দর্শকনন্দিত ইরানি সিরিয়াল ইউসুফ জুলেখা
পোস্ট হয়েছে: মার্চ ৮, ২০১৭
আমিন আল আসাদ
‘আলিফ-লাম-রা- এগুলো হচ্ছে একটি সুস্পস্ট গ্রন্থের আয়াত। নিঃসন্দেহে আমি একে আরবি কোরআন হিসেবে নাযিল করেছি। যেন তোমরা তা অনুধাবন করতে পার। হে নবী (সা.)! আমি তোমাকে কোরআনের মাধ্যমে একটি সুন্দর কাহিনী শোনাতে চাচ্ছি যা তোমার কাছে ওহি হিসেবে পাঠিয়েছি। অথচ এর আগ পর্যন্ত তুমি এ কাহিনী সম্পর্কে ছিলে বেখবর।এটা হচ্ছে সে সময়ের কথা যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল : ‘হে আমার পিতা! আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারোটি তারা ও চাঁদ-সূর্য আমার প্রতি সেজদাবনত।’ শুনে তার পিতা তাকে বলল : ‘হে আমার পুত্র! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বলে দিও না। তারা তোমার প্রতি ষড়যন্ত্র ও বিদ্বেষে লিপ্ত হবে। কারণ, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন।’
সূরা ইউসুফের এই আয়াতগুলো দ্বারাই আরম্ভ হয় দর্শকনন্দিত ইরানি সিরিয়াল ‘ইউসুফ জুলেখা’র প্রতিটি পর্ব। বাংলায় ডাবিংকৃত এ সিরিয়ালটি গত ২৭ নভেম্বর ২০১৬ থেকে বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল এস এ টিভিতে প্রতি রবিবার থেকে বৃহস্পতিবারে রাত ৮.৪০ মিনিটে প্রদর্শিত হচ্ছে। পুনঃপ্রচার করা হয় রাত ১২.৩০ মিনিটে। এছাড়াও প্রতি শনিবার দুপুর ২.৩০ মিনিটে গত সপ্তাহের প্রদর্শিত পাঁচ দিনের পর্বগুলো পুনঃপ্রদর্শিত হয়। বাংলায় ডাবিংকৃত এ সিরিয়ালটি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মুসলমানদের নবী ইয়াকুব (আ.) ও তাঁর পুত্র ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে নির্মিত।
জ্ঞানের মাধ্যম হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়া, প্রকাশনা, বই-পুস্তক তো রয়েছেই এবং তা থাকবে। কিন্তু বিজ্ঞানের এ যুগে সবচেয়ে শক্তিশালী মিডিয়া হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। মানুষের চিন্তা-চেতনা, বোধ-বিশ্বাস, ধর্মানুভূতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয়আসয় এ মিডিয়ার মাধ্যমে জনমনে প্রসারিত করা যায় সবচেয়ে দ্রুত। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার এ যুগে একটি শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একবার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন : ‘আমি সারাদেশ ঘুরে ঘুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে যে জিনিস মানুষকে বোঝাতে পারি না তা এক ঘণ্টার একটি সিনেমা মানুষকে বোঝাতে সক্ষম। মনে হয় আমাকে চলচ্চিত্রই নির্মাণ করতে হবে।’
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার এই গুরুত্বের কথা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ভালোভাবেই ওয়াকেবহাল। তাই ইরানের আলেম ও জ্ঞানীগুণী চিন্তাবিদগণ ইসলামের রাজনৈতিক, সামাজিক, তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক বিপ্লবের সাথে সাথে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিপ্লব সম্পন্ন করেছেন সফলতার সাথে। ইরানের সিনেমাগুলো সবসময়ই দর্শকনন্দিত ও আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়। ইরানের সামাজিক সিনেমাগুলো যেমনিভাবে শিল্পমানে উত্তীর্ণ, তেমনি সেখানে থাকে নানা মানবিক ও আদর্শিক আবেদন। ইরান বিভিন্ন সময়ে ইসলাম ও জাতীয় ইতিহাসভিত্তিক সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। ইতিপূর্বে কারবালার ইতিহাসনির্ভর ‘দূত’ ও ‘পতাকাবাহী’, জীবনভিত্তিক সিনেমা ‘হযরত আলী’, ‘ইবনে সীনা’, কোরআনের ঘটনানির্ভর সিনেমা ‘আসহাবে কাহ্ফ’, ‘মারইয়াম মোকাদ্দাস’ দর্শকনন্দিত হয়েছে। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের জীবনভিত্তিক একটি ফারসি সিনেমাও আমরা লক্ষ্য করেছি যা ইরানের একটি চলচ্চিত্র কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত হয়েছে। আর কিছুদিন পূর্বে ইরানের বিখ্যাত ও বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা মাজিদ মাজিদি সর্বকালের সবশ্রেষ্ঠ মানুষ মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে নিয়ে যে অসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তা সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছে।
আমাদের আলোচ্য সিরিয়াল ইউসুল জুলেখা সিরিয়ালটি সাসানি যুগের বিখ্যাত সুন্নি আলেম ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদ মুহাম্মাদ ইবনে জারির তাবারীর বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ ‘তাফসীরে তাবারী’ ও খ্যাতনামা তাফসিরকার ইবনে কাসিরের ‘তাফসিরে ইবনে কাসির’ গ্রন্থে বর্ণিত নবী হযরত ইউসুফ (আ.)-এর বিস্তারিত জীবনী থেকে ধারাবাহিক রূপ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সহযোগিতা নেয়া হয়েছে হযরত ইউসুফ (আ.) ও জুলেখার স্বতন্ত্র কাহিনী গ্রন্থগুলোর। হযরত ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের এই ঘটনা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে। এছাড়া এটি তাওরাত গ্রন্থেও আছে।
হযরত ইউসুফ (আ.) ছিলেন আল্লাহর নবী। তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর ইয়াকুব (আ.)-এর সন্তান। তিনি ও তাঁর ছোটভাই বেনিয়ামিন হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আরো দশ ভাই ছিল যারা অন্য মাতার সন্তান। হযরত ইউসুফ ছিলেন অপূর্ব সুন্দর এক যুবক এবং পূতঃপবিত্র চরিত্রের অধিকারী। কিশোর বয়সে তিনি স্বপ্ন দেখেন, এগারোটি তারা ও চাঁদ-সূর্য তাঁর প্রতি মাথা ঝুকিয়ে দিয়েছে। সেই স্বপ্ন তাঁর নবী ও শাসক হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। পিতা তাঁকে সেই স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে নিষেধ করলেও পিতার কাছে তা ব্যক্ত করার সময় আড়াল থেকে শ্রোতার মাধ্যমে তা জানাজানি হয়ে যায়। তাঁর ভাইয়েরা তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে হত্যার নিমিত্তে প্রহার করে ও এক পর্যায়ে একটি কুয়ায় নিক্ষেপ করে। বাঘ ইউসুফকে খেয়ে ফেলেছে বলে তারা তাদের পিতাকে মিথ্যা সংবাদ দেয়। একটি কাফেলা বালক ইউসুফকে সেই কুয়া থেকে উদ্ধার করে মিশরের প্রভাবশালী উযির পুতিফারের কাছে বিক্রয় করে দেয়। ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকেন ইউসুফ। তাঁর রূপ, গুণ ও আচার-ব্যবহারের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যজুড়ে। উজিরের স্ত্রী ইউসুফের রূপ, গুণ ও যৌবনে মুগ্ধ হয়ে তাঁর প্রেমে পড়েন। প্রাসাদজুড়ে সেই কাহিনী ছড়িয়ে পড়লে উযিরের স্ত্রী সমালোচনায় পড়েন। তিনি রাজ্যের অভিজাত নারীদেরকে দাওয়াত করে প্রত্যেকের হাতে একটি ফল ও ছুড়ি দিয়ে ফল কাটার আহ্বান করেন। ঘরের একপাশ থেকে ইউসুফকে ঘরের ভেতর প্রবেশ করার হুকুম দিলে ইউসুফ সেই ঘরে প্রবেশ করেন। ইউসুফকে দেখে সেই সম্ভ্রান্ত নারীরা ফলের পরিবর্তে নিজ নিজ আঙ্গুল কেটে ফেলেন।
পরবর্তীকালে ইউসুফকে সেই নারী অনৈতিকভাবে কামনা করলে আল্লাহর নবী পূতঃপবিত্র চরিত্রের ইউসুফ তা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে পাঠান। ইউসুফ (আ.) সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে নির্দ্বিধায় জেলযুলুম সহ্য করতে থাকেন। ইউসুফকে একটিবারের জন্যও জুলেখার প্রতি অনৈতিক আকাক্সক্ষায় মনোনিবেশ করতে দেখা যায় না। কারণ, তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী। তিনি বরং জুলেখা ও তার বান্ধবীদেরকে তওবা করে এক খোদায় বিশ্বাস স্থাপন ও খোদার প্রেমে আকৃষ্ট হতে বলতেন। জেলখানায় অবস্থান করে ইউসুফ রাজার দেখা একটি বিশেষ স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ায় তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে প্রধান উযিরের পদ দেয়া হয়। এভাবেই ঘটনা গড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ইউসুফের ভাইয়েরা মিশর দেশের রাজ-দরবারে খাদ্যসামগ্রী নিতে আসে। ই্উসুফ তাঁর ভাইদেরকে চিনতে পারেন। পরবর্তীতে নাটকীয়ভাবে ইউসুফ তাঁর ভাইদের কাছে পরিচয় ব্যক্ত করেন। বাবা ইয়াকুব (আ.)-এর সাথেও তাঁর দেখা হয়। এভাবেই সুখ-দুঃখ, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগুতে থাকে ইরানের বিখ্যাত টিভি সিরিয়াল ইউসুফ নবীর কাহিনী। সিরিয়ালটির পরিচালক ফারাজুল্লাহ সালাহশুরী আত্ তাবারী তাফসির গ্রন্থের হুবহু কাহিনী তাঁর সিরিয়ালটিতে তুলে ধরেছেন। সিরিয়ালটি ইতিমধ্যে ইরানের বাইরে ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক, মিশর, লেবানন, পাকিস্তান, আফগানিস্থানে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। জনপ্রিয় এই টিভি সিরিয়ালটির বাংলায় অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মুমিত আল রশিদ। যিনি বর্তমানে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য ইরানে অবস্থান করছেন। তিনি ইরানের তারবিয়াত মোদাররেস বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
৪৫ পর্বের এই ধারাবাহিকটিতে দর্শক পাবেন নবীযুগের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা। দেখতে পাবেন ইসলাম-বহির্ভূত পৌত্তলিক ধর্মের নানা কাল্পনিক বিশ্বাস যা তাওহিদী বিশ্বাসের কাছে পড়াভূত হয়েছে। পাবেন বাবেল, কেনান, শাম, মিশরের নানা ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্ত্বিক আবহ যা দর্শককে ইতিহাসের আনাচে কানাচে নিয়ে যাবে। প্রাচীন যুগের দাস প্রথা, খাবার, বাণিজ্যিক ভ্রমণের দৃশ্য। প্রাচীন আরবের রাজ্যব্যবস্থা, জীবনব্যবস্থা, রীতিনীতি, ধু ধু মরুভূমি, মরুভূমিতে ভেড়া চড়ানোর দৃশ্য, মমি, পিরামিডের ইতিহাস ইত্যাদি। পোশাক-পবিচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জায় ইসলামি নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখা হয়েছে যা বাংলাদেশে প্রচলিত সিরিয়ালগুলো থেকে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। সিরিয়ালটিতে কোন ধর্মমতকে আঘাত করা হয় নি। যৌক্তিকভাবে তাওহীদবাদকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বড় ইউসুফের ভূমিকায় অভিনয় করছেন মোস্তফা যামানি, ছোট ইউসুফের ভূমিকায় অভিনয় করেন হোসাইন জাফারি, জুলেখার ভূমিকায় কাতায়ুন রিয়াহি, ইয়াকুব (আ.)-এর ভূমিকায় মোহাম্মাদ পাক নিয়্যাত, পুতিফারের ভূমিকায় জাফর দেহকান, অনেখ মহেুর ভূমিকায় আব্বাস আমিরি ও অখন অতুনের ভূমিকায় করছেন রাহিম নওরোযি।
সিরিয়ালটির পা-ুলিপি তৈরি করেন পরিচালক ফারাজুল্লাহ সালাহসুরী স্বয়ং। এছাড়া পা-ুলিপি উপদেষ্টা ওস্তাদ মানসুর বেরাহিমী, মঞ্চ পরিচালক রহিম মানসুরী, সাজসজ্জা সমন্বয়কারী : কাজেম ফারি বুরুজী, ভাস্কর্য নির্মাতা : দারিউস মির্জায়ী, সংগ্রহকারী পরিচালক : নাদের কানবারী, আলোকচিত্র গ্রাহক : মোহাম্মদ হাসান নমি, টেকনিক্যাল সাপোর্ট : বাহমান দাদাসি, ক্যামেরাম্যান : নাসের কাভুসি, সহকারী ক্যামেরাম্যান : আহমেদ কাভাসি, ভিজুয়াল ইফেক্টস : সাইয়্যেদ আমির রেযা মোতামেদী, স্পেশাল ইফেক্ট : মোহসেন রুজ বাহানি, মঞ্চসজ্জা ও দৃশ্যপট চিত্রক : ফরহাদ আলী যাদেহ, পোশাক ডিজাইনার : যাদেহ জাকি যাদেহ, সহকারী পরিচালক : আতাউল্লাহ সালমানিয়ান, পরিচালকের পরামর্শক : জামাল সুরুজে প্রমুখ। প্রত্যেকের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা সিরিয়ালটিকে আলোর মুখ দেখিয়েছে।
ইতিপূর্বে আমাদের দেশে প্রচারিত ‘দি সোর্ড অব টিপু সুলতান’, ‘আকবর দি গ্রেট’ মুসলিম ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নির্মিত। ‘হাতেম তাই’, ‘আলেফ লায়লা’, ‘সিন্দবাদ’কেও আমরা এই বলে নিন্দা জানাচ্ছি না যে, সেগুলো কেবল কাল্পনিক ঘটনার ওপর নির্মিত। সেসব কাল্পনিক ঘটনার ভেতরেও সত্য মিশ্রিত আছে। আছে ইশারা-ইঙ্গিতে নানা ভঙ্গিতে কোন না কোন নৈতিক আবহ। কিন্ত ইউসুফ জুলেখা সিরিয়ালটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনার ওপর নির্মিত। কোন কাল্পনিক গল্পের সংযোগ নেই এখানে। উল্লেখ্য, দৈনিক পত্রিকার কোন কোন পর্যালোচনামূলক নিবন্ধে এই সিরিয়ালটিকে মধ্যযুগের বাংলাসাহিত্যের ইউসুফ-জুলেখা উপাখ্যাননির্ভর বলে বর্ণনা করেছেনÑ যা আদৌ ঠিক নয়। সাহিত্যধর্মী ইউসুফ-জুলেখা উপাখ্যানে অনেক কাল্পনিক চিন্তার সংমিশ্রণ ঘটেছে যার সাথে ইউসুফ-জুলেখা সিরিয়ালের কোন সম্পর্ক নেই। কেউ কেউ আবার নবীজীবনের কাহিনীর প্রেমনির্ভর চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে কাল্পনিক কথাবার্তার ডালপালা ছড়াচ্ছেন। অথচ প্রকৃত ব্যাপার হলো হযরত ইউসুফ (আ.) জুলেখার সাথে প্রেম করেন নি এবং এই সিরিয়ালে এধরনের কিছুই নেই। যেটা প্রতিষ্ঠিত সত্য তা হলো জুলেখা হযরত ইউসুফের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং তাঁকে অনৈতিকভাবে কাছে পেতে চেয়েছিল। কিন্তু হযরত ইউসুফ তার ডাকে সাড়া দেন নি, যার জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। সিরিয়ালটিতে এই সত্যের বাইরে কিছুই ফুটিয়ে তোলা হয় নি। বরং পুরো সিরিয়ালটিতে সত্যধর্ম, খোদাপরিচিতিকে উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তথা নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলোই দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাই সকলের প্রতি আহ্বান সিরিয়ালটি নিজে দেখে তারপর মূল্যায়ন করুন। আর একটি বিষয় হলোÑ ইরানি সিরিয়ালটির নাম হলো ‘নবী ইউসুফ (আ.)’; এসএ টিভি এটিকে বাংলায় ডাবিং করে নাম দিয়েছে ‘ইউসুফ-জুলেখা’। এই নামকরণটিও কতিপয় মূল্যায়নকারীকে প্রেমকেন্দ্রিকতার আবহ সৃষ্টি করেছে। আমাদের মতে নামকরণটি হুবহু ‘নবী ইউসুফ (আ.)’ রাখলেই ভালো হতো।
এদিকে শিল্প বোদ্ধাদের মতে, ‘আলেফ লায়লা’র মতো ‘শাহনামা’ নিয়েও মেগা সিরিয়াল নির্মিত হওয়া দরকার। ‘মসনবী’র ছোট ছোট গল্প নিয়েও নাটক, নাটিকা বা চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যেতে পারে। কিংবা শেখ সাদীর ‘গুলিস্তাঁ’, ‘বোস্তাঁ’র গল্পগুলো থেকে অথবা ফরিদ উদ্দিন আত্তার রচিত ‘তাজকেরাতুল আওলিয়া’, ‘পান্দনামা’, ‘মানতেকুত তাইয়্যার’ গ্রন্থগুলোর কাহিনী নিয়ে। আমরাও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অমূল্য চরিত্র ইশা খাঁ, সুলতান গিয়াস্্্্্্্্্উদ্দিন আজম শাহ, তিতুমীর, ফকির মজনু শাহ প্রমুখকে নিয়ে সিরিয়াল তৈরি করতে পারি।