৪)

হযরত ফাতেমা যাহরা সিদ্দিকায়ে কুবরা (তাঁর ওপর আল্লাহর পক্ষ হতে শান্তি বর্ষিত হোক) এর বরকতময় জন্মদিন এবং নওরোজ উপলক্ষে আপনারা, সকল সম্মানিত স্বদেশবাসীর প্রতি মোবারকবাদ জানাচ্ছি। হে প্রিয় দেশবাসী! মহান ইরানি জাতি! প্রিয় তরুণ সমাজ! হে সর্বস্তরের জনগণ! আপনাদের সবার ঈদ মোবারক হোক। বিশেষ করে শহীদগণ, যুদ্ধাহত পঙ্গু ও আত্মত্যাগীদের প্রতি এবং ঐ সকল জাতির প্রতি, যাঁরা নওরোজের ঈদের সাথে পরিচিত আছেন এবং তা পালন করেন, আপনাদের সবার প্রতি ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।

এই সুযোগ দানের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাচ্ছি যে, তিনি প্রিয় জাতির উদ্দেশে নওরোজের শুভেচ্ছা জানানোর আরো একবার সুযোগ দিয়েছেন। আশা করি, সুন্দর, বরকতপূর্ণ, মোবারক ও জনগণের জন্য কল্যাণ ও নিরাপত্তাসমৃদ্ধ একটি বছর ইরানি জাতির সামনে অপেক্ষায় আছে। নতুন ১৩৯৬ বর্ষ ইনশাআল্লাহ ইরানি জাতি ও দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য একটি আনন্দের বছর হবে। সকল ইরানি পরিবার, প্রিয় জনগণ এই বছরটিতে, এই মুহূর্তে যার সূচনা হয়েছে, আশা করি সবাই আল্লাহর রহমত ও বরকতের মধ্যে শামিল হবেন।
যে বছরটি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিল, অর্থাৎ ১৩৯৫ সাল, যদি তার একটি মূল্যায়ন করতে চাই, তা হলে বলতে হবে যে, অন্যান্য বছরের মতো এই বছরটিতেও আনন্দের উপলক্ষ আছে, দুঃখ-বেদনারও অভিজ্ঞতা আছে। আনন্দ ও বেদনা বলতে জাতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ই বিবেচ্য, ব্যক্তি পর্র্যায়ের কোনো বিষয় এখানে উদ্দেশ্য নয়। গেল বছরে আমাদের আনন্দের বিষয় যেমন ছিল, তেমনি দুঃখ-বেদনাও ছিল। আমাদের আনন্দ ছিল জাতির সম্মান ও মর্যাদার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আনন্দ। এগুলো হলো, জাতীয় নিরাপত্তা, ইরানি জাতির মধ্যে তারুণ্যদীপ্ত মনোবল, দেশের সর্বত্র সর্বব্যাপী ঈমানদারসুলভ তৎপরতা।

ইরান ও আমাদের প্রিয় জাতির মর্যাদা ও সম্মান বিগত ৯৫ সালে বছরের শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত বলবৎ ও দৃশ্যমান ছিল। আমাদের শত্রুরা দুনিয়ার সর্বত্র ইরানি জাতির শক্তিমত্তার কথা, ইরানি জাতির ভাবমূর্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছে। ইরানি জাতি এ বছরে সর্বক্ষেত্রে ও সকল অঙ্গনে নিজের স্বরূপ প্রমাণিত করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পক্ষ হতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি যে একবার অসম্মান দেখানো হলো, তাতে আত্মমর্যাদায় বলিয়ান, প্রাণ উচ্ছ্বল ও সাহসী মনোবলে উজ্জীবিত জনগণ ২২ বাহমানের দিন (অর্থাৎ বিপ্লব বিজয়ের বার্ষিকীর দিনে) তার জবাব দিয়েছে। রমযানুল মোবারক মাসে, কুদ্স দিবসের দিনে, জনগণের বিশাল সমাবেশ এই দেশের স্বরূপ ও লক্ষ্যসমূহ সমগ্র দুনিয়ার সামনে সপ্রমাণিত করেছে।

এতদঞ্চলে তথা আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিরাজমান তরঙ্গবিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে দেশের নিরাপত্তা ছিল ইরানি জাতির জন্য এক বিরাট ও উল্লেখযোগ্য সূচক। আজকের দিনে আমাদের আশেপাশে, যেসব দেশ আমাদের প্রতিবেশী, পূর্ব থেকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের দেশ এবং উত্তর-পশ্চিমের দেশগুলো, সবখানে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। এতদঞ্চল নিরাপত্তাহীনতার শিকার। কিন্তু ইরানি জাতি আল্লাহর শোকর যে, সারা বছরব্যাপী একটি স্থায়ী নিরাপত্তার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

তারুণ্যদীপ্ত মনোবল, যার দিকে আমি ইঙ্গিত করেছি, তা সারা দেশে হাজার হাজার তরুণ দলের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে আহরিত তথ্য ও সরেজমিনে পরিদর্শনের ভিত্তিতে আমি অর্জন করেছি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা থেকে নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তৎপরতা, শরীরচর্চা ও ক্রীড়াঙ্গনে উপস্থিতি, উৎপাদন ও উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার চাকায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের তরুণরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নতুন নতুন কাজ ও আবিষ্কার উদ্ভাবনী যোগ্যতা উপস্থাপন করছে এবং তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় হিসেবে গড়ে তুলছে।

তাদের ঈমানদারসুলভ যে তৎপরতার দিকে আমি ইঙ্গিত করেছি, তাতে আমি যা বোঝাতে চেয়েছি তা হলো, ধর্মীয় সভা সমাবেশ ও অনুষ্ঠানগুলোতে অত্যন্ত উদ্দীপনার সাথে তাদের সক্রিয় ও প্রাণবন্ত উপস্থিতি। পবিত্র ইমামগণ (আ.) সম্পর্কিত বিষয়াদি, ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষসমূহ, ইবাদত-বন্দেগি, এতেকাফসমূহ এবং পবিত্র রমযান মাসের সিয়াম সাধনা, আশুরার চল্লিশা উপলক্ষে দীর্ঘ পদযাত্রা, আশুরা তথা দশই মুহররমের শোকানুষ্ঠানসমূহে উপস্থিতি, এগুলো ছিল আমাদের দেশ ও জাতির জন্য আনন্দের ও অনুপ্রেরণাদায়ক বিষয়।

আমি গেল বছর- যে বছরটিকে আমরা ‘উদ্যোগ ও বাস্তব পদক্ষেপের বছর’ বলে নামকরণ করেছিলাম, (সেই বছরে) সম্মানিত রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, উদ্যোগ ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি সংস্থা গঠন করুন। তাঁরা তা গঠন করেছেন। সৌভাগ্যবশত তাঁরা বেশ ভালো কাজ করেছেন। তার রিপোর্টও আমাদেরকে দিয়েছেন।
প্রতিরোধের অর্থনীতি একটি প্রকল্পসমষ্টি ছিল। এই প্রকল্পসমষ্টিকে যদি নিছক অর্থনীতির নামে গ্রহণ করা হয়, তাতে হয়ত কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে না। আমি এর প্রতিষেধক এর মধ্যেই দেখি যে, এই প্রকল্পসমষ্টিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ‘কী পয়েন্টে’ ভাগ করতে হবে। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ‘কী পয়েন্ট’ এর জন্য একটি সময়সীমা বরাদ্দ করতে হবে। তারপর দায়িত্বশীল কর্মকতা, উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের জনগণের কাছে আবেদন জানাতে হবে, ‘আসুন আমরা আমাদের সমস্ত মনোযোগ ঐ নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ ‘কী পয়েন্ট’ এর ওপর নিবদ্ধ করি।’ আমার মতে এই গুরুত্বপূর্ণ ‘কী পয়েন্ট’ বলতে বুঝায় উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, কর্মসংস্থান, বিশেষ করে যুবক শ্রেণির কর্মসংস্থান। এগুলোই হচ্ছে মূল ‘কী পয়েন্ট’। আমরা যদি এই দুটি ‘কী পয়েন্ট’ এর ওপর (উৎপাদন ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান তথা যুব শ্রেণির কর্মসংস্থান) আমাদের চিন্তা ও তৎপরতাকে কেন্দ্রীভূত করতে পারি, আর এর ভিত্তিতে কাজগুলোকে শ্রেণিবিন্যস্ত করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করি, তাহলে অনুমান করা যায় যে, কাজগুলো বিরাট পরিমাণে সম্মুখে অগ্রসর হবে এবং উল্লেখযোগ্য ও অনুভবনীয় সাফল্য অর্জিত হবে।

আমি আমার বক্তব্যে ইনশাআল্লাহ এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ও ‘কী পয়েন্ট’ এর যে যে বৈশিষ্ট্য হতে পারে সে সম্পর্কে পরবর্তীকালে ব্যাখ্যা দেব। কাজেই আমি এই বছরের স্লোগান হিসেবে ‘প্রতিরোধের অর্থনীতি, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান’ নির্ধারণ করতে চাই। অর্থাৎ প্রতিরোধের অর্থনীতি হচ্ছে সামগ্রিক শিরোনাম। এরপর উৎপাদন ও কর্মসংস্থান। এই সামষ্টিক বিষয়টির প্রতি আমাদের সবার মনোযোগ নিবদ্ধ করা উচিত। দেশের সম্মানিত ও প্রিয় দায়িত্বশীলবর্গের কাছে আমার ও জনগণের দাবি হচ্ছে, এই দুটি বিষয়ের ওপর তাঁরা কেন্দ্রীভূত হোন। কাজগুলো তাঁরা পূর্ব পরিকল্পনার ভিত্তিতে আঞ্জাম দিন। ইনশাআল্লাহ তাঁরা বছর শেষে কাজের ফলাফল সম্পর্কে জনগণের কাছে রিপোর্ট দেবেন।
আমি আশা করি, আপনারা সবার জন্য হযরত বাকিয়াতুল্লাহ ইমাম মাহদী (তাঁর জন্য আমাদের প্রাণ উৎসর্গিত) এর দয়াদৃষ্টি ও শহীদানের পবিত্র রূহ ও মহান ইমামের রূহানি দোয়ার বরকতে সামনের বছরটি হবে আনন্দময়, নিরাপত্তা ও জনকল্যাণসমৃদ্ধ। একান্ত আশা, আমরা আগামী বছরটিকে সেভাবেই অতিক্রম করতে পারব।
ওয়াস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
[সংক্ষেপিত]