বুধবার, ৯ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইসলামে নারীর মর্যাদা

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ১৮, ২০১৫ 

news-image

ড. এন হাবিবী : ইসলাম মানবতার প্রতি এক বিরাট সম্মান দিয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : ‘আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’

(সূরা বনি ইসরাইল : ৭০)

আবার যখন মানবতার কথা বলা হয়েছে তখন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্বের কথাও প্রকাশ করা হয়েছে : ‘পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ থেকে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত।’ (সূরা আলাক : ১-৩)

নিম্নোক্ত আয়াতে নারী ও পুরুষ উভয়েরই অভিন্ন উতসের কথা বলা হয়েছে : ‘হে মানব! তোমরা আমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন।’ (সূরা নিসা : ১)

পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে : ‘মানুষ কি মনে করে যে, তাকে নিরর্থক ছেড়ে দেয়া হবে? সে কি স্খলিত শুক্রবিন্দু ছিল না? অতঃপর সে আলাকায় পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তাকে আকৃতি দান করেন এবং সুঠাম করেন। অতঃপর তিনি তা থেকে সৃষ্টি করেন যুগল- নর ও নারী।’ (সূরা কিয়ামা : ৩৬-৩৯)

আবার অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন : ‘আমি তোমাদের মধ্যে কোন কর্মনিষ্ঠ নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯৫)

কুরআন মজীদে আরো বলা হয়েছে : ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সমস্ত খবর রাখেন।’ (সূরা হুজুরাত : ১৩)

‘পুরুষ ও নারীর মধ্যে কেউ সকাজ করলে ও মুমিন হলে তারা জান্নাতে দাখিল হবে।’ (সূরা নিসা : ১২৪)

‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব। এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সূরা নাহল : ৯৭)

পবিত্র কুরআনের উপরিউক্ত আয়াতসমূহ মোতাবেক মানবতা হচ্ছে খোদায়ী মর্যাদার সাথে সম্পৃক্ত এবং সেক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। মর্যাদা নিরূপিত হয় ন্যায়নিষ্ঠতার মাপকাঠিতে, তাই যে বেশি ন্যায়পরায়ণ সেই বেশি মর্যাদা পাবে এবং যে তার সৎকর্মের ওপর বিশ্বাস রাখে সে অবশ্যই একটি পরিশুদ্ধ জীবনযাপন করে। আবার অন্যায় কর্মসংশ্লিষ্ট ব্যাপারেও নারী-পুরুষ উভয়কে সমানভাবে বিচার-বিবেচনা করতে হবে। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : ‘এবং মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী- যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করে তাদেরকে শাস্তি দিবেন।’ (সূরা ফাত্হ : ৬)

পবিত্র কুরআন বিশ্বাসীদের জন্য সুসংবাদও বহন করে এনেছে : ‘আল্লাহ মুমিন নর ও নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা স্থায়ী হবে।’ (সূরা তাওবা : ৭২)

অতএব, নৈতিক উতকর্ষ অর্জন ও সৎকর্মশীল হওয়া খুবই প্রয়োজন এবং নারী-পুরুষ উভয়েরই এর সামর্থ্য আছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীও একজন পূর্ণ মানুষ। সুতরাং সে যে কোন পুরুষের মতোই যা কিছু ভালো এবং সম্মানজনক, এমন সকল কিছুর জন্য চেষ্টা করতে পারে এবং মানুষের পক্ষে যত ওপরে ওঠা সম্ভব ততদূর আরোহণের জন্য সে সাধনা করতে পারে। মহিলা ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য কেবল সেসব ক্ষেত্রে যা কেবল বিশেষভাবে তাদের ওপরই আরোপ করা হয়েছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ দুইয়ে বলা হয়েছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র নিম্নোক্ত বিশ্বাসের ওপর ভিত্তিশীল একটি ব্যবস্থা :

১. খোদার একত্ববাদ (তাওহীদ), সর্বজনীন এখতিয়ার, খোদায়ী আইন এবং খোদার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য তার আবশ্যকতা।

২. খোদায়ী নবুওয়াত এবং খোদায়ী আইন প্রতিষ্ঠায় তার মৌলিক ভূমিকা।

৩. পুনরুত্থান (আখেরাত), এর সৃষ্টিশীল ভূমিকা এবং খোদার দিকে মানুষের পরিবর্তনশীল যাত্রা।

৪. খোদায়ী ন্যায়বিচার (আদল) এবং সৃষ্টি ও খোদায়ী আইনে তার ভূমিকা।

৫. ইমামত, অব্যাহত নেতৃত্ব এবং ইসলামী বিপ্লবে তার মৌলিক ভূমিকা।

৬. মানুষের মহানুভবতা এবং খোদার পথে দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে পছন্দের স্বাধীনতা।

এর সাহায্যে এবং এর মাধ্যমে :

ক. পবিত্র কিতাব এবং ইমামদের ব্যাখ্যা মোতাবেক যোগ্যতাসম্পন্ন আইনবিদদের সাহায্যে ধর্মীয় আইনের অব্যাহত বাস্তবায়ন।

খ. মানুষের কাছে বিদ্যমান সকল বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এসবের আরো উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো।

গ. যে কোন রকমের নির্যাতন এবং নির্যাতিত হওয়ার নিন্দা করা।

এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত ধারণা অনুসরণ করা হলে তা একটি জাতির সামাজিক সুবিচার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং ঐক্য নিশ্চিত করতে পারে।

ইরানী সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকার সংবিধানের দুই অনুচ্ছেদে বর্ণিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রাপ্ত সকল সুবিধা কাজে লাগাতে বাধ্যবাধকতা বোধ করে এবং সেজন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে :

 

১. সৎকর্মশীলতার ভিত্তিতে এবং সকল প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালিয়ে মানুষের নৈতিক উতকর্ষ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।

 

২. সকল প্রকার গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।

 

৩. সমাজের সকল সদস্যের জন্য পুঁথিগত ও শারীরিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।

 

৪. নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য তাদের সাম্যের অধিকার নিশ্চিত করা।

 

ওপরের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন বৈষম্যের সুযোগ নেই এবং তারা সমভাবে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ মানবীয় উতকর্ষে উপনীত হতে প্রচেষ্টা চালাতে পারে।

 

অতএব, প্রত্যেকেই সমান প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে, আইন দ্বারা সমান আচরণ লাভ করতে এবং সমান কাজের সমান পারিশ্রমিক পেতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কর্মবৈষম্য ইসলামে কখনও সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়নি। এটি প্রথম উত্থিত হয় পশ্চিমা জগতে। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে সেখানে মহিলাদেরকে তাদের কাজের জন্য কম পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এই সমস্যাটি আজ পর্যন্ত জাতিসংঘে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

 

যাই হোক, একজন মহিলা যা আয় করে তার মালিক সে নিজে এবং সে তার ইচ্ছামত তা খরচ করতে পারে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, মহিলাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রয়েছে এবং তারা সকল প্রকার সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে। যেমন পুরুষের মতো তাদেরও নামায আদায় করতে হয়, রোযা পালন করতে হয়, আয়ের এক-পঞ্চমাংশ খুম্স দিতে হয়, যাকাত দিতে হয় এবং জীবনে একবার পবিত্র কাবাগৃহে হজ পালন করতে হয়। তাই তাদেরকে খোদা-প্রেমিকদের ভালোবাসতে হবে এবং খোদাদ্রোহীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।

 

সর্বোপরি সামাজিক কর্মকাণ্ড একজন মহিলাকে তার সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হিসাবে গড়ে তোলে। যেমন, কালামে পাকে বলা হয়েছে : ‘মুমিন নর-নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ করতে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; এদেরকেই আল্লাহ কৃপা করবেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা তাওবা : ৭১)

 

উপরিউক্ত আয়াতে একে অপরের সাহায্যকারী বন্ধু হওয়া, সৎকর্মশীল হওয়া, অসৎকাজ থেকে বিরত থাকা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা, বার্ষিক হজ পালন, খুম্স ও যাকাত প্রদান ইত্যাদি সামাজিক কর্মকা-ই পুরুষের মতো মহিলাদের ওপরও বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে তারা তাদের মধ্যে নৈতিক উতকর্ষ বৃদ্ধি করতে পারে এবং খোদামুখী আধ্যাত্মিক চেতনা গড়ে তুলতে পারে। পবিত্র কুরআনে এ কথাটি বলা হয়েছে এভাবে : ‘হে নবী! মুমিন নারিগণ যখন তোমার কাছে এসে বাইআত করে এই মর্মে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানকে হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না তখন তাদের বাইআত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা মুমতাহিনা : ১২)

 

এই আয়াতে একটি সামাজিক বিষয়ের দিকে আলোকপাত করা হয়েছে। সেটি হলো আনুগত্যের বাইআত গ্রহণ করা। সে কারণেই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী (রহ.) সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে বারংবার মহিলাদেরকে দেশের জাতীয় নির্বাচনসমূহে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার জন্য আদেশ করে গেছেন। ইসলামে এমন নির্দেশনা না থাকলে তিনি এমন আদেশ দিতেন না। তাই এটা স্পষ্ট যে, ইসলামের দৃষ্টিতে এবং যথাসম্ভব নৈতিক উতকর্ষের আলোকে সকল নারী ও পুরুষ সমান। অবশ্য মহিলাদেরকে তাদের মর্যাদা ও সম্ভ্রমের প্রয়োজনে যথাযথভাবে হিজাব ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে তারা কোন অসৎ মানসিকতার শিকার না হয়। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেছেন : ‘মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ করে থাকে তা ব্যতীত তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারিগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌনকামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে।’ (সূরা নূর : ৩১)

 

অবশ্য একইভাবে নারীদের মতো পুরুষদের প্রতি তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে এবং শালীন হতে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের অপর একটি আয়াতে বলা হয়েছে : ‘মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত।’ (সূরা নূর : ৩০)

 

ব্যক্তির প্রতি বিধিবদ্ধ নামায এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের মতো সকল কর্তব্য পালনের সুযোগ দান ছাড়াও মানুষের মধ্যে মানবীয় সদগুণ বিকাশের লক্ষ্যে ইসলামী সরকারকে একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ দুইয়ে প্রাপ্ত সকল সুবিধা কাজে লাগিয়ে এ লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

 

তাই দেখা যাচ্ছে, সংবিধান মোতাবেক ইসলামী সরকার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য। তবে যেসব কর্মততপরতা ঐ অনুচ্ছেদের প্রথমাংশের সাথে সাংঘর্ষিক তা নিষিদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামী সরকার যদি মহিলাদেরকে প্রকাশ্যে খেলাধুলায় অংশ নেয়াকে নিষিদ্ধ করে, তাহলে তা এ কারণে যে, মেয়েদের প্রকাশ্যে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ সামাজিক দুষ্কর্ম বৃদ্ধি করবে, মহিলাদের খেলাধুলা করা নিষেধ- এই কারণে নয়। চলচ্চিত্র ও নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কোন রকম দুষ্কর্মের প্ররোচনা না থাকলে এই পেশা গ্রহণের কোন আপত্তি নেই। যে কোন অবস্থায় একটি ইসলামী সরকারের দায়িত্ব হলো একদিকে মানুষের নৈতিক উতকর্ষ বিকাশের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং অপরদিকে সকল প্রকার সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালানো। তাই এই অবস্থায় মহিলাদের অধিকার পুরোপুরি সংরক্ষিত এবং তাদের সামাজিক বিকাশ নিশ্চিত। মুসলমান হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি যে, পশ্চিমা সংস্কৃতিতে মানবাধিকার বলতে যে ধারণা বিদ্যমান তা ভুল এবং তা সমাজকে বিশেষত নারী সমাজকে দুষ্কর্মের দিকে প্ররোচিত করে।

 

কেউ কেউ ইসলামের বিচার কাজ পরিচালনা ও সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে মহিলাদের ওপরে আরোপিত সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে এই মর্মে সমালোচনা করে থাকে যে, ইসলাম যদি নারী ও পুরুষকে সমানাধিকারই দিয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে কেন বিচারকের আসনে বসতে দেয়া হয় না এবং সাক্ষ্যদানের সময় পুরুষের সমান গণ্য করা হয় না? এর অর্থ কি এই নয় যে, ইসলামে মহিলাদের মর্যাদা পুরুষের নিচে? উপরিউক্ত সমালোচনার জবাবে আমরা বলতে পারি যে, বিচার কার্য সম্পাদন ও সাক্ষ্য প্রদান হচ্ছে প্রশাসনিক বিষয় এবং এক্ষেত্রে মানুষের নৈতিক উতকর্ষ বা সদগুণের ব্যাপারে কিছু করণীয় নেই। অর্থাত তারা মানুষের পরিশুদ্ধি ও শিক্ষার ব্যাপারে কোনভাবেই কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে না। একজন বিচারকের মধ্যে যা আধাত্মিক চেতনা সৃষ্টি করে তা হলো তার জ্ঞান, দুই পক্ষের মধ্যে বিচারকের আসনে বসলেই আধ্যাত্মিক চেতনা সৃষ্টি হয়- প্রকৃতপক্ষে তা কিন্তু নয়। একজন মহিলাও এই নৈতিক উতকর্ষ বা সদগুণাবলি অর্জন করতে পারে। অন্য কথায় কিছু কিছু বিমূর্ত বিষয় আছে যা অর্জন করা গেলে মানুষের মধ্যে জ্ঞান, সততা, ন্যায়বোধ ও সৎকর্মশীলতার মতো আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হয়। আবার কিছু কিছু বিমূর্ত বিষয় এমন আছে যার অর্জন মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনা বিকাশে কোনভাবেই কোন প্রভাব রাখতে পারে না।

 

এই মর্মে আমরা এই বলে আমাদের আলোচনা শেষ করতে চাই যে, নৈতিক উতকর্ষ লাভের জন্য বিচারকের আসনে বসার কোন গুরুত্ব নেই। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো জ্ঞানই মানুষকে নৈতিক উতকর্ষ দান করতে পারে।