মঙ্গলবার, ১১ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

করোনা মহামারি মানুষের জন্য অভিশাপ, প্রকৃতির আশীর্বাদ

পোস্ট হয়েছে: মে ২৩, ২০২০ 

news-image

সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস মানবজাতির জন্য অভিশাপ হয়ে এলেও প্রকৃতির জন্য এক প্রকার আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শান্ত নিঝুম প্রকৃতির আসল ছবি ফুটে উঠছে সর্বত্র। কক্সবাজার থেকে কুয়াকাটা, শালবন থেকে সুন্দরবন- চারদিক প্রকৃতি এখন অপরূপ। সৈকতের তীরে নিজেদের আবাস ফিরে পেয়ে আনন্দের সুর তুলছে লাল কাঁকড়া। প্রায় কিনারে এসে লাফিয়ে নাচছে রংবেরঙের ডলফিন। সজীব হয়ে উঠছে বন। শব্দ ও বায়ুদূষণের জন্য বিশ্বব্যাপী সমালোচিত ঢাকাসহ শহরগুলো এখন অনেকটা নীরব। এতে সজীবতা ফিরেছে প্রাণ-প্রকৃতিতে।

ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ কার্যত লকডাউন। অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এই পরিস্থিতিকে বলা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভয়াবহ সংকটকাল। কিন্তু এর উল্টো দিকও রয়েছে। যানবাহন চলাচল এবং পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড স্থগিতের ফল মিলছে হাতেনাতে। বিশ্বজুড়ে কমেছে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার। বায়ুসূচক নেমেছে স্বস্তির জায়গায়। দূষণের এই দুটি অনুঘটকের হাত ধরে বদলে যাচ্ছে গোটা দুনিয়ার পরিবেশের চরিত্র। বিশেষ করে বিস্ময় জাগিয়ে বদলে গেছে বৈশ্বিক বায়ুসূচকে শীর্ষস্থান দখলে রাখা ঢাকার চিত্র।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কভিড-১৯ সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, জলবায়ুর প্রতি ক্রমবর্ধমান অবিচারের ফল কী হতে পারে। অপরিকল্পিত ও পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, বরং ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়টি আরও একবার প্রমাণ হলো। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হলে প্রকৃতি আবার সেই বিবর্ণ চেহারায় ফিরে যাবে। বরং এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই যদি কিছুটা হলেও পরিবেশের দিকে নজর দেয়, সেটাই হবে বড় সাফল্য। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, শহরের ওপর এখন নীল আকাশ দেখা যায়।অথচ রাজধানী শহরের আকাশের সৌন্দর্য প্রায়ই ঢাকা থাকতো ধূসর বর্ণে। করোনা পরিস্থিতিতে দূষণীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার সুফল এটি। দেশের করোনা পরিস্থিতিতে অনেক কলকারখানা বন্ধ থাকার পাশাপাশি যানবাহন চলাচল কমে আসায় কেবল বায়ু আর শব্দদূষণ কমেছে তা নয়, বরং সাতসকালে পাখির যে কলরব, সেটিও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ব্যতিক্রম। রাজধানীর বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক এবং সবুজবাগের বৌদ্ধ মন্দির এলাকার সবুজঘেরা পরিবেশে কিছুক্ষণ ঘুরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির খুনসুটিও দেখা গেছে।

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ এখন খুবই শান্ত-স্নিগ্ধ। দরজা বন্ধ করে ঘরের ভেতর বসে থাকলেও বাইরে থেকে পাখির গুনগুন শোনা যায়। আশপাশের ঝাঁঝালো শব্দ নেই। ফলে পাখিদের ডাক আরও মধুর লাগে। এমনিতেই এই সময়টাতে অনেক পাখি বিচরণ করে। তার সঙ্গে কভিড-১৯ সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পরিবেশের এখন সুদিন। ফলে যেসব পাখির আনাগোনা ছিল না বা খুবই কম ছিল, সেগুলোও দেখা যাচ্ছে।

কক্সবাজারের এক বাসিন্দা বলেন, পর্যটকের আনাগোনা বন্ধের পর সমুদ্রসৈকতে অন্যরকম পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। টিভি পর্দায় যখন দেখি ডলফিনের লাফালাফির দৃশ্য। এ ঘটনা সত্যিই অভাবনীয়। যেন চোখে আটকে রয়েছে। এখানকার কেউ কেউ বলছেন, ২০১১ সালে একবার ডলফিন দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সমুদ্রের এত সুন্দর রূপ এর আগে দেখিনি।’

তিনি জানান, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে দেশের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। কক্সবাজারসহ সারাদেশে বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। বন্যহাতি চলাচলের জায়গা পর্যন্ত বিরানভূমি হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে টেকসই পর্যটন ব্যবস্থা না থাকার কারণে দূষণ বেড়েছে। পর্যটকদের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। স্থানীয় হোটেলগুলোর বর্জ্যও যাচ্ছে সমুদ্রে। একবার ব্যবহূত (ওয়ানটাইম) প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহার এখানে। কভিড-১৯ ঘিরে পরিবেশগত যে পরিবর্তন, সেটি আসলে পরিবেশেরই শিক্ষা বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের কর্মকাণ্ডই যে পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তোলে, তা বোঝার জন্য এটিই উপযুক্ত পরিস্থিতি।