শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

‘ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র ও মুসলিম বিশ্বের অনৈক্যই আল-কুদস মুক্তির প্রধান অন্তরায়’

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ১০, ২০১৬ 

news-image

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন: ইসলামের প্রথম কিবলা পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস বা আল-কুদ্স আশ-শরিফ। হযরত ইয়াকুব (আ.) এ পবিত্র মসজিদের প্রথম নির্মাতা। পরবর্তীকালে হযরত দাউদ (আ.) ও তদপুত্র সুলাইমান (আ.) এ মসজিদের পুনঃনির্মাণ করেন। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) ‘মসজিদুল হারাম’ থেকে ‘মসজিদুল আকসা’ হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে পবিত্র মেরাজ শরিফ সম্পন্ন করেন। এই মসজিদুল আকসাই মুসলমানের প্রথম কিবলা। ইসলামের পবিত্র তিনটি মসজিদের একটি। বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানদের অন্তরের অন্তস্থলে এ মসজিদের জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রয়েছে। শত শত বছরব্যাপী ইহুদি-খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল সৃষ্টি করে এ মসজিদটিকে দখল করে নেয়া হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি এক দিকে ইহুদিবাদের বিষাক্ত ষড়যন্ত্র অন্যদিকে ‘আল-কুদস’ মুক্ত করা ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রাম সমান ভাবে চলছে। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী আল-কুদ্স মুক্ত করার লক্ষে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের ডাক দেন। এ লক্ষে তিনি পবিত্র রমযান মাসের শেষ জুমআ বারকে বিশ্বব্যাপী ‘আল-কুদ্স দিবস’ হিসেবে পালনের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমদেরকে ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের সঙ্গে আল-কুদ্স মুক্তি সংগ্রামে একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানান।
এরই ফলশ্রুতিতে আল-কুদ্স ও ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ হয়। তিন তিন বার ইসরাইলি হানাদাররা ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের কাছে পরাজিত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। শুরু হয় ষড়যন্ত্রের নতুন ইতিহাস। কারণ, যায়নবাদী ইসরাইল এবং তাদের অবৈধ জনক বৃহৎ শক্তিবর্গ ষড়যন্ত্রের নতুন ছক তৈরি করে। উদ্দেশ্য একটাই। শান্তির ধর্ম ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে অবৈধ দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এরই ধারাবাহিকতায় রাতারাতি আফগানিস্তানে সৃষ্টি হলো তালেবান। নাটকের দ্বিতীয় পর্যায়ে সৃষ্টি করা হলো ‘আল-কায়েদা এবং সবশেষে চলছে ইসলামিক স্টেট তথা আইএস এর বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকা-। এসব নাটকের পেছনে রয়েছে ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র ও তার সুদক্ষ পরিচালনা। ওদের হাতের পুতুল হয়ে মুসলিম দেশগুলোর বিভিন্ন গ্রুপ শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন মাযহাবি বিতর্ক সৃষ্টি করে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির মতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে আজকের দিনে আল-কুদ্স মুক্তির সংগ্রাম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা মাজহাবী বিতর্কে জড়িয়ে আত্ম ধ্বংসে লিপ্ত হচ্ছে। ইসরাইলের নিরাপত্তা ও সাম্রাজ্যবাদীদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে। বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ইসলামি শক্তির উত্থানরোধে যায়নবাদী ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আমির-ওমরাগণ শিয়া-সুন্নিসহ বিভিন্ন মাযহাবি দ্বন্দ্ব বাধিয়ে নিকৃষ্ট সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটাই এ সময়ের মুসলিম বিশ্বের করুণ ট্রাজেডি।
ইহুদিবাদের ইতিহাস ষড়যন্ত্র, মোনাফেকী আর শয়তানীর ইতিহাস। এদের হাতে শত শত নবী-রাসূল প্রাণ হারিয়েছেন। এসব কারণে এরা বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর হাতে বহুবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। একমাত্র ইসলামের ও মুসলমানদের শাসনামলে এরা শান্তিতে ছিল। মসজিদুল আকসাকে কেন্দ্র করে ২৭ হাজার বর্গফুট নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) ফিলিস্তিনে বিনা রক্তপাতে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেন।
১০৬৯ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে। ১১৮৬ সালে কুর্দী বীর গাজী সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী খ্রিস্টান শক্তির হাত থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসসহ ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধার করেন। এর পর থেকেই ইহুদিবাদীরা ও তাদের দোসর ও খ্রিস্টানরা নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় এ পবিত্র ভূমি দখল করার জন্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাতে ইহুদিরা তুরস্কের খলিফা আবদুল হামিদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনে জমি কেনার প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। ১ম মহাযুদ্ধের সময় মিত্র শক্তির পক্ষে গোয়েন্দাগিরি সহ বিভিন্ন সার্ভিস দিয়ে তারা ব্রিটিশ সরকারের সান্নিধ্য পায়। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। ব্রিটিশরা একজন ইহুদিকে ফিলিস্তিনের গভর্নর হিসেবে বসালে তাদের নীল নকশা বাস্তবায়ন সফল হয়। ইহুদিবাদের সাথে গোপন চুক্তি মোতাবেক ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এক সময় আফ্রিকার উগান্ডায় অথবা অস্ট্রেলিয়ার কিছু দ্বীপ নিয়ে ও এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ওঠে। কিন্তু তা না করে ইহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলমানদের দুর্বল করা ও ঐক্য ধ্বংসের জন্য তাদের বুকের উপর অর্থাৎ ফিলিস্তিনে ইসরাইল নামের অবৈধ রাষ্ট্র বিষফোঁড়া হিসেবে চাপিয়ে দেয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ ফিলিস্তিনের ৫৪% খাস ভূমির উপর ইসরাইল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রস্তাব পাশ করে। এর সূত্র ধরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোর ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ‘বেলফোর ঘোষণা’র মাধ্যমে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের জন্ম দেয়। এর পর থেকে শুরু হয় ফিলিস্তিনের জনগণের উপর নির্মম নির্যাতনের পালা। লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরবাড়ি ফেলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় লেবানন, সিরিয়া জর্ডান সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে। সারা বিশ্ব থেকে ইহুদিদের এনে মুসলমানদের ঘর-বাড়িতে বসিয়ে দেয় ব্রিটিশ আমেরিকার মদদপুষ্ট যায়নবাদী ইসরাইল সরকার। ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলো যুদ্ধে হেরে গেলে জর্ডান, সিরিয়া ও মিশরের বিস্তীর্ণ ভূমি চলে যায় ইসরাইলি দখলে। ওদের নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়তেই থাকে। প্রতিনিয়ত ওরা হত্যা করে ফিলিস্তিনের নারী-শিশু বৃদ্ধ তথা গণ মানুষদের। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধেও আরবরা প্রকারান্তরে পরাজয় বরণ করে। ১৯৮২ সালে ইসরাইল লেবানন দখল করে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা কর। ১৯৬৯ সালে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ওআইসিÑ ইসলামি সম্মেলন সংস্থা। ১৯৭৪ সালে ইসরাইল আল-আকসা মসজিদে খনন কাজ শুরু করে। ১৯৭৯ সালে ন্যাক্কারজনকভাবে মিসরের প্রেসিডেন্ট ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে কাম্প ডেভিড চুক্তি করেন। ১৯৬৪ সালের ৮ মে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লক্ষ্যে পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) গঠিত হয়। ইয়াসির আরাফাত ছিলেন এর নেতা। তিনিও এক সময় ইসরাইলের সঙ্গে আপোসের পথ ধরেন। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর আল-কুদ্স মুক্তি আন্দোলন নতুন পথের সন্ধান পায়। ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী (র.) আল-কুদ্স মুক্ত করার জন্য বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি রমযানের শেষ জুমআ বারকে ‘আল-কুদ্স’ দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এ দিনে সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা ঘোষণার আহ্বান জানান। তিনি আল-কুদ্স মুক্তির লক্ষে ‘তারিকুল কুদ্স’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিবর্গ ও ইসরাইল নতুন পরিকল্পনা করে। তারা ইসরাইলকে রক্ষার লক্ষে সাদ্দামকে দিয়ে ইরান আক্রমণ করিয়ে ৮ বছরের ইরান ইরাক যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। আবার এক সময় তারা সাদ্দামকে মরা ইদুরের মতো ফেলে দিয়ে ইরাক দখল করে নেয়। এত কিছুর মধ্যেও আল-কুদ্স মুক্তির লক্ষে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের আপোষকামী নেতৃত্বের বুক চিরে বেড়িয়ে আসে প্রতিরোধ আন্দোলন ‘হামাস’। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের সংগ্রামী শিশু-কিশোররা ইসরাইলি সশস্ত্র হানাদার বাহিনীর উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের মাধ্যমে ‘ইন্তিফাদা’ আন্দোলনের জন্ম দেয়। হামাস এবং ইন্তিফাদাহর ফলশ্রুতিতে তিন তিন বার ইসরাইলি পরাশক্তি সংগ্রামী ফিলিস্তিনী জনগণের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হয়।
২০০৬ সালে লেবাননে হিজবুল্লাহর সাথে ৩৩ দিনের যুদ্ধে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির স্বীকার করে ইসরাইল পরাজিত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ২০০৯ সালে ইসরাইল ফিলিস্তিন আক্রমণ করলে হামাসের সঙ্গে ২২ দিনের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইসরাইল পিছু হটে আসে। ২০১২ সালে পুনরায় ফিলিস্তিন আক্রমণ করে ইসরাইল। হামাসের সঙ্গে ৮ দিনের যুদ্ধে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে ফিরে আসতে হয় ইসরাইলকে। ২০১৪ সালে হঠাৎ হামলা চালিয়ে একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে ইসরাইলকে। এবার ৭০০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে ইসরাইলদের হাতে। আজো চলছে ইসরাইলি হানাদারদের নৃশংসতার মুখে রক্তে লেখা ফিলিস্তিনি জনগণের নিরলস সংগ্রাম। এ সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেয়াই হচ্ছে ইহুদিবাদী চক্রের সকল ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী চলছে ইহুদিবাদের নেপথ্যে পরিচালনার সাম্রাজ্যবাদীদের মহা নাটক। এ নাটকের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। মাঝেমধ্যেই ইউরোপ আমেরিকায়ও এর কিছুটা আঁচ লাগে। নাটকের উদ্দ্যেশ্য একটাই। মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রস্থলে বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং শান্তির ধর্ম ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বিতর্কিত করা। ধারণা করা হচ্ছে আল-কায়েদার পরে ইসরাইল ও সাম্রাজ্যবাদীদের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে ‘আইএস’Ñ যারা ইসলাম ও খিলাফতের নাম ভাঙ্গিয়ে শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করছে। মজার ব্যাপার আইএস এর একটি গুলিও ইসরাইলের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়নি। সিরিয়ার শাসকদের উচ্ছেদের জন্য আইএস সহ একাধিক গ্রুপ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কার্যত সিরিয়া এখন বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। ইরাকের অবস্থাও একই। ইরাকের সরকারের বিরুদ্ধে আইএস কুর্দী সহ বিভিন্ন গ্রুপ যুদ্ধ করছে। ওদের টার্গেট ইরাককে টুকরা টুকরা করা। ইয়েমেনে হুতিদের উত্থানে শংকিত হয়ে বহুজাতিক বাহিনীর নামে ইয়েমেন দখলের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। নির্বিচারে গণহত্যার শিকার হচ্ছে ইয়েমেনের মুসলমানরা। আর এসব চলছে ইসলামের বিভিন্ন গ্রুপ তথা শিয়া-সুন্নি, ওয়াহাবি, নুসাইরিসহ বিভিন্ন মাযহাবি গ্রুপের নামে। অর্থাৎ তারা মাযহাবি বিতর্ক উসকে দিয়ে মুলমানদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো বর্তমানে প্রতিটি মুসলিম দেশই কোন না কোন ভাবে বিশেষ গ্রুপভুক্ত হয়ে ওদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে। এক কথায় ইসরাইল ও তার দোসরদের ষড়যন্ত্রে গোটা মুসলিম বিশ্ব এখন ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তারক্তি সংঘর্ষে লিপ্ত। পেছনে থেকে তালি বাজাচ্ছে ইসরাইল ও তার অভিভাবকরা।
প্রায় তিন যুগ ধরে আমরা বিশ্বব্যাপী রমযানের শেষ জুমআর দিনে আল-কুদ্স দিবস পালন করে আল-কুদ্স মুক্তি ও ফিলিস্তিনের মজলুম জনতার সংগ্রামের প্রতি আমাদের একাত্মতা প্রকাশ করে আসছি। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি অনেক হয়েছে ঠিকই, যার ফলে ইসরাইলকে বার বার পিছু হটতে হয়েছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি তাদের ষড়যন্ত্র আর সা¤্রাজ্যবাদের দোসরদের স্বার্থে ফিলিস্তিন ও আল-কুদ্স মুক্তির পথে বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। ওদের ষড়যন্ত্রে সকল মুসলিম রাষ্ট্রই এখন আত্মঘাতি অসুস্থ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এই ধারায় মাজহাবী বিতর্ক চলতে থাকলে আল-কুদ্স মুক্তি কিংবা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দূরে থাক মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব ও মানচিত্র ধরে রাখাটাই কঠিন হয়ে যাবে। ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র রুখতে এবং আল-কুদ্স মুক্ত করার লক্ষে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, বিশ্বের সকল মুসলমানের ঐক্য। সকল মাজহাবী বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে এক আল্লাহ, এক নবী (সা.) ও এক কালেমার ভিত্তিতে সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ‘আমি এবং আমার গ্রুপ ছাড়া বাকি সবাই কাফের, তাদেরকে হত্যা করতে হবে’ এ মানসিকতা পোষণকারীরা ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু। পরস্পরের মতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা নিয়ে বিভিন্ন মত পথের হয়েও মুসলমান হিসেবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল-কুদ্স মুক্তি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য ডাক দিলে বিশ্বের সকল মুক্তিকামী ও শুভবুদ্ধির মানুষরাও সে ডাকে সাড়া দেবে। তাই আজ আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের নীল নকশাটি সকলের মাঝে স্পষ্ট করে প্রকাশ করে দেয়া। ওদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে সচেতন করা। দেশে দেশে মুসলিম বিশ্বের জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। যাতে তাদের সরকার এ ষড়যন্ত্রে পা না দেয়। ইমাম খোমেইনী ৩৭ বছর আগে এলক্ষ্যেই সেদিন বিশ্বব্যাপী শিয়া-সুন্নি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে আল-কুদ্স মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করার ডাক দিয়েছিলেন। তাই আজকের দিনে আমরাও সকল রকম মাজহাবী বিতর্কের ঊর্ধ্বে আল-কুদ্স মুক্তি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা প্রকাশে এবং বিশ্বব্যাপী কালেমাধারী মুসলমানদের ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।
[গত ১ জুলাই, ২০১৬, শুক্রবার আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে ঢাকাস্থ বিএমএ মিলনায়তনে আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রবন্ধটি পঠিত হয়।]
লেখক : সম্পাদক, দৈনিক আজকের ভোলা
সহ-সভাপতি, আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ