কারবালায় ‘আরবাইনে লাখো মানুষ ও এর অনুপ্রেরণা
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২০, ২০১৬
রাশিদ রিয়াজ : সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াই ও ইমাম হোসাইন (আ:) এর আত্মত্যাগের কথা আমরা সবাই জানি কিন্তু কারবালার এ বিয়োগান্তক ঘটনা আমাদের জীবনে বারবার কিসের বার্তা দিয়ে যায়? বিশ্বে সত্যের পথে সংগ্রামের ঘটনা একাধিক ও বিরল নয়। এর মাঝে কারবালার ঘটনার আলাদা তাৎপর্য অব্যশ্যই আছে। সেই তাৎপর্যের অনুসন্ধান আমাদের জীবনে অনেক জরুরি। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (আ:) শুধুই কি স্বৈরচারী ইয়াজিদের (যার পিতা ছিলেন মুয়াবিয়া ও মুয়াবিয়ার পিতা ছিলেন আবু সুফিয়ান) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে চেয়েছিলেন ? না, ইসলামকে নিমজ্জিত অনৈসলামী কার্যকলাপের ভেতর থেকে সংস্কার করে ইমাম হোসাইন তাকে পুনরুজ্জীবিত করে গেছেন।
দিনটি ছিল জুম্মাবার। ১০ অক্টোবর ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ, ১০ই মুহররম যা আমাদের কাছে আশুরা হিসেবে পরিচিত। এর চল্লিশ দিন পর তার চেহলাম উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মুসলিম ইমাম হোসাইনকে (আ:) অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাতে ঘর থেকে বের হয়ে যান। এদিনটিই আরবাইন হিসেবে পরিচিত।
কখনো কখনো আরবাইন উপলক্ষে আগত কাফেলার ওপর ইসলামের নামধারী সন্ত্রাসীদের গুলি, বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। নিহত হচ্ছে নারী, পুরুষ, শিশু যারা বিনা অস্ত্রে শান্তিপূর্ণ শোকযাত্রায় রওয়ানা দিচ্ছেন, আরবাইন উপলক্ষে ইমাম হোসাইন (আ:) ও তার সেই অকুতোভয় ৭২ অনুসারীর স্মরণে। তাদের মধ্যে ছিলেন, ইমাম হোসাইনের (আ:) ৬ মাসের শিশু আলী আল-আসগার। মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে তাদের একের পর এক কতল করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আরেক শিশু ছিলেন রোকাইয়া যার বয়স ছিল ৪ বছর। রোকাইয়া তার পিতার ছিন্ন মস্তক জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েন এবং শাহাদাৎ বরণ করেন।
অথচ এখনো লাখ লাখ মুসলিম নারী পুরুষ শিশু কিসের অনুপ্রেরণায় আরবাইনে যোগ দেন ? দুনিয়াবী কোনো চাহিদার জন্যে তো কারাবালায় যাওয়ার খুব একটা প্রয়োজন নেই। খালি পায়ে সর্বস্ব ত্যাগের সংকল্প নিয়েই তারা সেখানে যান, অঙ্গীকার নিয়ে ফিরে আসেন ত্যাগের সুমহান আদর্শে সবসময় অবিচল থাকতে। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়। আরবাইন আরবি শব্দ ও এর মানে হচ্ছে চল্লিশ। ফার্সি শব্দ চেহলম বা উর্দু চেহলাম শব্দের অর্থ চল্লিশ যা আমাদের দেশে বাংলায় চল্লিশা হিসেবে পরিচিত। আশুরার দিন থেকে চল্লিশ দিন পর এদিনটিতেই কারবালায় শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের (আ:) মাজারে বিশ্বাসী মানুষের ঢল নামে।
চেহলাম বা চল্লিশায় যারা ইমাম হোসাইনের (আ:) মাজারে যান তারা কোরআন তেলাওয়াত, যিয়ারত ও দোয়া পাঠে অংশ নেন। আরবাইন বা এই চল্লিশা আমাদের স্বজনদের মৃত্যুর পরও ঘরে ঘরে পালন করা হয়। তবে কারবালায় আরবাইন অবশ্যই ভিন্ন এক তাৎপর্য বহন করে। আর এজন্যেই সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় তিরিশ মিলিয়ন মানুষ একত্রিত হন। এর শুরু হয়েছে কারবালার যুদ্ধের পর এবং তা চলছে আজ অবধি যা নিরন্তর থাকবে রোজ কিয়ামতের আগ পর্যন্ত। হিজরি ৬১ সাল থেকে ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর থেকে আরবাইন শুরু হয়। (উইকিপিডিয়া)
মর্মান্তিক ওই হত্যাযজ্ঞের পর কারবালার প্রান্তরে যুদ্ধের পর বেঁচে যাওয়া কয়েকজন ইমাম হোসাইনের (আ:) মাজারে প্রথম জমায়েত হন যাবির ইবনে আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে। তার সঙ্গে ছিলেন আতিয়া ইবনে সা’দ কারণ যাবির ইবনে আব্দুল্লাহ কিছুটা অসুস্থ ও সম্ভবত তিনি অন্ধ ছিলেন। তার সঙ্গে আরো ছিলেন মুহাম্মদ (সা:)’এর পরিবারের নারী সদস্যরা ও হোসাইনের (আ:) পুত্র, ইমাম জয়নুল আবেদীন যাদের স্বৈরাচারী ইয়াজিদের নির্দেশে বন্দি করে দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইমাম জয়নুল আবেদীন তাঁর বাবা ইমাম হোসাইনের (আ:) শোকে ৩৪ বছর ধরে আমৃত্যু কেঁদেছিলেন। তিনি সব সময় দিনে রোজা রাখতেন ও পুরো রাত জেগে ইবাদত করতেন। রোজা ভাঙ্গার সময় তিনি বাবার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থার কথা উল্লেখ করে এত বেশি কাঁদতেন যে অশ্রুতে খাবার ভিজে যেত এবং খাবার পানিতেও অশ্রু মিশে যেত। জীবনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল তাঁর। একদিন তাঁর খাদেম ইমামের কান্নারত অবস্থায় তাঁকে বলেন: আপনার দুঃখ ও আহাজারি শেষ হয়নি?
উত্তরে তিনি বলেন: তোমার জন্য আক্ষেপ! ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর একজন নবী ছিলেন। তাঁর ১২ জন সন্তান ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁর এক পুত্র ইউসুফকে চোখের আড়ালে রাখায় শোকে, দুঃখে ও অতিরিক্ত কান্নায় তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে পড়েন, চুল পেকে যায় ও পিঠ বাঁকা হয়ে যায়। সন্তান জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর এ অবস্থা হয়েছিল। আর আমি আমার পিতা, ভাই এবং পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে মাটিতে পড়ে যেতে ও শহীদ হতে দেখেছি; তাই কিভাবে আমার দুঃখ ও অশ্রু থামতে পারে?
উমাইয়া শাসকদের কড়া নজরবন্দীর মধ্যে ইমাম জয়নুল আবেদীনকে থাকতে হত। কারবালার ঘটনার পর তিনি যখনই পানি দেখতেন বাবাসহ কারবালার শহীদদের চরম পিপাসার কথা ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। কোনো ভেড়া বা দুম্বা জবাই করার দৃশ্য দেখলেও কেঁদে আকুল হতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন এই পশুকে জবাইর আগে পানি পান করানো হয়েছে কিনা। পানি দেয়া হয়েছে একথা শোনার পর তিনি বলতেন, কিন্তু আমার (তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত) বাবাকে পানি না দিয়েই মস্তক বিচ্ছিন্ন করেছিল ইয়াজিদ-সেনারা।
আরবাইনে যখন ইমাম হোসেইনের লাখো অনুসারীরা যোগ দিতে যান তাদের মননে, চিন্তায় এসব শোকগাঁথা কেবলি ঘুরপাক খেতে থাকে। অথচ ইরাকে যখন সাদ্দাম হোসেন প্রেসিডেন্ট হয়ে আসে, এরপর ৩০ বছর প্রকাশ্যে আরবাইনে যোগ দেয়া নিষিদ্ধ ছিল। অথচ ইতিহাস বলে আরবাইন ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ইরাকের কারবালা শহর আসলে লাখো মুসলিম তীর্থযাত্রীদের পদধ্বনিতে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। বসরা থেকে কারবালা এক দীর্ঘ যাত্রার পথ তা যদি আপনি গাড়িতেও যান কিন্তু প্রতিবছর আরবাইনের সময় খালি পায়ে দুই সপ্তাহ ধরে, কখনো কখনো এক মাস ধরে ইরান বা অন্যদেশ থেকে ইমামের অনুসারীরা আসেন। আরবাইনে যোগ দেয়া বিপুল মানুষের ভীড় এতটাই জনাকীর্ণ হয়ে ওঠে কখনো কখনো তা শতশত মাইল দীর্ঘ হয়ে ওঠে। আগতদের জন্যে পথে পথে অনেক স্বেচ্ছাসেবক খাবার, পানি নিয়ে বা কোনো সাহায্যের জন্যে দাঁড়িয়ে থাকেন। অনেক ঘরের দরজা এসময় খোলা থাকে পথচারীদের বিশ্রামের জন্যে যারা আরবাইনে এসেছেন তাদের সেবা করতে পারলে অনেকে ধন্য মনে করেন নিজেকে।
আরবাইনের চলার পথে হাজার হাজার তাঁবু, আশে পাশের গ্রামবাসীরা তীর্থযাত্রীদের জন্যে তৈরি রেখেছেন। যেন সেগুলো মেহমানের জন্যে অপেক্ষা করছে। তাবুর ভেতরে প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকে সাজানো। অবশ্যই তা বিনামূল্যে আরবাইন মেহমানদের জন্যে। খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ, যোগাযোগের সুবিধা, বাচ্চাদের ডায়াপার সবই রয়েছে আপনার জন্যে। ৪০০ মাইল যাত্রাপথের মোড়ে মোড়ে দল বেধে দাঁড়িয়ে আছে এলাকাবাসী, বিনামূল্যে খাবার দিলে তারা একধরনের প্রশান্তি লাভ করেন। ক্লান্ত কারো পা ম্যাসেজ করে দেয়ার অনুনয় করেন কেউ কেউ। স্বেচ্ছাসেবীরা মেহমানদের জামা-কাপড় ধুয়ে-শুকিয়ে ইস্ত্রি করে দেন। স্মরণ করুন কারাবালার প্রান্তরে যেদিন ইমাম হোসেইন (আ:)এর কাছে ইয়াজিদের সৈন্যদল এসে সবেমাত্র পৌঁছেছে এবং তাদের সেনাপতিরা ইমামের সঙ্গে দেখা করতে এলে হোসাইন (আ:) তাদের ও তাদের পশুকে হাঁপাতে দেখে পানি পান করানোর নির্দেশ দেন। অথচ পরবর্তীকালে ইমাম ও তার অনুসারী যাদের মধ্যে নারী ও শিশু ছিল ইয়াজিদের সৈন্যরা তাদের সবাইকে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আরবাইনে যারা আসেন তারা কিংবা যারা তাদের সাহায্য করতে চান তাদের তো ইমামের এ শিক্ষা অজানা নয়।
২০০৮ সালে আরবাইনে যোগ দেয় অন্তত ৯০ লাখ মানুষ। বিবিসি ও প্রেস টিভি এ পরিসংখ্যান দিয়ে বলছে পরের বছর আরবাইনে মানুষের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। এদুটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে ওই বছর আরবাইনের দুই দিন আগে কারবালায় ১ কোটি মানুষ জড়ো হয়। পরের দুদিনে আরো ৮০ লাখ মানুষ কারবালায় এসে পৌঁছায়। ২০১৩ সালে আরবাইনে ৪০টি দেশ থেকে ২ কোটি মানুষ যোগ দেয়। এ বছর এক গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ২০ জন নিহত হন। পরের বছর নাজাফ শহর থেকে ৫৫ মাইল পথ অতিক্রম করে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ আরবাইনে যোগ দেয়। এরপাশের এলাকায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের কবলিত এলাকা হলেও ২০১৪ সালে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এর কারণ হিসেবে দায়েশদের বিরুদ্ধে ইরাকি জনগণের মিলিত বিজয়কে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানান, কারবালার গভর্নর আকিল আল-তুরাইহি। আর উইকিপিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে কারবালায় সমবেত হন ২৬ মিলিয়ন যিয়ারতকারী।
আরবাইনে এসে জিয়ারতের পর এক দোয়ায় লাখো কোটি মানুষ মিলিত হন, আরবাইনের দিন তাদের কাছে কারবালার ত্যাগ, বিয়োগান্তক ইতিহাস ও সত্যের আদর্শে সমুজ্জল আপোসহীন এক বার্তা উপস্থাপন করা হয় যা তাদের জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। তারা নিজেদের মধ্যে আত্মদহন ও আত্মসমালোচনায় শুধু যে দগ্ধ হন তা নয়, নতুন দিগন্তে জীবনযাত্রার এক হাতছানি পান, ত্যাগের অনুপ্রেরণায় সত্যের পথে চলার আপোসহীন এক পথপরিক্রমায় তার পথচলা শুরু হয়।
শহীদদের নেতা ইমাম হোসাইন মৃত্যুর মত বিপদকে আলিঙ্গন করেছেন, সক্রিয় ছিলেন ন্যায় ও ন্যায্য পথে, সবকিছুই ব্যবহার করেছিলেন পূর্ণ মনোযোগের সাথে সদুপদেশ দেয়ার জন্যে, বেদনকে আঁকড়ে ধরে, হৃদয় দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন, মন, আত্মা এবং জীবন বিলিয়ে দেন মানুষকে মুক্তির স্বাদ দেয়ার জন্যে সেই অজ্ঞতার জোয়াল ও বিহ্বলতার কুফল থেকে, কিন্তু এক দুর্বৃত্ত, এক প্রতারক, যে কিনা আশার কুহক তৈরি করে কেবল এবং বাকোয়াজ, যার লক্ষ্য শুধু পার্থিব লাভ, সে কিনা তার ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে এবং অনন্ত সুখকে নিজের অংশ হিসেবে যে বিক্রি করেছে ইতরদের জন্যে সর্বনি¤œ দামে, যে কি না শেষ বিচারের দিনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মামুলি এক কুরুটিপূর্ণ কিছু পাওয়ার আশায়, অবাধ্য হয়ে যে গর্ব করে, অনুধাবনে যে ব্যর্থ- যে মুর্খতাকে জড়িয়ে ধরে স্বচ্ছলতার জন্যে, উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে কেবল যা তোমাকে ও তোমার নবীকে ক্রোধান্বিত করতে, কর্কশ ভাষার ব্যবহার ও বিবাদে লিপ্ত থেকেছে যারা, ভ-, পাপে প্রচ- ভারাক্রান্ত এক ধারক, জাহান্নামকে নিন্দাকারী ও যারা কেবল উপদেশ দিয়ে বেড়াত। যাইহোক এর পাশাপাশি সেই পবিত্র ইমাম অটলভাবে ন্যায়ের সঙ্গে একদল অনুসারীকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন, একত্রিত করেছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তার জীবন আল্লাহর পথেই কেবল বিসর্জন দিতে হয়েছে এবং এর বিনিময়ে তিনি ও তার অনুসারীরা একের পর এক শাহাদাতের মর্যাদা অর্জন করেছেন। এরপর তার পরিবারকে বিরাট দুর্দশায় পড়তে হয়েছে।
আরবাইনে যে শুধু শিয়া মুসলমানরা অংশ নেন তা নয়, তারা এটাকে স্বতন্ত্র ধর্মীয় অনুপ্রেরণার অনুশীলন হিসেবে পালন করলেও এ অনুশীলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেন সুন্নি মুসলমান, খ্রিস্টান, ইয়াজিদি, অগ্নিপূজারী ও সাবেয়ীরা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এমনকি সুইডেন, রাশিয়া এবং ভ্যাটিক্যান সিটির প্রতিনিধিরা আরবাইনে যোগ দেন। ইরাকের খ্রিস্টান নেতারা ভ্যাটিকান প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যেমন ঘানা, নাইজেরিয়া, তাঞ্জানিয়া এবং সেনেগালের মানুষ আরবাইনে যোগ দেন।
প্রথম দিকে আরবাইন উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্রভাব সৃষ্টি করে। ইরানে আরবাইন রাজনৈতিক বিক্ষোভ হিসেবে ব্যবহার হয়। ১৯৬৩ সালের ৫ জুন ইরানের কোমে হত্যার বিরুদ্ধে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির সমর্থকরা আরবাইনকে ব্যবহার করেন। তখন কোমে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছিল। আরবাইন থেকে শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করার এক অভূতপূর্ব উদারহরণ সৃষ্টি হয়েছে যা পরবর্তীতে জুলুম, অন্যায় ও রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইরানের ইসলামী বিপ্লবে লড়াই করার প্রেরণা জুগিয়েছে।
আরবাইন প্রায়ই কাছাকাছি একই দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে আরবী, জর্জিয়া ও ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিবছর আরবাইনের তারিখ কিছুটা হেরফের হয়ে থাকে। তবে আশুরা বা মহরমের ১০ম দিনের পর ৪০তম দিনেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আরবাইন অর্থাৎ ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের চল্লিশ দিন উপলক্ষে প্রতি বছর কারবালার ময়দান অভিমুখে শোকযাত্রায় প্রার্থনা, বক্তব্য হৃদয়ঙ্গম করে মানুষ মানবইতিহাসের সেই শাহাদাতের ঐতিহ্যকেই স্মরণ করে যা আবারো আমাদের জীবনে প্রায়োগিক ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আরবাইন থেকে মানুষ সেই শিক্ষা নিয়ে ফেরে, না, অন্যায়কে কখনোই প্রশ্রয় দেয়া যায় না। মানুষ কিভাবে আরেক মানুষের কাছে এগিয়ে আসে তার প্রয়োজনে এবং তা কেবলি ইমাম হোসাইনের (সা:) সেই বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়, যেমন তিনি মদিনায় তার সৎ ভাই মোহাম্মদ ইবনে হানাফিয়ার কাছে অসিয়তনামা লিখে রেখে আসেন:
‘আমি যশ বা ক্ষমতার লোভে কিংবা ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার জন্যে বিদ্রোহ করছি না। আমি আমার নানার উম্মতের মধ্যে সংস্কার করতে চাই, আমি চাই সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করতে এবং অসৎকাজে বাধা দিতে। সর্বোপরি, আমার নানা এবং বাবা হযরত আলী (আ:) যে পথে চলেছেন সে পথেই চলতে চাই। (দ্র: মাকতালু খারাযমী ১/১৮৮)
আরবাইনে চলার পথে কারবালার ঘটনাবলী এভাবেই মানুষের মানসপটে কেবল ভাসতে থাকে। কেউ বা আসছেন নাজাফ থেকে ৫৫ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে কেউবা বসরা থেকে ৪২৫ মাইল পথ অতিক্রম করে। কিসের আসায় তারা ছুটছে, কোনো পার্থিব আশায় নয়। কখনো কখনো দেখা যায় পঙ্গু কোনো মানুষ তার ক্র্যাচে ভর দিয়ে মাইলে পর মাইল ছুটছেন, মুখে হাসি, বুকে অবিচল আস্থা। কোনো নারীর কোলে সন্তান। হুইল চেয়ারে কেউ যাচ্ছেন। কারণ তারা জানে, ইমাম হোসাইন (আ:) যে পথ দেখিয়ে গেছেন, তা মুসলমানদের জন্যে সকল অন্যায়, অসাম্য, অবিচার-অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিজের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা নিয়ে প্রচ-ভাবে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা, যা এই বিক্ষুব্ধ দুনিয়ায় শান্তি, ন্যায় ও বৈষম্যহীন এক সমাজ তৈরি করতে পারে।
এ কেমন আত্মত্যাগ? ইমাম হোসাইন (আ:) নয়ই মুহররম দিবাগত রাতে শেষ বারের মত তার সঙ্গী সাথীদের বললেন, ‘তোমরা সকলেই জানো যে, ব্যক্তিগতভভাবে আমাকে ছাড়া আর কারো ব্যাপারে তাদের (ইয়াজিদ বাহিনী) কোনো মাথা ব্যথা নেই। তাদের লক্ষ্য কেবল আমি। তারা আমাকে হাতে পেলে তোমাদের কাউকে নিয়েই মাথা ঘামাবে না। তোমরা চাইলে রাতের আঁধারকে কাজে লাগিয়ে সকলেই চলে যেতে পারো’।
এরপর তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই শিশুদের ও আমার পরিবারের একেক জন সদস্যকে সাথে নিয়ে চলে যেতে পার’। সাথে সাথে চারদিক থেকে সকলেই বলতে শুরু করলেন, ‘ হে আবা আবদিল্লাহ! আমরা তা করব না। ’
একজন বললেন, ‘ আমাকে যদি হত্যা করা হয় এবং আমার শরীরকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়, আর তার ভস্ম বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া হয়, তারপর আবার আমাকে জীবন্ত করা হয় এবং এভাবে সত্তর বার এর পুনরাবৃত্তি করা হয়, তাহলেও আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না। আমার এ তুচ্ছ জীবন তো আপনার জন্যে উপযুক্ত কুরবানিও নয়। ’
আরেকজন বললেন, আমাকে যদি হাজার বার হত্যা ও জীবন্ত করা হয় তথাপি আপনাকে ছেড়ে যাবো না।’ কেবল পরিপূর্ণ আন্তরিকতা ও ইখলাসের অধিকারী লোকেরাই যাতে তার সাথে থেকে যান সে জন্যে যা কিছু করা দরকার ইমাম হোসাইন (আ:) তার সব কিছুই করলেন।
ইয়াযিদের নির্দেশ অনুযায়ী ইমাম হোসাইনকে ‘হয় ইয়াযিদের কাছে বাইয়াত অথবা যুদ্ধ করা’- এ দুটোর একটি বেছে নিতে বাধ্য করা হয়। এমনকি যুদ্ধের জন্যে ইমাম হোসাইর (আ:) তখন প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। নয়ই মুহররম দিবাগত রাতেই তিনি তাঁবুগুলোকে খুব কাছাকাছি এনে খাটানোর নির্দেশ দেনÑ এতই কাছাকাছি যাতে এক তাঁবুর রশি বাঁধার খুঁটি অন্য তাঁবুর রশির আওতায় পোঁতা হয় এবং দুই তাঁবুর মাঝখান দিয়ে যেন একজন লোক অতিক্রম করার মত ফাঁক না থাকে। এছাড়া তিনি তাঁবুগুলোকে অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকাওে স্থাপন এবং সে রাতের মধ্যেই তাঁবুগুলোর পিছনে সুগভীর পরিখা খননের নির্দেশ দেন- এমন আয়তন ও গভীরতাবিশিষ্ট পরিখা যাতে ঘোড়ার পক্ষে তা লাফ দিয়ে ডিঙ্গানো সম্ভব না হয় এবং শত্রু যাতে পিছন দিকে হামলা করতে না পারে। এছাড়া তিনি মরুভূমি থেকে শুষ্ক আগাছা এনে তাঁবুর পিছন দিক থেকে স্তুপীকৃত করে রাখার ও আশুরার দিন সকালে তাতে আগুণ ধরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন যাতে যতক্ষণ আগুন জ্বলতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত দুশমনরা তাঁবুগুলোর পিছন দিক থেকে হামলা করতে না পারে। তিনি ডান, বাম ও সামনের দিক থেকে দুশমনদের সাথে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এভাবে তিনি পিছন দিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মুহররমের শুরুর দিনগুলোতেই খবর এল যে ইমাম হোসাইন (আ:) এক সঙ্গীর পুত্র অমুক যুদ্ধে কাফেরদের হাতে বন্দি হয়েছে। কিছু মালামাল বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তার ছেলেকে মুক্ত করে আনতে বললে ওই ব্যক্তি বললেন, হিংস্র পশুরা আমাকে জীবন্ত ভঙ্কণ করুক যদি আমি আপনাকে ছেড়ে যাই। পুত্র বন্দি আছে; থাকুক না। আমার পুত্র কি আমার কাছে আপনার জীবন্ত তুলনায় অধিকতর প্রিয়। এভাবে সবাই যখন বলছিলেন, তারা ইমামকে ছেড়ে যাবেন না তখন সহসাই দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে গেল। ইমাম বললেন, ‘ ব্যাপার যখন এই, তখন সকলেই জেনে রাখো যে, আমরা নিহত হতে যাচ্ছি।’ তখন সকলে বললো: ‘আল-হামদুলিল্লাহ- আল্লাহ তা’লার প্রশংসা করছি যে, তিনি আমাদেরকে এদরনের তাওফীক দান করেছেন। এটা আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ, একটি আনন্দের ব্যাপার।
ইমাম হোসাইন (আ:)-এর মজলিসের এক কোণে একজন কিশোর বসে ছিল; বয়স বড় জোর তেরো বছর হবে। এ কিশোরের মনে সংশয়ের উদয় হলো। আমিও কি এ নিহতদেও অন্তর্ভুক্ত হবো? যদিও ইমাম বলেছেন ‘ তোমরা এখানে যারা আছো তাদের সকলে’, কিন্তু আমি যেহেতু কিশোর ও নাবালেগ , সেহেতু আমার কথা বলা হয়নি। কিশোর ইমাম হোসাইন (আ:) এর দিকে ফিরে বললেন, ‘চাচাজান! আমিও কি নিহতদের অন্তর্ভুক্ত হবো? এ কিশোর ছিলেন হযরত ইমাম হাসান (আ:)-এর পুত্র কাসেম। ইতিহাস লিখেছে, এ সময় হযরত ইমাম হোসাইন ¯েœহশীলতার পরিচয় দেন। তিনি প্রথমে জবাব দানে বিরত থাকেন, এরপর কিশোরকে জিজ্ঞাসা করেন: ভাতিজা! প্রথমে তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দাও, এরপর আমি তোমার প্রশ্নের জবাব দেবো। তুমি বলো, তোমার কাছে মৃত্যু কেমন? কিশোর জবাব দিলেন: মৃত্যু আমার কাছে মধুর চেয়েও অধিকতর সুমিষ্ট। আপনি যদি বলেন যে , আমি আগামীকাল শহীদ হবো তাহলে আপনি আমাকে সুসংবাদ দিলেন।’ তখন ইমাম হোসাইন (আ:) জবাব দিলেন: ‘ হ্যাঁ, ভাতিজা! কিন্তু তুমি অত্যন্ত কঠিন কষ্ট ভোগ করার পর শহীদ হবে।’ কাসেম বললেন: ‘ আল্লাহর শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ- আল্লাহর প্রশংসা যে, এধরনের ঘটনা ঘটবে।’
(বিহারুল আনওয়ার, ৪৪তম খণ্ড, পৃ ৩৯৩; ইরশাদ-শেখ মূফীদ, পৃ ২৩১; আলামুল ওয়ারা, পৃ ২৩৫)
আরবাইনে যারা যোগ দেন তাদের কাছে এসব ইতিহাস অজানা নয়। হয়ত এজেন্যই তারা ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন। হয়ত আপশোস করেন কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার শত শত বছর পর তাদের জন্ম হয়েছে বলে। আর ইসলামের পুনর্জন্মই তো হয়েছে কারবালায় ইমামের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে। নিষ্ঠুর ও স্বৈরাচারী শাসক ইয়াজিদ যিনি মুয়াবিয়ার পুত্র আর মুয়াবিয়া যিনি ছিলেন আবু সুফিয়ানের পুত্র। তারা ইসলামকে রাজতন্ত্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। যাদের সহস্রাধিক সেনার দলটি যখন কারবালায় এসে ইমাম ও তার অনুসারীদের ঘিরে ধরল এবং সেনাপ্রধান হুর এসে হাজির হলেন। এখানেও ইমাম হোসাইন (আ:) সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন এবং প্রতিপক্ষকে বিপর্যস্ত করার জন্য তার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি কাপুরুষতার আশ্রয় নেননি; এ সুযোগ কাজে লাগাননি, ঠিক যেমনভাবে তার মহানুভব পিতা হযরত আলী (আ:) শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে সুযোগকে কাজে না লাগিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন। বরং তার দৃষ্টিতে, এরুপ পরিস্থিতিতে ইসলামী মহানুভবতা প্রদর্শন করা অপরিহার্য। তাই হুর ও তার লোকজন এসে পৌঁছার সাথে সাথেই ইমাম হোসাইন (আ:) বললেন : ওখান থেকে পানি নিয়ে এসো এবং তাদের ঘোড়াগুলোকে পানি পান করাও, লোকদেরকেও পানি পান করাও। অথচ এ পানি কিছুক্ষণ আগেই ইমামের অনুসারীরা মশকে ভরে বহন করে এনেছেন। ইমাম নিজেই দেখাশোনা করেন যে, তাদের ঘোড়াগুলোর পিপাসা পুরোপুরি নিবৃত্ত হয়েছে কি না। এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার কাছে একটি মশক দেয়া হলো, কিন্তু আমি মশকটির মুখ খুলতে পারলাম না। তখন হযরত এসে নিজের হাতে মশকটির মুখ খুলে আমার কাছে দিলেন। এমনকি ঘোড়াগুলো যখন পানি পান করছিলো তখন তিনি বললেন, ‘এগুলো যদি ক্ষুধার্ত থেকে থাকে তাহলে একবারে পিপাসা নিবৃত্তি করে পানি পান করাবে না। এগুলোকে দু’বার বা তিন বার পানি পান করতে দাও’। তেমনি তিনি কারবালাতেও যুদ্ধ শুরু না করার ব্যাপারে সতর্ক থাকেন।
ইতিহাস স্বাক্ষী ইয়াজিদের সেনারা ইমামের অনুসারীদের শুধু ঘেরাও করেই রাখেনি তাদের পানি প্রবাহের পথেও বাধা সৃষ্টি করেছিল। ইমামের ৬ মাস বয়সের শিশু পুত্র আলী আল-আসগার পানি ও খাবার না পেয়ে ৩ দিন ধরে অভুক্ত ছিল। ইমামের দুগ্ধপোষ্য এ শিশুকে তার কোলে এনে দেয়া হল। ইমাম তাকে চুমু খেতে গেলেন, তার ঠোঁট শিশুটিকে স্পর্শ করার আগেই দুশমনদের একটি তীর ছুটে এসে নিস্পাপ শিশুটির পবিত্র গলদেশে বিদ্ধ হলো। ইমাম হোসাইন (আ:) তখন কী করলেন? তিনি তার হাতে শিশুটির রক্ত নিয়ে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলেন। যেন তিনি বলছেন, ‘ হে আসমান! দেখো এবং সাক্ষী থাকো।’
এরপর ইমাম হোসাইন (আ:)-এর জীবনের শেষ সময়: আঘাতে আঘাতে তাঁর পবিত্র শরীর জর্জরিত। তিনি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না; মাটিতে পড়ে গেলেন। ঐ অবস্থায় তিনি হাঁটুতে ভর দিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলেন, তারপর পড়ে গেলেন। তিনি আবার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেন; এ সময় তীর এসে তার গলায় বিদ্ধ হলো। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, তিনি পুনরায় তাঁর হাতে রক্ত নিলেন এবং তার চেহারায় ও মাথায় মাখালেন এবং বললেন; আমি আমার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি। ’
(আশুরা সংকলন, ২০০৯, ইমাম হোসাইন (আ)-এর আন্দোলন পর্যালোচনা, পৃ ৮৬ ও ৮৭)
সুতরাং আরবাইনে যারা কাফেলায় যোগ দেন তাদের কোনো দু:খ কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না। কারণ তারা সেই প্রিয়তম ইমামের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছেন। খালি পায়ে তপ্ত বালুর ওপর দিয়ে চলছেন মাইলের পর মাইল, এক পা, দুই পা করে হাজারো পা কদমে কদম ফেলে তারা তাদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে যান কারবালার সেই পবিত্র স্থানে। জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের ফরিয়াদের সঙ্গে একাত্ম হতেই আরবাইনে ছুটে যায় মানুষ।