শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামী ঐক্যের পথে চিন্তাবিদদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ১৯, ২০১৬ 

news-image

গত ১৭ই অক্টোবর, ২০১৬ সোমবার সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ও ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ড. সুফিয়া আহমেদ ক্লাসরুমে ইসলামী ঐক্যের পথে চিন্তবিদদের ভূমিকা শীর্ষক একাডেমিক বক্তৃতাপর্বের আয়োজন করা হয়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: মাহফুযুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আল যাহরা ও কোরানিক সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেকাল্টি মেম্বার, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম ড. জাভাদ মাযলুমী। স্বাগত ভাষন পেশ করেন ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সেলর জনাব আসগার খসরুয়াবাদী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম। আলোচনা অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক  ড. মোহাম্মদ ইবরাহীম, অধ্যাপক ড. শাহ কাউসার মোস্তফা আবুল উলায়ী, জনাব আবুল কালাম আজাদ, মিসেস নুসরাত ফাতেমা, ড. শাহ আলম প্রমূখ। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ছাড়াও আরবী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, উর্দু ভাষা ও সাহিত্য, দর্শন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকগণও অংশগ্রহণ করেন।

%e0%a7%9c%e0%a7%a7

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ইসলামী ঐক্যের বিষয়টি একটি সার্বজনীন ও বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তিনি বলেন, ইসলামী ঐক্যের পথে ইতিবাচক ভূমিকা পালনকারীদের পাশাপাশি কতিপয় চিন্তাবিদদের উগ্রধারার ব্যাখ্যা নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে এবং ইসলামের নামে একটি চরমপন্থী  গোষ্ঠীর অভ্যুদয় ঘটেছে। তিনি এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার আহবান জানান।

স্বাগত ভাষনে জনাব খসরুয়াবাদী বলেন, মুসলিম উম্মার বর্তমান ক্রান্তিকালে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অন্য যেকোন বিষয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে যেই অবস্থানেই থাকুন না কেন এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন।

হুজ্জাতুল ইসলাম ড. জাভাদ মাযলুমী তার বক্তৃতায পবিত্র কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, পবিত্র কুরআনের সার্বিক উপস্থাপনাই মানবজাতির ঐক্যকেন্দ্রিক। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ঐশী কিতাবে বিশ্বাসী সবার মাঝে  শুধুমাত্র আল্লাহর একত্বের ভিত্তিতে হলেও ঐক্যমত্যের আহবান জানিয়েছেন। যেমন আহলে কিতাবধারীদের মধ্যে ‘ আল্লাহ এক’ অন্তত এই একটি কথার ভিত্তিতে ঐক্য সম্ভব। এমনকি মুসলমানদের মধ্যে এক আল্লাহ, এক রাসুল, এক কুরআন, এক কাবা, কিয়ামতের বিশ্বাস, নামায, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি একই ইবাদতের ভিত্তিতে ঐক্য সম্ভব।

ড. মাযলুমি বলেন, মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাষা, বর্ণ, ভূখণ্ডের অধিবাসী হতে পারে। বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যের অধিকারী বিভিন্ন রকম পোশাক পরিধান করতে পারেন। তাদের সাংস্কৃতিক পটভূমিতে ভিন্নতা থাকতে পারে। কারণ মানুষ কোন মেকানিক্যাল কারখানার উৎপাদিত পণ্য নয় যে সবাই এক রকম হবে। তাদের সবাই একই রকমভাবে চিন্তা করবে, একই নেতার অধীন হবে সেটিও বাস্তব সম্মত নয়। কিন্তু তাদের সবারই যদি লক্ষ হয় এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও পারস্পরিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা তাহলে সে লক্ষে সবাই এগিয়ে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জনাব মাযলুমী বুখারী শরিফে উদ্ধৃত মহানবী (সা. এর একটি হাদিস বর্ণনা করে বলেছেন, মহানবী (সা.) যারা একই কেবলাকে সামনে রেখে নামায পড়ে ও এক আল্লাহর নামে কোরবানী করা পশুর গোশত খায় তারা সবাই মুমিন এবং তারা আল্লাহ ও রাসুলের কাছ থেকে নিরাপত্তাপ্রাপ্ত।

ড. মাযলুমী বলেন, সমাজে চিন্তাবিদদের কিছু দায়িত্ব ও ভূমিকা রয়েছে। কারণ অন্ধকারে পথ চলতে যেমন নক্ষত্রের আলোর সাহায্য নেয়া হয় তেমনি সমাজের মানুষেরা চিন্তাবিদদের নির্দেশনা থেকে সাহায্য নেয়। আর চিন্তাবিদদের দায়িত্ব হল তিনি নিজে সঠিক জ্ঞান ও  চিন্তাধারা অনুযায়ী নিজে কাজ করবেন। আর তিনি চিন্তা ও জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেবেন ও সে অনুযায়ী জনগণকে নির্দেশনা দেবেন ও সংশোধন করবেন। মহানবী (সা.) এর হাদিস উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, ‘সমগ্র মানবজাতি এক দেহের মত।’

ড. মাযলুমীর আলোচনা শেষে উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তরে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামী ঐক্যের কার্যকরী পদ্ধতি প্রসঙ্গে ড. মাযলুমী বলেন, ঐক্য কার্যকরী হতে হলে শুধু চিন্তাবিদগনের চিন্তা উপস্থাপনই যথেষ্ট নয় বরং সমাজে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন উপাদান যেমন শাসকবর্গ, রাজনীতিবিদ, জনগণসহ অকেগুলো ফ্যাক্টর জড়িত।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মাযলুমী বলেন, ইসলামের মানবতাবাদী দর্শনের আলোকে একথা স্পষ্ট যে, শুধু মতের অমিলের কারণে গলাকাটা, হত্যাকরা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। এমনকি এই কারণে কোন বিধর্মীকেও হত্যা করা বৈধ নয়।

মুসলমানদের মাঝে অনৈক্যের চিত্র বর্ণনায় এক প্রশ্ন প্রসঙ্গে জনাব মাযলুমী বলেন, অনৈক্যের প্রসঙ্গ আসলেই অনেকে মোটাদাগে শিয়া-সুন্নী অনৈক্যের কথা বলেন। অথচ অনৈক্যের বহু ধারা উপধারা রয়েছে। যেমন আহলে সুন্নাতের মধ্যে হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী যাদের ফিকাহগত বেশ পার্থক্য রয়েছে। আবার হানাফীদের মধেও দেওবন্দী, বেরেলভী ইত্যাদি বহু ধারা রয়েছে।

ইসলামী এক্য প্রসঙ্গে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূমিকা ও ভবিষ্যত সম্ভবনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে জনাব মাযলুমী বলেন,  ইরানে ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইরানের অভ্যন্তরে ও অন্তর্জাতিকভাবে ইসলামী ঐক্যের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। এই ঐক্যের ক্ষেত্রে শিয়া- সুন্নি কোন সীমারেখা গ্রহণযোগ্য নয়। হযরত ইমাম খোমেনী  (র.) মহানবী (সা.) এর জন্মের সপ্তাহটিকে ইসলামী ঐক্যসপ্তাহ ঘোষণা করেন যা বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। ইরানে ও বহি:বিশ্বে ইসলামী ঐক্যের ওপর অসংখ্য সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে ও পুস্তক প্রকাশ করা হয়েছে। মাযহাবগত পার্থক্য সত্ত্বেও ইরান বসনিয়া, ফিলিস্তিনের মযলুম জগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি চিন্তাবিদগণকে তাদের চিন্তার উপস্থাপনা ও প্রচারণা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।