ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় পারমাণবিক প্রযুক্তিবিষয়ক দ্বাদশ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির ভাষণের পূর্ণ বিবরণ
পোস্ট হয়েছে: মে ১৬, ২০১৮
পারমাণবিক অর্জনসমূহের পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে একাদশ ও দ্বাদশ সরকারের আমলে পরমাণু শিল্পে দ্রুততর ও আধিকতর সূক্ষ্ম উত্তরণ/ জাতীয় প্রযুক্তিতে আমরা পিছপা হই নি, হবও না/ আত্মমর্যাদাবোধে উজ্জীবিত তরুণ বিজ্ঞানীদের গবেষণাকর্মের জন্য কারো কাছ থেকে অনুমতি নেব না/ পারমাণবিক সমঝোতার পরে ১২০টির বেশি বড় আকারের পরমাণু অর্জন আমাদের হস্তগত হয়েছে/ পরমাণু চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, আমেরিকার সহকারে বা আমেরিকা ব্যতিরেকে পরমাণূ চুক্তির যে কোনো পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত এবং নিজস্ব পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে/ তারা যদি চুক্তি ভঙ্গ করে অবশ্যই অনুতপ্ত হবে, এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া তারা দেখতে পাবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ইরানে প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন ড. হাসান রুহানী তাঁর ভাষণে এ কথার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যে, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার নিজস্ব পথ ধরে অগ্রসর হবে। তিনি পারমাণবিক প্রযুক্তির অঙ্গনে দেশের মূল্যবান অর্জনের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে ইরানি জাতিকে সম্বোধন করে বলেন, পারমাণবিক অর্জনসমূহের পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে একাদশ ও দ্বাদশ সরকারের আমলে আমাদের পরমাণু শিল্পে দ্রুত ও অতি সূক্ষ্ম উত্তরণ ঘটেছে।
ড. হাসান রুহানি পরমাণু প্রযুক্তির জাতীয় দিবসে প্রদত্ত ভাষণে ইরানি জাতির প্রতি, বিশেষ করে দেশের বিজ্ঞানীবৃন্দ এবং শহীদ পরমাণু বিজ্ঞানীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান এবং বলেন, পরমাণু বিজ্ঞানীরা জাতীয় গৌরবের জন্য তাঁদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারের আমলে ও জাতীয় জীবনের ধাপে ধাপে পরমাণু প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য যাঁরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি মোবারকবাদ জানান।
ড. রুহানি বলেন, আমি পরিষ্কার ভাষায় এবং অতি স্পষ্ট ও স্বচ্ছতার সাথে মহান ইরানি জাতির উদ্দেশে ঘোষণা করতে চাই যে, আমাদের পরামাণু প্রযুক্তি অতীতের দিনগুলোর তুলনায় অধিক শক্তি সহকারে, আরো সূক্ষ্ম হিসাব নিকাশের ভিত্তিতে এবং অধিকতর গতিশীলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা পারমাণবিক খাতে গত বছর ৪৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। তার অর্জনগুলোও আমরা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। এ বছর ৮৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি এ কথার প্রমাণ যে, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির পথে আমরা আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি এবং ভবিষ্যতেও রাখব।
প্রেসিডেন্ট স্মরণ করিয়ে দেন, এটি সরকার ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের দায়িত্ব যে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, আজকের দিনে আমাদের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা জ্ঞানভিত্তিক, আমাদের শ্রম ও উপার্জনও ক্রমান্বয়ে জ্ঞানভিত্তিক হয়ে যাবে। তিন হাজারের অধিক জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি বিগত কয়েক বছরে তাদের কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রচুর আয় করছে। আমাদের গবেষণা কেন্দ্রসমূহ, জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি ও প্রজেক্টগুলো প্রশংসনীয়ভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা এবং দেশকে শক্তিশালী করার পথে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ড, রুহানি বলেন, আমাদের মানে রাখতে হবে, আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে বৈধ শক্তিমত্তা ও সক্ষমতা অর্থাৎ জাতীয় কর্তৃত্ব অর্জন করা। আমরা দেশ ও সমাজের জন্য বৈধ ও উপকারী শক্তিমত্তা ও সক্ষমতা চাই। যে শক্তিমত্তার ভিত্তি ক্ষমতার দাপট, হুমকি-ধমকি ও আগ্রাসন হবে না। বরং এমন বৈধ শক্তিমত্তা যা জাতীয় স্বার্থ, এতদঞ্চল ও বিশ^ শান্তির জন্য স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। এই জাতীয় কর্তৃত্ব অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের প্রয়োজন রয়েছে সফ্ট ও হার্ড শক্তি। এই দুটি শক্তির সমন্বয়ে আমরা আমাদের জন্য স্মার্র্ট শক্তি নির্মাণ করতে সক্ষম হব।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট তাঁর ভাষণে আরো বলেন, আমাদের কূটনীতি ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের তৎপরতা একটি মুুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। আমরা একদিক থেকে চেষ্টা করছি, যাতে আমরা এমন পরমাণু প্রযুক্তি হস্তগত করতে পারি, যা জ্বালানি, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যরক্ষা, কৃষি, খনিজ সম্পদ, শিল্প, খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। এই পথে আমাদের প্রচেষ্টাকে লাগাতারভাবে অব্যাহত রেখেছি, যাতে এই অব্যাহত চেষ্টার পথ ধরে আমাদের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিমত্তা অর্জিত হয়। তবে অপর দিকে এই শক্তিমত্তার পাশাপাশি কূটনৈতিক শক্তিরও আমাদের প্রয়োজন রয়েছে।
ড. রুহানি তাঁর ভাষণে আরো বলেন, কূটনৈতিক শক্তি এমন শিল্প, যা আমাদের শক্তি ও অধিকারকে প্রমাণিত করে, যে অধিকারের বিষয়টিকে বিদ্বেষীরা নড়বড়ে করে দিতে অথবা আমাদের হাত থেকে কেড়ে নিতে চায়। কিংবা কোনো কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের অধিকারকে অবৈধ বলে প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। কূটনীতি আমাদের অধিকারকে সপ্রমাণিত করে এবং এ সত্যটি দেখিয়ে দেয় যে, ইরানি জাতি এমন কোনো জাতি নয়, যে শুধু পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের ময়দানে অগ্রণী হয়েছে এবং দেশের প্রতিরক্ষা করতে সক্ষম, কিংবা কেবল অর্থনৈতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী ও কার্যকর ভূমিক গ্রহণ করতে পেরেছে; বরং আলোচনার টেবিলে কথা বলার মতো যথেষ্ট যুক্তি ও সাক্ষ্য-প্রমাণ তার হাতে রয়েছে এবং প্রযুক্তি, রাজনীতি ও অধিকারের বিষয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর দেশগুলোর সাথে আলোচনা করার, কথা বলার ও নিজের অধিকার প্রমাণ করার ক্ষমতা তার রয়েছে। আর এমন এক চুক্তিতে পৌঁছতে সক্ষম, যে চুক্তি জনগণের ওপর থেকে বোঝার মাত্রা কমাতে পারে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, কূটনীতি জনগণের জন্য অগ্রগতির পথ প্রস্তুত করেছে। আমাদের যাত্রাপথকে গতিশীল করে এবং আমাদের ব্যয়ভারও লাঘব করে। কূটনীতি ছাড়াও কাজ করা যায়, তবে তা হবে অনেক মূল্য পরিশোধ করে। কূটনীতি বাধা-বিপত্তিগুলো অপসারিত করে। আমাদের গতিশীলতাকে আরো দ্রুততর করে, আমাদের ব্যায়ভার লাঘব করে আর জাতীয় স্বার্থসমূহ অর্জনের পথপরিক্রমাকে সংক্ষিপ্ত করে।
ড. রুহানি আরো ব্যাখ্যা দেন যে, আমাদের সব ধরনের শক্তির প্রয়োজন। সামরিক শক্তি লাগবে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম থাকতে হবে। অর্থনৈতিক সক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক শক্তির অধিকারী হতে হবে। এতদঞ্চল ও বিশ^ব্যাপী আমাদের বৈধ শক্তিমত্তা থাকতে হবে। কিন্তু কিছুলোক কেবল মুদ্রার একটি পিঠ দেখেন। এই লোকেরা খুব সহজে মুদ্রার অপর পিঠটিও দেখে নিতে পরেন। তবে মুদ্রার পেছন দিকটা দেখার সাহস তাঁদের নেই। তাঁরা কেবলই মুদ্রার ওপরের পিঠটা দেখেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, কিছুসংখ্যক লোক চায় যে, আমরা আত্মসমর্পিত ও অনুগত হয়ে থাকি। তিনি বলেন, কিছুসংখ্যক লোক যাদের মধ্যে হয়ত আমাদের দুশমনরাও শামিল রয়েছে, তারা চায় যে, আমাদের অধিকার ও দাবি আমরা ছেড়ে দেই। কিন্তু আমরা কিছুতেই কোনো অবস্থাতেই আমাদের অমঙ্গল চায় এমন লোকদের খুশি করা ও সন্তুষ্ট করার চিন্তায় ছিলাম না, এখনো নেই।
ড. রুহানি আরো বলেন, আমাদের কাছে সর্বপ্রথমে আল্লাহর রেযামন্দি, তার পরে ইরানি জাতির সন্তুষ্টির গুরুত্ব রয়েছে। আমরা দুনিয়ার সকল জাতির জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করি এবং তাদেরকে সাহায্য করব। যেমনটি গোটা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা বিভিন্ন জাতির প্রতি সহায়তার মনোভাব নিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। সন্ত্রাসবাদ এবং যারা এসব সন্ত্রাসীদের প্রতিপালন করেছে, যারা এতদঞ্চলে এসব সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের রাস্তায় ব্যবহার করতে চেয়েছে তাদের মেরুদ- আমরা ভেঙ্গে দিয়েছি।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, এ কথা জানাই আছে যে, দুশমন আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। আমাদের সমাজে যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকে বড় করে দেখায়। তারা মনে করে যে, আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের হাতে কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমরা আমাদের গতকালের ও আজকের সব সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমস্যা ও সংকট উত্তরণের কর্মপন্থা আমাদের হাতে আছে এবং তার জন্য আমাদের পরিকল্পনা করা আছে। সবাই জেনে রাখুক যে, আমাদের দেশে যে কোনো সমস্যাই সৃষ্টি হোক আমাদের জাতি সে সমস্যার চেয়ে অনেক বড় এবং মহান আল্লাহর ক্ষমতা ও শক্তি সীমাহীন ও অনন্ত।
ড. হাসান রুহানি এ কথার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যে, আমাদের নির্ভরতা আল্লাহর প্রতি। আমরা আমাদের ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত জাতির প্রতি আস্থাভাজন। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে ইরানি জাতির শত্রু ও হিংসুকরা দুনিয়ার সামনে এরূপ দেখাতে চেয়েছিল যে, ইরান অবৈধ ও অন্যায় লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় রয়েছে। আর ইরানি জাতি ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের চিন্তা ও কাজের মধ্যে দূরত্ব আছে। তারা চেয়েছিল তাদের অন্যায় অন্যায্য প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে এই দেশ ও জাতিকে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি করে রাখবে। অন্যায় অমানবিক ও ভুল অবরোধ আরোপ করে আমাদের জাতিকে চাপের মধ্যে কোণঠাসা করে রাখবে।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, তারা মনে করেছিল যে, যদি আলোচনার টেবিলের এক পাশে ছয়টি পরাশক্তি থাকে তাহলে আমাদের বক্তব্য প্রমাণিত করার শক্তি আমাদের থাকবে না এবং তারা তাদের অবরোধ অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। ড. রুহানি বলেন, আমাদের আত্মত্যাগী প্রাণ-উৎসর্গী তরুণ বিজ্ঞানীরা দেশের বিজ্ঞান ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে বিরাট রকমের অর্জন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, পরমাণু চুক্তি সম্পাদনের পর বিগত দুই বছরের মধ্যে পরমাণু খাতে আমরা ১২০ এর অধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হস্তগত করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রেসিডেন্ট ড. রুহানি আরো বলেন, পরমাণু চুক্তি আমাদের গতিকে শিথিল করে না; বরং আমরা পরমাণু চুক্তির মাধ্যমে অন্যদের সাথে আমাদের সহযোগিতার সম্ভাবনাকেও কজে লাগাতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে বহু প্রজেক্টে কতক ইউরোপীয় দেশ, রাশিয়া ও চীনের সাথে ভালো সহযোগিতার সম্পর্ক আমাদের রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, অন্যান্য দেশের সাথে পরমাণু সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা নতুন পথ আরম্ভ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমানে বুশেহরে রিঅ্যাক্টর স্থাপনের ব্যাপারে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি। এই কাজ সামনে অগ্রসর হবে।
ড. রুহানি বলেন, আমরা প্রযুক্তি হস্তগত করার ক্ষেত্রে পিছপা হই নি এবং হবও না। তিনি বলেন, ইরানি জাতির জেনে রাখা উচিত যে, দেশের আত্মমর্যাদাশীল যুবকরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্জন হস্তগত করার জন্য এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে রাজি নয়।
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, প্রযুক্তিও গবেষণার জন্য আমরা কারো কাছ থেকে অনুমতি নেব না। তবে সবার সাথে সহযোগিতা ও লেনদেন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, শুরু থেকেই বর্তমান সরকারের কর্মনীতির একটি ভিত্তি ছিল বিশে^র সাথে গঠনমূলক বোঝাপড়া ও লেনদেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বিগত বছরগুলোতে পরমাণু শিল্পের অঙ্গনে যারাই অবদান রেখেছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতির জন্যে আমাদের পরমাণু প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। কেননা, পরমাণু প্রযুক্তি হচ্ছে প্রাগ্রসর বিজ্ঞানের অংশবিশেষ। একই সময়ে আমরা যেহেতু প্রগতি অর্জন করতে চাই সেহেতু বিশে^র সাথে গঠনমূলক সহযোগিতাকে আমাদের কর্মসূচির আওতায় রাখব।
প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর বক্তৃতায় আরো বলেন, আজকের দিনে আমরা বিশ্ব জনমতের কাছে একটি নতুন অর্জন হস্তগত করতে সক্ষম হয়েছি। আর তা হলো, আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমরা নিজেদের প্রতিজ্ঞার প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল। আমরা এমন এক জাতি, যাদেরকে আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি এ কথা শিক্ষা দিয়েছে যে, কারো সাথে যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছি তাহলে সেই প্রতিশ্রুতির প্রথম ভঙ্গকারী আমরা হব না।
ড. রুহানি আরো বলেন, পরমাণু চুক্তির পর গত দুই বছরে বহু উস্কানিমূলক তৎপরতা সংঘটিত হয়েছে। যাতে আমরা নিজেরাই পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করি। কিন্তু এটি ছিল তাদের বোকামি। তারা জানত না যে, ইরানি জাতি এর চেয়ে অনেক বিচক্ষণ ও অধিকতর জাগ্রত।
প্রেসিডেন্ট রুহানি ইরানি জাতির শত্রুদের লক্ষ্য করে বলেন, যদি তোমরা চুক্তি ভঙ্গ করতে চাও, তাহলে তার মূল্য তোমাদেরকেই পরিশোধ করতে হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, এ পর্যন্ত ১৫ মাস অতিক্রান্ত হল যে, আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট বহু দাবি ও বুলি উচ্চারণ করেছেন। তাঁর কথাবার্তা ও কাজের মধ্যে উত্থান-পতন অনেক কিছু লক্ষ্য করা যায়। তিনি পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য ছুতা খুঁজছেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি এ সম্পর্কে বলেন, ১৫ মাস গত হওয়ার পর তাঁরা বলছেন যে, আমরা বুঝতে পেরেছি, এই পরমাণু চুক্তি আমাদের জন্য লাভজনক নয়। তবে তাঁদের এই দাবি যথার্থ ও সঠিক নয়। কেননা, শুরু থেকেই দুই পক্ষই লাভবান হওয়ার এবং হার বা হারার নীতির পেছনে ছিলাম।
প্রেসিডেন্ট বলেন, পরমাণু চুক্তির দালানটি এতখানি মজবুত ছিল যে, গত ১৫ মাসে নানা মাত্রায় যত রকমের চাপ তার ওপর পড়েছে, এই দালান তার মোকাবিলায় প্রতিরোধ দেখিয়েছে। এটি এমন একটি বিষয়, যেটি ইরানি জাতির প্রতিনিধিরা বিশ^ পরাশক্তিগুলোর সাথে আলোচনার টেবিলে সবসময় বিবেচনায় রেখেছিল।
ড. রুহানি বলেন, দুশমনরা কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে, যাতে পরমাণু চুক্তির দেয়ালটি ভাঙা যায়। এ ব্যাপারে বহু টুইট তারা প্রচার করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত এই লক্ষ্যে পৌঁছতে তারা সক্ষম হয় নি। যদি কোনোদিন পরমাণু চুক্তি ভেঙ্গে যায় সেদিন আমরা যেহেতু চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল জাতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছি সেহেতু আমরাই জয়ী হব। তারা যদি পশ্চাদপসরণ করে তাহলে তা প্রমাণ করবে যে, চুক্তি ও প্রতিজ্ঞার প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিশীল নয়। তারাই বিশ^ সভায় নিজেদের মান সম্মান হারাবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, পরমাণু চুক্তির সকল অবস্থার জন্য আমরা চিন্তা করে রেখেছি এবং তার জন্য পরিকল্পনা আমাদের আছে। চুক্তিতে যদি কোনো রকম আঘাত আসে তাহলে জাতির জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তিগত প্রয়োজনের জন্য কোনো রকম সমস্যা হবে না। প্রেসিডেন্ট রুহানী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, পরমাণু চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, আমেরিকা সহকারে বা আমেরিকা ব্যতিরেকে পরমাণু চুক্তির আমরা সকল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি এবং আমাদের হাতে পরিকল্পনা রয়েছে। তারা মনে করে যে, প্রচার-প্রপাগান্ডার মাধ্যমে ইরানি জাতিকে স্বাধীনতা, মুক্তি ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব-এর ব্যাপারে অনুতপ্ত করতে পারবে। কিন্তু এই জাতি কোনো অবস্থাতেই বিপ্লবের পথ ও সত্য-ন্যায়ের রাস্তা হতে বিরত হবে না।
ড. রুহানি জোর দিয়ে বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কোনো অবস্থাতেই প্রথম চুক্তি ভঙ্গকারী হবে না। তবে এই জাতির শত্রুদের এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এমন কাজ করে তারা অবশ্যই অনুতপ্ত হবে। তারা দেখতে পাবে যে, এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তার ফলাফল ও প্রভাব প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
ড. রুহানি বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে ইরানের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হবে। তিনি বলেন, যাঁরা উল্টা-পাল্টা কথা বলেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন যে, এ জাতীয় কথার মধ্যে তাঁদের জন্য কোনো সুফল নেই। কেননা, ইরানি জাতি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আমেরিকায় বহু সরকার দেখেছে। বর্তমান সরকারও তাদেরই একটি।
আমেরিকার প্রচার-প্রচাগান্ডা ও স্লোগানের প্রতি প্রলুব্ধ কোনো কোনো সরকারকে উদ্দেশ্য করে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, এ রকম একটি সরকারের প্রতি মোটেও আস্থাশীল হবেন না। বরং আপন জাতি ও এতদঞ্চলের জাতিগুলোর প্রতি আস্থাশীল হোন।
তিনি বলেন, আমরা একটি বড় জাতি, আমরা সব সময় নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য। দেশের প্রতিরক্ষার জন্য যত ধরনের অস্ত্রের প্রয়োজন হবে আমরা তা বানাব। যাতে এই অশান্ত অঞ্চলে আমাদের শান্তি নিশ্চিত করতে পারি।
প্রসিডেন্ট রুহানি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের অস্ত্র তার প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে এবং কোনো দেশে আগ্রাসনের জন্য নয়। তিনি বলেন, আমাদের কামনা হলো, এতদঞ্চলের সকল জাতি যেন একত্রে পরস্পরের পাশে থাকে। তাদের সমস্যাবলির যাতে নিজেরাই সমাধান করে।
ড. রুহানি বলেন, ইরানি জাতির যাত্রাপথ রচিত হয়েছে দেশের জাতীয় সংহতি, কল্যাণচিন্তা ও নিরাপত্তার নিরিখে। আমরা নিশ্চিত যে, ভবিষ্যতে আমাদের পারমাণবিক অর্জন হবে অধিকতর, বিশ^ জনমতের কাছে ইরানি জাতির মর্যাদা হবে উন্নত এবং প্রগতির পথে ইরানি জাতি অধিকতর মজবুত ও প্রাগ্রসরভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, ইরানি জাতি অবশ্যই তাদের সমস্যা ও সংকট অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, আমাদের জ্ঞানী, মনীষী ও বিজ্ঞানীদের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা জাতীয় স্বার্থের বাস্তবায়ন ও দেশের উন্নতি অগ্রগতির পথে নিবেদিত। প্রযুক্তিগত উন্নতি ও উন্নয়ন বলতে যা বুঝায় তা এমন জিনিস, যার জন্য ইরানি জাতি তার যাত্রাপথ অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।