ঢাকায় ‘মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণে ইমাম খোমেইনীর চিন্তা-দর্শনের প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনা
পোস্ট হয়েছে: জুন ১, ২০১৮

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১ জুন শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কনভেনশন হল ৭১ এ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণে ইমাম খোমেইনীর (র.) চিন্তা-দর্শনের প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. এম শমসের আলী, প্রফেসর এমিরিটাস, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও গ্রীনওয়াচ ঢাকার সম্পাদক জনাব মোস্তফা কামাল মজুমদার।আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকমোহাম্মদ রাশেদ আলম ভূঁইয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ড. এম শমসের আলী বলেন, মুসলমানরা ব্যক্তিগত ধর্মীয় আচারে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি তাদের মধ্যে যদি সমাজের সেবার দিকটি অনুপস্থিত থাকে তবে সেটি যথাযথ বিষয় হতে পারে না। যে সমাজে অর্থনৈতিক ন্যায়পরায়নতা নেই, সামাজিক সাম্য নেই সেটি উন্নত সমাজ হতে পারে না। কিছু সংখ্যক মানুষের সুবিধা প্রাপ্তি নয়, সকলের জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হলে সেই সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয় না। ইমাম খোমেইনী (র.) এমনই একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানকে তিনি মানবের সেবায় নিয়োজিত করার কথা বলেছেন, যেটাকে ইসলামি বিজ্ঞান বলা হয়েছে। নানা কারণে ইরানের ওপর অবরোধ দেশটিকে আরো শক্তিশালী করেছে। বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে ইরান বিশ্বমানে উপনীত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী বলেন, ইতিহাসের একটি পর্যায়ে এসে মনে করা হতে থাকে অন্যান্য ধর্মের মতো ইসলামও কেবল একটি ব্যক্তিগত ধর্মচিন্তার বিষয়। কিন্তু ইমাম খোমেইনী (র.) এ ধারনার বিপরীতে বলেন, ইসলাম ব্যক্তিগত ধর্মচিন্তার বিষয় নয়। অর্থনীতি, সমাজনীতি, পারিবারিকনীতসহ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সব ধরনের সমাধান রয়েছে এতে। আর তাই তিনি মদীনায় মহানবী (সা:) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কুরআন ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ইমাম খোমেইনী বলেন, মুনষ কর্তৃক প্রদত্ত সামাজিক বিজ্ঞান সকল ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম নয়। এর জন্য প্রয়োজন ঐশী দিক নির্দেশনা।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র সকল তন্ত্রের বিরুদ্ধে স্লোগান ছিল ইরানিদের সামনে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা। এর পাশাপাশি তারা মানবতাবাদের স্লোগান দিত। ইমাম খোমেইনী সমকালীন মানুষকে বিপ্লবের দিকে চালিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক নেতা । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রকৃত সমস্যা কোথায়। তিনি বলেছিলেন, আত্মশুদ্ধি না হয়ে কোন পদে অধিষ্ঠিত হলে জনগণ মজলুম হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনীবলেন, ইমাম খোমেইনী (র.) মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করে ইরানের জনগণকে একতাবদ্ধ করে ইরানে ইসলামি বিপ্লব সাধন করেন। এই বিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলাম ধর্মের ওপর ভিত্তি করে একটি সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা। যার ফলে ইরানে আড়াই হাজার বছরের রাজতন্ত্রের পতন এবং ইরানি জনগণের ওপর বিদেশী ও সাম্রাজ্যবাদীদের কর্তৃত্বের অবসান হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তরা বলেন, ইসলামি বিপ্লবের শত্রুরা এই বিপ্লব ও ইমাম খোমেইনীর দর্শনকে ধ্বংস করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করলেও তাঁর চিন্তা-দর্শন এখনও জীবন্ত ও প্রগতিশীল দর্শন হিসেবেই বিস্তৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ইসলামি দেশের জনগণের মধ্যে যে জাগরণ, বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে তা যে ইসলামি উম্মাহর মধ্যে ইমাম খোমেইনীর চিন্তা-দর্শনের প্রভাব থেকেই হয়েছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বক্তরা আরো বলেন, ইসলামি জাগরণ থেকে মুসলমানদের বিচ্যুত করার পাশাপাশি তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার উদ্দেশ্যে ইসলামি জাগরণের নামে বিশ্ব সাম্রারাজ্যবাদী ও ইসলামের শত্রুদের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কিছু উগ্র ও বিকৃত চিন্তাধারাসম্পন্ন গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। মুসলমানদেরকে এসব ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে ইমাম খোমেইনী (র.) এর কবিতার বই দিওয়ানে ইমাম এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি অনুবাদ করেছেন ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী।