তেহরানে ব্যাংক-পরিচালিত দর্শনীয় তিন জাদুঘর
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ৬, ২০১৮
তেহরানের ইমাম খোমেইনী সড়কের দুপাশে শোভা পাচ্ছে বড় বড় কিছু সংখ্যক ভবন। সড়কটি আগে ‘সেপাহ সড়ক’ নামে পরিচিত ছিল। সেখানকার ভবনগুলো বর্তমানে আকর্ষণীয় জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে। আর জাদুঘরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে কিছু ব্যাংক।
ব্যাংক পরিচালিত দর্শনীয় এসব জাদুঘরের মধ্য থেকে সুপরিচিত তিনটি জাদুঘর সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো।
ন্যাশনাল জুয়েলারি মিউজিয়াম
ভিন্ন রকম বৈচিত্র্য আর আকর্ষণীয় রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ন্যাশনাল জুয়েলারি মিউজিয়াম। অদ্বিতীয় মূল্যমানের জাদুঘরটি তৈরি করা হয় প্রায় ৫শ বছর আগে। এর রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজ করছে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইরান।
জাদুঘরটি কয়েক শতাব্দীর পুরনো সিংহাসন থেকে শুরু করে দীপ্তমান দুর্লভ সব মণিমুক্তায় ভরপুর। এর সম্পদ ভাণ্ডারে রয়েছে অতুলনীয় সব জুয়েলারি সামগ্রী। সাফাভী রাজবংশের রাজাদের নির্দেশে এগুলো সংগ্রহ করা হয়। তখনকার জুয়েলারি বিশেষজ্ঞরা এসব গহনা সামগ্রী ভারত ও অটোম্যান সাম্রাজ্যের বাজার থেকে সংগ্রহ করেন। এছাড়া ফ্রান্স ও ইতালির মতো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে জুয়েলারি এনে সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়। ১৬ শতকের শুরু থেকেই তৎকালীন রাজধানী ইসফাহানে এগুলো একত্রিত করা হয়।
বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহত কাটা হীরার নাম দারিয়া-ই-নুর (আলোর সমুদ্র)। যা রয়েছে এই জাদুঘরটিতে। দারিয়া-ই-নুরের কাছাকাছি মূল্যবানের হীরা কুহ-ই-নুরের উপস্থিতিও রয়েছে এখানে। আলোর পর্বত নামের এই হীরাটি এখন ব্রিটিশ রাজকীয় জুয়েলারির অংশ। এর বাইরেও রয়েছে আরও বহু মূল্যবান গহনা সামগ্রী যার আসলে মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
সেন্ট্রাল ব্যাংক বলছে, ‘এসব জুয়েলারি সামগ্রী দর্শকদের কাছে তুলে ধরার মধ্যেই আমাদের প্রেরণা। যা ইরানের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাথে সর্বোত্তম বোঝাপড়া তৈরি করবে। এখানে নিপীড়ক ও সম্পদ জমাকারী শাসকদের পরিণতি থেকে শেখার রয়েছে ।’
ব্যাংক মেল্লি মিউজিয়াম
প্রায় এক শতাব্দী আগে জাদুঘরটি গড়ে ওঠে। ইরানের সুন্দর মিউজিয়ামগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। জাদুঘরটি তেহরানের আড়ম্বরপূর্ণ ও সুরুচিসম্মত একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। কাজার রাজবংশের সভাসদ ও তাদের বিদেশি অতিথিদের জন্য মূলত এটি নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীকালে ভবনটি নতুন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য মনোনীত হয়। বিগত দশকগুলোতে এর সংস্কার কাজও সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে ইরানের সর্বাপেক্ষা বড় ব্যাংক ‘ব্যাংক মেল্লি ইরানের’ সদর দপ্তর জুড়ে দেয়া হয় এটির সাথে। এখন থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে ভবনটি বর্তমান নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে এটি ২০১৭ সালের গ্রীষ্ম মৌসুমে দর্শনার্থীদের জন্য পুনরায় খুলে দেয়া হয়।
ব্যাংক সেপাহের কয়েন মিউজিয়াম
ব্যাংক সেপাহ ইরানের সবচেয়ে প্রাচীন ব্যাংক যেটি আজও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। ব্যাংকটি কয়েন মিউজিয়ামের পরিচালনা করে থাকে। জাদুঘরটি তেহরানের অন্যতম সমৃদ্ধশালী মিউজিয়াম। গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এই ধরনের মিউজিয়ামের মধ্যে এটিই সর্বাপেক্ষা মূল্যবান।
সেপাহ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় দেড় শতাব্দী আগে। এটি প্রতিষ্ঠা করেন সেপাহ ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী যিনি একজন প্রখ্যাত মুদ্রাতত্ত্ববিদ। জাদুঘরটির সংগ্রহশালায় রয়েছে প্রাচীন মুদ্রা। এখানে যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও আগেকার কিছু মুদ্রা রয়েছে। এসব মুদ্রা ইরান ও অন্যান্য দেশের ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বাস্তবতা বহন করে।
দুবছরেরও কম সময় আগে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ জাদুঘরটির জন্য নতুন একটি বড় জায়গার অনুমোদন দিয়েছে। এতে থাকবে তিনটি প্রদর্শনী হল, একটি উদ্ভাবনী ওয়ার্কশপ, একটি কনফারেন্স হল। এতে থাকবে বিভিন্ন ধরনের দোকান-পাট। সূত্র: ফিনানসিয়াল ট্রিবিউন।