ইরানে পালিত হল জাতীয় রুমি দিবস
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ১, ২০২১
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2022/01/3566317.jpg)
ইরানে মহাকবি জালাল উদ্দিন রুমির স্মরণে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পালিত হল জাতীয় রুমি দিবস।এ উপলক্ষে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রুমিকে একজন কবি, দার্শনিক, আইনজ্ঞ, ধর্মবেত্তা ও আধ্যাত্মিক গুরু মনে করা হয়।
ইরান অসংখ্য বিখ্যাত মানুষ ও কবিদের আবাসস্থল। তাদের অন্যতম জগত বিখ্যাত কবি রুমি। সবার মাঝে তিনি পরিচিত আছেন মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামে বেশি জনপ্রিয়।
সুফিবাদের আলোচনায় যে নামটি অবশ্যই উচ্চারিত হবে সেটি রুমির। তার জন্মস্থান বালখ, যা বর্তমানে আফগানিস্তান। ১২০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন, মৃত্যুবরণ করেন ১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর।
রুমি জন্মগ্রহণ করেন স্থানীয় ফারসি ভাষী মাতাপিতার কাছে, যারা মুলত বালখ্ এর বাসিন্দা যা বর্তমানে আফগানিস্তান। তিনি হয় ওয়ালখ্স যা বৃহৎ বালখ্ সম্রাজ্যের বালখ্স নদীর কাছে একটি গ্রাম যেটি বর্তমানে তাজাকিস্তান, অথবা তিনি বালখ্ শহরে বর্তমান আফগানিস্তান এ জন্মগ্রহণ করেন।
রুমির শিক্ষার সাধারণ বিষয়বস্তু ছিল অন্যান্য ফারসি সাহিত্যের মরমি এবং সুফী কবিদের মত তাওহিদ শিক্ষা। তাঁর কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন শ্রেণীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” এবং “বেস্ট সেলিং পয়েট” বলা হয়। রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফারসি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রীক ভাষায়ও রচনা করেছেন। তাঁর লেখা “মসনবী” কে ফারসি ভাষায় লেখা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসাবে তুলনা করা হয়।
তাঁর কবিতা ফারসি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজান সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে।
এটা অনস্বীকার্য যে রুমি ছিলেন একজন মুসলিম পণ্ডিত এবং ইসলামকে তিনি গম্ভীরভাবে নিয়েছেন। তবুও, তার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা সম্প্রসারিত হয়েছে সীমিত সাম্প্রদায়িক সংস্পর্শে। তার একটি কবিতায়:
অন্বেষণকারীদের পথে জ্ঞানী- মূর্খ সব একই। তাঁর ভালোবাসায় পরিচিত-অপরিচিত সব একই। এগিয়ে যাও! ভালোবাসার অমৃত সুধা পান করো। সে বিশ্বাসে, মুসলিম-পৌত্তলিক সব একই।
শামস তাবরিজির সাথে যখন রুমির প্রথম সাক্ষাৎ হয় তখন রুমির বয়স মাত্র ২১ বছর। সেই সময় মাওলানা রুমিকে শিষ্য হিসেবে পছন্দ করেন তাবরিজি, কারণ বয়স কম হলেও তিনি রুমির ভেতর জ্ঞানের বিশালতা আর গভীরতা খুঁজে পান, তবে আরও একটু পরিপক্ব বয়সের আশায় তাবরিজি তখনও রুমিকে কোনোপ্রকার শিষ্যত্বের ইঙ্গিত দেননি!
অনেক বছর পর যখন মাওলানা রুমির বয়স ৪০ বছর হয়, তখন শামস তাবরিজি আবার রুমিকে খুঁজে নেন। কারণ তিনি মনে করতেন এটাই সেই বয়স যখন রুমি নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন আকাশের বিশালতায়! তার সাথে আলাপ-আলোচনায় রুমি যেন অন্য এক জগতের সন্ধান পান, যেখানে দুনিয়ার অনেক বড় বিষয়গুলো ক্ষুদ্র মনে হতে থাকে। নিজেদের আলাপে ভর করে জ্ঞানের নতুন আলোর আরও গভীরে যেতে রুমি তাবরিজিকে বাসায় নিয়ে আসেন, আলাপ-আলোচনায় জ্ঞান গ্রহণের ভেতর দিয়ে সময় কাটাতে থাকেন।
রুমির দেখানো মগ্ন হওয়ার ধারা আজও বিদ্যমান সুফি নৃত্য নামে। সুফিবাদের ইতিহাসে এটি অবশ্যই এক নতুন আলো, যে আলো দিয়ে সুফিবাদের তত্ত্ব আরও আলোকিত হয়েছে। কারণ সুফিবাদের ইতিহাসে কখনও কেউ নিজেকে ধরে রাখতে চায়নি, বরং চেয়েছে স্রষ্টার কাছে সপে দিতে। সূত্র: মেহর নিউজ এজেন্সি।