শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের নারীদের অর্জন

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২, ২০২২ 

news-image

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে ইরানের নারীরা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ‘কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা’, মিডিয়া, খেলাধুলা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ‘পরিবেশ, জলবায়ু ও সংকট’- এই ৭টি ক্ষেত্রে নারীদের এমন সব অর্জনের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির মহিলা বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্সি।শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের সদস্যদের মধ্যে দেশটির নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬ শতাংশ বেড়েছে।এছাড়াও, নারী ও মেয়েদের মধ্যে নিরক্ষরতা প্রায় নির্মূল হয়েছে। কারণ, সাক্ষরতার হার বর্তমানে ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছাত্রীর অনুপাত ২৮ শতাংশ বেড়েছে।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসলামি বিপ্লবের পর গত ইরানি ক্যালেন্ডার বছর পর্যন্ত (মার্চ ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২) দেশটিতে সাড়ে নয় হাজারের বেশি নারী লেখক এবং ৮৪০ জন নারী প্রকাশক সক্রিয় ছিলেন। ৯৫ শতাংশেরও বেশি সন্তান জন্ম হয়েছে প্রসূতি এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে। দেশে প্রতি লাখ নারীর জন্য ৬০ জন মিডওয়াইফ এবং ২ দশমিক ৮ জন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।এছাড়াও, ইসলামি বিপ্লবের পর নারী ক্ষেত্রের অর্জন ও অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে, শহরের শতভাগ বাসিন্দা এবং গ্রাম ও যাযাবরদের ৯৯ শতাংশ বাসিন্দার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন করা। ফলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে মৃত্যুর সর্বনিম্ন হারের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বে দশম স্থানে রয়েছে ইরান। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রতি লাখে মৃত্যু হার কমেছে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ২ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছেকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে ৪ হাজার ২০০ জন গ্রামীণ নারীর ঋণ তহবিল রয়েছে। এছাড়াও, ২ হাজার ৩৯০ জন নারী জ্ঞান-ভিত্তিক সংস্থাগুলির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেন।চার দশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে, পরিবারের নারী প্রধানদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বিমা কভারেজ নিশ্চিত করা, নারীদের বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭ শতাংশে হ্রাস করা, নারী নিয়োগকর্তাদের কর্মজীবী মহিলাদের ১ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা, টেকসই ব্যবসায়িক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদে নারীদের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করা এবং নারী, গ্রামবাসী এবং যাযাবরদেরকে কেন্দ্র করে জাতীয় কর্মসংস্থান, ক্ষমতায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে নারীদের জন্য ১৬ হাজার ১১১ টি স্পোর্টস ক্লাব রয়েছে এবং সাম্প্রতিক বিশ্ব ইভেন্টে নারী ক্রীড়াবিদরা ৩ হাজার ৩০২টি পদক জিতেছেন।এছাড়া প্রাদেশিক পর্যায়ে ৭০ জন নারী ক্রীড়া কমিটির সভাপতি হয়েছেন এবং ৫১ জন নারী ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি ও প্রধান হয়েছেন। এছাড়াও, ৮৮ হাজার ৩৬৬ জন নারী রেফারি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ইরানের নারীরা বিশ্ব ক্রীড়া ফেডারেশনের ৯৭টি আন্তর্জাতিক আসনে কাজ করেছেন।মিডিয়ার ক্ষেত্রে, তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৫ দশমিক ৩১ শতাংশে পৌঁছেছে, ৯০৩ জন নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা সিনেমা ক্ষেত্রে কাজ করেছেন এবং ২ হাজার জন নারী বিশেষজ্ঞ পর্দার আড়ালে কাজ করেছেন।এছাড়াও, ইসলামি বিপ্লবের পরে অনন্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে, দেশটির নারী চলচ্চিত্র নির্মাতারা প্রসিদ্ধ বিভিন্ন উৎসবে ১১৪টি জাতীয় পুরস্কার এবং ১২৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন। ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের সরকারি ব্যবস্থাপকদের উচ্চ, মধ্যম এবং মৌলিক নির্বাহী ব্যবস্থাপনার সকল স্তরে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ নারী রয়েছেন, দেশে ১ হাজার ১২১ জন নারী বিচারক কাজ করছেন, নারীরা স্বেচ্ছায় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার হার ২২৭ শতাংশ বেড়েছে, সংসদে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।পরিবেশ, জলবায়ু এবং সংকটের ক্ষেত্রেও নারীরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। যেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-প্রধান পদের প্রায় ৪০ শতাংশই ছিল নারীদের।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ভূমিকম্প-কবলিত এলাকায় ২০ হাজার ৯১২ জন নারীর মৌলিক চাহিদা প্রদান এবং জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত ২ লাখ ৯৯ হাজার ১২০ জন নারীকে জীবিকা ভাতা প্রদান করা নারীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।ইতিহাস দেখায়, ইরানের অধ্যবসায়ী নারীরা দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়নের নির্মম পথে পদক্ষেপ নিচ্ছে। সুতরাং, উল্লিখিত অর্জনে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার প্রশংসা করা উচিত। সূত্র: তেহরান টাইমস।