শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইরানের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ বুটিক হোটেল

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ৭, ২০১৯ 

news-image

প্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতি আর অসংখ্য আকর্ষণীয় স্থাপত্যের লীলাভূমি ইরান। দেশটির সাত হাজার বছরের দীর্ঘ ইতহাসে গড়ে উঠেছে বিপুল সংখ্যক দর্শনীয় প্রাসাদ ও ভবন। দেশের অর্থনীতির চাকাকে চাঙ্গা করতে ঐতিহাসিক এসব স্থাপনাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইরান।

বর্তমানে আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলোর জাঁকজমকপূর্ণ কাঠামোর সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের কাজ করা হচ্ছে। যা অবদান রেখে চলেছে দেশটির অর্থনীতিতে। এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটির পর্যটন কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঐতিহাসিক ভবনগুলোকে এতিহ্যবাহী হোটেল, রেস্তোরাঁ ও লজে রূপান্তরিত করতে এগুলো হস্তান্তর করা হচ্ছে বেসরকারি মালিকানায়।

ক্রমবর্ধমান পর্যটন শিল্পের বিকাশে ইরান ‘২০২৫ ভিশন প্লান’ ঘোষণা করে। এতে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, মেরামতের জন্য প্রতি বছর ১শ প্রাচীন ভবনকে বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তর করা হবে। সে অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ১ হাজার ৮৪টি ভবন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হবে।

ইরানের এসব ঐতিহ্যবাহী হাউজের অধিকাংশের রয়েছে নিজস্ব অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যশৈলী। রয়েছে বহু সংখ্যক বেড রুম ও অন্তরঙ্গ পরিবেশ। এতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বিনিয়োগকারী ভবনগুলো মেরামতে এগিয়ে আসছেন। তারা তাদের অর্থ ব্যয় করছেন ঐতিহাসিক ভবনগুলো বুটিক হোটেলে রূপান্তরিত করার কাজে।

নিচে ইরানের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি বুটিক হোটেলের বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

সারায়ি আমেরিহা বুটিক হোটেল, কাশান

আমেরিহা হাউজ ইরানের প্রাচীন শহর কাশানের বৃহত্তম ঐতিহাসিক হাউজ। ইরানের অন্যতম বৃহৎ এই ভবনটি কাশান শহরের উপকণ্ঠে সুলতান মির আহমেদে অবস্থিত। সাড়ে নয় হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর নির্মিত পাঁচ তারকা হোটেলটিতে রয়েছে সুসজ্জিত ৮৫টি কক্ষ।

ভবনটি মূলত জিনদিয়েহ যুগে নির্মাণ করা হয় এবং পরবর্তীকালে কাজার রাজবংশের সময় এটি সংস্কার করা হয়। কাশানের গভর্নর সাহাম আল-সালতানেহ আমেরির নির্দেশে সেসময় এই কাঠামোটি নির্মাণ করা হয়।

এখানে সাবেক রাজা মোজাফফর আদ-দিন শাহ কাজারের একটি প্রখ্যাত চিত্রকর্ম রয়েছে যা আঁকা হয়েছে প্লাস্টারের সাহায্যে। সাবেক এই শাসকের ভবনটি পরিদর্শনে আসার সময় একরাতেই ওই প্লাস্টারকর্মটির কাজ সম্পন্ন করা হয়।

কাসর মনশি বুটিক হোটেল, ইসফাহান

ইরানের ইসফাহান প্রদেশের কাসর মনশি হোটেল। এটি প্রদেশের অন্যতম সেরা স্বতন্ত্র ঐতিহ্যবাহী কাঠামোর হোটেল। ১৮২০ সালে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। প্রাসাদটির মালিক ছিলেন সাবেক কাজার শাসক ফাথ আলি শাহ। ২০০৫ সালে সংস্কারের পর জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়। এটি এখন প্রদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি লজ।

প্রাসাদটির চোখ ধাঁধানো স্থাপত্য যে কোনো দর্শনার্থীকে সহজেই আকৃষ্ট করে। বিশেষ করে রঙিন কাচের জানালা ও প্লাস্টারের চিত্রকর্ম হোটেলটিকে ইসফাহানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষিত আবাসিক হোটেলে পরিণত করেছে। চার তারকা হোটেলটি ইসফাহানের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর অত্যন্ত কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত। বিশেষ করে বিখ্যাত নাকশ-ই জাহান স্কয়ারের (শাহ স্কয়ার) একেবারে নিকটে হোটেলটি অবস্থিত।

দারবে শাজদেহ, শিরাজ

এই কাঠামোটি নির্মাণ করা হয় কাজার যুগে। বর্তমানে এটিকে হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। শিরাজ শহরের অভিজাত এলাকা জান্দ ডিসট্রিকটের প্রাণকেন্দ্রে হোটেলটি অবস্থিত। এতে রয়েছে ঐতিহাসিক ও আধুনিক স্থাপত্যের এক যুতসই সংমিশ্রণ। হোটেলের অবিশ্বাস্য আঙ্গিনা শিরাজের অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভে দর্শনার্থীদের সহায়তা করে।

দারবে শাজদেহ বুটিক হোটেল থেকে শিরাজের ঐতিহাসিক স্থান ভাকিল বাজারে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা যায়। এখানকার স্টাফদের বন্ধুসুলভ আচরণ, সুস্বাদু খাবারসামগ্রী আর প্রথাগতভাবে সুসজ্জিত করা কক্ষ আপনার আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে।

হান্না বুটিক হোটেল, তেহরান

তেহরানের অন্যতম মনোরম উপকণ্ঠ লোলাগার আল্লেতে অবস্থিত হান্না বুটিক হোটেল। মজার বিষয় হলো- এখানকার ভবনগুলোর একটির সাথে আরেকটির অসাধারণ মিল রয়েছে। লোলাগার আল্লের অনেকগুলো পুরনো ভবনের সংস্কার করা হয়েছে। তারমধ্যে হান্না বুটিক হোটেল অন্যতম। ৯০ বছরের পুরনো কাঠামোটিকে মূলত বুটিক হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সংস্কারের পর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের শীতকালে।

তেহরানের এই হোটেলটিতে থাকলে সেখানকার জীবনের এক বিচিত্র ঝলকানি উপভোগ করার সুযোগ হবে আপনার। ব্যস্ত ও এলোমেলো শহরের এই কেন্দ্রে কিছুটা সময় কাটানো এনে দেবে জীবনের অনন্য অভিজ্ঞতা। যেখানে একজন ব্যক্তি শিল্প, স্থাপত্য, নকশা ও আধুনিক দিনের আতিথেয়তা উপভোগ করতে পারবেন একসাথে।

লালেহ কানদোভান বুটিক হোটেল

ইরানের শীর্ষস্থানীয় হোটেলগুলোর অন্যতম কানদোভানের সালেহ ইন্টারন্যাশনাল রক হোটেল। বিশ্বে এই ধরনের হোটেলগুলোর মধ্যে এটির স্থান তৃতীয়। কানদোভান হচ্ছে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চল ওসকু কাউন্টির পল্লি এলাকা সাহান্দের একটি গ্রাম। এখান থেকে তাবরিজ শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার।

হোটেলটিতে রয়েছে ৪০টি কারান্স (প্রাকৃতিক শিলার কক্ষ)। এগুলোর মধ্যে ১৬টিতে পরিপূর্ণ কক্ষসেবা পাওয়া যায়। সাথে রয়েছে একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ। যেখানে বাহারি রকমের ইরানি ও বিদেশি খাবার পাওয়া যায়। রেস্তোরাঁটিতে একসাথে ১২০ জন মানুষ বসতে পারে। সূত্র: ফিনানসিয়াল ট্রিবিউন।