শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইরান পরিচিতি : তাবরীয

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ১৪, ২০১৬ 

– কামাল মাহমুদ
ইরানের একটি জনবহুল শহরের নাম তাবরীয। ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরীয। এ নগরীর ইতিহাস ৪৫০০ বছরেরও বেশি। ইরানের অন্যতম পরিচ্ছন্ন নগরীর সুনাম কুড়িয়েছে তাবরীয। এর অবস্থান তেহরান থেকে ৬১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে; সমুদ্র সমতল থেকে ১৩৫০ মিটার উচ্চতায় এবং শাহান্দ পর্বতের উপত্যকায় অবস্থিত। এর পূর্ব দিকে তুরস্কের সাথে ৩১০ কিলোমিটার সীমান্ত এবং দক্ষিণে ১৫৯ কিলোমিটার আজারবাইজান সীমান্ত। সড়ক পথে তুরস্ক, ইউরোপ ও মস্কোর সাথে যাতায়াত রয়েছে। তেহরান, ইস্তাম্বুল ও অন্যান্য শহর থেকে আকাশ পথে তাবরীযের সাথে যোগাযোগ রয়েছে।
১২৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইলখানী আমলে তাবরীয রাজধানী হবার গৌরব লাভ করে। ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দে গাযান খানের সময় রাজধানী হিসেবে তাবরীয এর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কারা কায়ানলু (১৩৭৫-১৪৬৮ খ্রি.) এবং পরবর্তীকালে এ কে কায়ানলু (১৪৬৮-১৫০১ খ্রি.) এর সময়কাল পর্যন্ত তাবরীয ইরানের রাজধানী হিসেবে পরিগণিত ছিল। সর্বশেষ সাফাভী আমলে পারস্য শাসকদের রাজধানী ছিল তাবরীয। যার সময়কাল ছিল ১৫০১ থেকে ১৫৫৫ খ্রি. পর্যন্ত। বর্তমানে এটি ইরানের একটি বিখ্যাত শহর হিসেবেই বিশ্ববাসীর কাছে সুপরিচিত।

এক নজরে তাবরীয
দেশ : ইরান
প্রদেশ : পূর্ব আজারবাইজান
নগর এলাকা : ১৯০ বর্গকিলোমিটার
শহর এলাকা : ২৩৫৬ বর্গকিলোমিটার
পর্বতমালা : ১৩৫১ মিটার (৪৪৩৩ ফুট)
জনসংখ্যা : ৩০৫০২৪১ (২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী)
ঘনবসতি : ইরানে ৫ম স্থান
উপনাম : তাবরিযীয়ান, তাবরিযী, তাবরিযলী
পোস্ট কোড : ৫১৩৬৮
এরিয়া কোড : ০৪১

আবহাওয়া : তাবরীয এর আবহাওয়া বিভিন্ন প্রকৃতির। গরমে এখানকার আবহাওয়া সহনীয়। শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। শীতকালে প্রচুর পরিমাণে বরফ পড়ে। এখানকার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় ৩৮০ মি.মি.। এখানে চারটি ঋতু দৃশ্যমান। গ্রীষ্ম, শরৎ, বসন্ত ও শীতকাল। বসন্তকালে এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত চমৎকার। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১২০ সে.। সাধারণভাবে তাবরীযের আবহাওয়া সম্পর্কে প্রচলিত কথা হলো এখানে ছয়মাস গরম ও ছয়মাস ঠাণ্ডা।

বায়ু দূষণ : সাম্প্রতিক সময়ে শহরে যানবাহন নিঃসৃত গ্যাস ও ধোঁয়া, কেমিক্যাল ও তৈল শোধনাগারসহ অন্যান্য কল-কারখানার কারণে তাররিজের বাতাস দূষিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে এর সূচনা হয়েছে। যদিও এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ভাষা : তাবরীযের লোকজন মূলত আজারবাইজানী ‘আজারী’ ভাষায় কথা বলে, যা কয়েক শতাব্দী ধরে প্রচলিত। ফারসিতে প্রচুর আজারি শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৯৯ সালে তাবরীয বিশ্ববিদ্যালয় ফারসির পাশাপাশি ‘আজারি’ ভাষায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসী ফারসি ভাষার সাথে সুপরিচিত। অফিসিয়াল ও পড়াশোনার মাধ্যম ফারসি ভাষা। ত্রয়োদশ শতকের একটি কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যায় যার নাম ছিল ‘সাফিনায়ে তাবরিযী’। এর ভাষা আজারি। এ ভাষার প্রসারে আব্দ আল-কাদির মারাগীকে প্রবাদ পুরুষ মনে করা হয়ে থাকে। এ ভাষায় গ্রন্থ প্রণেতাদের অন্যতম হলেন বাবা ফারজী, হুমাম তাবরিযী, মামা ইসমত তাবরিযী, মাগরেবি তাবরিযী প্রমুখ।

শিল্প-সংস্কৃতি : তাবরীয শিল্প-সংস্কৃতির উর্বর ভূমি। এখানকার সংগীতে মিশ্রভাব লক্ষণীয়। তবে ক্ল্যাসিক সংগীত দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথমত : আসুগ এবং দ্বিতীয়ত : মুগাম। যদিও পারস্যের ক্ল্যাসিক সংগীতের সাথে মুগাম এর যথেষ্ট মিল রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মুগাম মধ্যবিত্ত যুব সমাজের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আসুগ সংগীতের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। মূলত আজারি ভাষাভাষিরা এ সংগীতকে খুবই পছন্দ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ সংগীত শেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা হচ্ছে এ সংগীতকে কেন্দ্র করে।

চিত্রশিল্প : ইরানী চিত্রশিল্পের একটি ধরনকে বলা হয় তাবরিযী স্টাইল- যা ইলখানী যুগ থেকে আজ পর্যন্ত ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। চতুর্দশ শতকের গোড়ার দিকে তাবরীযে এর উৎপত্তি।  তাবরীযে মিনিয়েচার পেইন্টিং এর জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

খাবার : স্যুপ তাবরীযের বেশ জনপ্রিয় খাবার- যা বিভিন্ন প্রকার সব্জি, গাজর ও মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। তাবরীযের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারের নাম অ’বগুশত- যা মূলত ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি। সেই প্রাচীনকাল থেকে আজো তাবরীযের মানুষের প্রধান খাবার এটি। চেলো কাবাব ও ভাত তাবরীযের অধিবাসীদের অন্যতম খাবার। ইরানে তাবরীযের চেলো কাবাব খুবই বিখ্যাত। আজারবাইজানী ঐতিহ্যবাহী খাবার দোলমা- যার উপাদান হলো ডিম, ক্যাপসিকাম, টমেটো, জুচিনি, মাংসের টুকরো, পিয়াজ ও বিভিন্ন মসলা। গার্নিয়াক এক প্রকার দোলমা যা মাংস, রসুন ও অন্যান্য মসলা দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। তাবরীযের কোপ্তা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। সারা ইরানে এর সুনাম রয়েছে। এ স্পেশাল রেসিপি তৈরি করা হয় মাংস, চাল, পিয়াজ ও আরো অনেক উপাদান দিয়ে। অন্যান্য খাবারের মধ্যে রয়েছে গোবারিয়া, তাবরিযী লোভাজ, এরিস, নুগা, তাসবিহী, লতিফে, আহরি, লোভাদিয়া, লোকুম প্রভৃতি। তাবরীযের বিস্কুট ও কুকিজ খুবই উন্নতমানের।

দর্শনীয় স্থান : ৮৫৮ খ্রি., ১০৪১ খ্রি. এবং ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত বড় বড় ভূমিকম্পসহ অনেকগুলো ভূমিকম্পে তাবরীযের অনেক দর্শনীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনটির ধ্বংসাবশেষ কালের সাক্ষী হয়ে এখনো অবশিষ্ট আছে। তাবরীয দৃষ্টিনন্দন এলাকা। এখানকার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে আলীচেহ ব্রীজ, আমীর নেজাম হাউজ, কাচার মিউজিয়াম, আজারবাইজান মিউজিয়াম, বাগমা শাহ গেট, বিশ্বখ্যাত তাবরীয বাজার (যা ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে), বেহনাম হাউজ, ব্লু মসজিদ, জামে মসজিদ, বলুয়ার চিন হাউজ, তাবরীয ক্যাথলিক চার্চ, সাংবিধানিক আন্দোলন হাউজ (মাশরুতে মিউজিয়াম), আয়রন গেট মিউজিয়াম, পাহলভী ডকুমেন্ট মিউজিয়াম, পূর্ব আজারবাইজান রাজভবন, ফেরদৌসী সড়ক, গাদাকী হাউজ, ঘড়ি ব্রীজ, হায়দার যাদে হাউজ, মাদরাসায়ে আকবারিয়া, মাকবারাতুশ শোয়ারা (কবিদের মাযার), মনসুর ব্রীজ, কেরাস মিউজিয়াম, সেন্ট মেরি চার্চ, মোজার মিউজিয়াম, সৈয়দ হামযার মাযার, শাহরিয়ার সাহিত্য মিউজিয়াম, শোহাদা মসজিদ, তাবরীয ফায়ার ফিটিং টাওয়ার প্রভৃতি।

পার্ক ও বাগান : তাবরীযে ১৩২টি পার্ক আছে। ২০০৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী পার্কের আয়তন ২৫৯৫ বর্গকিলোমিটার এবং সবুজ ভূমি রয়েছে ৮৫৪৮ বর্গকিলোমিটার যা জনপ্রতি প্রায় ৫.৬ মিটার। তাবরীযের সবচেয়ে প্রাচীন পার্কের নাম ‘গোলেস্তানে বাগী’। পাহলভী আমলে এর গোড়াপত্তন হয়। বিখ্যাত পার্কসমূহের মধ্যে রয়েছে খাকানী পার্ক, গীম মাগাম, গোলেস্তান পার্ক, মাশরুতে পার্ক, সায়েব তাবরিযী পার্ক, শাম্স তাবরিযী গার্ডেন, ইনালী স্টেট ফরেস্ট পার্ক, বাগমে শাহ পার্ক প্রভৃতি।

অর্থনীতি : তাবরীয ইরানের আধুনিকতম নগরী। এখানে রয়েছে প্রচুর কল-কারখানা, মেশিন ফ্যাক্টরী, কেমিক্যাল, পেট্রেকেমিক্যাল, তেল শোধনাগার, সিমেন্ট কারখানা, আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, টেক্সটাইল, ট্যানারি, ফার্নিচারসহ নানা রকমের শিল্প প্রতিষ্ঠান। এগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রতিনিয়ত রপ্তানি হচ্ছে। তাবরীযের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাতে রয়েছে শত শত ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স। ইরান ট্রাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি তাবরীযে অবস্থিত। এছাড়া মাঝারি ও ক্ষুদ্র কল-কারখানা তো সারা শহর জুড়ে রয়েছেই। প্রাচীনকাল থেকেই তাবরীয হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। তাবরীযের হাতে বোনা কার্পেটের খ্যাতি বিশ্বময়। এছাড়া কাঠ খোদাই, সিরামিক, মোজাইক প্রভৃতির জন্য তাবরীযের সুনাম রয়েছে।

কেনাকাটা : তাবরীযের কেনাকাটার প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে সিটি সেন্টার  ও তাবরীয ট্র্যাডিশনাল বাজার, পিডেস্ট্রেইন মল, শাহনাজ স্ট্রীট এবং ফেরদৌসী স্ট্রীট প্রভৃতি। এছাড়া ছোট ও মাঝারি ধরনের শপিং মল শহরের সর্বত্রই রয়েছে। তাবরীযের অভিজাত বুটিক, জুয়েলারি প্রভৃতি খুবই জনপ্রিয়। তাবরীযে রয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টার’। যেখানে নানা ধরনের নতুন নতুন পণ্যের প্রদর্শনী সারা বছর ধরে চলতে থাকে। এর মধ্যে বিখ্যাত মেলা হচ্ছে ‘টেক্সপো’- যা ১৯৯২ সাল থেকে চালু হয়েছে।

হোটেল : তাবরীযের খ্যাতনামা হোটেলের মধ্যে তাবরীয গোলী র্পাস হোটেল, শাহরিয়ার হোটেল, হোটেল ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল আজারবাইজান, মাশহাদ গেস্ট হাউজ, র্আক হোটেল, সিনা হোটেল প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা ও গবেষণা : ইরানের প্রধান ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাবরীযে অবস্থিত। ১৯৪৭ সালে তাবরীয বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শাহান্দ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আজারবাইজান তারবিয়াত মোয়াল্লেম বিশ্ববিদ্যালয়, তাবরীয আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়, তাবরীয পায়ামে নূর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক আযাদ বিশ্ববিদ্যালয় (তাবরীয শাখা), দারভিশান হায়ার এডুকেশন ইন্সটিটিউট, নবী আকরাম ইউনিভার্সিটি কলেজ, খাজা রশিদ ইউনিভার্সিটি, তাবরীয এলমী কারবোরদি ইউনিভার্সিটি, তাবরীয টেকনোলজি কলেজ, ইমাম হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয় (তাবরীয শাখা), শহীদ বেহেশতী শিক্ষক প্রশিক্ষণ সেন্টার প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এখানকার শিক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা ৫ বছর, মাধ্যমিক শিক্ষা ৩ বছর, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ৩ বছর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এক বছর অধ্যয়ন করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ।
শত শত স্কুল ও কলেজ রয়েছে তাবরীযে। তাবরীযের বিখ্যাত স্কুলসমূহের মধ্যে রয়েছে মেমোরিয়াল স্কুল অব তাবরীয যা ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ইসলামী বিপ্লবের পরে এ স্কুলের নামকরণ করা হয় পারভীন হাই স্কুল। বর্তমানে এটি ৩টি আলাদা স্কুল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। তাবরীযের রাশিদিয়া স্কুল হচ্ছে ইরানের প্রথম স্কুল। এর প্রতিষ্ঠাতা হাজী মির্জা হোসাইন রাশিদি। বর্তমানে এটি ইরানের জাতীয় ডকুমেন্ট ও লাইব্রেরির তাবরীয শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফেরদৌসী হাই স্কুল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ওয়ালী আস্র ইসলামিক স্কুল, তালেবিয়া ইসলামিক স্কুল প্রভৃতি।
বিখ্যাত লাইব্রেরিসমূহের মধ্যে তাবরীয কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এখানে হাতে লিখিত প্রচুর পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে। এছাড়া পাবলিক লাইব্রেরির মধ্যে রয়েছে তারবিয়াত লাইব্রেরি, হেলাল আহমার লাইব্রেরি, শহীদ মোতাহ্হারী লাইব্রেরি, শাহরিয়ার লাইব্রেরি, যাকারিয়া লাইব্রেরি, ফারহাঙ্গ সারা লাইব্রেরিসহ আরো অনেক পাবলিক ও প্রাইভেট লাইব্রেরি।

যাতায়াত : তাবরীযের অধিবাসীরা সড়ক পথেই বেশি যাতায়াত করে থাকে। সড়ক পথে চলাচলের জন্য সর্বসাধারণের জন্য এখানে রয়েছে বাস-ট্যাক্সি। তাছাড়া প্রাইভেট গাড়ি, ফোনো ট্যাক্সিও রয়েছে। তেহরানের পর তাবরীয হচ্ছে দ্বিতীয় শহর যেখানে র‌্যাপিড বাস ট্রানজিট চালু আছে- যার ব্যাপ্তি ১৮ কিলোমিটার। ব্যাসেজ স্কয়ার থেকে কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন পর্যন্ত এর ৫০টি স্টেশন রয়েছে। তাবরীয-তুরস্ক-ইউরোপ রেল ব্যবস্থা চালু আছে। এটি ইরানের জাতীয় রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত। তাবরীয হলো ইরানের প্রথম শহর যেখানে ১৯৯২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। রেল স্টেশন শহরের পশ্চিম দিকে খোমেইনী স্ট্রীটের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। তাবরীয ইন্টারন্যাশনার এয়ারপোর্ট ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত।

খেলাধুলা : তাবরীযে রয়েছে অনেকগুলো ক্রীড়া কমপ্লেক্স। সবচেয়ে বড় কমপ্লেক্সের নাম ‘বাগে শোমাল’ কমপ্লেক্স। যেখানে রয়েছে ফুটবল স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল, বাস্কেটবল স্টেডিয়াম ও ভলিবল স্টেডিয়াম। অলিম্পিক ভিলেজ নামে অপর একটি বৃহদাকার দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্সও চোখে পড়ার মতো। ফুটবল তাবরীযের প্রধান খেলা। ইরানের নামকরা ৫টি ফুটবল টীম তাবরীযের। এগুলো হলো ট্রাক্টর সাযী এফসি, মেশিন সাযী এফসি, তাবরীয এফসি, শহরদারী তাবরীয এফসি এবং গোলেস্তান ফোলাদ। সাইক্লিংয়ে তাবরীযের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। ১৯৮৬ সাল থেকে এখানে নিয়মিত সাইক্লিং প্রতিযোগিতা হয়ে এসেছে। সবচেয়ে বিখ্যাত সাইক্লিং টিমের নাম ‘তাবরীয পেট্রোকেমিক্যাল সাইক্লিং টীম’। এই টীম এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করে থাকে।

মিডিয়া : তাবরীযের অন্যতম জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের নাম শাহান্দ টিভি। এখান থেকে ফারসি ও আজার ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। এছাড়া কয়েকটি কমিউনিটি টিভি চ্যানেল রয়েছে। এখানে সরকার পরিচালিত স্বতন্ত্র একটি রেডিও স্টেশন রয়েছে। এটিও ফারসি ও আজার ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করে। তাবরীয থেকে ১৪টি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন এবং ৮টি দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে থাকে।

বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ : ইরানের আধুনিকায়ন ও মুক্তির আন্দোলনে তাবরীযবাসীর অবদান অবিস্মরণীয়। এখানে শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের সম্মিলন ঘটেছে। বিখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন আহাদ হোসাইনী, গোলাম হোসাইন বিগজে খানী, ফারহাদ ফাখরুদ্দিনী, ইব্রাহিম হাতামিকিয়া, তাহমিনে মিলানী, কামাল তাবরিযী।
ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন আল্লামা তাবাতাবায়ী, আল্লামা জাফারী, জাওয়াদ তাবরিযী প্রমুখ। কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে যাঁদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন সায়েব তাবরিযী, শাম্স তাবরিযী, গোলাম হোসাইন সাঈদী, রেযা বাহরানী, আহমাদ কাসরাভী, শাহরিয়ার, মোহাম্মাদ মোসলেমী, পারভীন এতেসামী, ইরাজ মির্জা, নায়ার তাবরিযী প্রমুখ। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে যাঁদের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন বাগের খান (মাশরুতিয়াত আন্দোলনের অন্যতম নেতা), মোহাম্মাদ খিয়াবানী, মোহাম্মাদ শাহ কাচার, নাসের আল দীন কাচার, আহমদ শাহ কাচার। খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের মধ্যে যাঁদের নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় তাঁরা হলেন জাভান আলী (গ্যাস লেজারের আবিষ্কারক), মোহসেন হাসরুদী (গণিতজ্ঞ), লোতফি যাদে (গণিতজ্ঞ)
তাবরীয ইরানের ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। এখানকার কলকারখানা বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করে থাকে। খেলাধুলায় তাবরীয অনন্য। তাবরীযের পার্ক ইরানের অধিবাসী, এমনকি বিদেশীদের কাছেও অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে তাবরীযের সুনাম বিশ্বব্যাপী। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবা, যাতায়াত ব্যবস্থায় তাবরীয অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে।