ইরানের হরমুজ গানের দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতিরাজ্য
পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ১২, ২০২০
ইতিহাস-ঐতিহ্য, পুরাতত্ত্ব আর সংস্কৃতির বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দেশ ইরান। এই ইরানের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দর্শনীয় অনেক নিদর্শন। পারস্য সভ্যতার দেশ হিসেবে পরিচিত ইরানকে ২০১৮ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব পর্যটন সংস্থা।
এই ইরানের পর্যটনসমৃদ্ধ অন্যতম প্রদেশ হচ্ছে হরমুজ গান। প্রদেশটির সবেচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য কেশম দ্বীপ। যার আয়তন দেড় হাজার বর্গ কিলোমিটার। পারস্য উপসাগরে অবস্থিত দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ হলো বাহরাইন। আর বাহরাইনের তুলনায় কেশ্ম দ্বীপ আড়াই গুণ বড়। হরমুজ প্রণালীর প্রান্ত জুড়ে কেশ্ম দ্বীপটি বিস্তৃত।
পঞ্চান্ন কিলোমিটার প্রস্থের হরমুজ প্রণালীটি বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জলপথ। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় পারস্য উপসাগরের উপকূলে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার জলপথ জুড়ে সেই ওমান সমুদ্রের আন্তর্জাতিক পানিসীমা পর্যন্ত প্রণালীটি বিস্তৃত।
কেশ্ম দ্বীপটি দৈর্ঘ্যে ১২০ কিলোমিটার আর প্রস্থে ১০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার। দ্বীপের সবচেয়ে উঁচু জায়গাটির উচ্চতা সাড়ে তিন শ মিটার। দ্বীপের আবহাওয়া সবসময়ই আর্দ্র থাকে। বছরের কোনো কোনো সময় বা মাসে আর্দ্রতার মাত্রা শতকরা ৯৫ ভাগে অর্থাৎ সবোর্চ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে।
নিচে অপরূপ দৃশ্যের প্রকৃতিরাজ্য কেশম দ্বীপের আকর্ষণীয় কিছু দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
ভ্যালি অব স্টার (তারকা উপত্যকা)
ভ্যালি অব স্টার কোনো সাধারণ স্থান নয়। এটা একটা বিরল প্রকৃতির একটি ভূতাত্ত্বিক প্রপঞ্চ। বারকেহ-ইয়ে খালাফ গ্রামের উত্তরে অবস্থিত তারকা উপত্যকা পারস্য উপসাগীয় কেশম দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, শতাব্দীকাল আগে সেখানে একটি তারকা খসে পড়েছিল। আর সে থেকেই জায়গাটির নাম দেয়া হয় তারকা উপত্যকা।
খারবাস গুহা
কেশম দ্বীপের ঐতিহাসিক খারবাস গুহা পাথরের পাহাড় কেটে তৈরি করা অসাধারণ একটি স্থাপত্য। এখানকার গুহাগুলোকে ঘিরে রয়েছে একাধিক ঐতিহাসিক কাঠামো। দৃষ্টিনন্দন গুহাগুলো গড়ে ওঠে পার্থিয়ান ও সাসানি আমলে।
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে ২ হাজার ৮শ বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে গুহাগুলো গড়ে ওঠে। অনেক ইতিহাসবিদ অবশ্য দাবি করেছেন, এটি তৎকালীন পানি ও সমুদ্র দেবতায় বিশ্বাসীদের একটি মন্দির ছিল।
আলি মোহাম্মাদ ভ্যালি; আবনামা উপত্যকা
কেশম দ্বীপের আরেকটি ভূতাত্ত্বিক প্রপঞ্চ হলো আলি মোহাম্মাদ উপত্যকা। কেশম দ্বীপের চাখুহ উপত্যকার নিকটে এটির অবস্থান। চাখুহ উপত্যকার চেয়েও আলি মোহাম্মাদ উপত্যকা অনেক বেশি সুন্দর। উপত্যকার দেয়ালের নজরকাড়া সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। উপত্যকার কিছু অংশ থেকে খুব সহজেই পানি চোখে পড়ে। যা দৃশ্যকে করেছে আরও মনোরম।
কসেয়ে সালাখ্
কেশম দ্বীপের আরেকটি প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় এলাকা হলো ‘কসেয়ে সালাখ্’। দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে পড়েছে এই প্রাকৃতিক নিদর্শনমূলক অঞ্চলটি। এলাকাটি মরু আঞ্চলিক, তাই শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে এখানে। লম্বায় এর আয়তন ৭ কিলোমিটার আর প্রস্থে পাঁচ কিলোমিটারের মতো। মজার ব্যাপার হলো এ এলাকায় কোনোরকম উদ্ভিদের অস্তিত্ব নেই। এখানে রয়েছে বহু টিলা। টিলাগুলোর আকার আকৃতি বহু রকমের। মরুভূমির গভীরে অনুসন্ধান চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সেখানে রয়েছে একটি ফোয়ারা। ওই ফোয়ারা থেকে গন্ধকযুক্ত পানির উদগীরণ ঘটে। তপ্ত গরম পানি যেরকম ফুটন্তরূপ ধারণ করে এই ফোয়ারার পানি দেখতে সেরকম ফুটন্ত মনে হয়।