শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

এ বছরের বিপ্লববার্ষিকী ইসলামি বিপ্লব ও ইরানের জন্য বিশেষ সম্মান বয়ে এনেছে

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ১৬, ২০১৭ 

ইসলামি বিপ্লবের বিজয়বার্ষিকী সম্পর্কে ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর মূল্যায়ন

ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেন, ২২ বাহমান (১১ ফেব্রুয়ারি) ইরানে ইসলামি বিপ্লবরবিজয় বার্ষিকীর মিছিলে ইসলামি ইরানের সর্বস্তরের জনতা যেভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ও প্রাণবন্ত হয়ে রাজপথে নেমেছিল তা এই বিপ্লব ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য বিরাট সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইরানের আযারবাইজান প্রদেশের গণপ্রতিনিধিরা মহামান্য রাহবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে তাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় কমকর্তারা জনগণের এই অংশগ্রহণ ও উপস্থিতির অর্থ যেন এটা মনে না করেন যে, তাঁদের প্রতি জনগণের কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমেরিকা তার পুরনো ষড়যন্ত্রের পূনরাবৃত্তি ঘটিয়ে এবং নতুন করে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে ইরানের রাষ্ট্র্রীয় কর্মকর্তাদের মনোযোগকে আসল লড়াইয়ের ময়দান তথা অর্থনৈতিক লড়াইয়ের ময়দান থেকে অন্যদিকে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কাজেই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের সতর্ক থাকতে হবে এবং বেকারত্ব, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বৈষম্যের ন্যায় সমস্যাগুলো সমাধানে নিজেদের সকল কর্মপ্রচেষ্টা নিয়োগ করতে হবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা এ বছর ১১ ফেব্রুয়ারি বিপ্লববার্ষিকীর মিছিলে জনগণের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিকে বিপ্লব ও ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য সম্মানজনক বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এ বছর বহু শহরে বিপ্লববার্ষিকীর মিছিলে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ গণমাধ্যমগুলোই মত প্রকাশ করে নি; বরং বিপ্লবের দুশমনরাও বিগত বছরগুলোর বিপরীতে ‘মিলিয়ন লোকের অংশগ্রহণ’ জাতীয় পরিভাষা ব্যবহার করে ইরানি জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের বাস্তবতা স্বীকার করেছে। কাজেই জাতির কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য সত্যিই আমার ভাষা অক্ষম।
মহামান্য রাহবার ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিপ্লবের বিরুদ্ধে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সিআইএ, মোসাদ, ব্রিটিশ গোয়েন্দা ও তথ্য সংস্থাসমূহের বিরামহীন প্রচেষ্টা এবং কারুণদের তেলখাতে অর্জিত বিপুল ডলার ব্যয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গেল বছরব্যাপী শত শত উপগ্রহ চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইরান থেকে পলাতক দেউলিয়ারা ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, দুর্বল ও অভিযুক্ত করার চেষ্টায় নিয়োজিত ছিল। কিন্তু জনগণের বিপুল উপস্থিতি আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারির দিন এসব ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন আকাশ পরিষ্কার করে দিয়েছে। জনতার জাগরণ ও ¯্রােত বরকতময় ও স্বচ্ছ সলিলের বহমান নদী হয়ে এর ধুলোমলিন আকাশ পরিষ্কার করে দিয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারির মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের বিন্যাস নিয়ে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন নেহায়েত জরুরি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বিশাল জনতার অধিকাংশই তাগুতি সরকারের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির কালো ও তিক্ত অধ্যায়, ইসলামি বিপ্লবের বিজয়কালীন অবস্থা এবং মরহুম ইমাম ও পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধ দেখে নি, তবুও তারা বাস্তব অনুভূতি, সঠিক তথ্য অনুসন্ধান, দূরদৃষ্টি ও আলোকিত মন থেকে রাজপথে নেমেছিলেন।
মহামান্য রাহবার আরো বলেন, ইসলামি বিপ্লব ও রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের আশাব্যঞ্জক উপস্থিতি ও প্রতিরক্ষার মনোভাব এই বিপ্লবের বিকাশ ও আরো উচ্চতায় আরোহণের প্রমাণ বহন করে। আর এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষণীয় একটি বিষয়।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা দুশমনরা ইরানের রাষ্ট্রযন্ত্রকে অক্ষম ও অকেজো প্রমাণ করার জন্য যে চেষ্টা চালিয়েছে তা অত্যন্ত ব্যর্থ প্রয়াস বলে উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর সব জায়গার মতো বেশকিছু অসঙ্গতি আমাদেরও আছে, এগুলোকে আমরা কিছুতেই পাশ কাটিয়ে যেতে রাজি নই। কিন্তু দুশমন চাচ্ছে, বিগত ৩৮ বছরে আমরা যে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছি ও প্রগতির ক্ষেত্রে বহু অবদান রেখেছি তা তারা অস্বীকার করতে। তাদের লক্ষ হচ্ছে আমাদের জনগণের মাঝে হতাশার বিস্তার ঘটানো।
আয়াতুল্লাহ উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বাস্তবানুগ রিপোর্টের ভিত্তিতে কোনো কোনো মৌলিক অবকাঠামো ক্ষেত্রে গত ৪ দশকে যেসব কাজ সম্পাদিত হয়েছে তাকে বিস্ময়কর বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এসব অগ্রগতির কিছুকিছু এমন যে, সাধারণত তা একশৎ বছরের মেয়াদেও অর্জন করা সম্ভবপর হয় না।
তিনি বলেন, তাগুতি শাসনের আমলে ইরানিদের প্রতি যে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ছিল সে তুলনায় ইরানি জাতির মধ্যে যে আত্মমর্যাদা ও সম্মানবোধের উজ্জীবন ঘটেছে, তা বিপ্লবের গৌরবজনক অবদান। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ব্রিটেনের সামনে নতশির তাগুত সরকার আমাদের জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করেছিল এবং আমাদের জাতিসত্তা ছিল ভূলুণ্ঠিত। কিন্তু আজ যে কেউ ইরানি জনগণের সম্মান ও শক্তিমত্তা এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী উপস্থিতির কথা স্বীকার করে। তারা জানে যে, এতদঞ্চলের প্রায় সকল সমস্যায় যদি ইরান উপস্থিত না থাকে বা ইচ্ছা না করে তাহলে কোনো কাজই সম্মুখে অগ্রসর হবে না।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি ছিল জাতির আশা-আকাক্সক্ষা ও নীতি-অবস্থান সম্পর্কে জানান দেয়ার জন্য আল্লাহর খাস নেয়ামত এবং এক অমূল্য সুযোগ। তিনি বলেন, এ বছর জাতি দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা দুশমনের মোকাবিলার জন্য রুখে দাঁড়িয়েছে। আর জনগণের মাঝ থেকে উত্থিত ইসলামি চেতনা ও ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার বাস্তবায়ন এবং একে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় তারা আপোমহীন। আর যে যে দায়িত্বশীল জনগণের একই সাথে চলবে না এবং রুখে দাঁড়াবে না জাতি নিঃসন্দেহে তাকে প্রত্যাখ্যান করবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে বলেন, ইরানকে গ্রাস করার জন্য যে দুশমন ওঁত পেতে আছে তার মোকাবিলায় জনগণের বিপুল উপস্থিতিকে আপনারা মনে করবেন না যে, যাঁরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের প্রতি জনগণের কোনো অভিযোগ নেই। কেননা, জনগণ বহুবিধ সমস্যায় ভুগছে। যেমন বৈষম্য, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা, সমস্যাদির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা প্রভৃতি ব্যাপারে তাদের অভিযোগ রয়েছে এবং তারা কষ্টের মধ্যে আছে।
মহামান্য রাহবার বলেন, জনগণের মধ্যে বহু অনুযোগ আছে। বেকারত্ব, স্থবিরতা, মুদ্রাস্ফীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দায়িত্বশীলদের বলতে হবে তারা কী করেছেন?
রাহবার স্মরণ করিয়ে দেন যে, প্রতিরোধের অর্থনীতি, একশন ও বাস্তব কর্মের বর্ষ বলে যে বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল তা এখন শেষ হওয়ার পথে। কাজেই মন্ত্রীসভাএবং অন্যান্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের তাঁরা এ ক্ষেত্রে কী কী করেছেন তার প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। দায়িত্বশীলরা জনগণকে বলতে পারবেন না যে, এমনটিই হবার ছিল, হয়েছে (এর বেশি হওয়া সম্ভব ছিল না) । বরং তাঁদের বলতে হবে, এতটুকু হয়েছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামনেয়ী বলেন, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এগুলো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তিনি বলেন, অবশ্য দায়িত্বশীলবর্গ চেষ্টা করে যাচ্ছেন; কিন্তু দেশের যে শক্তি ও সামর্থ্য আছে তা তো এর চেয়ে অনেক বেশি। আর সমস্যা থেকে উত্তরণের বহুমাত্রিক পথও সুনির্দিষ্ট আছে।
মাননীয় রাহবার অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি ও জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টির জন্য দুশমন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে মর্মে ছয় বছর আগে যে বক্তব্য তিনি করেছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের অবশ্যই অর্থনৈতিক বিষয়াদির প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। অবশ্য সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্বল্পকালীন দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থনৈতিক বিষয়াদি অগ্রগণ্য।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকির ষড়যন্ত্র পুনরাবৃত্তি করার পেছনে আমেরিকার আগের ও বর্তমান প্রশাসনের লক্ষ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, আজকেও তারা আগের মতোই টেবিলে বসে সামরিক পদক্ষেপের অপশন নিয়ে কথাবার্তা বলেন, আর সেই ইউরোপীয় কর্মকর্তাও আমাদের কমকর্তাদের বলেন, যদি পারমাণবিক চুক্তি সম্পন্ন না হতো তাহলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী ছিল। কিন্তু এই কথাটি ডাহা মিথ্যা। তারা চাচ্ছে, আমাদের মনোযোগকে আসল যুদ্ধ অর্থাৎ অর্থনৈতিক যুদ্ধ থেকে বিভ্রান্ত করে সামরিক যুদ্ধের দিকে ধাবিত করতে। যাতে ইরানি জাতির বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অগ্রগতিতে আমাদের কর্মকর্তাদের সমগ্র মনোযোগ কেন্দ্রীভূূত করা থেকে বিরত রাখতে পারে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বিভিন্ন পরিকল্পনার ওপর নজরদারি ও বিভিন্ন প্রকল্প এগিয়ে নেয়া একান্ত জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এবং বলেন, আমি সম্মানিত প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছি, যাতে পরিচালকবর্গকে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাঁদের তত্ত্বাবধান হতে হবে স্বচ্ছতার সাথে নজরদারি ও সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ সহকারে। নচেৎ যদি যারা কাজ করবে তাদের কেবল বলা হয় যে, এ কাজ ঠিকমত বাস্তবায়িত হতে হবে আর অপরপক্ষ বলে যে, হ্যাঁ, অবশ্যই। তাহলে অগ্রগতি বলতে কিছুই হবে না এবং বাস্তব কাজও সম্পন্ন হবে না।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা কোরআন মজীদের আয়াতواعدوا لهم ما استطعتم من قوه (তোমাদের সাধ্যে যত কিছু আছে তা দিয়ে তাদের [দুশমনদের] মোকাবিলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ কর) এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আয়াতের উদ্দেশ্য কেবল সামরিক শক্তির দিকে মনোযোগ দেয়া নয়; বরং এই আয়াতের অর্থ হচ্ছে, তোমারা যতখানি সম্ভব ভেতর থেকে নিজেদেরকে শক্তিশালী কর। আর এটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো মজবুত করা- যে কথা আমি বহুবার বলেছি।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা বলেন, বিশেষজ্ঞগণ যেমনটি বলেছেন আর যদি দেশের অভ্যন্তরীণ সকল সম্ভাব্য খাতের পূর্ণ ব্যবহার করা হয় তা হলে শতকরা ৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন একান্তই সম্ভবপর। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি তথা সেই প্রতিরোধমূলক অর্থনীতি। এর মানে কেবল বেশি পরিমাণ তেল বিক্রি করা নয়, অবশ্য তাও উপকারী।
তিনি ঐসব লোকের সমালোচনা করেন, যারা কেবল ঘাটতি ও দুর্বল দিকগুলো নিয়ে চর্চা করে আর সেগুলোকে বড় করে দেখায়। তিনি বলেন, চিন্তা করে দেখার বিষয় হচ্ছে, এসব লোক তো তারাই যারা দুশমনকে অবরোধ আরোপ করার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা তাঁর ভাষণের অপরাংশে ১৩৫৬ সালের (১৯৭৭ খ্রি.) ২৯ বাহমান তাবরীযে যে ঘটনা ঘটেছিল তাকে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ে জাতিকে সম্মুখে এগিয়ে নেয়ার চালিকা শক্তি বলে আখ্যায়িত করেন। রাহবর বলেন, আযারবাইজানের জনগণ দেশের ১৩০ বছরের ইতিহাসে সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ও পরিস্থিতিতে, যেমন তামাক আন্দোলন, সাংবিধানিক অধিকার আন্দোলন, তেলশিল্প জাতীয়করণ আন্দোলন, ইসলামি বিপ্লব ও পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধ প্রভৃতি সব অঙ্গনেই সংগ্রামের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এটিই হচ্ছে আযারবাইজানবাসীর গৌরবজনক ইতিহাস ও পরিচয়পত্র।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা বিপ্লবের প্রথম দিকের বছরগুলোতে তাবরিযে কতক গোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমাদের মহান ইমাম ইংরেজদের প্রাচীন নীতির ফলে সৃষ্ট এসব তৎপরতা সম্পর্কে বলেছিলেন, কেউ যেন উদ্বিগ্ন না হন, কারণ, স্বয়ং তাবরিযের জনগণ তাদের জওয়াব দেবে। আর হয়েছিলও তাই।
রাহবর বলেন, আযারবাইজানের সর্বস্তরের জনগণ, তরুণ সমাজ ও শিক্ষিত শ্রেণি দুশমনের কুমন্ত্রণা ও অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টার জবাবে যে বিচক্ষণতার প্রমাণ দিয়েছে তা প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, আযারবাইজান হচ্ছে, ইসলামি বিপ্লব ও রাষ্ট্রব্যবস্থার শক্তির কেন্দ্র আর সেখানকার জনগণ জাতীয় ঐক্যের প্রতিরক্ষায় জান বাজি রেখেছেন, সবার উচিত তাঁদের এই আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানের জাতি-বৈচিত্র্য, যেমন তুর্কি, ফারসি, লোর, কুর্দি, আরব, বেলুচ প্রভৃতিকে একটি সুবর্ণ সুযোগ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি সতর্ক করেন যে, দুশমন সবসময় জাতিগত বিরোধ সৃষ্টির দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, যাতে তাদের ধারণা অনুযায়ী যে কোনো ফাঁক ফোকর দিয়ে ঢুকে দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। অথচ দেশে কোনো ধরনের ফাটল নেই এবং জনগণ একাত্ম হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে।
জনতার বিশাল মহাসাগর ঐক্যবদ্ধ। যারা আশুরার দিনের প্রতি অবমাননা করেছে তাদের সাথে আপোস করবে না।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইরানি জাতিসত্তার বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে আযারবাইজানের লোকেরা দুশমনের দুরাচারী নীতির মোকাবিলায় যেভাবে বক্ষ পেতে দিয়েছিল তার প্রশংসা করেন এবং বেলুচ সুন্নি আলেম মরহুম মওলভি আব্দুল আজিজ সাদাতী, কুর্দিস্তানের সুন্নি আলেম মরহুম শেইখুল ইসলাম এবং খুজিস্তানের আরব তরুণ নেতা শহীদ আলী হাশেমীকে ইসলাম ও বিপ্লবের প্রতিরক্ষায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত তৎপরতার উজ্জ্বল নমুনা বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ইরানি জাতি ঐক্যবদ্ধ, সুসংহত, সহযাত্রী ও একাত্ম।
রাহবার এ পর্যায়ে ইরানি জনগণের মাঝে সম্প্রতি জাতীয় সম্প্রীতি গড়ে তোলা মর্মে যে কথাটি উত্থাপিত হয়েছে তার দিকে ইঙ্গিত করেন এবং এ জাতীয় প্রবচনকে অর্থহীন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি এ জাতীয় কথা নিয়ে সংবাদপত্রে ডালপালা বিস্তারের সমালোচনা করে বলেন, জনগণ কি পরস্পরের সাথে রাগ করেছে যে, সম্প্রীতি স্থাপন করতে হবে? এখানে তো পরস্পরের মাঝে কোনো রাগ নেই, ঝগড়া নেই। অবশ্য যারা ৮৮ সালে (২০০৯ খি.) ইমাম হোসাইন স্মরণে আশুরার দিনের অবমাননা করেছে, অত্যন্ত নির্লজ্জতা ও নিষ্ঠুরতা ও ধৃষ্টতার সাথে আমাদের গণযোদ্ধা সদস্যদের প্রকাশ্য রাজপথে উলঙ্গ করেছে, তাদের কিলঘুষি দিয়েছে তাদের প্রতি এই জাতির রাগ আছে এবং তাদের সাথে সম্প্রীতি স্থাপন করবে না।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা স্মরণ করিয়ে দেন যে, অবশ্য যারা মূল বিপ্লবের বিরোধী ছিল তারা বলত যে, নির্বাচন উপলক্ষ মাত্র। আমাদের আসল লক্ষ্য রাষ্ট্রব্যবস্থা।’ এরা গুটিকতক মাত্র। ইরানি জাতির মহাসমুদ্র ও প্রাণবন্ত ¯্রােতের মোকাবিলায় এরা খড়কুটোর ন্যায়।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা আরো বলেন, যেখানে ইসলাম, ইরান, স্বাধীনতা ও দুশমনের মোকাবিলায় রুখে দাঁড়ানোর প্রশ্ন আসে সেখানে ইরানি জাতি তার গোটা অস্তিত্ব দিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও সুসংবদ্ধ। অবশ্য এটা সম্ভব যে, অমুক রাজনৈতিক ইস্যুতে দু’জনের মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু এ তো কোনো মৌলিক ও প্রভাবশালী বিষয় নয়। বরং একেবারে স্বাভাবিক ও সাধারণ একটি বিষয়। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, জাতির ঐক্যবদ্ধ ও তরঙ্গায়িত মহাসাগর দিনের পর দিন শক্তিশালী, মজবুত ও গতিশীল হতে হবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা পবিত্র ও খোদায়ী আশা-আকাক্সক্ষার যেসব স্ফুলিঙ্গ সব সময় জাতির মন ও চেতনাকে উষ্ণ ও শাণিত রেখেছে তার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা বহুক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও ইসলাম ও বিপ্লবের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে একটি ছোট্ট পদক্ষেপ নিতে পেরেছি মাত্র। আমাদেরকে ইনসাফপূর্ণ, প্রাগ্রসর, শক্তিমান, মর্যাদাপূর্ণ ইসলামি সমাজ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানিতে জাতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সমন্বিত পথ চলায় নিশ্চিতভাবেই বিজয় ও ভবিষ্যৎ ইরানের প্রিয় জাতির পক্ষেই চলে আসবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতার ভাষণের পূর্বে আযারবাইজান প্রদেশে ওলীয়ে ফকিহ এর প্রতিনিধি ও তাবরিযের জুমআ ইমাম আয়াতুল্লাহ মুজাহিদ শাবিস্ত্রী ফাতেমীয় দিবসসমূহ উপলক্ষে শোক প্রকাশ করে বলেন, আযারবাইজানের আত্মমর্যাদাশীল জনগণ ১৩৫৬ সালের ২৯ বাহমান ( ১৮ ফেব্রুয়ারি ৯৭৭ খ্রি.) এক অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক বীরত্ব সৃষ্টি করেন। তাঁরা এ বছর ২২ বাহমানেও (১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬) তাঁদের দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁরা রাহবারের সঙ্গে বাইআত নবায়ন করেছেন।