বৃহস্পতিবার, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

তেহরানে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন ও এর গুরুত্ব

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২৪, ২০১৫ 

news-image

ইরানের রাজধানী তেহরানে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা হওয়ার পর তেহরানে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনকে আর্থ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সারা বিশ্বের জন্য বিশেষ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০০১ সালে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলো গ্যাস সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়, জ্বালানি বিশেষ করে গ্যাসের বাজার নিয়ে শলাপরামর্শ এবং গ্যাস সম্পদের অধিকারী দেশগুলোর এ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনার জন্য গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর ফোরাম বা ‘জিইসিএফ’ গঠন করা হয়। বিশ্ব বাজারে গ্যাসের চাহিদা এবং এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য গ্যাস উৎপাদন ও ভোক্তা দেশগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে ‘জিইসিএফ’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তেহরানে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ‘জিইসিএফ’-এর শীর্ষ সম্মেলন এর আগে কাতার ও রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার ফলাফল পর্যালোচনা, গ্যাসের বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এবং এ দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বিস্তারের বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। তেহরানে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলনের খসড়া বিবৃতি থেকে বোঝা যায়, গ্যাস উৎপাদনকারী এবং ভোক্তা দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতা বাড়ানো ‘জিইসিএফ’-এর প্রধান উদ্দেশ্য। এই জোটের একটি কৌশলগত লক্ষ্য রয়েছে। বিশেষ করে তেহরান সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড গ্যাস মডেলের নীতিমালা অনুযায়ী গ্যাস রপ্তানির ধরন নিয়ে পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রাজনৈতিক দিক থেকেও ‘জিইসিএফ’র গুরুত্ব বেড়েছে। কারণ আরো কয়েকটি দেশ ‘জিইসিএফ’র সদস্য হতে আগ্রহী হওয়ায় এবং গ্যাস ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায় এ জোটের গুরুত্ব আগের চেয়ে বেড়েছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, রাশিয়া, ইরান, কাতার, তুর্কমেনিস্তান ও আজারবাইজানের মতো প্রধান গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলো তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘জিইসিএফ’র অবস্থানকেও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের মতে, শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসেবে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্যাসের মজুদ ও তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ইরান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ জোটকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভূ-কৌশলগত দিক থেকে ইরানের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ দেশটি মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের জ্বালানি কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। ‘জিইসিএফ’র মহাসচিবের দায়িত্ব আবারো ইরানের ওপর ন্যস্ত করা থেকে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ইরানের গঠনমূলক ভূমিকা ও আস্থার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্যাস জ্বালানি বিষয়ক কূটনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্রে ইরানের দক্ষতা ও যোগ্যতার বিষয়টিও ফুটে উঠেছে।

তেহরানে গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন থেকে বোঝা যায়, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার পর ইরান আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন রূপে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। তাই নিঃসন্দেহে জ্বালানি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষায় ইরান গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।সূত্র:আইআরআইবি