রবিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

সভা-সমাবেশ

পোস্ট হয়েছে: মে ১৬, ২০১৮ 

ঢাকায় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভা

নবীকন্যা হযরত ফাতিমা যাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)-এর জন্মদিবস ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গত ৯ মার্চ ২০১৮ রাজধানী ঢাকায় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও যাহরা এসোসিয়েশন এর যৌথ উদ্যোগে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনার ইউনিভার্সিটির কনভেনশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মিসেস জাহানারা পারভীন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতের পত্নী যায়নাব ভায়েজী ও ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন আল মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ শাখার প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী রাদ। অনুষ্ঠানে সভানেত্রী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যাহরা এসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন মিসেস সেলিনা পারভীন।
মিসেস জাহানারা পারভীন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, নারীকে তার অবদানের স্বীকৃতি প্রদান ও তাকে সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা নারী দিবস পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। বর্তমান সরকার নারীর কল্যাণে নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিধবা ভাতা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষুদ্রঋণ প্রদান ইত্যাদি। তিনি বলেন, ইসলামে নারীকে যে মর্যাদা দেয়া হয়েছে সেই মর্যাদায় নারীকে অধিষ্ঠিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
হুজ্জাতুল ইসলাম শাহাবুদ্দীন মাশায়েখি রাদ বলেন, আমরা এই দিবসটি নারী দিবসের পাশাপাশি মা দিবস হিসেবেও পালন করি। আমরা নারীর প্রতি ও মায়ের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য দিবস পালন করি। নারীর কাজ ও তাঁর দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহান। মায়ের জায়গা থেকে নারীকে সমাজে প্রভাব ফেলতে হবে। নারী জাতির আদর্শ হযরত ফাতিমা নারীত্বের জায়গা ও মাতৃত্বের জায়গা থেকেই এই দায়িত্ব পালন করেছেন। এই অবস্থান থেকে যদি সে সরে যায় তবে তার মর্যাদার অবনমন হয়।
মিসেস যেইনাব ভায়েজী বলেন, ইসলাম নারী-পুরুষকে লিঙ্গের ভিত্তিতে মর্যাদা প্রদান করে নি। বরং নারী-পুরুষের কর্মকা-ই তার মর্যাদার কারণ। পবিত্র কুরআনে মুমিনদের উদাহরণ দিতে গিয়ে বিবি আছিয়া ও হযরত মারইয়ামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে নারী-পুরুষ সকলের জন্য তাঁদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে কাফিরদের উদাহরণ দিতে গিয়ে হযরত নূহ (আ.) ও লূত (আ.)-এর স্ত্রীদের কথা বলা হয়েছে। কোরআনে ঐশী ও মানবীয় গুণ অর্জনের ক্ষেত্রেও লিঙ্গের পার্থক্য করা হয় নি। ইসলাম সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে অংশগ্রহণের অধিকার দিয়েছে। এদিক থেকে পাশ্চাত্য বিশ্ব ১৩০০ বছর পিছিয়ে রয়েছে। ইউরোপ নারীকে পর্দা থেকে বের করে এনে এর নাম দিয়েছে স্বাধীনতা আর শালীনতাকে নাম দিয়েছে বন্দিত্ব। অথচ প্রকৃতপক্ষে পর্দা ও শালীনতাই হলো মর্যাদা। আর পর্দার মধ্যে থেকেই প্রতিটি কাজ করার ক্ষেত্রে নারী স্বাধীন।
প্রফেসর ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব বলেন, ইসলাম-পূর্ব সভ্যতায় নারী অত্যাচারিত অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করত। ইউরোপীয় সভ্যতায় নারীকে ক্রীতদাসের চেয়েও নিকৃষ্ট মনে করা হতো। ভারতীয় সভ্যতায় নারীকে স্বামীর মৃত্যুর পর একইসাথে চিতায় পুড়িয়ে মারা হতো। আরবে নারীকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। তাদের কোনো ধরনের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হতো না। কিন্তু ইসলাম নারীকে স্বীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। ইসলাম নারীকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের অধিকার দিয়েছে। ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান, পবিত্রতা ও শালীনতা বজায় রাখার মধ্য দিয়ে তারা এসব ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী বলেন, ইসলামি শিক্ষার বিপরীতে পশ্চিমা বস্তুবাদীদের পক্ষ থেকে নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকার নিয়ে সর্বদা ব্যাপক প্রচারণা চলছে। তারা নারীর হারানো অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অবাধ স্বাধীনতার নামে নারীকে কেবল এক ধরনের পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। তারা নারীকে আধুনিক দাসত্বের দিকে নিয়ে আসছে। তাই অত্যাধুনিক এই যুগে নারীর প্রকৃত ব্যক্তিত্ব ও অবস্থান তুলে ধরা ইসলামের মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরো বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান গত ৪ দশকে নারীর অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইরানের নারীরা আজ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বিশেষ করে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, সমাজ ও রাজনীতি, খেলাধুলা, শিল্পকর্মসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

উল্লেখ্য, ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর ২০ জামাদিউস সানী মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর কন্যা ও মহাবিশ্বের নারীদের সর্বোত্তম আদর্শ হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.)-এর জন্মের দিনটিকে ‘নারী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় এবং এরপর থেকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশটিতে নারী দিবস উদ্যাপিত হয়ে আসছে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন আমেনা বেগম লাবনী ও হযরত ফাতিমার শানে নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন জনাব শাহ নওয়াজ তাবীব।

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন

২০ এপ্রিল ২০১৮ (৩রা শাবান) ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বেহেশতে যুবকদের নেতা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস উপলক্ষে আঞ্জুমানে মুমিনীনে বাংলাদেশ ও ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে একটি আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী, হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন ও হুজ্জাতুল ইসলাম আব্দুল কুদ্দুস বাদশা। অনুষ্ঠানে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শানে কবিতা আবৃত্তি ও গযল পরিবেশন করা হয়।

যশোরে হযরত ফাতেমাতুয্ যাহরা (সা. আ.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন
গত ৯ মার্চ ২০১৮ যশোর জেলা স্কুল অডিটোরিয়ামে ২০শে জমাদিউস্সানী জান্নাত নেত্রী হযরত ফাতেমাতুয্ যাহ্রা (সা. আ.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী এবং ১৯০১ সালের ঐ একই দিনে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মহান সাধক ইমাম খোমেইনী (র.)-এর জন্মবাষির্কীকে কেন্দ্র করে ইনকিলাব-এ-মাহ্দী মিশন এর ২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে।
ইনকিলাব-এ-মাহ্দী মিশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জনাব মল্লিক আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র, খুলনার অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা সাইয়্যেদ ইব্রাহীম খালীল রাজাভী, আঞ্জুমানে রূহানীর সেক্রেটারী হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা সাইয়্যেদ হাবীব রেজা হুসাইনী, পাক্ষিক ফজর পত্রিকার সম্পাদক জনাব ইকবাল হোসেন, ঐতিহাসিক মুড়লী ইমাম বাড়ীর পেশ ইমাম জনাব ইকবাল হুসাইন প্রমুখ।
‘বিশ্ব ইসলামি নারী দিবস’-কে স্বাগত ও স্বীকৃতি জানিয়ে ইনকিলাব-এ-মাহ্দী মিশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠানে উপস্থিত নারীদের সমন্বয়ে একটি র‌্যালি বের করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে ছোটদের কোরআন তেলাওয়াত, হাম্দ-নাত, ইসলামিক গজল ও কবিতা পরিবেশন করা হয়।

যশোরের শার্শায় ইসলামি নারী দিবস উদ্যাপন

গত ১৪ মার্চ ২০১৮ মোতাবেক ২০ জমাদিউস সানি হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) এবং তাঁরই বংশধর ইরানের ইসলামি বিপ্লবের রূপকার আয়াতুল্লাহ ইমাম খোমেইনী (র.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শার্শা ইমাম মাহদী আ. ফাউন্ডেশন আয়োজিত শার্শা কমিউনিটি সেন্টারে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন ইমাম মাহদী আ. ফাউন্ডেশনের সভাপতি জনাব মোঃ আলাউদ্দিন সর্দার। প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ জনাব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন শান্তি। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন, মোঃ আতিয়ার রহমান। অনুষ্ঠানটির পরিচালনা করেন আলি আকবর আ. যুব সংঘের প্রচার সম্পাদক জনাব বেলাল হোসেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর শার্শা অডিটোরিয়াম থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন র‌্যালি বের করা হয়।

হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস উদ্যাপন (ক্যাপশান নিউজ)

গত ৩১ মার্চ ২০১৮ হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস উপলক্ষে আঞ্জুমানে মুমিনীনে বাংলাদেশ ও ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য উপস্থাপন করেন হুজ্জাতুল ইসলাম আব্দুল কুদ্দুস বাদশা ৷

শার্শায় হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস উদ্যাপন

গত ১ এপ্রিল ২০১৮ হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিবস উপলক্ষে যশোরের শার্শা থানার ফাতিমাতুজ্জাহরা (সাঃ আঃ) পাঠাগারের উদ্যোগে শার্শা অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন হুজ্জাতুল ইসলাম আলী মোরতাজা ৷

অনৈক্যই মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ : আয়াতুল্লাহ আরাফি

ঢাকা সফররত ইরানের আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর এবং ইরানের জাতীয় মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান আয়াতুল্লাহ আলি রেজা আরাফি বলেছেন, অনৈক্য, অসচেতনতা ও জ্ঞানচর্চার অভাব ইসলামি বিশ্বের বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ। গত ২৭ মার্চ ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। ইরানের এই শিক্ষাবিদ বলেন, মুসলমানরা দীর্ঘদিন ইসলামের ছায়াতলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করলেও এই মুসলিম সভ্যতা আজ হুমকির মুখে রয়েছে। তিনি এজন্য অভ্যন্তরীণ সমস্যার পাশাপাশি বিদেশী শক্তির চক্রান্তকেও দায়ী করেন।
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, বিশ্বের ৫৪টি মুসলিম দেশের হাতে ৬০ শতাংশেরও বেশি খনিজ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিকভাবে মুসলমানরা আজ দুর্বল এবং শক্তিশালী অর্থনীতি পশ্চিমাদের হাতে। তারা সুকৌশলে চিন্তাগত বিভিন্ন বিষয় মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে আর আমরা অজ্ঞতার কারণে তাদের এসব চিন্তাগত বিভ্রান্তির ফাঁদে পা দিয়ে অনৈক্যের বেড়াজালে আটকা পড়ছি। তাদের অব্যাহত অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে মুসলমানরা আজ দিশেহারা। মুসলিম বিশ্বের এই সংকট নিরসনে শিক্ষিত সমাজকে আরো বেশি করে জ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবেলায় আমাদেরকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, একটি শ্রেণি ইসলামি সমাজে উগ্রবাদের প্রসার ঘটাতে চায় এবং একে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি ও অনৈক্য সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছে। আমাদেরকে এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিধি আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ইরান এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩০টি দেশের ৩৫ হাজার ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে এবং এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন স্তরে ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১০০টি বিষয়ে পাঠ দান করা হয়। ইরান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা থাকার পাশাপাশি বিশ্বের অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এর এমওইউ রয়েছে। যার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জ্ঞানের আদান প্রদান করে থাকে।
সভায় আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী রাদ মুসলমানদের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জ্ঞানচর্চার বিকল্প নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইন্সটিটিউটের সাথে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণামূলক যে কোনো ধরনের সহযোগিতায় তাঁদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেন।
সভায় ঢাকাস্থ ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশটির জনগণকে শুভেচ্ছা এবং স্বাধীনতার জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাথে ইরানের জনগণের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে এবং দুদেশের সরকার ও জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড. ভায়েজী বলেন, পশ্চিমাদের মতে ধর্মে সমাজ গঠনের কোনো স্থান নেই। অথচ ইরানের ইসলামি বিপ্লব প্রমাণ করেছে ইসলামই হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী আল-মোস্তফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আলি রেজা আরাফিসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন আয়াতুল্লাহ আরাফির বাংলাদেশে আগমনের প্রত্যাশায় ছিলাম। আবশেষ তাঁর আগমন আমাদেরকে ধন্য করেছে। জনাব আরাফির সৌজন্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আজকের এই মতবিনিময় সভা জ্ঞানের আদান প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি এসময় ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান মিয়াজী বলেন, ইরান ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের পাঠ্যক্রমে ইরানের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে থাকি। তিনি ইরান সম্পর্কে আরো বেশি অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরান স্টাডিস নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র চালু করারও আহ্বান জানান। সভায় আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মোস্তফা আবুলউলায়ী, আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ ও মাদ্রাসা আলিয়া, ঢাকার অধ্যক্ষ ড. সিরাজউদ্দিন। অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বের শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ।

ইরানি নওরোজ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠান

‘ইরানের সাথে বাংলাদেশের পুরোনো সম্পর্ক নবরূপে আরো জোরদার হয়েছে’- প্রফেসর ড. গওহর রিজভী
গত ৬ এপ্রিল ২০১৮ বিকাল চারটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নাট্যকলা মিলনায়তনে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যৌথ উদ্যেগে ‘নওরোজের ঐতিহ্য ও নিদর্শন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্য ও চলচ্চিত্র বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক জনাব মোঃ বদরুল আলম-এর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব ম হামিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান জনাব প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম সরকার। স্বাগত ভাষণ দেন ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব মূসা হোসেইনী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. গওহর রিজভী সুদূর অতীত কাল থেকে ইরানের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের কথা উল্লেখ করে ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানান এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। তিনি বলেন, এসব অনুষ্ঠানই আমাদেরকে পুরোনো সম্পর্কের কথা নুতনভাবে মনে করিয়ে দেয়। পারস্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতা ও সাহিত্যে বহু ফারসি শব্দ প্রয়োগ করেছেন। ফারসি ভাষা বহুদিন রাজভাষা থাকার ফলে আমাদের দাপ্তরিক অনেক শব্দ এখনো ফারসি রয়ে গেছে। যেমন, আইন-আদালত ও জমিজমা সংক্রান্ত প্রায় শব্দ ফারসি।
নওরোজ এবং নববর্ষ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের দেশে নববর্ষ উদ্যাপন নওরোজেরই নবসংস্করণ। ইরানের সাথে গভীর সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের প্রভাবেই তা এদেশে এসেছে। নওরোজ প্রায় পাঁচ হাজার বছরের একটি পুরোনো উৎসব। এটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের উৎসব। তবে আনন্দঘন আমেজে এটি পালিত হতো শীতের শেষে বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে। এটি প্রথমে কোন ধর্মীয় উৎসব ছিল না, তবে ধর্মীয় আবহ যুক্ত হয়ে পরবর্তীকালে পরস্পরের মঙ্গল কামনার জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনার বিষয়টি একে বরং প্রাণবন্ত করেছে। এই নওরোজ শুধু ইরানেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। ইন্দো পারস্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাবে এটি ইরানের বাইরে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। আমাদের দেশে মোঘল আমলে এটি প্রচলিত হয়। মোঘল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়ও তখন বেশ ঘটা করে নওরোজ উৎসব পালিত হতো। তিনি তাঁর শৈশব স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, শৈশবে আমরা দেখেছি পুরোনো ঢাকার হোসেইনী দালান এলাকা, ইসলামপুর, সিদ্দিকবাজার, তাঁতিবাজারের অলিতে গলিতে নওরোজ উদ্যাপিত হতো। নওরোজের দিন ঢাকার লোকজন একে অপরের সাথে দেখা হলে বলতো ‘শুভ নওরোজ’। প্রতি বছর নওরোজের একটা রং দেয়া হতো। যেমন লাল, সবুজ, নীল, বেগুনি ইত্যাদি। যে বছর যে রং দেয়া হতো সেই রঙের কাপড় পরতো সবাই। খাদ্য-মিষ্টান্নতেও সেই রং দেয়া হতো অনেক সময়। জনাব রিজভী সবাইকে নওরোজের শুভেচ্ছা এবং একই সাথে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানান।
স্বাগত ভাষণে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালাচারাল কাউন্সেলর জনাব মূসা হোসেইনী ইরানি নওরোজ ও বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশ ইরান ও বাংলাদেশের জনগণের সম্মান, মর্যাদা, উন্নতি-অগ্রগতি ও সফলতা প্রার্থনা করে বলেন, নওরোজ ইরানিদের সবচেয়ে প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর অন্যতম যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উদ্যাপিত হয়ে এসেছে। নওরোজ শব্দের অর্থ নুতন দিন যা প্রকৃতির পুনর্জাগরণ ও নুতন শপথে নুতন বছরের পরিকল্পনাসমূহ হাতে নিয়ে নব উদ্দমে যাত্রার প্রারম্ভস্বরূপ। নওরোজ মানে শীতের জরাজীর্ণতার অবসান, বসন্তের শুরু এবং সবুজ শ্যামল রূপে পুনরায় নব যৌবনে পদার্পণ। ইরানি জনগণের সংস্কৃতিতে নওরোজ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও নিদর্শনে পরিপূর্ণ যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব রূপেও বিবেচিত। নওরোজ ইরানি জাতির নিজস্ব উৎসব হলেও আজ তা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ইরানের পাশাপাশি এই উৎসব আজ মধ্য এশিয়া থেকে শুরু করে তুরস্ক, ইরাক, ভারত উপমহাদেশ হয়ে উত্তর আফ্রিকাসহ বিশ্বের আরো অনেক অঞ্চলে তাদের নিজস্ব আচার পদ্ধতিতে পালিত হচ্ছে। নওরোজ নিছক কিছু আচার অনুষ্ঠান নয়; বরং কিছু অর্থবোধক নিদর্শন, অনুপ্রেরণা ও মানবিক মূল্যবোধেও পরিপূর্ণ। নতুন বছরের আগমনের সাথে সাথে ইরানে বাড়ি-ঘর, আঙ্গিনা, অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার করা হয়। নতুন জামা-কাপড় কেনা ও আসবাবপত্র ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের দেখতে যাওয়া, মুরব্বিদের সাথে কুশল বিনিময় করা, তাঁদেরকে সম্মান জানানো ও তাঁদের দোয়া চাওয়া, মৃতদের স্মরণ করে তাঁদের কবর যিয়ারত করা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা, একে অপরকে উপহার প্রদান, প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং নতুন বছরের দিনগুলো যাতে ভালোভাবে অতিবাহিত হয় সে লক্ষ্যে নিজের ও অপরের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা ইত্যাদি সবই ইতিবাচক ও উন্নত মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আচার-আচরণ। ইরানি নওরোজের একটি প্রতীকী বিষয় হচ্ছে ‘হাফ্ত সীন’ বা ফারসি সীন অক্ষর দিয়ে শুরু সাতটি দ্রব্যের সুসজ্জিত টেবিল যা সাতটি অর্থ প্রকাশ করে। বস্তুত এসব ধর্মীয় ও বিভিন্ন দেশের জাতীয় উৎসবের ভেতর দিয়ে ব্যক্তির নিজের, তার সমাজের, তার রাষ্ট্রের, এমনকি রাষ্ট্রের বাইরে আন্তর্জাতিক পরিম-লে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা বিশ্বসমাজ ও মানবতার জন্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি। তাই তো ২০০১ সালে জাতিসংঘে বসন্তের প্রথম দিন ২১ মার্চ বিশ্ব নওরোজ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ২০০৯ সালে এটি মানবতার সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক নিদর্শন হিসেবে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব ম হামিদ বলেন, ইরান ও বাংলাদেশের এই দুই জাতির মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল রয়েছে। উভয় দেশেই যেমন পবিত্র দুই ঈদ উদ্যাপিত হয় তেমনি উভয় দেশের জাতীয় দিবস রয়েছে বছরান্তে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসম্পন্ন নববর্ষ উৎসব। ইরানে নওরোজের আনন্দ ও আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। আমাদের দেশেও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রামে-গঞ্জে মেলা হয়ে থাকে। মেলায় ওঠে নানা রকম জিনিসপত্র ও খাদ্যসামগ্রী। বিভিন্ন রকম খেলাধুলা সহ আনন্দ উল্লাস হয়ে থাকে। বিগত কয়েক দশক যাবৎ এটা নগর জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। ইরানের মানুষ একদিকে যেমন জাতিয় চেতনা ও সংস্কৃতিবোধসম্পন্ন তেমনি ধর্মীয় সংস্কৃতি দ্বারাও উৎসাহিত। কিন্তু এই দুই বিষয়ে তাদের চেতনার গভীরে কখনো অন্তর্দ্বন্দ্ব হয় না। তারা সমুন্নত চিন্তায় উদ্দীপ্ত। কিন্তু খুব আফসোসের বিষয় আমাদের দেশে আমাদের নৃতাত্ত্বিক সংস্কৃতি যা আমাদের জাতীয় বিষয়আশয় ও আমাদের প্রকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট, আমাদের নিজস্ব জাতীয়তার প্রয়োজনেই এখানকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে সেসব উৎসবে হুমকি দেয়া হয়। বিগত দশকে নববর্ষ অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলাও হয়েছে, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ও নিন্দনীয়। আমাদের যেখানে বড় বেশি প্রয়োজন বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্য স্থাপন ও সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা, উদার ও মানবিক হওয়া এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করা সেখানে আমরা নিজেরই আত্মঘাতী হচ্ছি ও একে অপরকে উৎখাত করে দেয়ার জন্য নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে উগ্রতা ও বিদ্বেষের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছি। এই হিংসা-বিদ্বেষ জাতির জন্য শুভ বার্তা বয়ে আনে না।
তিনি বলেন, ইরান শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে একটি সমৃদ্ধ জাতি। মহাকবি ফেরদৌসী, হাফিজ, রুমি, জামি, ওমর খৈয়াম, ইবনে সীনা, আত্তার সহ অনেক বিদ্বান হাজার বছরে ইরানি সংস্কৃতিকে আরো সাবলিল ও সমৃদ্ধ করেছেন। আমরাও জাতি হিসেবে পেয়েছি কালিদাস, অতীশ দিপঙ্কর, আলাওল, শাহ সগীর, সৈয়দ সুলতান, রবীন্দ্র, নজরুল, জীবনানন্দের মতো সাংস্কৃতিক মহাপুরুষ।
জনাব ম হামিদ দুই দেশের ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে চলমান সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে আরো বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন এবং সর্বোপরি দুই দেশসহ সারা বিশ্বের মানুষে মানুষে সৌহার্দ কামনা করেন, মানুষের মুক্তি ও বিজয় কামনা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম সরকার বলেন, ইরানের নওরোজ আজ বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র রূপ পেয়েছে। এখানে রয়েছে জাতীয় চেতনা, ধর্মীয় শিক্ষা, সাংস্কৃতিক চিন্তা, প্রকৃতিপ্রেম, আনন্দঘন মানবতাবোধ। এখানে ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনের শিক্ষা ও চেতনা যেমন যুক্ত হয়েছে, তেমনি রয়েছে ‘শাহনামা’, সাদীর কবিতা, রুমীর ‘মসনভী’ও। হাফ্ত সীনের সাথে এগুলোও যুক্ত। নওরোজে ইরানি জনগণ প্রত্যাশা করে ইহ-পরকালীন মুক্তি এবং বৈধ জাগতিক সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তিময় জীবন যাপন। নওরোজে আনন্দের সাথে যুক্ত হয় প্রার্থনার ভাষাও।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব মোঃ বদরুল আনাম ভূঁইয়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীকে সাথে নিয়ে এ ধরনের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের আন্তঃদেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেশসমূহের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহয়তা করে।
আলোচনা পর্বের পর ছিল আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আহসানুল হাদীর নির্দেশনায় বাংলা ও ফারসি কবিতা ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। এতে ফারসি বিভাগের শিক্ষক ও কণ্ঠশিল্পী মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে তাঁর দল মহাকবি হাফিজের ‘তুতিয়ানে হিন্দ’ ও বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি গেয়ে শোনান। বাংলা ও ইরানি নববর্ষের প্রেক্ষাপটে বিশেষ নাটিকাও প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল সামির বাউলের হৃদয়গাহী বাউল গান। অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি প্রাণসঞ্জিবনী ফারসি গান পরিবেশন করে।

বগুড়া শেখ সা’দী কালচারাল সেন্টারে ফারসি নববর্ষ উদ্যাপন ১৩৯৭

গত ২১ মার্চ ২০১৮ বগুড়া শেখ সা’দী কালচারাল সেন্টারের উদ্যোগে সেন্টারের হলরুমে ফারসি নববর্ষ ১৩৯৭ উদ্যাপিত হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ফারসি নববর্ষের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শেখ সা’দী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক জনাব মোঃ শাহীনুর রহমান।
এ উপলক্ষে আলোচনা রাখেন জনাব মোঃ আতিফুর রহমান, হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ আনিসুর রহমান, হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ মোজাফ্ফর হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ্ব আবু জাফর মন্ডল, অধ্যাপক টিপু সুলতান।
আলোচকবৃন্দ বলেন, প্রত্যেকটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, নিজস্ব ভাষা রয়েছে। ইরানি জাতিরও নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, তাদের নববর্ষ উদ্যাপনে রয়েছে ধর্মীয় মূল্যবোধ। ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকটি সংস্কৃতি, সাহিত্য, সিনেমা ইত্যাদি পরিচালিত হয়। অতএব, এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অপসংস্কৃতিকে বর্জন করা দরকার।

বগুড়ায় বাংলা নববর্ষ ও শেখ সা’দী (রহ.)-এর জন্মবার্ষিকী উদযাপন

গত ২০ এপ্রিল ২০১৮ বগুড়া শেখ সা’দী কালচারাল সেন্টারের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ ও পারস্যের মানবতাবাদী কবি শেখ সা’দী (রহ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী সুগার মিলস লিঃ এর সাবেক জি.এম. কৃষিবিদ মীর সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আতিকুল আলম।
শেখ সা’দী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক প্রভাষক শাহীনুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বগুড়া ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলহাজ্জ্ব আবু জাফর মন্ডল। সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখেন বগুড়া আল্-মাহদী শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম জনাব মোজাফ্্ফর হোসেন।
প্রফেসর ড. কামাল সবাইকে বাংলা নববর্ষের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নববর্ষ আমাদের প্রাণের ঐতিহ্য যার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই নববর্ষকে যথাযথ মর্যাদা সহকারে শালীনতা বজায় রেখে পালন করা।
শেখ সা’দী (রহ.)-এর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, পারস্য কবি শেখ সা’দী (রহ.) তাঁর রচিত প্রতিটি কাব্যগ্রন্থই আল্লাহর প্রশংসামূলক কথা দিয়ে শুরু করেছেন এবং তাঁর রচনাবলি দ্বারা তিনি মানুষকে বিশেষ করে যুবসমাজকে আল্লাহ ও কোরআনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্ব মানবতায় তিনি এতটাই অবদান রেখেছেন যে, তাঁর রচিত মানবাধিকার সম্বলিত কবিতার চরণ জাতিসংঘের মূল ফটকে জায়গা করে নিয়েছে।
জনাব আতিকুল আলম বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, শেখ সা’দী (রহ.) শুধু একজন কবি-ই ছিলেন না; বরং তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের আলেম, দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আল্লাহর অলি ছিলেন। তিনি বলেন, শেখ সা’দী (রহ.) একদিন খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আর ভাবছিলেন আমার যদি একজোড়া জুতা থাকত তাহলে কতই-না ভালো হতো! এ কথা ভাবতে ভাবতে তিনি মসজিদে নামায আদায়ের জন্য প্রবেশ করলেন এবং হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ল মসজিদে একজন লোক শুয়ে আছে যার পা ছিল না। ঐ লোককে দেখে তিনি জুতার কথা মন থেকে মুছে ফেললেন।
জনাব মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, আমাদের আলেম সমাজ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, মিলাদ মাহফিলে এবং দোয়ার অনুষ্ঠানে শেখ সা’দী (রহ.)-এর লেখা ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি, কাশাফাদ্দোজা বিজামালিহি, হাসুনাত জামিউ খিসালিহি সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি’ পড়ে থাকেন যা না পড়লে সেই অনুষ্ঠানগুলো যেন অপূর্ণ থেকে যায়।
স্বাগত বক্তব্যে জনাব আবু জাফর মন্ডল উপস্থিত অতিথিবৃন্দকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং মানবতার কবি শেখ সা’দী (রহ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকলকে মোবারকবাদ জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় জনাব মীর সিদ্দিকুর রহমান বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। বিশ্ব মানবতায় শেখ সা’দী (রহ.) যে বিশেষ অবদান রেখেছেন তার কিছু বিষয় তিনি তুলে ধরেন।