ঢাকায় ঈদে গাদীর ও মোবাহিলা দিবস উদ্যাপন
পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2017/09/image001.jpg)
১৮ যিলহজ ঈদে গাদীর ও ২৪ যিলহজ ঈদে মোবাহিলা উপলক্ষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও আনজুমানে মুমিনীনে বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর আলহাজ খাজা শাহ সুফি সাইয়্যেদ নূরী আখতার হোসেন আহমাদী নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ জনাব শাহ সারওয়ার মুস্তাফা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী।
জনাব মূসা হোসেইনী বলেন, ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো রয়েছে তার মধ্যে গাদীরে খুম ও মোবাহিলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। আর এ দুটি ঘটনাই ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো মুসলমানদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন বিদায় হজ সমাপ্ত করে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সেই সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে পৌঁছলে জীবরাইল (আ.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নিয়ে অবতরণ করেন যেখানে আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন : হে রাসূল! যা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও, আর যদি তুমি তা না কর, তবে তুমি তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি; এবং আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন; এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।
মহানবী (সা.) গাদীরে খুমে যাত্রা বিরতি করে লোকদের সামনে ঐতিহাসিক বক্তব্য প্রদান করেন এবং হযরত আলী (আ.)-কে তাঁর পরে মুসলমানদের মাওলা বা অভিভাবক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অপর আয়াত নাযিল হয় : ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসেবে ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট হলাম।’
গাদীরে খুমে নাযিলকৃত দুটি আয়াত থেকে আমরা এই ঘটনার অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি।
অপরদিকে যে ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত ও ইসলাম ধর্মের সত্যতার পরিচয় বহন করে তা হলো মোবাহিলার ঘটনা। ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত সম্বলিত মহানবী (সা.)-এর পত্র পেয়ে মদীনার নিকটবর্তী নাজরান অঞ্চলের খ্রিস্টানদের একটি প্রতিনিধিদল তাঁর সাথে দেখা করার জন্য মদীনায় আগমন করে। খ্রিস্টান পণ্ডিতদের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে যখন তারা কোন যুক্তি মানতে রাজি হচ্ছিল না তখন মহানবী (সা.) তাদেরকে মোবাহিলায় আহ্বান জানান। অর্থাৎ উভয় পক্ষ একটি জায়গায় সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে যে, যারা মিথ্যাবাদী তাদের ওপর যেন আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হয়। কিন্তু পরবর্তী দিনে খ্রিস্টানরা মহানবী (সা.) ও তাঁর সাথে আগত তাঁর পরিবারের লোকজনের দ্যুতিময় চেহারা এবং মোবাহিলার ব্যাপারে তাঁদের আস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। তারা মোবাহিলায় অবতীর্ণ না হয়ে জিজিয়া প্রদানের শর্তে মহানবীর সাথে সন্ধি করে।
জনাব হোসেইনী বলেন, এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় মহানবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের জয় ও সত্যের পরিচয় পরিস্ফুট হয়েছে। একই সাথে ইসলাম ধর্ম পৃথিবীর অন্য সকল ধর্মের ওপর বিজয় লাভ করেছে।
জনাব শাহ সারওয়ার মুস্তাফা বলেন, ‘(হে রাসূল!) তুমি বলে দাও, ‘আমি এর (বার্তা প্রচারের) জন্য তোমাদের নিকট হতে আমার পরমাত্মীয়গণের প্রতি ভালোবাসা ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না,’- পবিত্র কোরআনের এ আয়াত নাযিল হলে সাহাবিগণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, কাদেরকে ভালোবাসতে হবে। রাসূল (সা.) জবাব দেন, ‘আমার আহলে বাইতকে।’ সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতের মাধ্যমে মহানবীর আহলে বাইতকে নিষ্পাপ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর হাদীসে সাকালাইনের মাধ্যমে আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার জন্য মহানবী (সা.) আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এই আহলে বাইতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের মাওলা হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার ঘটনাই হলো গাদীরে খুমের ঘটনা। মহানবী (সা.) হযরত আলীর হাত উঁচু করে ধরে ঘোষণা করেন : ‘আমি যার মাওলা, এই আলী তার মাওলা…।’ এই ঘোষণার পর সাহাবীরা হযরত আলীকে অভিনন্দন জানান।
তিনি আরো বলেন, মোবাহিলা বিষয়ে পবিত্র কোরআনের যে আয়াত নাযিল হয় তা হলো : ‘… এস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের, আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের, এবং আমাদের সত্তাদের এবং তোমাদের সত্তাদের; অতঃপর সকলে মিলে (আল্লাহর দরবারে) নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।
মহানবী (সা.) হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনকে সাথে নিয়ে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে মোবাহিলায় অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত হন। আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী সন্তান হিসেবে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনকে, নারী হিসেবে হযরত ফাতেমাকে ও নিজ সত্তা হিসেবে হযরত আলীকে সাথে নেন। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর মাধ্যমে মহানবী (সা.) আহলে বাইতের পরিচয় আমাদের সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরেন।
জনাব সাইয়্যেদ নূরী আখতার হোসেন বলেন, গাদীরে খুমে লক্ষাধিক সাহাবীর সামনে রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে মুসলমানদের মাওলা হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি সবসময় আহলে বাইতকে ভালোবাসা ও তাঁদেরকে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাঁর সেই আদেশকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। হযরত আলীকে শহীদ করা হয়েছে। মহানবীর প্রাণপ্রিয় নাতি বেহেশতে যুবকদের সর্দারদ্বয় ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনকে শহীদ করা হয়েছে। আমাদেরকে এসব ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমাদের উচিত মহানবী (সা.)-এর এই হাদিসটি সবসময় স্মরণ রাখা- ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে তোমার কখনই পথভ্রষ্ট হবে না : একটি আল্লাহর কিতাব, অন্যটি আহলে বাইত’। আমাদের দায়িত্ব হলো যারা রাসূলের হাদিসসমূহকে অস্বীকার করতে চায় তাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেয়া এবং সকলের মধ্যে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দেয়া।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জনাব শামীম রেযা। স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন কবি আমিন আল আসাদ ও কাসিদা পরিবেশন করেন জনাব মেহেদী হাসান ও নাজিম হোসাইন।