ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে ন্যানোটেকনোলজির অগ্রগতি
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ১৯, ২০১৬
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখার পাশাপাশি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ন্যানোটেকনোলজির অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০০০ সাল থেকে বিজ্ঞানের এ শাখার উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সেন্টার ফর ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি কোঅপারেশন (CITC) ২০০১ সালে ‘ন্যানোটেক পলিশি স্টাডি কমিটি’ গঠন করে। এ কমিটি ২০০১ সাল থেকে ২০০২ সাল নাগাদ ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সভা, সেমিনার এবং কর্মশালার মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০০৩ সালে ইরান ন্যানোটেকনোলজি ইনিশিয়েটিভ কাউন্সিল (INIC) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ইরানে ন্যানোটেকনোলজি নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রণীত নীতিমালার আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা জন্য যে সকল সংস্থা কাজ করছে তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
ইরান ন্যানোটেকনোলজি ইনিশিয়েটিভ কাউন্সিল (INIC)
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে INIC ন্যানোটেকনোলজি প্রসারের নিমিত্ত শিক্ষা, শিল্প খাতে গবেষণা, বিনিয়োগ এবং নীতি নির্ধারণী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে আসছে। বর্তমানে INIC বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-রাষ্ট্রপতির অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। INIC-এর সাংগঠনিক কাঠামো নিম্নরূপ :
চিত্র-১ : INIC-এর সাংগঠনিক কাঠামো
ন্যানোটেকনোলজি খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারকরণের লক্ষ্যে INIC বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যা নিম্নরূপ :
* ১০টি সদস্য দেশ নিয়ে ECO-NANO নামক আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপন;
* UNIDO-এর সহায়তায় ইরানে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ন্যানোটেকনোলজি প্রতিষ্ঠা;
* ইন্টারন্যাশনাল ন্যানোটেকনোলজি স্টান্ডার্ডাইজেশন কমিটি (ISO/TC229)-র সভায় নিয়মিত যোগদান;
* এশিয়ান ন্যানো ফোরামের সদস্যপদ লাভ।
ইরানের ন্যানোটেকনোলজি ল্যাবরেটরি নেটওয়ার্ক (INLN)
২০০৪ সালে ইরানে ন্যানোটেকনোলজি ল্যাবরেটরি নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে মৌলিক ও শিল্প গবেষকদের অবকাঠামোগত সুবিধাসহ গবেষণাগার সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ নেটওয়ার্কের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১১টি প্রদেশে মোট ৪২টি ল্যাবরেটরি কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে।
ইরান ন্যনোটেকনোলজি স্টান্ডার্ডাইজেশন কমিটি (ISIR/TC229)
২০০৬ সালে ইরানে ন্যানোটেকনোলজি স্টান্ডার্ডাইজেশন কমিটি স্থাপনের পর থেকে ১৫টি জাতীয় স্টান্ডার্ড এবং ১টি আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইরান ন্যনোটেকনোলজি সেফটি নেটওয়ার্ক (INSN)
২০১১ সালে ইরানে ন্যানোটেকনোলজি স্টান্ডার্ডাইজেশন কমিটি কর্তৃক ইরান ন্যানোসেফটি নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ২০১২ সালে INSN প্রতিষ্ঠা করা হয় যা ন্যানোটেকনোলজির নিরাপদ ব্যবহার, স্টান্ডার্ড ও নীতিমালা অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় স্থাপনা তৈরি তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
ন্যানোটেকনোলজি অগ্রাধিকার খাতসমূহ
-জ্বালানি (তেল, গ্যাস, পেট্রো-রসায়ন, সৌরকোষ)
-জনস্বাস্থ্য সেবা (রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা)
-পানি ও পরিবেশ
-নির্মাণ
ইরানের ন্যানোটেকনোলজির বর্তমান অবস্থান
ন্যানোটেকনোলজি খাতে ইরানের প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর। ২০০০ সালে ইরান বিজ্ঞান গবেষণা পত্র প্রকাশনার দিক থেকে বিশ্বে ৫৯তম স্থান দখল করে। মাত্র এক দশকে ইরান ন্যানোটেকনোলজি খাতে প্রকাশনার দিক থেকে বিশ্বে ৮ম স্থান দখল করতে সক্ষম হয় (চিত্র-২)।
চিত্র-২: ২০০০-২০১২ সাল নাগাদ ন্যানোটেকনোলজি প্রকাশনার সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বে ইরানের অবস্থান
ইরানের ন্যানোটেকনোলজি কোম্পানি
বর্তমানে ইরানে ৩৭০টিরও অধিক কোম্পানি স্বাস্থ্য, নির্মাণ, কৃষি ও প্যাকেজিং, পেট্রোলিয়াম, বস্ত্র এবং যানবাহন নির্মাণ শিল্পে ন্যানোটেকনোলজির প্রয়োগ নিয়ে কাজ করছে (চিত্র-৩)।
চিত্র-৩: ইরানে বিভিন্ন খাতে ন্যানোটেকনোলজি কোম্পানির সংখ্যা
ইরান স্বল্প সময়ে ন্যানোটেকনোলজি খাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে যা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ক্যান্সার নিরোধক ঔষধ SinaDoxosome
এই ন্যানোমেডিসিন জরায়ুর ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং মাইলেমা এবং ক্যাপোসি সারকোমাজনিত এইড্স রোগের চিকিৎসায় সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ (STM)
পরিবাহী এবং আধা-পরিবাহী ধাতব বস্তু, এমনকি ডিএনএ বা এন্টিবডির মাইক্রোগ্রাফ তৈরির জন্য এটি একটি শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্র। এটির মাধ্যমে নির্ভুল, পরিষ্কার দ্বিমাত্রিক (২উ) এবং ত্রিমাত্রিক (৩উ) ন্যানোচিত্র তৈরি করা সম্ভব।
ডিপ রিঅ্যাক্টিং আয়ন এচিং (DRIE)
এ যন্ত্রের মাধ্যমে উল্লম্ব মাইক্রো এবং ন্যানো কাঠামো তৈরি সম্ভব। এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পলিমার দ্বারা বিভিন্ন বস্তু তৈরি করা সম্ভব। বস্ত্র খাতেও এ প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেকট্রোরিস মেশিন
ব্যাপক আকারে ন্যানোফিল্টার তৈরির জন্য এ যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। ন্যানোফিল্টার বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং যানবাহন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ব্যান্ডেজ, মাস্ক, বায়োমেডিক্যাল শিল্পে স্ক্যাফোল্ড তৈরিতে এবং পানি হতে হেভি মেটাল পৃথক্করণের জন্য এ ফিল্টার ব্যবহৃত হয়।
হাই রেসুলিউশন এনিম্যাল SPECT ইমেজিং সিস্টেম
ক্ষুদ্র প্রাণীদের ওপর নব উদ্ভাবিত ঔষধের প্রতিক্রিয়া অনুধাবনের জন্য এ যন্ত্রটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। স্নায়ুরোগ, ক্যান্সার, হৃদরোগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সংক্রামক রোগের ওপর নব উদ্ভাবিত ঔষধ নিয়ে গবেষণায় এ যন্ত্র বহুল ব্যবহারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
আয়ন মোবিলিটি স্পেক্ট্রোস্কোপি (IMS)
ক্ষুদ্রায়তনের রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য এ যন্ত্রটি বিশেষ উপযোগী। এ যন্ত্রের মাধ্যমে বিস্ফোরক দ্রব্য, ঔষধ, ব্লাড প্লাজমা, লালা, রুটি, চুয়িং গাম, গোশত, বড়ি, সিরাপ ইত্যাদিতে রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি নির্ণয় সম্ভব।
প্লাজমা এনহেন্সড কেমিক্যাল ভেপার ডিপোজিশন (PECVD)
কার্বন ন্যানো স্ট্রাকচার, কার্বন ন্যানো টিউব তৈরি এবং ন্যানো ফেব্রিকেশন-এর জন্য এটি একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র।
স্পাটারিং অ্যান্ড এচিং সিস্টেম
সেমিকন্ডাক্টর, কমপেক্ট ডিস্ক মেটালাইজেশন, ডাইইলেকট্রিক, অরগানিকস, পলিমারস, এলইডি, সৌরকোষ তৈরিতে এ যন্ত্র ব্যবহৃত হয়।
প্লাজমা অ্যাসিসটেড কেমিক্যাল ভেপার ডিপোজিশন (PECVD)
ধাতব বস্তুর স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য এ যন্ত্রের মাধ্যমে সূক্ষ্ম প্রলেপ প্রদান করা যায়।
বহনযোগ্য ন্যানোফিলট্রেশনের যন্ত্রের মাধ্যমে পানি উৎপাদন
২০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন একটি পাত্র যা জলাধারের পানিকে লবণমুক্ত এবং জীবাণুমুক্ত করতে সক্ষম। এ যন্ত্রের সাহায্যে এক দিনে ৬০ ঘনমিটার পানি শোধন করা সম্ভব। ইরানের মোল্লাসানি নামক শহরে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনুবাদ : ড. মো. আলতাফ হোসেন