শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনটি পুরস্কার পেল ইরান

পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ 

news-image

ঢাকায় সমাপ্ত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ইরানি তথ্যচিত্র হলি ব্রেড। আর ইরানি অভিনেত্রী সুসান পারভার পেয়েছেন উৎসবের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। ওমেন ফিল্ম সেকশনে সেরা সিনেমা হয়েছে ইরানের ‘লেডি অব দ্য সিটি’।

নয়দিন চলা উৎসবের শেষ দিনে গতকাল জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ইরানি তথ্যচিত্র হলি ব্রেড-এ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইরানের সীমানায় কুর্দিস্তানের পাহাড়ি উরমান এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে পরিবারের ভরণ-পোষণ চালায় এমন একদল মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা। তাদের পরিচয় “কোলবার”। ঘোড়া বা গাধায় যে কাজ করার কথা, অভাবক্লিষ্ট কোলবার পুরুষটিকে সে কাজ করতে হয় জীবিকার তাগিদে। ইরাকের সীমান্ত পেরিয়ে কাপড়, গৃহাস্থলি সামগ্রী, সিগারেট- এরকম নানান দরকারি জিনিষের ২০-৩০ কেজি ওজনের বোঝা পিঠে নিয়ে খালি পায়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শীতের ঠাণ্ডা- বরফ, গ্রীষ্মের তীব্র ঝাঁঝ, বালু ঝড়, বৃষ্টিতে পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিয়ে জীবিকা অর্জন করতে হয় কোলবারদের। পড়ে গিয়ে আহত হওয়া, হাত পা ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে থাকা এসব তাদের জীবন সংগ্রামেরই অংশ। তার ওপরে রয়েছে সীমান্ত রক্ষীদের অ্যাম্বুশ এবং গুলি মাঝে পড়ে মৃত্যু। সন্তানের মুখে রুটি তুলে দেবার অদম্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত এমন কষ্টকর জীবনের গল্পের নাম ‘হলি ব্রেড’। রাহিম জাবিহি’র পরিচালনায় এ তথ্যচিত্রাটি নির্মাণ করেছেন তৌরাত আসলানি।

হলি ব্রেড-এ ইরানের সীমানায় কুর্দিস্তানের পাহাড়ি উরমান এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে পরিবারের ভরণ-পোষণ চালায় এমন একদল মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এদিকে, কানাডা ও ইরানের যৌথ প্রযোজনার ‘বটোক্স’ সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য বেইজিংসহ একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন সুসান পারভার। এবার তাঁর হাতে উঠল ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।

আজকের ইরানে একজন প্রতিবন্ধী নারী এবং বিউটিশিয়ান বোন- এদের দু’জনের জীবন কাহিনি নিয়ে তৈরি বটোক্স।

এবার ওমেন ফিল্ম সেকশনে সেরা সিনেমা হয়েছে ইরানের ‘লেডি অব দ্য সিটি’ (শাহরবানু)। এটির পরিচালক মারইয়াম বাহরোলোলুনি।

এবারের ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার জিতেছে ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র ‘পেবেলস’। বিরাট অর্থনীতির ভারতের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দরিদ্র পরিবারের মদাসক্ত বাবার পরিবার নিয়ে মানবিক গল্প। সিনেমাটি গত বছর ভারত থেকে অস্কারের প্রতিনিধিত্ব করে।

ওদিকে, নেপালের শিশুদের শৈশবের ঘটনা নিয়ে ‘বাটারফ্লাই অন দ্য উইন্ডোপ্যান’। শিশুতোষ এই সিনেমাটির জন্য সুজিত বিদারী জিতেছেন সেরা নির্মাতার পুরস্কার। নাম ভূমিকায় সানি চরিত্রে অভিনয় করে জয়সুরিয়া জিতেছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার।

বাংলাদেশ ও ভারতের সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর জন্য ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী ও সুগাতা সিনহা জিতেছেন সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার। ২০২২ সালে এশিয়ান কম্পিটিশনে সেরা সিনেমায় হয়েছে ‘ক্যাফে বাই দ্য হাইওয়ে’।

স্পিরিচুয়াল শাখায় চীনের “ইয়েনজেন’স জার্নি” সিনেমাটি সেরা সিনেমার পুরস্কার জিতে নেয়। তুরস্কের ‘আনটোল্ড স্টোরি অব ফাতেমা কায়াচি’ জিতেছে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের পুরস্কার।

বাংলাদেশ প্যানারোমায় ফিপরেস্কি শাখায় জুরি পুরস্কার জিতেছে শবনম ফেরদৌসির ‘আজব কারখানা’।

অডিয়েন্স পুরস্কার জিতেছে যৌথভাবে নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’।

‘নান্দনিক চলচ্চিত্র মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান নিয়ে ১৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল উৎসব। উৎসবে প্রদর্শিত হয় ৭০টি দেশের মোট ২২৫টি সিনেমা।

উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, উৎসবের চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল, উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের কালজয়ী চলচ্চিত্রগুলো আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে, স্বাধীনতাসংগ্রামে ও স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছে। একই সঙ্গে অনেক বিষয়, যা সমাজ ও সমাজপতিরা ভাবে না, সেগুলোও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে উঠে আসে, সমাজকে পথ দেখায়।’

‘নান্দনিক চলচ্চিত্র মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান নিয়ে ১৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল উৎসব। উৎসবে প্রদর্শিত হয় ৭০টি দেশের মোট ২২৫টি সিনেমা।

পার্সটুডে/