ঢাকায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ (১২-১৭ রবিউল আউয়াল) উপলক্ষে শনিবার বিকেলে রাজধানী ঢাকায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও সাবেক জেলা দায়েরা জজ আলহাজ মো. ইসমাইল মিয়া।ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীরমোহাম্মাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা লুৎফর রহমান। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নাতে রাসুল পরিবেশন করেন শিল্পী শাহনাওয়াজ তাবিব।অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্বারী আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহ যদি একত্রিত হতে পারে তাহলে নতুন পৃথিবী উপহার দিতে পারবে। ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে আল-আকসা উদ্ধার করতে সমর্থ হবে। মুসলিম বিশ্বে আমাদের সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। আমরা যদি এই সমস্ত সম্পদ বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে মুসলিম বিশ্ব নতুন শক্তি নিয়ে জেগে উঠবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি ছিলেন মানবতার ও সমগ্র বিশ্বের নবী। তিনিই প্রথম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রায় এক হাজার ৪০০ বছর পূর্বেই তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তার আগমনের পূর্বে পৃথিবীতে মানুষের অধিকার বলতে কিছু ছিল না। মহানবী (সা.) সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন, আরবের ওপর অনারবের কিংবা অনারবের ওপর আরবের, সাদার ওপর কালোর কিংবা কালোর ওপর সাদার বিশেষ কোন মর্যাদা নেই। পৃথিবীর সব মানুষ সমান এবং আল্লাহ ভীতিই একমাত্র শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড। ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, মহানবী (সা.) এর আগমনের পূর্বে নারীদের কোন সম্মান ও মর্যাদা ছিলো না, বরং তাদেরকে সকল অনিষ্টের মূল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু রাসূল (সা.) ঘোষণা করলেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তার এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া, নবী করিম (সা.) পৃথিবীতে প্রথম যুদ্ধনীতি ঘোষণা করে বলেন, যুদ্ধের ময়দানে নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা যাবে না এবং মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাতে ধর্মযাজকদেরকে হত্যা করা যাবে না। উপদেষ্টা বলেন, মহানবী (সা.) যেটা বলেছেন সেটা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। এর ব্যতিক্রম কখনো ঘটেনি। তিনি সমগ্র-জীবনে ইসলামের তত্ত্বকে বাস্তবে রূপায়ণ করেছেন। আমরা যদি রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণের করতে পারি তাহলে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন আলোকিত ও মহিমান্বিত হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি বলেন, মহান আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে সারাবিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল (সা.)-কে রাহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ রাসূল (সা.) হলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত পূর্ণাঙ্গ রহমতস্বরূপ, যার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তার এই রহমত তাঁর সৃষ্ট প্রতিটি জীবের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোন বিশেষ জাতি বা যুগ নয়, বরং রাসুলের মাধ্যমে প্রেরিত এই রহমতের ধারা কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির জন্য বহমান থাকবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, মহানবী (সা.) ছিলেন, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তার চারিত্রিক মাধুর্যে মূর্তি-পূজারিরাও আকৃষ্ট হয়েছে এবং তিনি বিধর্মী কাফের, মুশরিক ও মুর্তিপূজারীদেরকে ইসলামের পতাকাতলে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজকে মুসলিম বিশ্বে যেসব বিভেদ রয়েছে তা দূর করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই রাসুলের পথ অনুসরণ করতে হবে এবং তার নির্দেশ মেনে চলতে হবে । রাসুল (সা.) সবসময় মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার উপর গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলেছেন, “তোমরা ঐক্যের রশিকে শক্ত করে ধরো, ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না।”বিশ্বের মুসলমানরা যদি মহানবী (সা.) এর এই বাণী অনুসরণ করে এবং নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ভুলে ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করে তবেই বর্তমান মুসলিম বিশ্বের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব।
অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীরমোহাম্মাদী বলেন, ইসলামি ঐক্য শুধু একটি স্লোগান নয়, বরং কুরআনের একটি নির্দেশ। পবি
তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যু এবং এই ইসলামি ভূখণ্ডের অধিবাসীদের বিশেষ করে গাজা উপত্যকার মানুষের দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক পরিস্থিতি আজ ইসলামি বিশ্ব ও মুসলমানদের প্রথম ও প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সকল মুসলিম জাতি ও ইসলামি সরকারগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কয়েক দশকের এই সংকট নিরসন করা কঠিন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে মানবতা যখন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল তখন মহান আল্লাহ তায়ালা মক্কার কুরাইশ বংশে মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে প্রেরণ করেছেন। যিনি এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীর মানুষকে মুক্তির দিশা দেখিয়েছিলেন।মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বলেন,মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম ধর্মের মূল কাণ্ডারী হিসেবে সবার জন্য যেসব পরামর্শ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে গেছেন তাতে তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করাই ইসলামি উম্মাহর ঐতিহাসিক ও অগ্রসরমাণ পথ চলার মূল কথা যা মুসলমানদের মধ্যকার সকল বিভেদ ও বিভাজনকে দূর করে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম।
অনুষ্ঠানে সাবেক জেলা দায়েরা জজ আলহাজ মো. ইসমাইল মিয়া তার বক্তব্যের শুরুতেই ফারসি ও উর্দু ভাষার দুটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে রাসুলের উচ্চ মর্যাদা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন, সর্বো