উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ ইরান গড়ার জন্য সাহসী, শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক ও বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মের প্রয়োজন
পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ৬, ২০১৬
ইরানের শীর্ষস্থানীয় মেধাবী ও প্রতিভাধর ব্যক্তিদের একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতে রাহবার
উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ ইরান গড়ার জন্য সাহসী, শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক ও বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মের প্রয়োজন
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী গত ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ইরানের সহ¯্রাধিক ব্যতিক্রমী প্রতিভাবান ও শীর্ষস্থানীয় মেধাবী তরুণ ব্যক্তিত্বের সাক্ষাতে বলেন, দেশের প্রতিভাবান তরুণরা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের হাতে আল্লাহর অতি মূল্যবান উপঢৌকন ও বিরাট আমানত। রাহবার বলেন, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের উচিত, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিভাবানদের সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দান থেকে মুহূর্তের জন্যও বিরত না থাকা। রাহবার আরো বলেন, প্রতিভাবান ও মেধাবীরা জাতির বিরাট সম্পদ আর কর্মঠ তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলার মাধ্যমে ইসলামি ইরান একটি উন্নত, শক্তিশালী, সম্ভ্রান্ত ও নতুন ইসলামি সভ্যতার ঝা-া উত্তোলনকারী দেশে পরিণত হবে।
ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা মেধাবী ও প্রতিভাবানদের, বিশেষ করে প্রতিভাবান নতুন প্রজন্মকে দেশের জন্য বিরল ও মূল্যবান উপঢৌকন এবং জাতি ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের হাতে আল্লাহর বিশেষ আমানত বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই অতি মূল্যবান ঐশী উপঢৌকনের ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের কর্তব্য হল, তাদের যতœ নেয়া এবং আরো অধিক প্রতিভাবান ও মেধাবীদেরকে চিহ্নিত করা ও তাদের যথাযথ পরিচর্যার ব্যবস্থা করা।
মাননীয় রাহবার বলেন, এই খোদায়ী নেয়ামতের কারণে প্রতিভাবানদের ওপরও বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে দায়িত্ব চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ নিজ মেধা, প্রতিভা ও দক্ষতাকে সঠিক পথে নিয়োজিত করে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা তরুণ মেধাবী ও প্রতিভাবানদের প্রতি যতœশীল হওয়া ও তাদের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, সমাজে ‘আমরা পারব’ এই আত্মবিশ^াসের উজ্জীবন ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে অতীতের কাজার ও পাহলভী শাসনের দীর্ঘ আমলে ‘অক্ষমতা’, ‘আমরা পারব না’ ও ‘পরনির্ভরতা’ এর জিনকোষ জনসাধারণ ও তরুণদের দেহে প্রবিষ্ট করানো হয়েছে। আর এই চিন্তা-চেতনাকে সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। এর ফল দাঁড়িয়েছিল, বিরাট জনশক্তি ও বস্তুগত সম্পদে সমৃদ্ধ প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতার লালনভূমি একটি দেশকে অত্যন্ত তুচ্ছতার সাথে পাশ্চাত্যের পরে উল্লেখ করা হতো।
হযরত আয়াতুল্লাহ আল উজমা খামেনেয়ী আরো বলেন, এহেন পরিস্থিতিতে ইসলামি বিপ্লব জাতীয় জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসে। সত্যিকার অর্থে আত্মবিশ^াস ও স্বনির্ভরতা এখানে পরনির্ভরশীলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
তিনি আট বছরের প্রতিরক্ষা যুদ্ধকে আত্মবিশ^াস ও স্বনির্ভরতার উন্মুক্ত ও গৌরবময় ময়দান হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ যদিও অত্যন্ত তিক্ত, কঠিন ও ক্ষতিকর একটি ব্যাপার; কিন্তু ইরানি তরুণরা প্রমাণ করেছে যে, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল এবং নিজস্ব যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে এমন এক শত্রুর ওপর বিজয় লাভ করা যায়, যাকে সকল বৃহৎ শক্তি মিলে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেছিল।
হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী আরো বলেন, যদিও ইসলামি বিপ্লব পরনির্ভরশীলতার চেতনার মোকাবিলায় ‘আমরা পারব’ এই চেতনার পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে এবং সমাজ জীবনে আত্মবিশ^াসের রেওয়াজ চালু করেছে; তথাপি প্রতিপক্ষ গভীর যুদ্ধÑআজকের দিনে যাকে ‘¯œায়ুযুদ্ধ’ নামে আখ্যায়িত করা হয়Ñতার চাহিদার প্রেক্ষাপটে নতুন আঙ্গিকে ও বাহ্যত আকর্ষণীয় অবয়বে আবারো পরনির্ভরশীলতার সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা শুরু করেছে।
মহামান্য রাহবার বিশ্বায়নের সেøাগানে এবং বিশ্বসমাজের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ইরানের প্রতি আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের উপদেশ ও পরামর্শকে পরনির্ভরতার সংস্কৃতি পুন উৎপাদনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন। রাহবার বলেন, পশ্চিমা পক্ষ যাকে বিশ^পরিবার নামে আখ্যায়িত করছে তার বিরোধিতার মানে এ নয় যে, আমরা বাইরের দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখার বিরোধী; বরং এর অর্থ হচ্ছে বৃহৎ শক্তিগুলোর পক্ষ হতে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তার ওপর চাপিয়ে দেয়া সংস্কৃতির বিরোধিতা করা।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা প্রতিভাবান ও মেধাবীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বিশেষ ও গভীর মনোযোগ প্রদানের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ইসলামি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ লক্ষসমূূহ অর্জনের প্রয়োজনে এ কাজ করতে হবে। রাহবার বলেন, মেধাবীরা হচ্ছে এই মহান লক্ষে উপনীত হওয়ার চালিকা শক্তি। কাজেই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের কর্তব্য হচ্ছে মেধাবীদের প্রতি গভীর, কার্যকর, দরদি ও অব্যাহত যতেœর মনোভাব নিয়ে দৃষ্টি দেয়া।
হযরত আয়াতুল্লাহ আল ওজমা খামেনেয়ী ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার বড় বড় লক্ষের বিবরণ দিয়ে বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে এমন এক শক্তিমান, উন্নত, মর্যাদাবান, নতুন বক্তব্যের অধিকারী, আত্মসম্মানবোধের ধারক, নৈতিক আধ্যাত্মিক যোগ্যতাসম্পন্ন এবং নতুন ইসলামি সভ্যতার ঝা-া উত্তোলনকারী দেশে পরিবর্তিত হতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন হল, মেধাবীদের প্রতি গুরুত্ব প্রদান, তাদের প্রতিভার মূল্যায়ন ও এই খোদায়ী নেয়ামতের যথাযথ সম্মান ও পরিচর্যা করা।
বিশ^মানবতার বর্তমান দুঃখ-দুর্দশা এবং বস্তুবাদী চিন্তাধারার অচলাবস্থার কথা উল্লেখ করে মহামান্য রাহবার বলেন, মানবতার প্রশ্নে এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে বিশ^ নতুন এক বক্তব্যের মুখাপেক্ষী। তিনি বলেন, আমেরিকায় নির্বাচনী প্রতিযোগিতা ও দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝখানে যেসব বিষয় উত্থাপিত হচ্ছে তা শক্তিমানদের মধ্যে ঈমান ও আধ্যাত্মিকতা না থাকার ফলশ্রুতি।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা আরো বলেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে বর্তমান প্রার্থীদেরÑ যাদের অবস্থা ও কথাবার্তা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, তাদের মধ্য হতে যে কোনো একজন এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন, যে দেশ দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর, সম্পদশালী, সর্বাধিক পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী এবং বিশে^র সর্ববৃহৎ প্রচারমাধ্যমসমূহের নিয়ন্ত্রক।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তাঁর ভাষণে আরো বলেন, ইসলামি রাষ্ট্রের লক্ষসমূহে উপনীত হতে হলে একটি সাহসী, ঈমানদার, শিক্ষিত, উদ্যোগী, উদ্যমী, অগ্রসরমান, আত্মবিশ^াসী, আত্মমর্যাদায় উজ্জীবিত, প্রাণবন্ত ও জাগ্রত চেতনাসম্পন্ন নতুন প্রজন্মের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রজন্ম হবে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির কতক প্রবণতার বিপরীতে সত্যিকার অর্থে বিপ্লবী প্রজন্ম। যারা তাদের সমগ্র অস্তিত্বকে ইরানের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য উজাড় করে দেবে। তিনি এই তরুণ প্রজন্মের চিন্তা ও মনন গঠনে মেধাবী ও প্রতিভাধরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, মেধাবী ও প্রতিভাধররা তাদের প্রাণবন্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চালিকা শক্তি হিসেবে নতুন প্রজন্ম তথা দেশের আসল সম্পদ ও পুঁজিকে পরিশ্রম ও চেষ্টা-সাধনা, গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বিগত পনের বছর ধরে বিজ্ঞান ও সফ্টওয়ার প্রযুক্তির আন্দোলনের জন্য বারবার যে তাগাদা দিয়েছেন তার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই আন্দোলন প্রতিভাবান, বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক ও ছাত্র সমাজের সহযোগিতায় ভাল ফল বয়ে এনেছে। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা চিহ্নিত হতে হবে এবং তার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা দুশমনের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে এ লক্ষে পৌঁছার পথে অন্যতম বাধা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কিছুসংখ্যক লোক আছে, যারা দুশমন কথাটি উচ্চারণ করার সাথে সাথে মন খারাপ করেন। কিন্তু দুশমনের নাম এভাবে বারবার নেওয়াটা কুরআনে শয়তানের নাম বারবার উল্লেখ করার মতো, এর দ্বারা স্থায়ীভাবে মনের মধ্যে সতর্কতা সৃষ্টি করা হয়। এর আসল উদ্দেশ্য ষড়যন্ত্রকে চিহ্নিত করা, ষড়যন্ত্রের অনুমান করা নয়।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানের বিজ্ঞান তৎপরতায় স্থবিরতা আনাকে দুশমনের আসল লক্ষ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যদি তারা এই লক্ষ অর্জনে সফলকাম না হয়, অন্তত একে বিপথে পরিচালিত করার জন্য চেষ্টা করবে। যদি তাও না হয়, বদনাম রটানো ও একে কলুষিত করার দিকে মনোযোগ দেবে। কাজেই আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তড়িঘড়ি কোনো কাজ করে দুশমনকে এই লক্ষ অর্জনে যেন সহায়তা না করি।
তিনি গবেষণা কর্ম ও থিসিসগুলোকে ইরানের প্রকৃত প্রয়োজন থেকে ভিন্নপথে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে দেশের বিজ্ঞান তৎপরতায় বিচ্যুতি আনা ও বিপথগামী করার ষড়যন্ত্রে সহযোগিতা বলে উল্লেখ করেন। তিনি গবেষণা কর্মের ব্যাপারে দুর্নাম রটানোকে এ ধরনের অপতৎপরতার আরেকটি নমুনা বলে উল্লেখ করেন। রাহবার বলেন, এক ব্যক্তিকে বিজ্ঞানী হিসেবে দেশে দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। তিনি ইরানে থিসিস বিক্রি হচ্ছে মর্মে একটি ফলকের ছবি প্রকাশ করে আমাদের মেধাবী ও প্রতিভাবান তরুণদের বদনাম রটায়। আসলেই এ ধরনের লোক কি জ্ঞানী বা বিজ্ঞানী হতে পারে?
ইসলামি বিপ্লবের নেতা বিশ^ পরিসংখ্যান সংস্থাগুলোর তথ্যাবলির কথা উল্লেখ করে বলেন, ইরানে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির দ্রুততা এক পর্যায়ে বিশে^র গড়পড়তা অগ্রগতির হিসেবে ১৩ গুণে দাঁড়ায়। এই দ্রুততা কোনো অবস্থাতেই হ্রাস পেতে দেয়া হবে না; বরং আরো বৃদ্ধি পেতে হবে। কেননা, বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি।
মাননীয় রাহবার আরো বলেন, দেশে বৈজ্ঞানিক উন্নতির গতি মন্থর হওয়ার কারণ সম্পর্কে কতক কর্মকর্তা বলেন যে, ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অবস্থান নিচে নামে নি। কিন্তু কথা তো ছিল অন্যরকম। কথা ছিল ইরানের বৈজ্ঞানিক অবস্থান আরো উপরে যাবে। শুধু নিচে নামবে না- এমন তো কাম্য নয়।
মাননীয় রাহবার দেশের বৈজ্ঞানিক উন্নতি-অগ্রগতির তৎপরতায় দুর্বলতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, মেধাবী ও প্রতিভাবান তরুণদের মনে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এই বিরাট ক্ষতি খুব সহজে এবং দ্রুততার সাথে পোষাণো যাবে বলে মনে হয় না। কারণ, এমনটি হলে তা আমাদের প্রতিভা ও মেধাগুলো অন্য দেশে চলে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা প্রতিভাবান ও মেধাবী তরুণদের চিহ্নিত করা রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন। তিনি সতর্ক করে দেন যে, বিজাতীয়রা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞান মেলাগুলো থেকে বা অন্য কোনো পন্থায় এই বিশাল সম্পদকে চিহ্নিত ও নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করার আগে আপনারাই এই মেধাবী, উদীয়মান তরুণদের খুঁজে বের করুন। তাদের প্রতি সহায়তা প্রদান করুন।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা দেশে বিজ্ঞান আন্দোলন গতিশীল হতে পারে এমন কতক বিষয় উল্লেখ করে বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের জ্ঞান বিকাশ সংস্থাগুলোর প্রতি সহায়তা বৃদ্ধি, তাদের মান ও কর্মপরিধির উন্নয়ন ও বিস্তার সাধনে সহায়তার হাত সম্প্রসারিত করা এবং তাদেরকে দেশের মূল প্রকল্প ও বিভাগগুলোতে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া এমন কতক জরুরি পদক্ষেপ, যার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা উচিত।
মাননীয় রাহবার বুনিয়াদি জ্ঞান সংস্থাগুলোর প্রডাক্ট ব্যবহারের প্রসার ঘটানোকে এসব সংস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সিদ্ধান্ত নিন যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের চাহিদা ও প্রয়োজনগুলো বুনিয়াদি জ্ঞান বিকাশ কেন্দ্রগুলোর পণ্যের মাধ্যমে পূরণ করবেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ আল উজমা খামেনেয়ী এ পর্যায়ে আরো দু’টি বিষয় উল্লেখ করেন। যেমনÑ বিশ^বিদ্যালয়সমূহে মেধাবী ও প্রতিভাবান বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং উদীয়মান প্রতিভা পরিচর্যার জাতীয় সংস্থার সমস্যাগুলো সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ বলবৎ রাখতে হবে। তিনি বলেন, এর ফলে দেশের বিজ্ঞান আন্দোলন শক্তিশালী ও গতিশীল হওয়ার ব্যাপারে বিরাট সহায়তা হবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা মেধা বিকাশ ন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব সাত্তারীর কর্র্মদক্ষতা এবং সামর্থ্যরে ব্যাপারে গভীর আস্থা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রেসিডেন্সি ও মেধা বিকাশ ফাউন্ডেশনের মাঝে বিদ্যমান সমস্যাবলি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। আমি আাশা করব, ফাউন্ডেশনের একজন যোগ্য ও দক্ষ ডাইরেক্টর নিয়োগ দানের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে, যেমন মহাশূন্য গবেষণা, ভূউপগ্রহ প্রকল্প, পরমাণু গবেষণা ও আরো কয়েকটি ক্ষেত্রে গবেষণার বিরাট বিরাট প্রকল্পের গতিতে ভাটা সৃষ্টি হওয়া বা স্থবিরতা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন যে, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের গভীর মনোযোগ রাখতে হবে যে, এ ধরনের প্রকল্প কোনো অবস্থাতেই স্থবির, স্থগিত বা গতিহীন হতে পারবে না। কেননা, তার ফলে বৈজ্ঞানিক উন্নতির ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি নতুন বিজ্ঞানীরা নিরাশ হয়ে পড়বে এবং তা দেশের জন্য বিরাট অশনি সংকেত।
রাহবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধিদফতরে সাংস্কৃতিক সেল গঠনের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, এই সেলের তৎপরতা বৃদ্ধি এবং মেধাবী ও প্রতিভাবানদের জিহাদী প্রশিক্ষণ শিবির গঠন করা হলে তাতে বিরাট সুফল পাওয়া যাবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা তাঁর ভাষণের উপসংহার টেনে বলেন, আমাদের আসল লক্ষ হল, এমন এক সমাজ ও দেশ গঠন করা, যা বিজ্ঞান, শক্তি ও সম্পদ প্রভৃতির ন্যায় বিশ^জনীন সূচকগুলোতে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি ঈমান, নৈতিকতা ও মর্যাদাবোধে আমাদেরকে ঋদ্ধ ও পরিপুষ্ট করবে।এর ফলে আমরা জাতিসমূহের অন্তর জয় করে মানবতাকে বর্তমান অজ্ঞতা, গোমরাহী থেকে নাজাত দিতে পারব। আর এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, ইরানের মহান জাতি ও আমাদের প্রিয় তারুণ্যদীপ্ত বিচক্ষণ ও প্রাণবন্ত প্রজন্ম এ ক্ষেত্রে সফলকাম হতে পারবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী যে কোনো বিরোধী তৎপরতার বেলায় শয়তানি শক্তিগুলোর শত্রুতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, কিছুদিন আগে আমেরিকার জনৈক কর্মকর্তা বললেন যে, ইরান যদি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখে তাহলে ইরানের ওপর আরোপিত অবরোধগুলোর ব্যাপারে মৌলিকভাবে কোনো হেরফের হবে কিনা জানা নেই। রাহবার বলেন, এই কথা এমন এক বাস্তবতা, যার ব্যাপারে আমি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বহুবার বলেছি।
আমেরিকার প্রতি ইসলামি বিপ্লবের রাহবারের খারাপ ধারণা সম্পর্কে ইরানি কর্মকর্তাদের সাক্ষাতে কতিপয় আমেরিকান কর্মকর্তার অভিযোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহামান্য রাহবার বলেন, আপনাদের এ জাতীয় কথাবার্তার পরেও কি আপনাদের প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করতে বলেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানের রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সাথে ইতঃপূর্বেকার একান্ত ও প্রকাশ্য বৈঠকে তাঁর বক্তব্যগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমি বারবার বলেছি যে, যদি আপনারা পরমাণুর প্রশ্নে পেছনে আসেন তাহলে তারা ক্ষেপণাস্ত্রের কথা সামনে আনবে। এ ব্যাপারেও যদি ছাড় দেন তাহলে প্রতিরোধ আন্দোলনে সহায়তার প্রসঙ্গ উত্থাপন করবে। যদি ছাড় দেয়া অব্যাহত রাখেন তাহলে মানবাধিকারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করবে। এর পরে যদি তাদের মানদ-গুলো মেনে নেন, তাহলে ইরানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ধর্মীয় মানদ-গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।
মাননীয় রাহবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক বিবৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এই বিবৃতিতে ইরানে যে বিশাল ক্ষেত্র ও সম্ভাবনা রয়েছে সে তথ্য উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা যখন ইরানের বিশাল সম্ভাবনা, জনসম্পদ ও প্রাকৃতিক ঐশ^র্যের কথা বলি তখন কিছুমাত্র আস্ফালন করা হয় বলে মনে করবেন না। বরং এমন বাস্তবতার কথা তুলে ধরা হয়, যা পশ্চিমারাও স্বীকার করে।
ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা বলেন, আমেরিকানরা এহেন সম্ভাবনাময় ও উন্নতি-অগ্রগতির অধিকারী আর ইসলামের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দেশ ইরানের সাথে সংগ্রাম করছে। এই বিষয়টি যদি আমাদের প্রতিভাবান সন্তানেরা উপলব্ধি করে এবং বিচার-বিশ্লেষণ করে, তাহলে এ উপলব্ধি তাদেরকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে বিরাটভাবে সাহায্য করবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তাঁর ভাষণে কারবালায় আশুরার ঘটনাকে এমন এক সূর্যের সাথে তুলনা করেন, যা কোনো দিন অস্তমিত হবে না। তিনি বলেন, আশুরার ঘটনা ছিল অন্ধকারের সাথে আলোর সংগ্রাম এবং হীনতা ও নীচতার সাথে মর্যাদার লড়াইয়ের বাস্তব চিত্র। এই পথের পূর্ণতার অনুঘটক ছিলেন হযরত যায়নাব সালামুল্লাহ আলাইহা এবং হযরত ইমাম সাজ্জাদ (যায়নুল আবেদীন) আলাইহিস সালাম।
তিনি আশুরার শোকানুষ্ঠান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তরুণদের ব্যাপকহারে উপস্থিতি, তথ্যপূর্ণ বক্ততাসমূহ, সমৃদ্ধ কতিপয় শোকগাথা ও মাতম মর্সিয়া সামগ্রিকভাবে আশুরার শোকানুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেছিল।
উল্লেখ্য যে, মাননীয় রাহবারের দিক নির্দেশনামূলক ভাষণের আগে ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মেধা বিকাশ ন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ড. সাত্তারী মেধা বিকাশ ন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, মানব সম্পদ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তার সৎব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে আরো যাঁরা বক্তব্য রাখেন, তাদের অন্যতম হলেন :
- ডক্টর আলীরেযা বাবাখান, যিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়নে
- ডিগ্রিধারী এবং মেধা বিকাশ ফাউন্ডেশনের এ বছরের শিক্ষাবিষয়ক পুরস্কারের জন্য মনোনীত।
- ডক্টর মুজতবা ফৈয়ায বখ্শ, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র এবং কম্পিউটার বিষয়ে অলম্পিয়াডে পদক জয়ী।
- ডক্টর আমীর শামলু, বায়ো টেকনোলজি ও ন্যানো টেকনোলজিতে পিএইচডি বিশেষজ্ঞ।
- ডক্টর আলীরেযা বাজারগান, ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ।
- ডক্টর সাইয়্যেদ কাজেমী তাবার, যিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন এবং ইরানের জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছেন।
- মিসেস আনিসা সাদাত মনসূরী, মেডিক্যাল ছাত্রী এবং অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী।
- ডক্টর যাহরা দাওরিনা, পাশ্চাত্য দর্শনে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং মেধা বিকাশ ফাউন্ডেশনের পুরস্কারের জন্য মনোনীত।
এ সাক্ষাতে তাঁরা যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তন্মধ্যে ছিল : - দেশের মৌলিক বিষয়াদি সমাধানে ভূমিকা পালনের প্রয়োজনে বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থার প্রতিভাবানদের নিয়ে একটি ব্যাপকভিত্তিক সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা।
- মেধা পরিচর্যা ন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের প্রতিরক্ষামূলক অর্থনৈতিক সংস্থা গঠন।
- ছাত্রদের মাঝ থেকে প্রতিভা বাছাই ও তাদের পরিচর্যার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা।
- সুস্বাস্থ্য রক্ষার পরিকল্পনা পদ্ধতি বাস্তবায়নের সমালোচনা, স্বাস্থ্য পরিচর্যায় বিশাল অর্থ ব্যয় ও সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে অবহেলা প্রদর্শনের সমালোচনা।
- বিভিন্ন সংস্থা ও স্কুল পর্যায়ে সৃজনশীলতার পরিচর্যা এবং তাদেরকে প্রণোদনা ও প্রয়োজনীয় উৎসাহ ভাতা প্রদান।
- পারিবারিক অর্থব্যবস্থা পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিরক্ষামূলক অর্থনীতি গড়ে তোলায় মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন প্রসঙ্গ।
- মেধা পরিচর্যাকে কেন্দ্রীভূত না রেখে আঞ্চলিক পর্যায়ে সুযোগ-সুবিধা ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা।