শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের ইরান সফর

পোস্ট হয়েছে: জুন ২৮, ২০১৮ 

news-image

ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক, প্রযোজক, পরিচালক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি অনন্ত জলিল। তাঁর নতুন এ সিনেমার নাম দিয়েছেন ‘দিন-দ্য ডে’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, তা-ই তুলে ধরা হবে তাঁর নতুন ছবিতে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ইরান সফর করেন তিনি। তাঁর সফরসঙ্গীর মধ্যে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী বর্ষা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুমন ফারুক ও ঢাকাস্থ ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। এই প্রতিনিধিদলকে সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করেন ইরানের চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক মর্তুজা অতাশ জমজম এবং ইরানের তারবিয়াতে মুদাররেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমিত আল রশিদ। এই সফরে ইরানের ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশনের পরিচালক আলীরেজা তাবেশের সঙ্গে আলোচনা করেন অনন্ত। এ ব্যাপারে তেহরান টাইমসকে আলীরেজা তাবেশ জানিয়েছেন, যৌথ প্রযোজনা নিয়ে তাঁদের আলোচনা হয়েছে। অনন্ত জলিল নিজের পরিকল্পনা এ সময় তুলে ধরেছেন। আমরাও এ ব্যাপারে খুব আগ্রহী! আমাদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তবে যে ছবিটি নির্মাণ করা হবে, শুরুতে তার শক্তিশালী কাহিনী আর চিত্রনাট্য তৈরি হতে হবে। আর তা আমাদের দুই পক্ষের পছন্দ হতে হবে।’


ছবিতে অনন্ত জলিল নিজেও অভিনয় করবেন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন বর্ষা। ইরানের সুন্দর ও নয়নাভিরাম স্থানগুলো এ ছবির জন্য খুবই প্রয়োজন বলে সেখানেই শুটিং করতে ইচ্ছুক অনন্ত। তবে বাংলাদেশেও ছবিটির শুটিং করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইরানের সাথে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের ব্যাপারে অনন্ত জলিল বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কেবল ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ একটি দেশই নয়; বরং সুস্থধারার চলচ্চিত্র, শিক্ষণীয় ও ইসলামি বার্তানির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চলচ্চিত্র নির্মানকারী দেশ এটি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত ও সম্মানজনক পুরস্কার অস্কার থেকে শুরু করে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার নেই যা ইরানের ঝুলিতে পড়ে নি। তাই যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের ব্যাপারে আমি ইরানকে বেছে নিয়েছি।
অনন্ত জলিল বলেন, আমি এমন কোন সিনেমা নির্মাণ করতে চাই না যা দর্শকদের সাময়িক বিনোদন দেবে এবং পরে সব ভুলে যাবে। আমি এমন চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই যা মানুষ দীর্ঘদিন মনে রাখবে। মানুষের বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি তাদের মানবিক বিবেকবোধকেও জাগ্রত করবে এমন সিনেমা নির্মাণের পক্ষপাতি আমি। আর এক্ষেত্রে ইরান বিশ্বের অন্যতম মডেল বলে আমি মনে করি। জলিল আরো বলেন, দেশটির সাথে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক ইরান সফরে চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাঁরা চলচ্চিত্র নিয়ে গভীর অনুশীলন করেন- যা আমাকে অভীভূত করেছে। তাছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য খুব উপযোগী একটি দেশ এটি। কাছে থেকে না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না কত সুন্দর দেশ ইরান! যেন মহান আল্লাহ সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছেন এখানে। আর এদেশের শিল্প ও সংস্কৃতিমনা মানুষগুলো এসব সৌন্দর্যকে শৈল্পিক রূপ দিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে এই দেশটিকে।

এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইউরোপ আমেরিকার পর্যটনসমৃদ্ধ অনেক দেশকেই হার মানায়। আমি ইরানে আসার আগে মনে করে ছিলাম এটি নিছক একটি মরুময় দেশ। কিন্তু এখানে এসে ইরান সম্পর্কে আমার পুরো ধারণাটাই পাল্টে গেছে। ইমাম খোমেইনী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে নেমে রাজধানী তেহরানে প্রবেশ করতেই দেখি রাস্তার দুপাশে সবুজের সমারোহ। গাছের পাতাগুলো একেবারে গাঢ় সবুজ, কোন ধুলোবালি নেই, রাস্তুাগুলো যেন ঝকঝক করছে। আর রাস্তার দুপাশে সবুজের ফাঁক গলে মাঝে মাঝেই উঁকি দিচ্ছে বাহারী রকমের ফুল। যেন জ্বলজ্বল করছে দুপাশ। শহরে আসার পর দেখি অসংখ্য পার্ক। এতো নান্দনিকরূপে তৈরি করেছে এগুলো যা বলে শেষ করা যাবে না। তেহরানে ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশনের পরিচালক আলীরেজা তাবেশের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তি বিশেষ করে ইরানের চলচ্চিত্র প্রযোজক সংস্থার প্রধান, ফিল্ম রাইটার্স ফোরামের সভাপতি ও ইরানের ফিল্ম ইন্সটিটিউটের প্রধান, ফজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান এবং তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। এসব সাক্ষাতে ইরানের সাথে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণের ব্যাপারে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এসব সাক্ষাতের সময় নানা রকমের ইরানি ফল, মিষ্টি ও চা দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করা হয়। তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সেলর আমাদের সম্মানে একটা ডিনার পার্টির আয়োজন করেন। এতে ১০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের পাশাপাশি ইরানের কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা শিল্পী ও কলাকুশলি উপস্থিত ছিলেন। এসব আনুষ্ঠানিকতার ফাঁকে একদিন আমরা তেহরানের সবচেয়ে উুঁচু ও অত্যাধুনিক ভবন মিলাদ টাওয়ারে যাই। টাওয়ারের চূড়ায় রয়েছে একটা ঘূর্ণায়মান রেস্টুরেণ্ট। এই রেস্টুরেন্টে বসেই দেখা যায় পুরো শহর।
আমরা যতটুকু সম্ভব শহরটি ঘুরে দেখার পর আমরা যাই ইরানের ঐতিহাসিক শহর ইসফাহানে। প্রায় দুই যুগ ইরানের রাজধানী ছিল এই শহরটি। রাজধানী থাকাকালে ইসফাহান বিশ্বের সুন্দরতম শহরের একটি ছিল বলে বহু বিদেশি পর্যটক তাঁদের ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন।

এতক্ষণ তো ইরানের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য নিয়ে কথা বললাম। কিন্তু এদেশের মানুষের আচার-আচারণ ও আতিথেয়তার কথা যেন না বললেই। কি অসম্ভব নম্র ও ভদ্র স্বভারের এরা! খুবই ধীরে ধীরে কথা বলে। সহজে কাউকে উত্তেজিত হতে দেখা যায় না। রাস্তাঘাটে যানজট বাঁধলেও কোন গাড়ির ড্রাইভারকে হর্ণ পর্যন্ত দিতে দেখা যায় না। এখানকার মানুষগুলো যেমন সুন্দর তেমনি পরিপাটিও। পোশাকেও রয়েছে তাদের অসাধারণ রুচিবোধ। বিশেষ করে এখানকার মেয়েদের শালীন পোশাকের মধ্যেও যে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে তাতেই বুঝা যায় এরা কত সভ্য ও মডার্ন! আর তাদের আতিথেয়তা পৃথিবীর অনেক দেশকেই হার মানাবে।