ইরানে জ্যোতির্বিদ্যা পর্যটনের অপার সম্ভাবনা
পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ২৪, ২০২০

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থিক আয়ের উৎস হিসেবে পর্যটন শিল্পের ওপর বিশ্বের দেশগুলোর নির্ভরশীলতা যে আরও বেড়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিপূর্ণ ইরানও এর বাইরে নয়। পর্যটনসমৃদ্ধ দেশটিতে যে কোনো পর্যটকের ভ্রমণ একটি স্মরণীয় ও বিশেষ ট্রিপ যে হয়ে থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্মৃতি হয়ে থাকবে অনন্য অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ এই ভ্রমণ।
যাইহোক পর্যটন শিল্পে রয়েছে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা। এর মধ্যে জ্যোতির্বিদ্যা পর্যটন অবহেলিত হয়ে আসছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। দেশটি বিপুল সংখ্যক মরুভূমির আবাসস্থল। মধ্য ইরানে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্বে ঐতিহ্যের স্বীকৃত লুত মরুভূমিসহ রয়েছে বহু নামকরা মরুভূমি।
জ্যোতির্বিদ্যা পর্যটন টেকসই পর্যটনের কম চর্চিত অংশ উপস্থাপন করে। যেখানে অন্ধকার রাত্রি একটি সহজাত সম্পদ। পর্যটনের এই শাখাটি পল্লি এলাকার টেকসই উন্নয়নে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখতে পারে।
আধুনিক জীবনে শহরগুলো কখনও নিস্তব্ধ হয় না, বায়ু দূষণ ও শিল্প ধূলা তারকাখচিত মখমল রাতের মানব অভিজ্ঞতাকে যেন বিনষ্ট করে দিয়েছে। অথচ আমাদের পূর্ব পুরুষেরা প্রশংসা করতে গিয়ে তারকা-শোভিত রাতের দৃষ্টান্ত টানতেন। আধুনিক নগরগুলোতে তারকাভরা সেই আকাশ দেখার সুযোগ খুবই বিরল। তবে বিশ্বে কিছু স্থান আছে যেগুলো এখনও মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে।
এসব স্থান কেবল তারকারাজির মিটিমিটি আলোয় আলোকিত হয়, দেখা যায় স্বচ্ছ আকাশ। তাই জ্যোতির্বিদ্যা উৎসাহীদের কাছে ইরানি মরুভূমিগুলো যেন স্বপ্নময় স্থান। আকাশপ্রেমীরা যেখানে মন মাতানো অন্ধকার রাত উপভোগ করেন।
তবে এসব স্থানের এমন সক্ষমতা পর্যটন কর্মকর্তাদের কাছে অবহেলিত হয়ে আসছে। কেননা, তারা মনে করেন পর্যটন আকর্ষণ কেবল ঐতিহাসিক নিদর্শন বা বন ও সমুদ্রের মধ্যেই সীমিত।
কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যার আগ্রহী পর্যটকরা এসব গন্তব্যকে পছন্দ করে থাকেন। তারা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারেন। সাংস্কৃতিক একটি ভ্রমণের পাশাপাশি দেশজুড়ে বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণ সেই সাথে ইরানে বসবাসরত মানুষদের সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত ভিন্নতার অভিজ্ঞতা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
জ্যোতির্বিদ্যা পর্যটনে তারা একটা অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করতে পারেন। কাচের মতো স্বচ্ছ নীল রোদেলা আকাশে একটি প্রাকৃতিক ও বন্য বেলে ভূদৃশ্য অবলোকন মন জুড়িয়ে তুলে। স্থানীয় বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী জিনিসের সাথে পরিচিত হওয়া, উটের পিঠে চড়া এবং মরুভূমের অসাধারণ নিস্তব্ধতা অন্য রকম অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
পর্যটকরা এই অসাধারণ প্রকৃতি উপভোগ করার উচ্ছাস ও আনন্দ অন্যদের সাথেও ভাগাভাগি করার সুযোগ পান। ঐতিহ্যবাহী ইরানি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে রাতের আগুন-জমায়েতে অংশ নেন এবং পুরনো কবিতা আবৃত্তি করেন এবং হরেক রকমের ঐতিহ্যবাহী ইরানি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেন। আর এসব অভিজ্ঞতা কেবল ইরানি মরুভূমিতেই লাভ করা সম্ভব।
এই পর্যটনে ভ্রমণপিপাসুদের বিশ্বখ্যাত ইরানি আতিথেয়তা নিগুঢ় ভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা যুতসই ইকো-লজে থাকার সুযোগ।
ইরান কয়েকটি পান্থনিবাসের অবাসস্থল। এসব স্থানে প্রাচীন যুগ থেকে আজ পর্যন্ত জ্যোতির্বিদ্যা পর্যটকরা ভিড় জমিয়ে থাকেন। অতিথিদের গ্রহণে এসব স্থান পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে এবং পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে নানান সুযোগ-সুবিধা।
কয়েক বছর যাবত চিলি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যটনে নজর দিয়ে এই পর্যটনে নেতৃস্থানীয় স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া কানাডা, সুইডেন, রাশিয়া, ভারত ও চীন এই শিল্পে সফলতা পেয়েছে। প্রতি বছর এসব দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু পর্যটক ঘুরতে আসেন। সূত্র: মেহর নিউজ এজেন্সি।