ইসফাহানের জামে মসজিদ, ইসলামী স্থাপত্যকলার এক অপূর্ব নিদর্শন
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৮, ২০১৫

ইসফাহান শহরকে যদি একটি আংটির সাথে তুলনা করা হয় তাহলে জামে মসজিদকে আংটির মাঝখানে মূল্যবান মণি-মুক্তা বলা যায়।
ইরানের অতি প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম হলো ইসফাহানের জামে মসজিদ। ঠিক কখন এই মসজিদের প্রতিষ্ঠা সে সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে অনুমান করা হয়, পঞ্চম হিজরির আগেও এ মসজিদের অস্তিত্ব ছিল।
ইসফাহান শহরের পুরানো অংশ সাবজে ময়দানে (সবুজ ময়দান) এই ঐতিহাসিক মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটির প্রত্নতাত্ত্বিক খননকালে বেশ কিছু প্রাচীন দলিলের সন্ধান পাওয়া যায়। এ সকল দলিল দায়লামী, সেলজুক, মোঙ্গল এবং সাফাভী আমলের।
মসজিদটি দেখলেই দর্শকের দৃষ্টিতে ভেসে উঠবে ইসলামী ইতিহাসের বিভিন্ন স্মৃতি। মসজিদটিকে ইসলামের বিভিন্ন যুগের স্থাপত্য রীতির সমন্বিত এক অপরূপ নিদর্শন বলা যায়।
মসজিদটির আটটি প্রবেশ পথ রয়েছে। সবেচেয়ে পুরানো প্রবেশ পথটি হাতেফ সড়কের দিকে মুখ করে। এই পথটির স্থাপত্য শৈলীর অসাধারণ কারুকাজ দর্শক মাত্রকেই মুগ্ধ করে। প্রবেশ পথের ডান পাশে ছোট ছোট প্লাটফর্ম রয়েছে। এগুলো চতুর্থ হিজরিতে দায়লামী যুগে তৈরি। বাম পাশের স্তম্ভ শ্রেণি সেলজুক আমলের স্থাপত্য রীতিতে তৈরি। মসজিদের উঠানের দক্ষিণ পাশে যে সুদৃশ্য গম্বুজটি রয়েছে সেটার নাম ‘খাজা নিজামুল মুল্ক গম্বুজ’। সেলজুক সুলতান মালিক শাহের উজির নিযামুল মুল্ক এটি নির্মাণ করেন পঞ্চম হিজরিতে। এই গম্বুজের পার্শ্ববর্তী যেসব স্তম্ভ রয়েছে সেগুলোও সেলজুক আমলের। তবে দক্ষিণ পশ্চিম পাশের স্তম্ভটি শাহ আব্বাস সাফাভীর আমলে তৈরি।
মসজিদের দক্ষিণ সিঁড়ির নাম ‘সুফফেহ সাহেব’ যা ৬ষ্ঠ হিজরির স্মৃতি বহন করছে। তবে এর ভেতরে এবং বাইরের যে সুন্দর কারুকাজ তা সাফাভী আমলে সম্পন্ন হয়েছে। এই সিঁড়িসংলগ্ন সুদৃশ্য মিনারগুলো সংযোজন করা হয়েছে ‘হাসান বেগের সময়ে’। উঠানের চারপাশে মসজিদের দেয়ালের কারুকাজ করেন হাসান বেগ তুর্কমান।
মসজিদের পূর্ব সিঁড়ির নাম ‘সুফফেহ শাগেরদ’। এটি ৬ষ্ঠ হিজরিতে সেলজুক আমলে তৈরি। আরেকটি সিঁড়ি ‘সুফফেহ ওমর’ কুতুবউদ্দিন মাহমুদ শাহের আমলে তৈরি। তিনি আল মোজাফফর বংশের নৃপতি ছিলেন। আশরাফ আফগানের শাসনামলে এই সিঁড়িটির সংস্কার করা হয়।
মসজিদের পশ্চিম সিঁড়ির নাম ‘সুফফেহ ওসতাদ’। এটিও ৬ষ্ঠ হিজরিতে নির্মিত। এর সিরামিক টাইলের কাজগুলো সাফাভী বংশের শাহ সুলতান হোসাইনের আমলে সম্পন্ন হয়। পশ্চিম সিঁড়ির উত্তর পাশে একটি ছোট মসজিদ রয়েছে। এটি তৈরি করেছিলেন মোঙ্গল শাসক ওলজাইতু। এ মসজিদের মিম্বর এবং কারুকাজ ৭১০ হিজরিতে সম্পন্ন হয়।
মসজিদের উত্তর পাশের সিঁড়ি ‘সুফফেহ দরবেশ’ও ৬ষ্ঠ হিজরিতে তৈরি। এর অভ্যন্তরে প্লাস্টারের কাজ ও নকশা সাফাভী সুলতান শাহ সুলায়মানের আমলে সম্পন্ন হয়। এর বাইরের টাইলে অলংকরণ হয় অনেক পরে ১৩৩৬/১৩৩৭ হিজরিতে।
উত্তর সিঁড়ির পার্শ্ববর্তী এবং এর উত্তরাংশে যে স্তম্ভগুলো রয়েছে তাও ৬ষ্ঠ হিজরির।
তবে ইসফাহান জামে মসজিদের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক যে নিদর্শন তা হলো এর সুদৃশ্য তাজউল মূল্ক গম্বুজ। সেলজুক আমলের স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন এই গম্বুজটি। প্রতি বছর ইরানে হাজার হাজার পর্যটক ইসফাহানের জুমআ মসজিদও পরিদর্শনে এসে থাকেন। হাজার বছরের বিবর্তনে এই মসজিদ হয়ে উঠেছে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি ইরানের পর্যটন শিল্পের জন্য হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন পর্যটক ইরান ভ্রমণে গেলে এ রকম আরো অসংখ্য অপূর্ব স্থাপত্যকলার নিদর্শন দেখতে পাবেন এবং মুগ্ধ হবেন।