ঘরে থাকার ব্যতিক্রমী ঈদ, ভার্চ্যুয়াল শুভেচ্ছা
পোস্ট হয়েছে: মে ২৬, ২০২০
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।তবে স্মরণকালের মধ্যে এবারই প্রথম ব্যতিক্রমী ঈদ উদযাপন করে দেশের মানুষ। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার ঘরেই পালিত হয় ঈদের উৎসব। বাইরের বের হবার খুব একটা সুযোগও ছিল না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরে অবস্থান করেই পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হয়। ঈদের নামাজও বড় কোনো মাঠে কিংবা ঈদগাঁহে করা হয় নি। কাছের মসজিদেই সীমিত পরিসরে পড়তে হয় ঈদের নামাজ। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন তিনি।করোনা মহামারির কারণে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ঈদের জামাত অনুষ্ঠান এ বছর আগেই বাতিল করা হয়। ফলে বঙ্গভবনে নামাজ আদায় করেন রাষ্ট্রপতি। বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা সাইফুল কবির ঈদের নামাজে ইমামতি করেন।
নামাজ শেষে বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণের অব্যাহত শান্তি ও অগ্রগতি ও মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এ সময়ে সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং দেশে ও সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
করোনায় শারীরিক দুরত্ব বজায় থাকলেও ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় আত্মীক বন্ধনের এ যেন এক অনন্য নজির এবার ঈদে। দূরে থেকেই কাছে সবাই।
নিজ নিজ ঘরে থেকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার নির্দেশনা থাকলেও থেমে থাকে না ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। কারণ দুনিয়া তো এখন হাতের মুঠোয়। কাছের কিংবা দূরের, দেশে অথবা বিদেশের যে যেখানেই আছে সেখান থেকেই ভার্চ্যুয়াল জগতে অবিরাম চলে ঈদের শুভেচ্ছা।
বাহ্যিকভাবে ঘরে বসে সবাই ঈদ আনন্দ উপভোগ করলেও ঈদের আমেজ আর আনন্দের গন্ডি শুধু ঘরেই বন্দি নেই। প্রযুক্তির সুবাদে ঈদের আনন্দ আজ গোটা দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তকে ছুঁয়েছে। মোবাইল ফোনে, ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে, ভাইভার কিংবা ইউটিউবে প্রিয়জনকে ঈদের আনন্দের ভাগ দিতে সরগরম পুরো ভার্চ্যুয়ার দুনিয়া। করোনায় শারীরিক দুরত্ব বজায় থাকলেও আত্মীক বন্ধনের এ যেন এক অনন্য নজির এবার ঈদে। কোথাও বা আবার ভিডিও কনফারেন্সে চলে আড্ডা।
আধুনিক প্রযুক্তির এতোসব সুযোগ সুবিধার পরেও করোনাকালের এবারের ঈদ যেন অনেকটাই বিবর্ণ। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী সাম্প্রতিক ঘুর্ণিঝড় আম্পানে এখনো বিপর্যস্থ। বহু পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। অনেকের ঘর থাকলেও সেগুলো পানিবন্দি। আম্পানের ক্ষতির বাইরে যারা আছেন তারাও করোনায় দীর্ঘ ছুটিতে আর্থিক সঙ্কটে পরিবার নিয়ে আছেন। অনেকের জন্যই এবার তাই দু:সময়ের ঈদ।
ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া ঘুরে দেখা যায় অনেকেই তাদের ফেসবুকে লিখেছেন আমি ও আমার পরিবিার এবার ঈদ উদযাপন করছি না। কাজেই ইনবক্সে আমাকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাবেন না। অনেকে আবার মানবিক নানা উপদেশও দিচ্ছেন। কেউ লিখছেন, এই ঈদে এক টুকরো গোশত হয়তো রান্না হবে না কারো কারো উনুনে। আসুন আমরা তাদের খোঁজ নিই, সহয়তার হাত বাড়িয়ে দেই। কেউ বা ঘরে ঈদ উদযাপনের কথা জানচ্ছেন সবাইকে।
তবে হতাশার মাঝেও আছে আশার আলো।অনেকে লিখেছেন, ‘সময় এক রকম যায় না, দিন পাল্টাবে। সুদিন আসবেই’। সবার সাথে আমরাও অপেক্ষায় থাকলাম। কেটে যাবে সংকট, আবার হাসবো আমরা প্রাণের উচ্ছ্বাসে। মিলিত হবো ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে। ঈদ মোবারক।
তথ্যসূত্র: নয়াদিগন্ত, বিডি প্রতিদিন।