মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইরান-তুরস্ক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘটতে চলেছে নাটকীয় পরিবর্তন

পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ২২, ২০১৬ 

news-image

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুস ওগ্লু ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য শুক্রবার এক সংক্ষিপ্ত সফরে তেহরান এসেছিলেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি জানিয়েছেন, তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেহরান সফরে এসে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।

গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ কয়েক ঘণ্টার জন্য আঙ্কারা সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরান ও তুরস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে খুব শিগগিরি দু’দেশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে সফর বিনিময় শুরু হবে। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুস ওগ্লু গত শুক্রবার নয়াদিল্লীতে  বলেছেন, তার ইরান সফর খুবই সফল ছিল। তিনি আরো বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীতে ইরান ও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে তুরস্কও সহযোগিতা ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে চায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও তুরস্কের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং দু’দেশের মূল্যবোধ এক ও অভিন্ন। দুই দেশেই যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন সেসবের ঊর্ধ্বে উঠে ইরান ও তুরস্কের সম্পর্কের পথ চলা অব্যাহত রয়েছে। কারণ এ দুই জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও আত্মিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে। গত ১৫ জুলাই তুরস্ক সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান হওয়ার পর দেশটির বৈধ সরকার ও জনগণের প্রতি ইরানের সমর্থন দেয়া থেকে বোঝা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে তুরস্ক ও ইরান অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তার সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ইরান ইসলামী বিপ্লবের শুরু থেকেই সব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিকে ইরান ব্যাপক গুরুত্ব দেয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশেরই অভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে এবং ইরান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বিরাজমান সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তারের পদক্ষেপ নিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে ইরান ও তুরস্কের সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে ইরানের বর্তমান সরকারের অবদান অনস্বীকার্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও তুরস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি হওয়ায় দুই দেশের কর্মকর্তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক ৩০০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।

দুঃখজনকভাবে গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা, সন্ত্রাসবাদ সমস্যা ও উগ্রবাদের বিস্তার আন্তর্জাতিক ও এ অঞ্চলের দেশগুলো পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইরান একটি স্থিতিশীল দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে এ দেশটির প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ কারণে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসনে এ অঞ্চলের দেশগুলো এমনকি পাশ্চাত্যের দেশগুলোও ইরানের ব্যাপারে অনেক আশাবাদী।

ইরান ও তুরস্কের মধ্যে বহু বিষয়ে বিশেষ করে সিরিয়া ইস্যুতে এখনো মতবিরোধ চলছে এবং এ বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করা যায়। সূত্র: পার্সটুডে