ঢাকায় ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৩৮তম বিজয় বার্ষিকী উদযাপন
পোস্ট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৩৮তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ শীষর্ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে ৫ দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইকবাল হোছাইন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, ইরানি চলচ্চিত্র আজ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমাদৃত। অস্কারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে ইরানি চলচ্চিত্র। তিনি বলেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর দেশটির চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ইরানের কবি সাহিত্যিকদের বহু বই বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এরমাধ্যমে প্রমাণিত হয় ইরানের সাথে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক কত গভীর। তিনি শিল্প, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ইসলাম যে শান্তির ধর্ম তা ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। ইমাম খোমেনী (র.) ইরানি চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলেছিলেন, বিপ্লবের পূর্বে চলচ্চিত্রের অপচয় হয়েছে। ইমাম খোমেনী এ অবস্থার পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। বর্তমানে আমরা তার কারণ দেখতে পাচ্ছি। ইরানি চলচ্চিত্র আজ বিশ্বব্যাপী দারুণভাবে সমাদৃত।
অনুষ্ঠানে ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী বলেন, ইরানের বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে এবং ৩৮ বছর সফলভাবে এই বিপ্লব টিকে আছে এই মূল্যবোধের কারণেই। ইরানের বিরুদ্ধে নানা রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে পরাশক্তিগুলোর পক্ষ থেকে। কিন্তু ইরান তার সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে সকল প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরানি কালচারাল কাউন্সেলর সৈয়দ মূসা হুসাইনি বলেন, ইমাম খোমেইনী (র.)-এর নেতৃত্বে এই বিপ্লব ছিল বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সংঘটিত এমন এক বৃহৎ বিপ্লব যা কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন ঘটায় নি একই সাথে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক পরিবর্তন এবং বিস্ময়কর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব যেহেতু ইসলামি শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত চিন্তা-দর্শনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তাই ইসলামি পরিচয়ের জাগরণ এই বিপ্লবের একটা বড় ফসল। যেসময় সর্বদা ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলতো এবং ধর্মকে জাতিগুলোর জন্য আফিম হিসেবে উল্লেখ করা হতো তখন ইসলাম ধর্মের স্লোগান দিয়ে এই বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ধর্মের পরিচয়ের পুনরুজ্জীবিত হয়। ইসলামি শিক্ষার আলোকে সামাজের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়া ও মেনে চলা হলো ইসলামি বিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি যা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ইরান তিনটি কারণে আমার কাছে বিস্ময়ের। প্রথমত, এটি এশিয়ার একটি দেশ যা পরাশক্তিকে উপেক্ষা করতে পারে, দ্বীতিয়ত, ইরানে ইসলামী বিপ্লব হয়েছে কিন্তু কোন জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড সেখানে নেই এবং তৃতীয়ত ইরানি চলচ্চিত্র। যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষে ইসলামী বিপ্লবের ৩৮তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ৪-৮ ফেব্রুয়ারি ৫দিন ব্যাপী ইরানী চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী ঘোষণা করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।