কেন ইমাম খোমেইনী ব্রিটেন পড়তে যেতে রাজি হননি!
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ২০, ২০১৭

রাশিদ রিয়াজ: ইরানে ইসলামি বিপ্লবের স্থপতি আয়াতুল্লাহ খোমেইনী যখন ছাত্র ছিলেন, তখন তাকে দেশটি সফররত এক ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিনিধি দল ব্রিটেনে দর্শনের ওপর পড়াশুনার আমন্ত্রণ জানালেও তিনি তার প্রিয় শিক্ষক আয়াতুল্লাহ হোসেইন তাবাতাবেয়ী বোরুজারদির ক্লাস ছেড়ে বিদেশ যেতে রাজি হননি। শ্রদ্ধার সঙ্গে সে আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়ে ইমাম বলেছিলেন, প্রিয় শিক্ষকের এক ঘণ্টার ক্লাসের বিনিময়ে পুরো ব্রিটিশ সরকার পেলেও তাতে তিনি রাজি নন। ব্রিটিশ ওই প্রতিনিধি দল ইমামকে বলেছিল, তিনি বিলেতে গেলে পড়াশুনা করলেও এতে ওই দেশের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। কিন্তু তাতে কোনো আগ্রহ দেখাননি খোমেইনী।
আয়াতুল্লাহ হজ শেখ আজিজুল্লাহ খোসরাভি জানজানি ইমাম খোমে্ইনীর একজন ছাত্র ছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি তার মৃত্যুর আগে এ তথ্য প্রকাশ করেন, কেন ইমাম খোমেইনী তার প্রিয় শিক্ষকের ক্লাস ছেড়ে ব্রিটেনে পড়তে যেতে রাজি হননি। ১৯৮৯ সালের ৪ জুন ইমাম খোমে্ইনীর মৃত্যুর ২৪তম বার্ষিকীতে আয়াতুল্লাহ খোসরাভি জানজানি বলেন, ইমাম তার প্রিয় শিক্ষক আয়াতুল্লাহ হোসেইন তাবাতাবেয়ীর এক ঘণ্টার ক্লাস ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি ছিলেন না। তখন পর্যন্ত ইমাম খোমে্ইনীর ইসলামি আইনশাস্ত্রের কোনো ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ আমি পাইনি। সেই সময়ে আমরা কোমে বাস করতাম। ইমাম ইসলামি জ্ঞান শিক্ষা দিতেন। এমন ক্লাসের প্রথমভাগে তিনি ফায়েদিয়া সেমিনারি সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন। ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিলাম আমরা। আয়াতুল্লাহ বোরুজারদিকে অশেষ শ্রদ্ধা করতেন ইমাম খোমেইনী। একদিন দুই ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা আয়াতুল্লাহ বোরুজারদির সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাত করতে এলেন। ব্রিটিশ দুই কর্মকর্তা দর্শন সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চাইলেন। তাদের ইমাম খোমে্ইনীর কাছে নিয়ে যেতে বলা হল। ওই সময় ইমাম খোমেইনী ‘হজ-আকা রুহল্লাহ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। ইমাম খোমেইনী তখন আয়াতুল্লাহ বোরুজারদির বাসভবনেই উপস্থিত ছিলেন। পৃথক একটি কক্ষে তারা সাক্ষাত করলেন। ঘটনাক্রমে আয়াতুল্লাহ খোসরাভি জানজানি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আয়াতুল্লাহ খোসরাভি জানজানি বলেন, তাদের কথপোকথন ও প্রশ্নোত্তর বেশ তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় ছিল। তাদের মধ্যেকার কথাবার্তা ভাষান্তর করা হচ্ছিল। ইংরেজি ও ফারসি ভাষান্তরে আলাপচারিতায় দুই ব্রিটিশ কর্মকর্তা বারবার মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছিলেন। আলোচনার শেষ মুহূর্তে ব্রিটিশ দুই কর্মকর্তা এও বললেন, বিভিন্ন দেশে অমুসলিম, মুসলিম এমনকি তেহরানে বেশ কয়েকজন দার্শনিকের সঙ্গে তারা কথাবার্তা বলেছেন, কিন্তু দার্শনিক প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তারা পান নি বা ইমাম খোমে্ইনীর সাথে আলোচনার আগে তারা কখনো এত পরিতৃপ্ত হতে পারেননি।
এপর্যায়ে তারা আরো বলেন, যদি ইমাম খোমেইনী রাজি থাকেন, তাহলে তারা তাকে ব্রিটেনে ইউরোপের দার্শনিকদের সঙ্গে পড়াশুনার সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে খুশি হবেন। এতে ব্রিটেনও উপকৃত হবে।
ওই সময় আয়াতুল্লাহ খোসরাভি কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কারণ, তিনি তখন ইমাম খোমে্েইনীর কিছু ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন এবং তা ছিল তার কাছে জ্ঞাননির্ভর উৎসের সন্ধান। স্বাভাবিকভাবেই ইমাম খোমেইনী ব্রিটেন পড়তে গেলে তিনি তার ক্লাস থেকে বঞ্চিত হবেন। এমন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আয়াতুল্লাহ খোসরাভির মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার সময় ইমাম খোমেইনী বিনীতভাবে জবাব দিলেন এবং তা ইংরেজিতে ভাষান্তর করে দেওয়া হল, যাতে ইমাম জানান, তিনি তার প্রিয় শিক্ষক আয়াতুল্লাহ বোরুজারদির ক্লাস ছেড়ে এক ঘণ্টার জন্যেও কোথাও যেতে চান না। ব্রিটেনেও নয়। নিজের ক্লাস সেরে সেই সময় ইমাম তার প্রিয় শিক্ষক আয়াতুল্লাহ বোরুজারদির ক্লাসে নিয়মিত যোগ দিতেন। – আইএফপি নিউজ ডটকম