ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁচ ধাপ প্রসঙ্গে রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ১০, ২০১৬
ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস সেন্টারের সদস্যদেরকে দেয়া এক সাক্ষাতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রাহবার আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেন, ইসলামি বিপ্লবের লক্ষ্য হচ্ছে, ইসলামি সভ্যতার বাস্তবায়ন। তিনি উন্নয়ন মডেল সম্পর্কে বর্তমান বিশ্বে বিদ্যমান ভুল ও অকার্যকর মূলনীতিসমূহের কথা উল্লেখ করে নতুন প্রগতির ইসলামি ও ইরানি মডেল উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, জিহাদী ও বিপ্লবী কর্মকা-, ইসলামি উৎসসমূহ ও মাদ্রাসাসমূহের সমৃদ্ধ ও মজবুত ভিত্তিসমূহের সঠিক ব্যবহার, বিজ্ঞানের শক্তিতে বলিয়ান হওয়া প্রভৃতি হচ্ছে ইরানি ও ইসলামি মডেল প্রনয়ণের আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ।
রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইসলামি বিপ্লবী লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পাঁচটি ধাপ এবং প্রগতির মডেলের সাথে এর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটি হচ্ছে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হওয়া। এরপর সাথে সাথে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। ইমাম খোমেইনী (র.)-এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্বও ছিল ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা নতুন প্রগতি ইসলামি মডেলের তৃতীয় ধাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা এখন সেই ধাপে আছি। অর্থাৎ ইসলামি সরকার গঠন করা। তার মানে সম্পূর্ণ ইসলামি মডেল ও মানদ-ের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করা। রাহবার খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, এই ধাপটি পূর্ণ বাস্তবায়ন হওয়া ব্যতিরেকে ইসলামি সমাজ গঠনের পালা আসবে না। এমতাবস্থায় ইসলামি জীবনযাপন পদ্ধতি সমাজজীবনে আলোচনা-পর্যালোচনা পর্যায়েই থেকে যাবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ইসলামি সরকার গঠনের ব্যাপারটি যতক্ষণ না পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে ততক্ষণ ইসলামি সমাজ গঠনের পর্যায়টি আসবে না। ইসলামি বিপ্লবী লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পাঁচ ধাপের চূড়ান্ত পদক্ষেপটি হচ্ছে, ইসলামি তাহযিব-তামাদ্দুনের (সভ্যতার) বাস্তবায়ন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইসলামি সভ্যতা বলতে অন্য দেশ জয় করা বুঝায় না। বরং এর অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন জাতির ইসলামের কাছ থেকে চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিগত প্রভাব গ্রহণ করা।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেন, একটি আদর্শ ইসলামি সমাজ বিনির্মাণের ইরানি মডেল এর ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস তৈরির জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ইসলামি সভ্যতার বাস্তবায়ন। তিনি এই প্রশ্নের জবাব দেন যে, কেন দুনিয়ার বুকে বিদ্যমান ও পরীক্ষিত মডেলগুলো আমাদের জন্য কাক্সিক্ষত মডেল হতে পারবে না? রাহবার বলেন, উন্নয়নের প্রচলিত মডেলগুলো মূলনীতির দিক থেকে ভুল এবং মানবিক ও ঐশী নয় এমন নীতিমালার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর ফলাফল ও প্রতিক্রিয়ার দিক থেকেও স্বাধীনতা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা জাতীয় মূল্যবোধের ব্যাপারে যেসব ওয়াদা করেছিল, তা বাস্তবায়ন করতে পারে নি।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা বলেন, এসব মডেল যেসব দেশ অনুসরণ করছে তাদের মধ্যে কোন কোন দেশে তাদের সরকারগুলোর বিরাট অঙ্কের ঋণ, বেকারত্ব, দারিদ্র ও প্রচ- শ্রেণি বৈষম্য প্রভৃতি সূচকে যে প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করছে তা প্রচলিত এসব মডেলের অকার্যকরিতা ও ব্যর্থতার প্রমাণ। তিনি বলেন, এসব সমাজ যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রগতির অধিকারীও হয়েছে, কিন্তু তাদের অগ্রগতিগুলো সেই সমাজের গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করে নি এবং নৈতিক চরিত্র, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তায় গিয়ে শেষ হয় নি। কাজেই আমাদেরকে ইসলামি মূলনীতি ও ইরানি সংস্কৃতিনির্ভর আমাদের নিজস্ব স্থানীয় অগ্রগতির মডেলকে পরিচিত ও উপস্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রগতির মডেলের ভিত্তি অবশ্যই ইসলামি হতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে হলে গভীর ইসলামি জ্ঞান-গবেষণা, দর্শন, কালামশাস্ত্রীয় ও ফিকাহ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ তথা মাদ্রাসা ও প-িত চিন্তাবিদ মহলের সাথে লাগাতার ও মজবুত সম্পর্কের আওতায় কাজ করতে হবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস এর ক্ষেত্রে ইরানি অনুষঙ্গকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ইরান হচ্ছে এই মডেল বাস্তবায়নের ক্ষেত্র। যদি সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, দেশীয় পরিম-ল, চালচলন, আচার-ব্যবহার, রসম-রেওয়াজ, মানবিক ও প্রাকৃৃতিক পুঁজি ও সঞ্চয় প্রভৃতিকে বিবেচনায় না নেয়া হয় তাহলে প্রগতির মডেল হবে বাস্তবায়ন অযোগ্য ও অকার্যকর।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে একে গড়ে তোলার আবশ্যকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করেন।
তিনি উক্ত মডেলের বিজ্ঞানভিত্তিক বিন্যাস ও প্রনয়ণ, বিভিন্ন মতামতের মধ্যে বিতর্ক, বিশ্বের বুকে বিদ্যমান নানা মডেলের সাথে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য ও সীমারেখা নির্ণয়, আশা-আকাক্সক্ষা ও বাস্তবতাকে বিবেচনায় রাখা, মডেলটি কার্যকর উপযোগী হওয়া, বিভিন্ন বিরোধী ও প্রতিপক্ষ মতামতের মোকাবিলায় টিকে থাকার মতো বৈজ্ঞানিক ও জ্ঞানগত শক্তি ও প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রভৃতি ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস বাস্তবায়নের আবশ্যকীয় উপাদান বলে বর্ণনা করেন।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস কেন্দ্রের সদস্যদের উদ্দেশে আরো যেসব উপদেশ দান করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, মডেল নির্মাণে তাড়াহুড়া না করা, কেন্দ্রের পাঁচ বছরের কার্র্যক্রমের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা, বিশ্বের প্রচলিত উন্নয়ন মডেলগুলোর শক্তিশালী ও কার্যকর সমালোচনা করা, সিরিয়াস হয়ে জিহাদী মনোভাব নিয়ে বিপ্লবী চেতনায় কাজ করা এবং তরুণ, উন্নত চিন্তার অধিকারী, মজবুত ঈমানদার ও বিপ্লবীদের নিরবচ্ছিন্ন কাজ আর দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ও সর্বমহলে পর্যালোচনাভিত্তিক কার্য সম্পাদন ।
হযরত আযাতুল্লাহ খামেনেয়ী মডেলটি সর্বস্তরে আলোচ্য বিষয়ে পরিণত করার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাকে আলোচনা-পর্যালোচনার এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে, যাতে তা তরুণদের মন-মগজে বিরাজমান অর্থাৎ দেশ পরিচালনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সার্বক্ষণিক ধ্যান ধারণায় রূপান্তরিত হয়।
মহামান্য রাহবারের ভাষণের পূর্বে ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস এর সর্বোচ্চ পরিষদের চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েজ যাদে কেন্দ্রের কর্মকা- ও ইসলামিক ইরানিয়ান মডেল অব প্রগ্রেস এর কেন্দ্র ও বিভিন্ন ধাপের গৃহীত কর্মসূচি ও তৎপরতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট তুলে ধরেন।