শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইরানের নাশতিফানের গর্ব যাদুময় আসবাদ বায়ুকল

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২৬, ২০২০ 

news-image

উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ইরানের ক্ষুদ্র গ্রাম নাশতিফানের আসবাদ বায়ুকল। যেটি পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া একটি আদিম জাঁতাকল। যাদুময় কাঠামোটি বায়ু শক্তিকে কাজে লাগানোর একটি ঐতিহ্যবাহী কৌশল।

মাটি, কাঠ এবং খড় দিযে নির্মিত বায়ুকলটি স্থানীয়ভাবে আসবাদস নামে পরিচিত। এটি একটি খাড়া বাঁধের উপরে উঁচু স্থানে বসানো হয়েছে। আর বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে গ্রামটির তত্বাবধানের জন্য। আনুমানিক প্রায় হাজার বছর ধরে মিলটিতে শস্য ভাঙানো হয়। ইতিহাসে মানব সম্প্রদায় যে পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতাকে সুযোগে রূপান্তরিত করে প্রকৃতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে- এটা তারই স্বাক্ষ্য বহন করে।

নাশতিফানের বায়ুময় কাঠামোটি আলি মোহাম্মাদ ইতেবারি নামে একজন স্নেহশীল প্রহরী দেখভাল করেন। তিনি আনুমানিক জানান, মাটির তৈরি বায়ুমিলটির যন্ত্রপাতিগুলো হাজার বছরের পুরনো।

২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল উড কালচার সোস্যাইটিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি এগুলো দেখাশোনা না করতাম তাহলে যুবক ছেলে-মেয়েরা এসে এটা নষ্ট করে ফেলত এবং সবকিছু ভেঙে ফেলতো।’’

ইতেবারি জীবন্ত মানব গুপ্তধন হিসেবে মিলটির দেখাশোনা করে সম্মান বোধ করেন। তিনি জানান, দৈনিক পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মিলটিকে তিনি চালু রাখতে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ইতেবারি বলেন, আমি একজন চালক ছিলাম। আমি ২৮ বছর যাবত এটি দেখাশোনা করে আসছি। বিশুদ্ধ, স্বচ্ছ বাতাশ বায়ুমিলটিকে ঘুরিয়ে থাকে। জীবনরক্ষাকারী এই বাতাস সবাই গ্রহণ করতে পারে।

ইরানি মালভূমির পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব জুড়ে মে মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত বাৎসরিক ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হয়। টানা ১২০ দিনের শক্তিশালী বাতাস মিলটিকে সচল রাখে।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো বলছে, আসবাদ হচ্ছে শস্য দানা ভাঙানোর স্মার্ট কৌশল। প্রাচীনকালে ইরানের পূর্বাঞ্চলের মানুষজন এই কৌশলটি কাজে লাগাতো। এটা ছিল পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতাকে সুবিধাতে রুপান্তরিত করে প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা।

এদিকে, ইনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা বলছে, বায়ুকলটি সম্পর্কে সর্বপ্রথম যা জানা যায় তা হচ্ছে, এটি ৫৪৪ সালে গড়ে ওঠা একটি পারসিক মিল কারখানা এবং ৯১৫ সালে ইরানের সিস্তানে এই ধরনের বায়ুমিল নির্মাণ করা হয়।

দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে পূর্ব ও পশ্চিমা কিছু রাষ্ট্র পারস্য থেকে এই ধরনের মিল তৈরি করার প্রযুক্তি অর্জন করে। সময়ের ব্যবধানে মিলটির আদিকালের এই নকশা অবিরত পরিমার্জিত হতে থাকে। সূত্র: তেহরান টাইমস।