ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পরিচিতি- (কর্মঘণ্টা, বর্ষপঞ্জি ইত্যাদি)
পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ৫, ২০১৪
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2014/08/khayam021.jpg)
চাষাবাদ
অতীতের শাসকগোষ্ঠী নিজেদেরকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে একটি প্রগতিশীল সরকার হিসাবে চিত্রিত করার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে গ্রামাঞ্চলকে অবহেলিত রেখে ইরানের শহর ও নগরাঞ্চলকে রঙিন ও জাঁকালো করে তোলার চেষ্টা করে।
সে কারণে কৃষিখাত সেই আদিম অবস্থায় রয়ে যায়। চাষাবাদে মানুষ ও পশুর ক্ষমতাই থাকে প্রধান অবলম্বন এবং কৃষি উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়নি। ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সরকার অর্থনীতিতে কৃষির অবদান গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এই খাতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু করে এবং মানব ও পশুশ্রমের স্থলে যান্ত্রিক শক্তি স্থাপন করে। এই প্রচেষ্টায় সন্দেহাতীতভাবে অসাধারণ উৎপাদন-সাফল্য অর্জিত হয়। তখন থেকে বীজ ও চারা উন্নয়ন সংস্থা এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উন্নয়ন সংস্থার মতো বিভিন্ন সংস্থা গড়ে তোলা হয়। এসবের মাধ্যমে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং উন্নততর যন্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। এ ধরনের প্রচেষ্টার একটি দিক হলো যৌথ চাষাবাদ। সমবায় সংগঠন, গ্রামীণ সমাজ কল্যাণ ও ঋণদান প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মতো রাষ্ট্রীয় সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পল্লিবাসীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিপ্লব পরবর্তীকালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, ইরানের মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ১৬.৩ ভাগ আসে কৃষিখাত থেকে এবং এতে দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৪.৪ ভাগ লোকের কর্মসংস্থান ছিল। সেই সময় থেকে লাখ লাখ একর আবাদযোগ্য জমি দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার পূর্বে এসব জমি সামন্তবাদী ব্যবস্থার অধীনে কর্তৃত্বশালীদের অধীনে ছিল। ইরানের ঊর্বর অঞ্চলবিশিষ্ট চারটি প্রদেশ যুদ্ধাঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও এসব সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
গম, বার্লি ও চাউলের মতো খাদ্যশস্য এবং তুলা, তামাক ও চিনিবীট উৎপাদনযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য আরো প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জয়তুন, তরমুজ, খরমুজ ও কমলার মতো নানা জাতের ফল এবং বাদাম, চা, মশলা ও ওষুধ তৈরির গাছ-গাছড়া ইত্যাদিকেও বাণিজ্যিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এ সবের উৎপাদনের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। কৃষিখাতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং উন্নততর সুযোগ-সুবিধার প্রবর্তন এই খাতের উন্নয়নকে দর্শনীয় করে তুলেছে।
বনায়ন
ইরানে বনায়ন কৃষিখাতের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় এক কোটি ৮৮ লাখ হেক্টর জমি বনভূমি। এই বনভূমি কেবল গুরুত্বপূর্ণ কাঠ-উৎসই নয়; বরং শিল্প ও শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য আকর্ষণীয় বিনোদন এলাকাও বটে। উপরন্তু, পানির প্রবাহ হ্রাস, বাতাসের প্রকোপকে দুর্বল, বাতাসকে পরিচ্ছন্ন এবং ভূমিধস ও হিমবাহ রোধ করে এই বনাঞ্চল মাটি, বায়ু ও পরিবেশের ওপর এক কল্যাণকর প্রভাব বজায় রাখে। এসব সুবিধার কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ বেপরোয়া বৃক্ষ কর্তন নিয়ন্ত্রণ করেছে। ইতিপূর্বে এসব বৃক্ষ বা কাঠ কয়লার আকারে বিকল্প জ্বালানি উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হতো।
তাই ব্যাপক আকারের নতুন বনায়ন নীতি গ্রহণের পাশাপাশি কাঠ বিক্রয় ও রফতানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এবং একটি সুষ্ঠু বন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
মৎস্য শিকার
ইরানে মৎস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং অভ্যন্তরীণ ভোগ ও রফতানি উভয় প্রয়োজনেই মৎস্য শিকার করা হয়। ইরানের মৎস্য শিল্প পরিচালিত হয় ‘ফিশারি অব ইরান’ নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে মৎস্য শিকার করে ‘ফিশারি অব সাউথ’। বছরে শরৎ ও শীত এই দুই মৌসুমে সাধারণত মৎস্য শিকার করা হয়। সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা হয় কাস্পিয়ান সাগর থেকে। এখানকার মাছের শতকরা ৭ ভাগই কেভিয়ার। কাস্পিয়ান সাগরে এ ছাড়াও আছে স্টারজিয়ান, ব্রীম, রুপালি মাছ, স্যামন, মুলেট, পোনা মাছ, মাগুর ও শিং মাছ, পার্চ ও রোচ। পারস্য উপসাগরে আড়াইশ’রও বেশি প্রজাতির মাছ আছে। এর মধ্যে দেড়শ’ প্রজাতির মাছ খাওয়ার যোগ্য।
ব্যবহারিক তথ্য
সময়ের পার্থক্য
তেহরানের সময় গ্রীনিচ মান সময়ের চেয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা অগ্রবর্তী। অর্থাৎ পশ্চিম ইউরোপীয় পরিব্রাজকদেরকে অবশ্যই তাঁদের ঘড়ির কাঁটাকে সাড়ে তিন ঘণ্টা এগিয়ে নিতে হবে, ব্রিটিশ সামার (গ্রীষ্ম) সময় (বিএসটি) মোতাবেক তাঁদের সময় যাই হোক না কেন।
কর্ম ঘণ্টা
সরকারি অফিস, ব্যাংক ও সরকারি সংস্থাসমূহে কাজের সময় সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা অথবা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা আড়াইটা। তবে যাদুঘর ইত্যাদির মতো প্রতিষ্ঠান কখনও কখনও বিকাল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত পুনরায় খোলা রাখা হয়। এ ছাড়া দোকান-পাট, বাজার ও বিক্রয় কেন্দ্রসমূহ খোলা রাখার সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা।
বর্ষপঞ্জি
সমগ্র মুসলিম বিশ্বে স্বীকৃত ইসলামী বর্ষপঞ্জি গণনা করা হয় [৬২২ খ্রিস্টাব্দে] মহানবী (সা.)-এর হিজরতের সময় থেকে। ইরানে দুই ধরনের বর্ষপঞ্জি গণনা করা হয়। প্রায় ৩৫৪ দিনে ১২ মাসের চান্দ্রবর্ষ আর ৩৬৫ দিনে ১২ মাসে সৌরবর্ষ। উভয় বর্ষপঞ্জিরই সূচনা ধরা হয়েছে হিজরতের (মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদীনায় গমন) সময় থেকে। তাই ইরানে প্রচলিত উভয় বর্ষপঞ্জির (চান্দ্র ও সৌর) প্রথম বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন ছিল ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুলাই।
চান্দ্রবর্ষের মাসসমূহ নিম্নরূপ : ১. মুহররম, ২. সফর, ৩. রবিউল আউয়াল, ৪. রবিউস সানী, ৫. জমাদিউল উলা, ৬. জমাদিউস সানী, ৭. রজব, ৮. শা’বান, ৯. রমযান, ১০. শাওয়াল, ১১. জিলকদ ও ১২. জিলহজ।
সচরাচর ৩০ দিনে এক মাস এবং পরবর্তী মাস ২৯ দিনে গণনা করা হয়।
ধর্মীয় উৎসবসমূহ চান্দ্রবর্ষ অনুসারে উদযাপিত হয়।
সৌর বর্ষের মাসগুলো নিম্নরূপ :
১. ফারভারদিন : ২১ মার্চ –২০ এপ্রিল,
২. উর্দিবেহেশত : ২১ এপ্রিল –২১ মে,
৩. খোরদাদ : ২২ মে – ২১ জুন,
৪. তীর : ২২ জুন – ২২ জুলাই,
৫. মোরদাদ : ২৩ জুলাই – ২২ আগস্ট,
৬. শাহরিভার : ২৩ আগস্ট –২২ সেপ্টেম্বর,
৭. মেহের : ২৩ সেপ্টেম্বর – ২২ অক্টোবর,
৮. আবান : ২৩ অক্টোবর –২১ নভেম্বর,
৯. আজার : ২২ নভেম্বর – ২১ ডিসেম্বর,
১০. দে : ২২ ডিসেম্বর – ২০ জানুয়ারি,
১১. বাহ্মান : ২১ জানুয়ারি –১৯ ফেব্রুয়ারি এবং
১২. ইসফান্দ : ২০ ফেব্রুয়ারি –২০ মার্চ।
এই সৌরবর্ষের প্রথম ছয় মাসের প্রতি মাস ৩১ দিন করে, পরবর্তী পাঁচ মাসের প্রতিমাস ৩০ দিন করে এবং শেষ মাস ২৯ দিনে। সরকারী ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় সৌর তারিখ মোতাবেক।
ইরানে চারটি ঋতু। প্রথম তিন মাস বসন্ত ঋতু ও শেষ তিনমাস শীত ঋতু। বসন্তের পরবর্তী মাস গ্রীষ্মকাল এবং গ্রীষ্মের পরবর্তী তিন মাস শরৎ-হেমন্ত।
সপ্তাহের দিন
শনিবার – শাম্বে
রবিবার –এক শাম্বে
সোমবার –দো শাম্বে
মঙ্গলবার –ছে শাম্বে
বুধবার – চার শাম্বে
বৃহস্পতিবার –পাঞ্জ শাম্বে
শুক্রবার – জোময়ে
ছুটি
জাতীয় ছুটি : ১২ ফারভারদিন (১ এপ্রিল) ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রশ্নে গণভোট দিবস, ১৫ খোরদাদ (৫ জুন) ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর গ্রেফতার দিবস, ২২ বাহবান (১১ ফেব্রুয়ারি), ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয় দিবস।
ধর্মীয় ছুটি
১৩ রজব, হযরত আলী (আ.)-এর জন্ম দিবস।
২৭ রজব, মহানবী (সা.)-এর মা’বাস (নবী হিসাবে মনোনয়ন প্রাপ্তি) দিবস।
১৫ শাবান, দ্বাদশ ইমামের জন্ম দিবস।
২১ রমযান, ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
১ শাওয়াল, ঈদুল ফিতর।
১২ শাওয়াল, ইমাম সাদিক (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
১১ জিলকদ, ইমাম রেযা (আ.)-এর জন্মদিবস।
১০ জিলহজ, ঈদুল আযহা।
১৮ জিলকদ, ঈদে গাদীর।
৯ মুহররম, তাসূয়া।
১০ মুহররম, আশুরা।
২০ সফর, আরবাইনে হোসাইন (আ.)।
২৮ সফর, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওফাত এবং ইমাম হাসান (আ.)-এর শাহাদাত দিবস।
১৭ রবিউল আউয়াল, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্ম দিবস।
প্রতি রমযান মাষের শেষ শুক্রবার : কুদ্স দিবস।
সরকারি ছুটি
১-৩ ফারভারদিন (২১-২৩ মার্চ) নওরোজ (নববর্ষ)।
১৩ ফারভারদিন (২ এপ্রিল) সিজদাহে নওরোজ।
৪ জুন : ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর মৃত্যু দিবস।
শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটি।
ফারসি ভাষায় ব্যবহৃত সংখ্যাসমূহ হচ্ছে :
۱- ১, ۲ – ২, ۳ – ৩, ۴ – ৪, ۵ – ৫, ۶ – ৬, ۷ – ৭, ۸ – ৮, ۹ – ৯
ভ্রমণকাল
ইরানে ভ্রমণের সর্বোত্তম মওসুম হচ্ছে শরৎ ও বসন্তকাল। এই ঋতুগুলোতে দিনের বেলা সূর্য সব সময় মেঘমুক্ত থাকে এবং তাপমাত্রাও থাকে সবচেয়ে ভালো : দিনের বেলা উষ্ণ আর রাতের বেলা মৃদু ঠাণ্ডা। শরৎকালে লম্বা লম্বা গাছের গুচ্ছগুলোকে পাখির সোনালি পালকের মতো মনে হয়। বসন্তকালে সেগুলো থাকে খুব কচি ও নরম। সর্বত্র ফুল প্রষ্ফুটিত হয় এবং পাহাড়ের চূড়ায় বরফ জমে থাকে। শীত মওসুমে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ছাড়া সর্বত্র তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে নেমে আসে।
গ্রীষ্মকালে অতিশয় গরম পড়ে, তবে সহনীয়। এই মওসুমে জীবনযাত্রাকে পূর্ণভাবে আরামদায়ক করার জন্য জন প্রতিষ্ঠান ও উন্নতমানের হোটেলগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। পারস্য উপসাগরের উপকূল পথে ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস। গ্রীষ্মকালের ভ্যাপসা গরম খুব অসহনীয়। কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল অঞ্চলের আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে উন্নত। সারা বছর এখানকার আবহাওয়া থাকে মৃদুমন্দ, এর সাথে থাকে এক মনোরম শুষ্কতা। এ এলাকা মালভূমির সড়কপথে মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ। এ অঞ্চলে প্রায়শঃই বৃষ্টিপাত হয়। গাছপালাসমৃদ্ধ এ অঞ্চলে সর্বদা সামুদ্রিক বাতাস প্রবাহিত হয়। সকল মওসুমে এখানে দু’টি প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় : পশমি পুলওভার এবং সানগ্লাস।