বুধবার, ৯ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ঢাকায় ‘মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সংকট ও ইসলামি ঐক্য’শীর্ষক আলোচনা

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ৩, ২০১৭ 

news-image

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে‘মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সংকট ও ইসলামি ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জনাব আবুল কালাম আজাদ এমপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক. ড. আব্দুল্লাহ আল-মারুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মাননীয় রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী ও ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট আলেম হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. জাওয়াদ মাজলুমী।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব আবুল কালাম আজাদ বলেন, মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখানোই ছিল মহানবীর প্রধান লক্ষ্য। মহানবী (সা.)-এর ওপর নাযিলকৃত কুরআন অবিকৃত রয়েছে। এই কুরআন ও মহানবীর শিক্ষা আমাদের সকল সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের যে অনৈক্য ও সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেসব কিছুর সমাধানের জন্য মুসলমানদেরকে কুরআন ও রাসুলের শিক্ষার দিকেই ফিরে আসতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির যে ষড়যন্ত্র চলছে সেই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।

হুজ্জাতুল ইসলাম ড. সাইয়্যেদ জাওয়াদ মাজলুমী বলেন, হাজার বছরেরও অধিক পূর্বে পবিত্র কোরআনে মুসলমানদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল যে, যদি তারা নিজেদের মধ্য্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় তাহলে তারা শক্তিহীন হয়ে পড়বে। আর এতে অন্যরা মুসলমানদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করবে। বর্তমান মুসলিম বিশ্বে আমরা এই বিষয়টিই প্রত্যক্ষ করছি। এ অবস্থায় একমাত্র ঐক্যই পারে মুসলমানদেরকে শক্তিশালী করতে। আর ঐক্যের সর্বোত্তম বিষয়টিই হচ্ছে মহানবী (সা.)। তিনি আমাদের সকলের নবী। তাঁকে কেন্দ্র করে ঐক্য গড়ে ওঠার অর্থই হলো কোরআনকে ঐক্য হিসেবে গ্রহণ। যেহেতু এটি তাঁর ওপরই অবতীর্ণ হয়েছে এবং তিনিই পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আলেমগণ ইসলামি বিপ্লবের পূর্ব থেকেই মুসলিম উম্মার ঐক্যের কথা বলে আসছিলেন। ইসলামি বিপ্লবের পর ইমাম খোমেইনী (রহ.) ১২ থেকে ১৭ই রবিউল আওয়ালকে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য শত্রুরা মুসলিম দেশগুলোতে মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। মুসলমানদেরকে এসব বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। পবিত্র কোরআনের বক্তব্য অনুসারে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতি গড়ে তুলতে হবে।

জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী বলেন, মুসলিম উম্মাহ এমন এক সময় রহমতের নবী ও ঐক্যের প্রতীক মহানবী (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী পালন করছে যখন তারা সবচেয়ে জটিল ও কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। মুসলিম বিশ্বের মধ্যকার ঐক্য ও সহানুভূতি এবং ইসলামি উম্মাহর সম্মান ও মর্যাদা এখন দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তের কবলে নিমজ্জিত।

বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ যখন তাদের পরিচয় ও ভাগ্য সম্পর্কে আরো সচেতন ও জাগ্রত হচ্ছে তখন ইসলামের শত্রুরা গোপনে ও প্রকাশ্যে ইসলাম আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি ইসলামি উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহর অসীম কৃপায় ও ইসলামি উম্মাহর সচেতনতা ও প্রতিরোধের ফলশ্রুতিতে শত্রুরা অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের ফাঁদে নিজেরাই আটকা পড়ছে।

তিনি আরো বলেন, ইসলামের শত্রু ও তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে সৃষ্ট সংকট সম্পর্কে সচেতনতাই মুসলিম উম্মাহকে শত্রুদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অতীতের চেয়ে আরো বেশি সতর্ক থাকতে সহায়তা করবে। তবে মুসলমানদেরকে ইসলামি ঐক্যের প্রকৃত বন্ধু ও শত্রু সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবহিত হওয়ার ক্ষেত্রে আরো বিচক্ষণ ও দূরদর্শী হতে হবে। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিশিষ্ট কারী এ কে এম ফিরোজ।বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী জনাব সালাউদ্দিন আহমেদসহ পাঁচ জন শিল্পী অনুষ্ঠানে নাত পরিবেশন করেন।