মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

‘ইসলাম থেকে কীভাবে দায়েশের মতো আবর্জনা বেরিয়ে আসে?’

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ৬, ২০১৫ 

news-image

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, “একটি বেদুঈন গোত্রের একটি উগ্র ও জঘন্য চিন্তাধারার সঙ্গে উপনিবেশবাদের মিলনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে চরমপন্থার বীজ বপন করা হয়েছে। তা না হলে, বিশ্বের সবচেয়ে মানবিক ও নীতিনৈতিকতাপূর্ণ ধর্ম (ইসলাম)- যাতে একজন মানুষের হত্যাকাণ্ডকে গোটা মানবতাকে হত্যার সমান বলে অভিহিত করা হয়েছে সেখান থেকে কিভাবে দায়েশের মতো আবর্জনা বেরিয়ে আসে?”

পশ্চিমা যুবসমাজের উদ্দেশে লেখা দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি এসব কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি এ প্রশ্নও তোলেন যে, “যারা ইউরোপে জন্মগ্রহণ করেছে এবং ইউরোপীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে যাদের চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছে তারা কীভাবে এ ধরনের গোষ্ঠীতে যোগ দেয়? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, একদল মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে একবার বা দু’বার সফর করার পর হঠাৎ করে এতটা চরমপন্থি হয়ে যায় যে, নিজের দেশের নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে? এখানে যে বিষয়টি উপেক্ষা করা হচ্ছে সেটি হলো- এসব জঙ্গি একটি অসুস্থ ও সহিংস সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে এবং জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছে। এ বিষয়টিকে অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হবে; যে বিশ্লেষণে সমাজের প্রকাশ্য ও গোপন দূষণগুলো বেরিয়ে আসে। পাশ্চাত্যে শিল্প ও অর্থনৈতিক বিকাশের বছরগুলোতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় যে অসাম্য ও বৈষম্যের বীজ বপন করা হয়েছে কিছুদিন পরপর অসুস্থ প্রকৃতিতে হয়তো তার ফলে সৃষ্ট চাপা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।”

মুসলিম দেশগুলো পশ্চিমা সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার সমালোচনা করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, “পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অন্যান্য দেশের ওপর চাপিয়ে দেয়াকে এবং মুক্ত ও স্বাধীন সংস্কৃতিগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করাকে একটা নীরব ও ক্ষতিকর সহিংসতা বলে মনে করি। এমন সময় সমৃদ্ধ সংস্কৃতিগুলোর পাশাপাশি এগুলোর সবচেয়ে সম্মানিত উপকরণগুলোর অবমাননা করা হচ্ছে যখন অন্য কোনো কিছু দিয়েই একটি সংস্কৃতির স্থান পূরণ করা সম্ভব নয়।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “বর্তমান যুগে ‘সহিংসতা’ ও ‘নৈতিক স্খলন’ পশ্চিমা সংস্কৃতির দু’টি প্রধান অনুষঙ্গে পরিণত হলেও পাশ্চাত্যের মানুষই এখন এ দু’টি বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা যদি একটি সহিংস, অশ্লীল ও নিরর্থক সংস্কৃতি গ্রহণ করতে না চাই- সেটা কি আমাদের অপরাধ? নানা ধরনের কথিত শিল্প পণ্যের আদলে আমাদের তরুণদের প্রতি যে ধ্বংসাত্মক ঢল নামিয়ে দেয়া হয়েছে তা প্রতিহত করার কারণেই কি আমরা অপরাধী?”

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, “সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে সংযোগের গুরুত্ব ও মর্যাদাকে আমি অস্বীকার করছি না। যখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এবং সম্মানের সঙ্গে কোনো সমাজে এই সংযোগ ঘটে তখন সে সমাজের উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু জোর করে সাংস্কৃতিক সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা সব সময়ই ছিল ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক। আমি চরম পরিতাপের সঙ্গে একথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আমদানি করা সংস্কৃতিগুলোর সঙ্গে এ ধরনের ব্যর্থ সংযোগ ঘটানোর চেষ্টার ফসল হিসেবে আইএসআইএল বা দায়েশের মতো হীন প্রকৃতির গোষ্ঠীগুলো সৃষ্টি হয়েছে। যদি ইসলামি চিন্তাধারায় দৈন্য থাকতো তাহলে সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী যুগ শুরু হওয়ার আগেও মুসলিম বিশ্বে এ ধরনের গোষ্ঠী দেখা যেত। অথচ ইতিহাস তার উল্টো চিত্রই তুলে ধরছে।”

সূত্র: আইআরআইবি