ঢাকায় ‘ইসলাম ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন’ শীর্ষক আলোচনা (ভিডিও)
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২৬, ২০১৬
দি ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দি রেডক্রস (আইসিআরসি) ও ইরানি সংস্কৃতিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে ২৬ নভেম্বর শনিবার সকালে ঢাকায় ‘ইসলাম ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. খিজির হায়ত খানের সভাপতিত্বে ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি দেহনাভি বলেছেন, বিশ্বে কোনো পক্ষের উগ্রবাদ বা সন্ত্রাস গ্রহণযোগ্য নয়।চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের প্রশ্নে দ্বিমুখী নীতি থাকলে এ সংকটের কোনো সমাধান সম্ভব নয় বলে অভিমত দেন তিনি।
শনিবার সকালে ঢাকায় ইরানের সংস্কৃতি কেন্দ্রে আয়োজিত ‘ইসলাম ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি দেহনাভি এ কথা বলেন। দি ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দি রেডক্রস (আইসিআরসি) ও ইরানের সংস্কৃতি কেন্দ্র এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, আজকের বিশ্বে যুদ্ধের ধরন পাল্টে গেছে। বিভিন্ন দেশ ও সমাজে সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল এমনকি সাইক্লোজিক্যাল ওয়ার চলছে যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এরফলে পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। অথচ ইসলামের শান্তিপূর্ণ আচরণ অনুসরণের মাধ্যমে এধরনের সন্ত্রাস প্রতিরোধ করা যায়। এজন্যে মানুষকে জোটবদ্ধ করা জরুরি।
তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে বলেন, মানুষকে এই অসহায় মানুষদের পাশে এগিয়ে আসা উচিত। ইসলাম অবশ্যই মানবিকগুণাবলী ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দেয়। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে তিনি এনজিওগুলোকে আহবান জানান।
ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতা ও সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। কারবালার শিক্ষা নতুন প্রজম্মের কাছে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, তাহলে সঠিক আচরণের মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যৎ বংশধররা আগ্রাসনকে রুখে দিতে পারবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মায়মুল আহসান খান। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, ইসলামে যে মানবিক দিক আছে তা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের চেয়েও বেশি মানবাধিকার নিশ্চিত করে। ইসলামে যুদ্ধের জন্যে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। নারী ও শিশুদের সঙ্গে কিধরনের ব্যবহার করতে হবে, নদী ও ফসলের মাঠ বিনষ্ট করা যাবে না এধরনের নির্দেশনাসহ সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকায় তা যুদ্ধের ময়দানেও মানবিক দিকগুলো নিশ্চিত করে।
অধ্যাপক মায়মুল আহসান খান রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতনকে হত্যাযজ্ঞ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ইউএনসিএইচআর এখন বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের জন্যে সীমান্ত খুলে দেয়ার কথা বললেও এতদিন ধরে তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধানে যেতে পারেনি। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কেন জাতিসংঘ যুদ্ধকে নিষিদ্ধ করে না? যুদ্ধ ও সন্ত্রাস কেবলি দেশে দেশে নিরীহ ও নিরাপরাধ মানুষেরই বেশি ক্ষতি করে।
তিনি আরো বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশে যা ঘটেছে এখন রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর তাই ঘটছে। রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ যুদ্ধাপরাধ ছাড়া কিছুই নয়। দু:খজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যে রোহিঙ্গাদের ওপর কি ধরনের নির্যাতন হচ্ছে তা তদারকি করে।
অনুষ্ঠানে আইসিআরসি’র হেড অব ডেলিগেশন ইখতিয়ার আসলানভ বলেন, জেনেভা কনভেনশন মেনে চললেও অনেক দেশে চলমান নির্যাতন প্রতিরোধ করা যেত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া সন্ত্রাস ও জাতিগত নিধনের মত হত্যাযজ্ঞ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় এবং এধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সুশীল সমাজ ও ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আইসিআরসি’র ডেপুটি ডেলিগেট বরিস কেলেসেভিক বলেন, সন্ত্রাস ও কোনো জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন বন্ধে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি হলেও শিক্ষাবিদ ও সমাজের সচেতন মানুষের ভূমিকার গুরুত্ব অনেক বেশি। মানবিক বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে কোনো দেশে বা সমাজে রাজনীতি ও অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ে।
অনুষ্ঠানে ইরানের সংস্কৃতি কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ মুসা হোসেইনি বলেন, মানবতা মানুষের শরীরের একটি অঙ্গের মত যা আক্রান্ত হলে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তা অনুভব করে। মানবজাতি তাই বিশ্বের যে কোনো স্থানে সন্ত্রাস ও নির্যাতনের জন্যে নিশ্চুপ থাকতে পারে না।
ভিডিও :